কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ

বাংলার অনেক কবি সর্প দেবতা মনসার মাহাত্ম্যজ্ঞাপক মঙ্গলকাব্য রচনা করেছেন। এদের মধ্যে কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ অন্যতম। ইনি রাঢ় দেশের অধিবাসী ছিলেন। তবে শুধুমাত্র রাঢ়বঙ্গেই নয় তার কাব্য পূর্ববঙ্গেও বেশ প্রচলিত ছিল। পূর্ববঙ্গে তার কাব্য " ক্ষেমানন্দী " নামে পরিচিত। অনুমিত হয় কাব্যটির রচনাকাল সপ্তদশ শতকের মধ্যভাগ।[1] তবে অধ্যাপক সুখময় মুখোপাধ্যায়-এর মতে ক্ষেমানন্দ ১৭০৮-০৯ খৃঃ-এর বেশ কিছুকাল আগেই কাব্য রচনা করেছিলেন।[2] কেতকাদাসের কাব্যে 'চন্ডীমঙ্গল' ও 'রামায়ণ' এর প্রভাব রয়েছে বলে মনে করা হয়।

কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ
ভাষাবাংলা সাহিত্য
সময়কালমধ্যযুগ ( সপ্তদশ শতক)
ধরনমঙ্গলকাব্য

আত্মপরিচয়

ক্ষেমানন্দের পূূ্র্ণাঙ্গ আত্মকাহিনী থেকে জানা যায়, তিনি জাতিতে কায়স্থ, পিতা শঙ্কর মন্ডল এবং গ্রামের নাম "কাঁথরা" বর্তমানে "কেতেরা"।[3] বর্তমানে হুগলী জেলার তারকেশ্বর থানায় এই নামে গ্রাম এখনো রয়েছে। প্রশ্ন জাগে ক্ষেমানন্দ জাতিতে কী ছিলেন ? সুকুমার সেনের মতে, তিনি ছিলেন জাতিতে কায়স্থ। কিন্তু এব্যাপারে প্রশ্ন জাগে কায়স্থদের মধ্যে মন্ডল পদবিধারী থাকে কি না ? তাই বলা চলে তিনি কায়স্থ না হলেও মন্ডল পদবিধারী কোনও জাতির অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।[4] অন্যান্য মঙ্গল কবিদের মতো তিনি স্বপ্নাদেশ প্রাপ্তিতে মঙ্গল কাব্য রচনা করেননি। তিনি আত্মকাহিনীতে বলেছেন, দেবী মনসা মুচিনীর বেশে কবিকে দেখা দিয়ে পরে স্বরূপে দেখা দেন ও কাব্য রচনার আদেশ দেন।[4]

কবির নাম বিতর্ক

কবির নাম নিয়েও বিতর্কের শেষ নেই। দীনেশচন্দ্র সেন-এর মতে, কেতকাদাসক্ষেমানন্দ দুইজন পৃথক ব্যক্তি। অন্যদিকে সুকুমার সেন-এর মত, কবির আসল নাম কেতকাদাসক্ষেমানন্দ তার উপাধি। তবে কবির প্রকৃত নাম যে ক্ষেমানন্দ তা নিয়ে অনেক ঐতিহাসিক একমত।[5]

কাব্য পরিচয়

ক্ষেমানন্দ শক্তিশালী কবি ছিলেন। তার মনসামঙ্গল ( মনসার ভাসান ) পাঁচটি পালায় বিভক্ত -- মথন, ঊষাহরণ, রাখালপূজা, ধন্বন্তরিবেহুলা-লখিন্দর। এই পাঁচটি পালার মধ্য শেষেরটিই প্রধান। এই পালাটির অন্য নাম জাগরণ পালা[1] এই কাব্যে কবি দেবী মনসাকে কেতকা নামে অভিহিত করেছেন -- " কিয়া পাতে জন্ম হৈল কেতকা সুন্দরী "। এছাড়াও কবি এই কাব্যে বেহুলার ভাসান পথের যে ২২টি ঘাট বা গ্রামের নাম উল্লেখ করেছেন তার মধ্যে ১৪টি ঘাট বা গ্রাম এখনো দামোদর ও তার শাখা বেহুলা নদীর উভয় তীরে অবস্থিত।[6] এ থেকে কবির ভৌগোলিক জ্ঞান সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।

তথ্যসমূহ

  1. ভট্টাচার্য, বিজনবিহারী (১৯৬১)। কেতকাদাস ক্ষেমানন্দের মনসামঙ্গল (১ম সংস্করণ)। সাহিত্য আকাদেমি। পৃষ্ঠা [ভূমিকা দ্রস্তব্য]।
  2. মুখোপাধ্যায়, সুখময় (১৯৬০)। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের তথ্য ও কালক্রম (১ম সংস্করণ)। পৃষ্ঠা ২৪৬।
  3. মুখোপাধ্যায়, সুখময়। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের তথ্য ও কাল্ক্রম। পৃষ্ঠা ২৪৭।
  4. মুখোপাধ্যাায়, সুখময়। মধ্যযুুগের বাংলা সাহিত্যের তথ্য ও কালক্রম। পৃষ্ঠা ২৪৮।
  5. মুখোপাধ্যায়, সুখময়। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের তথ্য ও কাল্ক্রম। পৃষ্ঠা ২৪১।
  6. মিত্র, সনৎকূমার (জানুয়ারি ২০১২)। সাহিত্য টীকা। পুস্তক বিপণি। পৃষ্ঠা ৯৯ (কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ টীকা দ্রষ্টব্য)।
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.