কচ্ছ (দেশীয় রাজ্য)
কুচ রাজ্য বা কচ্ছ রাজ্য, ঐতিহাসিকভাবে ১১৪৭ থেকে ১৮১৯ সাল পর্যন্ত ছিল স্বাধীন রাজ্য এবং ব্রিটিশ আমলে ১৮১৯ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ছিল দেশীয় রাজ্য। এর অবস্থান, বর্তমান গুজরাতের উত্তর অংশের কচ্ছ উপসাগরের কচ্ছ অঞ্চল। ব্রিটিশ ভারতের যে অল্প কিছু দেশীয় রাজ্যের সমুদ্রসীমা ছিল, কচ্ছ তাদের মধ্যে একটি, যার উত্তর সীমান্তে রয়েছে সিন্ধু প্রদেশ।
কুচ রাষ্ট্র (১৮১৯–১৯৪৮) কচ্ছ রাজ্য (১১৪৭–১৮১৯) કચ્છ | |||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
১১৪৭–১৯৪৮ | |||||||||||
পতাকা
জাতীয় মর্যাদাবাহী নকশা
| |||||||||||
কচ্ছ রাজ্য, ১৮৭৮ | |||||||||||
রাজধানী |
| ||||||||||
প্রচলিত ভাষা | কচ্ছী, গুজরাটি, সিন্ধি | ||||||||||
সরকার | রাজতন্ত্র | ||||||||||
ইতিহাস | |||||||||||
• প্রতিষ্ঠা | ১১৪৭ | ||||||||||
১৮১৯ | |||||||||||
১৯৪৮ | |||||||||||
আয়তন | |||||||||||
১৯০১ | ৪৫,৬৩০ বর্গকিলোমিটার (১৭,৬২০ বর্গমাইল) | ||||||||||
জনসংখ্যা | |||||||||||
• ১৯০১ | ৪৮৮,০২২ | ||||||||||
মুদ্রা | কচ্ছ কড়ি | ||||||||||
| |||||||||||
বর্তমানে যার অংশ | ভারত |
রাজ্যটির আয়তন ছিল ১৭,৬১৬ বর্গমাইল (৪৫,৬৩০ কিমি২) এবং ১৯০১ সালে এর জনসংখ্যা ছিল আনুমানিক ৪,৮৮,০২২ জন। ব্রিটিশ রাজের শাসনামলে এটি কুচ এজেন্সির নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল, যা পরবর্তীতে বোম্বে প্রেসিডেন্সির ওয়েস্টার্ন ইন্ডিয়া স্টেট এজেন্সির অধীনে চলে যায়। রাজ্যের শাসকগণ ৩৫৪ অশ্বারোহী, ১৬৪ বন্দুক এবং ১,৪১২ পদাতিক বাহিনীর সমন্বয়ে একটি সেনাবাহিনী পরিচালনা করত।
রাজ্যটির পতাকা ছিল লাল রঙের আয়তাকার, যার মাঝে সাদা রঙে একটি হাতি ও কেন্দ্রে ভুজিয়া দূর্গের ছবি। দূর্গের উপরে সাদা রঙে রোমান বর্ণে লেখা ভূজ (BHOOJ) এবং নিচে সাদার উপর রোমান বর্ণে লেখা রাজ্যের মূলমন্ত্র: কারেজ অ্যান্ড কনফিডেন্স (Courage and Confidence)।
ইতিহাস
১১৪৭ সালের দিকে সিন্ধু প্রদেশ থেকে আসা সাম্মা উপজাতির লাখো যাদানী, পূর্বতন কচ্ছ রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। জাম জাদা তাঁকে পোষ্য নিয়েছিলেন বলে তিনি লাখো যাদানী নামে পরিচিত হন। তাঁর নতুন রাজধানী থেকে ১১৪৭-১১৭৫ সময়কালে কচ্ছের পূর্বাংশ শাসন করতেন। তাঁর যমজ ভাই লাখিয়ার-এর নাম অনুসারে নতুন রাজধানীর নাম রাখেন লাখিয়ারভৈরো (বর্তমান নক্ষত্রণার কাছে)।[1] এই সময়েরও আগে, এই পূর্বাংশে রাজত্ব করতেন চৌদা বংশ। চৌদা বংশের সর্বশেষ উল্লেখযোগ্য শাসক ছিলেন ভগম চৌদা, যাঁকে ১৩ শ শতাব্দীতে হত্যা করেন তাঁরই ভাগ্নে জাদেজা বংশের মদ ও মানাই। [2] ঐ একই সময়ে, আরও অন্যান্য উপজাতি যেমন কাথি, চৌলুক্য এবং বাঘেলা বা ওয়াঘেলার অধীনে ছিল কচ্ছের মধ্য ও পশ্চিমাংশ।[1] ১২১৫ সালে রায়ধান রাত্তোর মৃত্যুর পর তাঁর চার ছেলের মধ্যে অঞ্চল ভাগাভাগি হয়ে যায়। ওথাজি, দেদাজি, হোথিজি এবং গজনজি পান যথাক্রমে কচ্ছ অঞ্চলের লাখিভৈরো, কাথকোট, গাজোদ এবং বড়া।
সবার বড় ওথাজি লাখিভৈরোর মূল সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন এবং বাকী অংশগুলি হল ভৈয়ত (বা ব্রাদারহুড)-এর ফেডারেল ব্যবস্থার সরকার। তবে যতদিন না তাঁরা বড় দুটি দল, ওথাজি ও বড়ার গজনজি দলে একীভূত হন, ততো দিন তাঁদের মধ্যের অভ্যন্তরীণ বৈরীতা প্রজন্ম ধরে বাড়তেই থাকে।
এই প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে প্রথম ঘটনাটি ছিল, কচ্ছের ইতিহাস বদলে দেওয়া, বড়ার জাম রাওয়াল কর্তৃক জাদেজাদের জ্যেষ্ঠ শাখার প্রধান তথা ওথাজির বংশধর, লাখিয়ারভৈরোর জাম হামিরজিকে হত্যার ঘটনা। মনে করা হয়, জাম রাওয়াল তাঁর বাবা জাম লখাজির হত্যার কারণ হিসাবে হামিরজীকে দায়ী করেছিলেন। কারণ, হামিরজির প্ররোচনায় দেদা তামিয়াচি দ্বারা লাখিয়ারভৈরোয় তাঁর বাবাকে হত্যা করা হয়েছিল। [3] প্রতিশোধের মধ্যে জাম রাওয়াল, বিশ্বাসঘাতকতা করে তাঁর বড় ভাই রাও হামিরজীকে (খেঙ্গারজির পিতা) হত্যা করে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে কচ্ছ শাসন করেছিলেন। বড় হয়ে প্রথম খেঙ্গারজি তাঁর কাছ থেকে কচ্ছ পুনরুদ্ধার করেন। জাম রাওয়াল কচ্ছের বাইরে পালিয়ে গিয়ে আশাপূরা মাতার স্বপ্নাদেশে নওয়ানগর প্রতিষ্ঠা করেন। [3] পরে তাঁর বংশধরের শাখাপ্রশাখা রাজকোট, গোন্দল, ধ্রোল এবং বীরপুর রাজ্যে গঠন করে। [4] বংশসূত্র এখনও চালু রাখা আছে। জাদেজা শাখার নিজ নিজ বারোটস দিয়ে জাদেজা বংশের প্রতিটি ব্যক্তি রাতো রায়ধনের মাধ্যমে তাঁর পিতৃপুরুষের সন্ধান করতে পারেন। [4]
১১৪৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৫৬৪ সালে জাম রাভালের সময় পর্যন্ত কচ্ছের রাজধানী ছিল লাখিয়ারভৈরো।
শাসকবর্গ
১১৪৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৪৮ সালে নব গঠিত, ভারতের স্বীকৃত ও অঙ্গীভূত হওয়ার আগে পর্যন্ত, কচ্ছ শাসিত হত সাম্মা উপজাতির জদেজা রাজপুত গোষ্ঠী দ্বারা।[5] শাসকরা দ্বাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে সিন্ধু থেকে কচ্ছে চলে এসেছিলেন। তাঁরা ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের ১৭ তোপ সেলামীর অধিকারী ছিলেন। আগে শাসকদের উপাধি জা'ম থাকলেও, পরে ব্রিটিশ রাজ আমলে ১ জানুয়ারি ১৯১৮ সাল থেকে বংশগতভাবে হয়ে যায় মহারাও। [6]
শাসক | সিংহাসন-লাভ |
---|---|
লাখো যাদানী | ১১৪৭ খ্রি. |
রাত্তো রায়ধান | ১১৭৫ খ্রি. |
ওথাজি | ১২১৫ খ্রি. |
রাও গাওজি | ১২৫৫ খ্রি. |
রাও ভেহানজি | ১২৮৫ খ্রি. |
রাও মুলওয়াজি | ১৩২১ খ্রি. |
রাও কাইয়াজি | ১৩৮৬ খ্রি. |
রাও অমরজি | ১৪০৬ খ্রি. |
রাও ভীমজি | ১৪২৯ খ্রি. |
রাও হামিরজি | ১৪৭২ খ্রি. |
জাম রাওয়াল | ১৫২৪ খ্রি. |
খেঙ্গারজি প্রথম, কচ্ছ রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে খ্যাত, যিনি পূর্ব-মধ্য ও পশ্চিম কচ্ছকে এক আধিপত্যের আওতায় আনেন। তাঁর আগে ঐ অংশগুলি, জাদেজারা ছাড়াও চৌদা এবং শোলাংঙ্কি-দের মতো অন্যান্য রাজপুত উপজাতিগুলি শাসন করতেন।[7] সিংহের হাত থেকে আহমেদাবাদ-এর সুলতান মাহমুদ বেগদা-কে বাঁচিয়ে খেঙ্গারজি প্রথম, তঁর কাছ থেকে মরবির জায়গীর ও সেনবাহিনী লাভ করেছিলেন। যত দিন না জাম রাওয়ালের কাছ থেকে খেঙ্গারজি কচ্ছ পুনরুদ্ধার করতে পেরে ছিলেন, ততো দিন বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যান। ১৫৪৯ সালে কচ্ছে তিনি একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে তাকে একীভূত ও সুসংহত করতে সক্ষম হন। প্রাণ বাঁচাতে জাম রাওয়াল কচ্ছের বাইরে পালিয়ে যান। খেঙ্গারজি প্রথম, তাঁর পিতার রাজধানী লাখিয়াভাইরো এবং জাম রাভালের রাজধানী বড়া দখল করে নেওয়ার পর ১৫৩৪ সালে রাপার-এ আনুষ্ঠানিকভাবে সিংহাসনে আরোহণ করেন। [8] কিন্তু পরে তাঁর রাজধানী ভুজ-এ স্থানান্তরিত করেন।[5] খেঙ্গারজি বন্দর নগরী মান্ডভি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
শাসক | সিংহাসন-লাভ |
---|---|
খেঙ্গারজি প্রথম | ১৫৪৮ খ্রি. |
ভরমালজি প্রথম | ১৫৮৫ খ্রি. |
ভোজরাজজী | ১৬৩১ খ্রি. |
খেঙ্গারজি দ্বিতীয় | ১৬৪৫ খ্রি. |
তামাচি | ১৬৫৪ খ্রি. |
রায়ধান দ্বিতীয় | ১৬৬৫ খ্রি. |
১৬৯৮ সাল দ্বিতীয় রায়াধনের মৃত্যুর পরে, নিবচ্ছিন্ন উত্তরাধিকারের আবার বিচ্যুতি দেখা দেয়। দ্বিতীয় রায়াধনের তিন পুত্র ছিলেন, রাভাজি, নাগুলজি এবং প্রগজি। বড় পুত্রকে হত্যা করেছিলেন রাজপুত সোধা। দ্বিতীয় ভাই নাগুলজী প্রাকৃতিক কারণেই মারা যান। মারা যাওয়ার আগে উভয়েরই পুত্র ছিল। ফলে তাঁরাই ছিলেন কচ্ছের সিংহাসনের প্রকৃত অধিকারী। কিন্তু তখনো তাঁরা নবীন থাকায়, দ্বিতীয় রায়াধনের তৃতীয় পুত্র প্রগজি, কচ্ছের সিংহাসন দখল করেন, মহারাও প্রগমুলজি প্রথম নামে। [9]
নিহত বড় পুত্র রাভাজির ছেলে কান্যজি পালিয়ে গিয়ে নিজেকে মোরবি-তে প্রতিষ্ঠিত করেন। এটি আগে কচ্ছ রাজ্যেরই অংশ ছিল। কান্যজি সেখানে কচ্ছ থেকে স্বাধীন মোরভি স্থাপন করে, তাঁর বৈধ কচ্ছ-সিংহাসন উদ্ধারে বহুবার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যান। এভাবে মোরভিতে কান্যজি জাদেজার উত্তরাধিকারীরা বসতি স্থাপন করেন এবং তাদেরকে বলা হয় কায়্যানি। [5]
শাসনকাল | শাসক |
---|---|
১৬৯৮–১৭১৫ | প্রাগমলজি প্রথম (জন্ম ১৬ ... - মৃত্যু ১৭১৫) |
১৭১৫–১৭১৯ | গডজি প্রথম (১৬ ... - ১৭১৮) |
১৭১৮–১৭৫২ | দেশালজি প্রথম (১৬৮২ - ১৭৫২) |
১৭৫২–১৭৬ | লক্ষপতজি (রিজেন্ট) (১৭১৭ - ১৭৬১) |
1752–1760 | লক্ষপতজি (১৭১৭ - ১৭৬১) |
১৭৬০–১৭৭৮ | Godji IIগডজি দ্বিতীয় (১৭৩৪ - ১৭৭৮) |
১৭৭৮–১৭৮৬ | রায়াধান তৃতীয় (প্রথমবার) (১৭৬৩ - ১৮১৩) |
১৭৮৬–১৮০১ | পৃথ্বীভিরাজজি (১৭৭৪ - ১৮০১) |
১৭৮৬ - ৫ অক্টোবর ১৮১৩ | ফতেহ মুহাম্মদ (রিজেন্ট) |
৫ অক্টোবর ১৮১৩ - ৩০ অক্টোবর ১৮১৩ | রায়াধান তৃতীয় (দ্বিতীয়বার) |
৩০ অক্টোবর ১৮১৩ - ৬ নভেম্বর ১৮১৪ | হুসেইন মিয়া (রিজেন্ট) |
৬ নভেম্বর ১৮১৪- ২৫ মার্চ ১৮১৯ | ভরমলজি দ্বিতীয় (১৭৮৯ - ১৮৪৬) |
২৬ মার্চ ১৮১৯ - ২৬ জুলাই ১৮৬০ | দেশালজি দ্বিতীয় (১৮১৪ - ১৮৬০) |
২৬ জুলাই ১৮৬০ - ১৯ ডিসেম্বর ১৮৭৫ | প্রাগমলজি দ্বিতীয় (১৮৩৯ - ১৮৭৫) |
১৯ ডিসেম্বর ১৮৭৫ - ১৫ জানুয়ারি ১৯৪২ | খেঙ্গারজি তৃতীয় (১৮৬৬ - ১৯৪২) |
১৫ জানুয়ারি ১৯৪২ - ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮ | বিজয়রাজজি (১৮৮৫ - ১৯৪৮) |
২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮ - ১ জুন ১৯৪৮ | মদনসিংজি |
পরে রাও গডজি প্রথম (১৭১৫-১৯) তাঁর রাজত্বকালে ভূজিয়া দুর্গ নির্মাণ করে ভূজকে সুরক্ষিত করে ছিলেন। দুর্গের প্রধান কাজ ও সমাপ্তি হয় তাঁর পুত্র মহারাও দেশালজি প্রথম-এর (১৭১৮–১৭৪১) আমলে। ১৭০৯ সালে দেশালজি প্রথমের রাজত্বকালে গুজরাটের মোগল ভাইসরয় খাঁ, কচ্ছ আক্রমণ করেছিলেন। কচ্ছের সেনাবাহিনী যখন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে, সে সময় নাগা বাওয়াস-এর একটি দল তাদের সাথে যোগদান করায় মোগল সেনাবাহিনী পরাজিত হয়।
দেশালজির পর তাঁর পুত্র রাও লক্ষপতজী (১৭৪১−৬১), রাম সিং মালামকে বিখ্যাত আয়না মহল তৈরি করার জন্য নিযুক্ত করেছিলেন। রাম সিং মালামও মাধাপার-এর কাছে কাচ ও চিনামাটির কারখানা চালু করেন। লক্ষপতজির রাজত্বকালে কচ্ছের সামুদ্রিক ব্যবসা প্রসার লাভ করে এবং কচ্ছ তাদের নিজস্ব মুদ্রা কচ্ছ কড়ি জারি করে, যা ১৯৪৮ সালে কচ্ছ, স্বাধীন ভারতের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আগে পর্যন্ত ব্রিটিশ রাজত্বকাল-এও বৈধ ছিল।
ধর্ম
জাদেজারা হিন্দু ধর্ম অনুসারী ছিলেন এবং তাঁরা তাঁদের বংশের কূলদেবী আশাপুরা মাতা-র পূজা করতেন। দেবীর প্রধান মন্দিরটি মাতা নো মাধ-এ অবস্থিত।
জনসংখ্যা ও অর্থনীতি
রাজ্যের আটটি প্রধান শহর − ভুজ, মান্ডভি, আঞ্জার, মুন্দ্রা, নলিয়া, জাখাউ, ভচাউ এবং রাপার এবং ৯৩7 টি গ্রাম।[5] এ ছাড়াও উপকূলরেখার অন্যান্য বন্দর শহর ছিল টুনা, লক্ষপত, সন্ধন, সিন্ধ্রি, ভদ্রেশর। এ সব বন্দর দিয়ে রমরমিয়ে চলত সামুদ্রিক বাণিজ্য, যা ছিল রাজ্যের প্রধান রাজস্বআয়। আরও কয়েকটি শহর ছিল যেমন রোহ, ভিরানী মতি, দেবপুর, তেরা, কোঠারা, বড়া, কাঁথকোট।
বিভিন্ন কুচ বা কুচি সম্প্রদায় মাস্কট, মোম্বাসা, মিজিজিমা, জাঞ্জিবার এবং আরও অন্যান্যদের সঙ্গে ব্যবসার জন্য আর জাহাজ নির্মাণ দক্ষতার জন্য পরিচিত ছিল। ১৯৩০ সালে খেঙ্গারজি তৃতীয় বিকাশ ঘটান নতুন কাঁদলা বন্দর। তাঁর আমলে ১৯০০-১৯০৮ সালে কচ্ছ রাজ্য রেলপথও স্থাপিত হয়। এটি ভূজ, আঞ্জার, বাচাউয়ের মতো প্রধান শহরগুলিকে টুনা এবং কাঁদলা বন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত করে। রেলপথ, পণ্য ও যাত্রী চলাচলের পথ প্রশস্ত করায় ব্যবসার প্রভূত উন্নতি ঘটে।
১৯০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে হিন্দুর সংখ্যা প্রায় ৩,০০,০০০, মুসলিম প্রায় ১,১০,০০০ এবং জৈনদের জনসংখ্যা ছিল ৭০,০০০।[5] প্রায় ৯% জনসংখ্যা ছিল রাজপুত ও ব্রাহ্মণ এবং রাজ্যের জনসংখ্যার ২৪% ছিল অন্যান্য হিন্দু বর্ণের লোক।[5] সাধারণের সবচেয়ে বেশি কথ্য ভাষা ছিল কুচি ভাষা এবং গুজরাটি ভাষা। লেখা-জোখা, আদালত ও নথিপত্রে ব্যবহৃত হত গুজরাটি ভাষা।[5]
কৃষিকাজই মানুষের প্রধান পেশা ছিল। তারা গম, জোয়ার, বাজরা, বার্লি ইত্যাদির চাষ করত। এ ছাড়াও অপর প্রধান পেশা ছিল গবাদি পশু সংগ্রহ।[5]
মুদ্রা
১৯৪৮ পর্যন্ত কচ্ছ রাজ্যের মুদ্রা ছিল কড়ি। ১৮৫৮ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত এসব মুদ্রার সম্মুখ পৃষ্ঠে স্থানীয় শাসকের নাম এবং পিছনের পৃষ্ঠে ব্রিটিশ রাজার নাম খোদাই করা থাকত। এক বছরেরও কম সময়ের জন্য যুক্তরাজ্য ও ভারতে শাসন করা রাজা অষ্টম এডওয়ার্ডের পদত্যাগের আগে যে অল্প কিছু রাজ্য তাঁর নামে মুদ্রা চালু করে, কচ্ছ রাজ্য তাদের মধ্যে অন্যতম। ১৯৪৭ সালে রাজ্যটি তার সর্বশেষ মুদ্রা জয় হিন্দ কড়ি, চালু করে। এর বিপরীত পৃষ্ঠে খচিত ছিল ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম স্লোগান – জয় হিন্দ ।[10]
শাসকবর্গের চিত্রশালা
- লাখপতজি (শাসনকাল: ১৭৪১-১৭৬০)
- দ্বিতীয় দেশালজি (শাসনকাল:১৮১৯-১৮৬০)
- দ্বিতীয় প্রগমালজি (শাসনকাল:১৮৬০-১৮৭৫)
- তৃতীয় খেনগঢ়জি (শাসনকাল:১৮৭৫-১৯৪২)
- দ্বিতীয় প্রগমুলজি : বর্তমান নিয়মতান্ত্রিক প্রধান
- দ্বিতীয় দেশালজির শাসনামলে কচ্ছি পোশাক পরিহিত একজন জাদেজা নেতা : ১৮৩৮ সালে আঁকা একটি চিত্রকর্ম
আরো দেখুন
তথ্যসূত্র
- "Kutch Rulers with their Coinage details"। www.chiefacoins.com।
- Kutch by India. Superintendent of Census Operations, Gujarat। Director, Government Print. and Stationery, Gujarat State। ১৯৬৪। পৃষ্ঠা 53।
Vagham Chavdagadh or Patgadh, (Taluka Lakhpat) At this place are the ruins of the old city of Vagham Chavda who is said to have been killed in the thirteenth century by his nephews, Mod and Manai
- The Land of 'Ranji' and 'Duleep', by Charles A. Kincaid by Charles Augustus Kincaid। William Blackwood & Sons, Limited। ১৯৩১। পৃষ্ঠা 11–15।
- The Paramount Power and the Princely States of India, 1858-1881 - Page 287
- "Cutch"। The Imperial Gazetteer of India। 11: 75–80। ১৯০৮।
- Princely states of India: a guide to chronology and rulers - Page 54
- Katariya, Adesh (২০০৭)। Ancient History of Central Asia: Yuezhi origin Royal Peoples: Kushana, Huna, Gurjar and Khazar Kingdoms (ইংরেজি ভাষায়)। Adesh Katariya। পৃষ্ঠা 348। সংগ্রহের তারিখ ১০ নভেম্বর ২০১৭।
- Tyabji, Azhar (২০০৬)। Bhuj: Art, Architecture, History (ইংরেজি ভাষায়)। Mapin। পৃষ্ঠা 267। আইএসবিএন 9781890206802। সংগ্রহের তারিখ ২৮ নভেম্বর ২০১৭।
- Gujarat State Gazetteer - Volume 1 - Page 275-276
- "The Jai Hind Kori & Dhabu"। www.tezbid.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-১৬।