কিত্তনখোলা

কিত্তনখোলা ২০০০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলাদেশী চলচ্চিত্র। ছবিটি পরিচালনা করেছেন খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার আবু সাইয়ীদ। নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন রচিত কিত্তনখোলা নাটক অবলম্বনে চলচ্চিত্রটির চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেন পরিচালক আবু সাইয়ীদ ও নুরুল আলম আতিক। এটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ইমপ্রেস টেলিফিল্ম এর ব্যানারে নির্মাণ করা হয়। এটি ১৬ মিমি ফরম্যাটে নির্মিত চলচ্চিত্র, যদিও পরে এটি ৩৫ মিমি-এ প্রতিস্থাপন করে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেয়া হয়।[1] ছবিটির উল্লেখযোগ্য চরিত্রগুলোতে অভিনয় করেছেন রাইসুল ইসলাম আসাদ, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, মামুনুর রশীদ, পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, নায়লা আজাদ নুপুর, তমালিকা কর্মকার, ও আজাদ আবুল কালাম

কিত্তনখোলা
ডিভিডি কভার
পরিচালকআবু সাইয়ীদ
প্রযোজকফরিদুর রেজা সাগর
ইবনে হাসান খান (ইমপ্রেস টেলিফিল্ম)
রচয়িতানুরুল আলম আতিক
আবু সাইয়ীদ
উৎসসেলিম আল দীন কর্তৃক 
কিত্তনখোলা
শ্রেষ্ঠাংশে
সুরকারআবু সাইয়ীদ
চিত্রগ্রাহকসমীরণ দত্ত
সম্পাদকসুজন মাহমুদ
প্রযোজনা
কোম্পানি
আঙ্গিক কমিউনিকেশন্স
ইমপ্রেস টেলিফিল্ম
পরিবেশকইমপ্রেস টেলিফিল্ম
মুক্তি২০০০
দৈর্ঘ্য৯৬ মিনিট
দেশবাংলাদেশ
ভাষাবাংলা

চলচ্চিত্রটি ২০০২ সালে ঘোষিত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-এ শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রশ্রেষ্ঠ পরিচালকসহ নয়টি বিভাগে সম্মাননা লাভ করে।[1]

কাহিনী সংক্ষেপ

ফসল মাড়াই শেষ হলে নদীতীরে মেলা আয়োজন করা হয়। মেলার প্রধান আকর্ষণ "আদি মহুয়া অপেরা" যাত্রাদল। যাত্রাদলের প্রধান সুবল দাস তার দলবল নিয়ে মেলায় পৌঁছে। স্থানীয় ঠিকাদার ইদু কন্ট্রাক্টর মেলার ইজারা নিয়েছে। সে তাদের বরণ করে নেয়। গ্রামের যুবক সোনাই মেলায় ঘুরার সময় ইদুর লোক তাকে তার জমি নিয়ে ইদুর সাথে কথা বলতে এলে সে পালিয়ে যায়। মেলায় তার যাত্রাদলের ছায়া রঞ্জনের সাথে মদ খেতে গিয়ে ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে। মদ খাওয়ার এক পর্যায়ে তার মৃগী রোগ দেখা দিলে তার বন্ধু রুস্তম তাকে বেদে কন্যা ডালিমনের কাছে নিয়ে যায় ঔষধের জন্য। ডালিমনের দেওয়া তাবিজে সোনাইয়ের মৃগী রোগ থেকে নিস্তার পায়। সে ভালোবেসে ফেলে ডালিমনকে।

যাত্রাদলের অভিনেত্রী বনশ্রীবালার প্রতি ইদুর চোখ পড়ে। যাত্রাদলের মালিক সুবল দাস দলকে ঠিকেয়ে রাখতে বনশ্রীবালাকে ইদুর কাছে পাঠাতে চায়। অভিনেতা রবি দাস এর প্রতিবাদ করে এবং এতিম শিশু ছায়ারঞ্জনকে সুবলের দলে স্থান দেওয়া ও তার ওপর যৌন নির্যাতনেরও কথা তুলে আনে। ছায়া মদ খেয়ে তার জীবনের ঘটে যাওয়া সবকিছু ভুলে থাকতে চায়। রবি ও ছায়া দুজনই বনশ্রীকে ভালোবাসে। বনশ্রীও জীবনে থিতু হতে চায়। কিন্তু পতিতাপল্লি থেকে আসা যাত্রা-অভিনেত্রীর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা হয় না। ইদুর লালসা এড়াতে আত্মহত্যা করে বনশ্রী। সোনাইও পায় না ডালিমনকে। বেদে-সমাজের কঠোর নিয়ম-অনুশাসন তাদের এক হতে দেয় না। ইদুর লোকের প্ররোচনায় জুয়া খেলে সর্বস্ব হারায় সোনাই। সোনাইয়ের বন্ধকের জমিটা এবার পুরোপুরি হাতে চলে যায় ইদুর হাতে।

শ্রেষ্ঠাংশে

সঙ্গীত

কিত্তনখোলা ছবির সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন ছবির পরিচালক আবু সাইয়ীদ। তার সহকারী হিসেবে ছিলেন নীতি রঞ্জন বিশ্বাস, সমীর দাস, ও হাবিবুর রহমান মধু। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন পাগলা বাবুল, মনি দাস, রানী দাস, ইয়ারন মনি, ইসলাম উদ্দিন পালাকার, দিপালী রানী, ও বাদল শহীদ।

মূল্যায়ন

সমালোচকদের প্রতিক্রিয়া

দৈনিক ইত্তেফাক-এ ফাহমিদুল হক লিখেছেন, "প্রান্তিক সাধারণ মানুষ যে বিবর্তন ও রূপান্তরের মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করে চলেছে, তার বিশ্বস্ত রূপায়ণ দেখা যায় কাহিনিতে।" তিনি চিত্রগ্রাহকের ক্যামেরার গতিশীলতার সমালোচনা করে বলেন "মেলাপ্রাঙ্গনের কাহিনিতে আরও বেশি গতিশীল ক্যামেরা কাঙ্ক্ষিত ছিল।" তবে ছবির শেষ দিকে "আমার পাগলা ঘোড়া রে" অনির্দিষ্টতাকে বোঝাতে যুৎসই ছিল।[1]

পুরস্কার

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার

ধারাবাহিক নাটক

২০১১ সালে সেলিম আল দীনের মূল নাটকের ধারাবাহিক নির্মাণ করা হয়। ৫২ পর্বের ধারাবাহিকটির নাট্যরূপ দিয়েছেন রুবাইয়াৎ আহমেদ এবং পরিচালনা করেছেন জসিম খান রিজভী।[2] এতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছেন আহমেদ রুবেল, তারিন আহমেদ, বন্যা মির্জা, আনিসুর রহমান মিলন, শতাব্দী ওয়াদুদ প্রমুখ। নাটকটির সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন শিমুল ইউসুফ[3]

তথ্যসূত্র

  1. হক, ফাহমিদুল (২৮ ডিসেম্বর ২০১২)। "আবু সাইয়ীদের চলচ্চিত্র কিত্তনখোলা - বাঙালির আত্মপরিচয়ের সন্ধানে"দৈনিক ইত্তেফাক। ১৬ মে ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
  2. "সেলিম আল দীনের 'কিত্তনখোলা' এবার ধারাবাহিক নাটক"বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। ২১ জানুয়ারি ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
  3. "'কিত্তনখোলা' এবার ধারাবাহিক"দৈনিক প্রথম আলো। ২১ জানুয়ারি ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.