কুন্তী

কুন্তী (সংস্কৃত: कुन्ती, আইএএসটি: Kuntī) হলেন ভারতীয় মহাকাব্য মহাভারতে বর্ণিত প্রধান নারী চরিত্র, মথুরার যাদববংশীয় রাজা শূরসেনের কন্যা,[1] বসুদেবের বোন, রাজা কুন্তীভোজের পালিতা কন্যা,[2] ও হস্তিনাপুরের রাজা পাণ্ডুর স্ত্রী[3] অঙ্গরাজ কর্ণ, ইন্দ্রপ্রস্থের অধিপতি যুধিষ্ঠির, ভীম এবং অর্জুন তার পুত্র।[4] কুন্তীর প্রকৃত নাম পৃথা। কুন্তীকে পঞ্চসতীর একজন মনে করা হয়। ভাগবত পুরাণে তার কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। এখানে তিনি ভাইয়ের ছেলে কৃষ্ণের প্রতি ভক্তির যে দর্শন ব্যক্ত করেছেন তা ভক্তিযোগ নামে পরিচিত। এছাড়া, দেবী ভাগবতে ও তার কথা উল্লেখিত হয়েছে।

কুন্তী
কাশ্মীরে প্রাপ্ত পান্ডু ও কুন্তীর ১৭ শতকের শেষ দিকের একটি চিত্রকর্ম।
জন্ম
মৃত্যু
অন্যান্য নামপৃথা (জন্মগত নাম)
পরিচিতির কারণ
দাম্পত্য সঙ্গীপাণ্ডু
সন্তানবিবাহ-পূর্বপুত্রসৎ-পুত্র
পিতা-মাতাপিতামাতা
কাকা
আত্মীয়বসুদেব, নন্দ সহ ১৪ ভাই, শ্রুতশ্বরা (বোন)
পঞ্চকন্যা গোষ্ঠীর সদস্য

উপাখ্যান

কুন্তীর পাঁচ ছেলে: যুধিষ্ঠির, ভীম, অর্জুন, নকুল ও সহদেব পঞ্চপাণ্ডব নামে পরিচিত। তার সতীন মাদ্রীর যমজ সহোদর নকুল ও সহদেবকে কুন্তী তাদের আপনপুত্রর মতোই অধিক স্নেহ করতেন। এছাড়া সূর্যদেবের বরে অঙ্গরাজ কর্ণের জন্ম হয়।

কুন্তী যখন কুমারী ছিলেন তখন তার গৃহে দুর্বাসা মুনি অতিথি হয়ে এলে কুন্তী তাকে সেবা দ্বারা সন্তুষ্ট করেন। এতে খুশি হয়ে দুর্বাসা মুনি তাকে এক অদ্ভুত বর দেন। বরটা ছিলো এমন, কুন্তী কোন দেবতাকে স্মরণ করলে সেই দেবতা এসে কুন্তীকে পুত্রসন্তান দান করবে। বর পেয়ে কৌতূহলী কুন্তী কুমারী অবস্থায়ই সূর্যদেবকে প্রার্থনা করে বসেন এবং সূর্যদেবের আশীর্বাদে এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। দেবতাদের পঞ্চন্দ্রিয় অত্যন্ত শক্তিশালী হওয়ায় তারা সঙ্গম ব্যতীত সন্তান উৎপন্ন করতে সক্ষম। তবে অবিবাহিত অবস্থায় সন্তান লাভ করায় লোকলজ্জার ভয়ে কুন্তী তাঁর পুত্রকে যমুনার জলে ভাসিয়ে দেন। এই পুত্রই মহাভারতে কর্ণ নামে পরিচিত হন।

দেবরাজ ইন্দ্রের কাছে পুত্রলাভের জন্য কুন্তীর প্র‌ার্থ‌না

পরবর্তীতে কুন্তী-ভোজ কুন্তীর জন্য স্বয়ংবরার আয়োজন করলে কুন্তী পাণ্ডুর গলায় মালা পরান। পাণ্ডুর আরেক স্ত্রী ছিলো, মাদ্রী। একদিন পাণ্ডু মাদ্রী ও কুন্তীকে নিয়ে হিমালয়ের দক্ষিণে বেরিয়ে পরেন। সেখানে এক মুনি, যার নাম কিন্দম, হরিণের রূপ ধরে তাঁর স্ত্রীর (যিনি হরিণীর রূপে ছিলেন) সাথে সঙ্গমরত ছিলেন। পাণ্ডু না বুঝে হরিণ-হরিণী দুটোকে হত্যা করেন, মৃত্যুর আগে কিন্দম পাণ্ডুকে এক শাপ দেন যে, পাণ্ডু যদি কোন নারীর সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয় তবে তার মৃত্যু ঘটবে। এই ঘটনার পর পাণ্ডু যেদিন কুন্তী’র সাথে সন্তানলাভ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন সেদিন কুন্তী দুর্বাসা মুনির বরের কথা বললে পাণ্ডু প্রথমে এক ধার্মিক রাজপুত্র লাভ করতে চান। তখন কুন্তী ধর্মদেবকে আহ্বান করলে তাঁর আশীর্বাদে পাণ্ডুর ক্ষেত্রজ পুত্র ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠিরের জন্ম হয়। এরপর পাণ্ডু এক বলশালী পুত্রলাভের ইচ্ছা করলে কুন্তী পবনদেবকে আহ্বান করলে এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয় যার নাম হয় ভীম। তারপর বীর দেবরাজ ইন্দ্রের আহ্বান করেন কুন্তী। এর ফলে ইন্দ্রের বরে ইন্দ্রের ন্যায় বীর অর্জুনের জন্ম হয়।

সতীন মাদ্রী পুত্রলাভ করতে এই বিশেষ মন্ত্র কুন্তীর কাছ থেকে জেনে নেন। সপত্নী কুন্তী তিন পুত্রের জননী হওয়ায় স্বামীর প্রিয়া বলে তিনি মনে করতেন। একসাথে দুই পুত্রলাভের জন্য তিনি বুদ্ধি করে পুত্রেষ্টি মন্ত্র দ্বারা একত্রে দুজন সবিতপুত্র অশ্বিনীকুমারদ্বয়কে আহ্বান করেন। দুজনের বরের ফলে জন্ম হয় মাদ্রীর দুই পুত্রের- নকুল ও সহদেব। দেবতাদের বরে জন্ম নেয়া পাণ্ডুর দুই স্ত্রীর পাঁচ পুত্র যুধিষ্ঠির, ভীম, অর্জুন, নকুল ও সহদেব পঞ্চপাণ্ডব নামে পরিচিত। এরপর একদিন অত্যন্ত কামার্ত অবস্থায় পাণ্ডু মাদ্রীর সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হলে কিন্দম মুনির শাপে পাণ্ডুর মৃত্যু হয়। তবে পাণ্ডুর মৃত্যুর পর কুন্তী সহমরণে যাননি, কিন্তু তার সপত্নী মাদ্রী সতী হন। কুন্তী পঞ্চপাণ্ডবগণের জননী রূপে তাদের বড় করে তোলেন। কুন্তীর নির্দেশে ভীম হিড়িম্বা রাক্ষসকে হত্যা করে রাক্ষসী হিড়িম্বিকে বিবাহ করেন এবং ঘটোৎকচের জন্ম হয়। তিনি নিজ পুত্রদের সর্বদা প্রজাদের মঙ্গলসাধনের উপদেশ দিতেন। কুন্তীর আদেশে ভীম বকাসুর বধ করেন। শেষ জীবনে তিনি ধৃতরাষ্ট্র ও গান্ধারীর সঙ্গে তপোবনে দিন কাটাতে থাকেন। একদিন তপোবনের এক ভয়াবহ দাবানলে ধৃতরাষ্ট্র ও গান্ধারীর সাথে তিনিও মৃত্যুবরণ করেন।

তথ্যসূত্র

  1. "Studies of Mahabharata" (পিডিএফ)। ৯ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ আগস্ট ২০১৪
  2. KUNTI (also called Pritha and Parshni)
  3. A classical dictionary of Hindu mythology and religion, geography, history, and literature by Dowson, John (1820-1881)
  4. Mahabharata
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.