কাস্তে-কোষ ব্যাধি
এটি একটি বংশগত হিমোগ্লোবিন-বিকার ঘটিত ব্যাধি যার প্রধান উপসর্গ রক্তাল্পতা। রোগটি সিকল সেল অ্যানিমিয়া নামে বেশি পরিচিত। এত রোগে রক্তের লোহিত রক্ত কোষগুলি কাস্তে আকৃতির দেখায় বলে এই নাম। এই লোহিত কণিকাগুলি অনমনীয় বলে প্লীহার ছাঁকনিতে আটকা পড়ে যায় ও তাড়াতাড়ি বিনষ্ট হয়। তাই এতে যে সরাসরি রক্তাল্পতা হয় তা রক্তনাশক বা হিমোলাইটিক ধরনের রক্তাল্পতা (তবে নিচে দেখুন অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়াও এই রোগের ক্রাইসিস দশায় কখনো কখনো হতে পারে)। তবে এই বংশগত রোগে মা ও বাবার থেকে আগত দুটি অ্যালিল-ই বিকৃত হলে এই ব্যাধি হয়। কিন্তু পিতা বা মাতার মধ্যে খালি একজনের থেকে আগত অ্যালিল বিকৃত হলে পুরোপুরি ব্যাধি হয় না সেই অবস্থাকে ব্যাধির বাহক বলে। পিতা ও মাতা দুজনেই বাহক না হলে ব্যাধি হয় না এবং দুজনেই বাহক হলেও ব্যাধি হবার সম্ভাবনা ২৫% (অটোজোমাল রিসেসিভ বংশগতি)। বাহকদের মৃদু রক্তাল্পতা হতে পারে। কিন্তু এর ফলে ম্যালেরিয়া ইত্যাদি কিছু রোগের বিরুদ্ধে অনাক্রম্যতা জন্মায়। তাই পৃথিবীর বেশ কয়েকটি ম্যালেরিয়া অধ্যুষিত অঞ্চলের জনতার মধ্যে এই ব্যাধির প্রাদুর্ভাব বেশি (যেমন আফ্রিকা)।
লোহিত রক্ত কোষগুলির অনমনীয়তার কারণ হিমোগ্লোবিন-এস, যার একটি অংশ (ছবিতে সবুজ) আঠালো হয়ে যাবার ফলে অনেক হিমোগ্লোবিন জুড়ে গিয়ে দড়ির মত জট পাকিয়ে যায়। হিমোগ্লোবিন এস একটি জিনগত ভাবে বিকৃত (মিউটেটেড) হিমগ্লোবিন- যার বিটা জিনের ষষ্ঠ অ্যামাইনো অ্যাসিডটি একটি বিন্দু-মিউটেশনের ফলে গ্লুটামিনের বদলে ভ্যালিনে পরিবর্তিত হয়। ভ্যালিন হাইড্রোফোবিক তাই আঠালো।
বিভিন্ন রকমের ক্রাইসিস
কাস্তে কোষ ব্যাধিতে রক্তাল্পতা (হিমোলাইটিক ক্রাইসিস) ছাড়া অন্যান্য উপসর্গের কারণও লোহিত কোষগুলির অনমনীয়তা। এর ফলে ছোট রক্তবাহগুলি মাঝে মধ্যে জ্যাম হয়ে যায়। ফলে সাময়িক রক্ত সরোবরাহের অভাবে স্থানীয় কলা-মৃত্যু ঘটতে পারে এবং এর ফলে নানা অঙ্গে ভয়ঙ্কর ব্যথা (পেইনফুল ক্রাইসিস) ও গোলযোগ দেখা দেয়। তাতে প্লীহার কিছু অংশ মরে শুকিয়ে ঝরে যেতে পারে, (autisplenectomy) বুকে ব্যাথা হতে পারে, মস্তিষ্কে স্ট্রোক, শিশ্নে প্রায়াপিজম, অস্থি মজ্জায় রক্ত উৎপাদনের অভাব (অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া বা অবর্ধক রক্তশূণ্যতা), সাল্মোনেলা ব্যাক্টেরিয়া দ্বারা অস্টিওমায়েলাইটিস ইত্যাদি হতে পারে। টেমপ্লেট:রক্তবিদ্যা