কিকিরা

কিকিরা প্রখ্যাত সাহিত্যিক বিমল কর সৃষ্ট বাংলা সাহিত্যের একটি বিখ্যাত গোয়েন্দা চরিত্র। তাঁর পুরো নাম কিঙ্করকিশোর রায়, সংক্ষেপে কিকিরা। কিকিরা বাংলা সাহিত্যের অন্যান্য গোয়েন্দাদের থেকে অনেকটাই আলাদা। হ্যারি হুডিনির মতো জাদুকরী হাত আর শার্লক হোমসের মতো ক্ষুরধার মাথা, এই দুই-ই কিকিরার সম্বল। চরিত্রটির প্রথম আত্মপ্রকাশ আনন্দমেলা পত্রিকার প্রথম বর্ষের প্রথম সংখ্যায় অর্থাৎ ১৩৮২ বঙ্গাব্দের বৈশাখ সংখ্যায়।

কিকিরা
কিকিরা সিরিজের একটি ফোটো চুরির রহস্য উপন্যাসের প্রচ্ছদ
প্রথম উপস্থিতিকাপালিকরা এখনও আছে
শেষ উপস্থিতিভুলের ফাঁদে নবকুমার
স্রষ্টাবিমল কর
তথ্য
ডাকনামকিকিরাসার
লিঙ্গপুরুষ
পদবিকিকিরা
পেশাগোয়েন্দা
প্রাক্তন জাদুকর
জাতীয়তাভারতীয়
বাসস্থানকলকাতা
বয়সপ্রায় ৫০

চরিত্র

আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত "কিকিরা সমগ্র ৩"-এর ভূমিকায় বিমল কর লিখেছেন, "গোয়েন্দা গল্প বলতে যা বোঝায়, কিকিরার গল্প তা নয়। অপরাধমূলক কাহিনী বলা যায়। খুনোখুনি বন্দুক পিস্তল রক্তপাত - এইসব ভয়ংকর ব্যাপার কিকিরার গল্পে নেই; যেটুকু আছে তা আড়ালে, এবং অতি সামান্য। এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। কিকিরাসারকে যাদের ভালো লাগে, এই লেখাগুলি তাদের তৃপ্ত করলে খুশি হব।"[1]

লেখকের এই কথাতেই বোঝা যায় কিকিরা আর পাঁচটা গোয়েন্দা চরিত্রের থেকে বেশ আলাদা। কিকিরার প্রথম উপন্যাসে কিকিরার চেহারার যে বর্ণনা পাওয়া যায় সেটাও কিন্তু একেবারেই গোয়েন্দাসুলভ নয়: "এমন সময় এক অদ্ভুত ধরনের ভদ্রলোক এসে কামরায় উঠলেন। টিয়াপাখির মতন নাক, তোবড়ানো গাল, গর্তে বসা চোখ। চেহারাটি রোগাসোগা, গায়ে সেই আদ্যিকালের অলেস্টার, মাথায় কাশ্মীরি টুপি ডান হাতে একটা সুটকেস ঝুলছে, বাঁ হাতে খয়েরি বালাপোশ। ভদ্রলোক এতই রোগা যে গায়ে অলেস্টার চাপিয়েও তাঁকে মোটা দেখাচ্ছে না। গলায় মোটা মাফলার জড়ানো।"[2]

আগে ম্যাজিক দেখাতেন কিকিরা দি গ্রেট।কিন্তু বাঁ হাতে সমস্যা দেখা দেওয়ায় ম্যাজিক দেখানো ছাড়তে হয় তাঁকে। ব্যাঙ্কে কিছু টাকা আছে তাঁর-সেটুকুই সম্বল। এখন কিকিরা ম্যাজিকের বই লিখবেন ভাবেন, ছোকরা ম্যাজিশিয়ানদের টিপস দেন, তাদের ম্যাজিকের যন্ত্রের নকশা করে দেন,সঙ্গে করে নিয়ে যান চেনা মিস্ত্রির দোকানে। রহস্য সমাধান করেও হাতে কিছু আসে। শহরের সস্তা পাড়ায় ঘুপচি ফ্ল্যাটে সহায়ক বগলাকে নিয়ে তাঁর বাস।

"মানুষটির সঙ্গে এই ঘরটির অদ্ভুত মিল। বিচিত্র ছাঁটের, আর বেয়াড়া রং-চং-অলা এক আলখাল্লা-পরা কিকিরাকে বাড়িতে যেমনটি দেখায় এই ঘরটিও সেইরকম অদ্ভুত দর্শন। এ-ঘরে কী নেই? কিকিরার সিংহাসন-মার্কা চেয়ার ছাড়াও যত্রতত্র বিচিত্র সব জিনিস ছড়ানো। পুরনো দেওয়ালঘড়ি, চিনে মাটির জার, বড়-বড় পুতুল, কালো ভুতুড়ে আলখাল্লা, চোঙাঅলা সেকেলে গ্রামোফোন, ম্যাজিকওয়ালার আই বল, ফিতে জড়ানো ধনুক, পাদরিসাহেবের টুপি, ম্যাজিক ছাতা আর তলোয়ার, পায়রা-ওড়ানো বাক্স, টিনের চোঙ - কোনটা নয়! তার সঙ্গে এক-দু'মাস অন্তর জমানো ম্যাজিক-মশাল, গাঁজার কলকে, বাহারি মোমদান - এ-সব তো জমেই যাচ্ছে দিনের পর দিন।"[2]

"কাপালিকরা এখনও আছে" উপন্যাসে ঘটনাচক্রে ট্রেনের কামরায় কিকিরার সঙ্গে আলাপ হয় তারাপদ আর চন্দন ওরফে চাঁদুর। তারপর তাঁরা একত্রিত হয়ে একের পর এক রহস্যের সমাধান করতে থাকেন।[2]

পোশাকআশাক রংচঙে হলেও কিকিরা আদতে মারাত্মক মাটির মানুষ, জেরার সময় (যদি সেটাকে আদৌ জেরা বলা যায়) অভদ্রতা হবে ভেবে অনেক জরুরি প্রশ্ন করার আগেও থমকান, অনেকসময় কারও সঙ্গে প্রথমবার কথা বলেই নিশ্চিত হয়ে যান, লোকটা ভালো, কখনোই দুষ্কৃতী হতে পারে না।

কিকিরা রামপ্রসাদ থেকে নিধুবাবুর গান গাইতে পারেন, মাথা থেকে বার করে নানারকম রান্না করেন। কিসমিসের পকৌড়া, মুলতানি আলুর দম এইরকম অদ্ভুত সব খাবার।

কিকিরা অন্যের ইংরেজি বলা নিয়ে হাসেন না কারণ উনি যে জগতে চলাফেরা করেন সেখানে কেউ ইংরেজি বলে না, আর কিকিরার নিজের ইংরেজিও তথৈবচ। তিনি চন্দনকে স্যান্ডেলউড বলে ডাকেন, নাক ডাকার ইংরেজি করেন নোজ কলিং, তাঁকে যে হ্যান্ড বার্নিং করে খেতে হয় সেইজন্য আফসোস করেন। কিকিরার ইংরেজি নিয়ে তারাপদ চন্দন, এমনকী কিকিরা নিজেও হাসেন। সে হাসিতে কোনও পক্ষের তাচ্ছিল্য বা কুণ্ঠা জড়িয়ে নেই। কিকিরা কুকুর ভয় পান, এর পিছনে তাঁর অকাট্য যুক্তি, "গোয়েন্দারা সাহসী হয়, আমি ম্যাজিশিয়ান।"

কিকিরা সিরিজের কাহিনী

কিকিরা সিরিজের সবকটি উপন্যাসই প্রকাশিত হয়েছে আনন্দমেলা পত্রিকাতে। এগুলি পরবর্তীকালে আনন্দ পাবলিশার্স হইতে গ্রন্থাকারে বের হয়। কিছু কাহিনী বাদ দিয়ে অধিকাংশ রচনাই "কিকিরা সমগ্র"-এর প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় খণ্ডে সংকলিত হয়েছে। কিকিরাকে নিয়ে বিমলবাবু সম্ভবত ২০টি কাহিনী লিখেছেন, সেগুলি হল:

  • কাপালিকরা এখনও আছে
  • রাজবাড়ির ছোরা
  • ঘোড়া সাহেবের কুঠি
  • সেই অদৃশ্য লোকটি
  • শুদ্ধানন্দ প্রেতসিদ্ধ ও কিকিরা
  • ময়ূরগঞ্জের নৃসিংহ সদন
  • জাদুকরের রহস্যময় মৃত্যু
  • সার্কাস থেকে পালিয়ে
  • হলুদ পালক বাঁধা তীর
  • তুরুপের শেষ তাস
  • সোনার ঘড়ির খোঁজে
  • একটি ফোটো চুরির রহস্য
  • কৃষ্ণধাম কথা
  • ঝিলের ধারে একদিন
  • একটি অভিশপ্ত পুঁথি ও অষ্টধাতু
  • বাঘের থাবা
  • সোনালি সাপের ছোবল
  • হায়দার লেনের তেরো নম্বর বাড়ির কফিন বাক্স
  • নীল বানরের হাড়
  • ভুলের ফাঁদে নবকুমার

তথ্যসূত্র

  1. কিকিরা সমগ্র ৩ | প্রকাশক: আনন্দ পাবলিশার্স (প্রাঃ লিঃ)
  2. কিকিরা সমগ্র ১ | প্রকাশক: আনন্দ পাবলিশার্স (প্রাঃ লিঃ)
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.