কালুরঘাট সেতু
কালুরঘাট সেতু কর্ণফুলী নদীর উপর প্রতিষ্ঠিত। প্রাগৈতিহাসিক যুগ হতে নদী পারাপারের জন্য স্থানটি কালুর ঘাট নামে নদী পারাপারে ভূমিকা রেখে আসলেও ১৯৩০ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে এ রেল সেতুটি নির্মিত হয়। স্থানীয় ভাবে কালুরঘাট সেতুটি কালুরঘাটের পোল নামে বহুল পরিচিত। সেতুটির বয়স বর্তমানে ৯০ বছরেরও বেশি। অনেক বছর আগেই (২০০১ সালে) এই সেতুটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। ২০১১ সালেও চুয়েটের একদল গবেষক আরেকবার ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছিলেন।[3]
কালুরঘাট সেতু | |
---|---|
স্থানাঙ্ক | ২২°২৩′৪৩″ উত্তর ৯১°৫৩′২৩″ পূর্ব[1] |
বহন করে | সব রকম যানবাহন |
স্থান | কালুরঘাট, চট্টগ্রাম |
বৈশিষ্ট্য | |
মোট দৈর্ঘ্য | ২৩৯ মিটার[2] |
ইতিহাস | |
নির্মাণকারী | ব্রুনিক এন্ড কোম্পানী ব্রীজ বিল্ডার্স হাওড়া |
চালু | ১৯৩০[2] |
অবস্থান | |
অবস্থান
বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের গোড়াপত্তনকারী কর্ণফুলী নদীর মোহনা হতে ৭/৮ মাইল উজানে কালুরঘাট নামক স্থানে এটি তৈরী হয়। যা স্থানিক বিবেচনায় চট্টগ্রাম শহর হতে দক্ষিণাংশে অবস্থিত।
গুরুত্ব
এটি কর্ণফুলী নদীর দ্বারা দ্বিখন্ডিত বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলাকে উত্তর ও দক্ষিণাংশে সংযুক্ত করে। আশি বছরের পুরাতন এ সেতুটি দক্ষিণাংশের একমাত্র সংযোগ মাধ্যম ছিল, এক দশক পূর্বে শাহ আমানত কর্ণফুলী সেতুর উদ্বোধনের পূর্ব পর্যন্ত। তাই একে দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বারও বলা হয়।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
যদিও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ঐতিহাসিক ভূমিকা রাখা কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রটি বহদ্দারহাট নামক স্থান সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত কিন্তু কালুরঘাটের দেশ ব্যাপী পরিচিতির সুবাদে এ কেন্দ্রটিও কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ নয় মাসে কালুরঘাট সেতুর পশ্চিম ও উত্তর পাড়ের দখল নিয়ে হানাদার বাহিনীর সাথে মুক্তি বাহিনীর যুদ্ধের ইতিহাস চিরস্মরণীয়। [4]
স্থাপত্য ইতিহাস
১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বার্মা ফ্রন্টের সৈন্য পরিচালনা করতে গিয়ে বৃটিশ সরকার, কর্ণফুলীর নদীর উপর একটি সেতুর অভাব অনুভব করেছিল। পরবর্তী সময়ে যুদ্ধের প্রয়োজনে বা যুদ্ধের সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করে একটি সেতু নির্মানের সিদ্ধান্ত গ্রহন করে, এবং সেই অনুযায়ী সেতুনির্মাণ প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করে। অর্থাৎ এক কথায় বলতে গেলে যুদ্ধাকালীন সময়ে ব্যবহারের জন্যে, ব্রিটিশ সৈন্যদের সুবিধার্থে এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু বৃটিশ সরকার কর্তৃক সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় স্থানীয় নৌকার মাঝিমাল্লা ও জেলে সম্প্রদায়ের লোকজন। যারা সাধারণ মানুষকে নৌকায় পারাপার করে এবং মৎস্য শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করত। তাদের ধারণা ছিল কর্ণফুলী নদীতে সেতু নির্মাণ হলে, তাদের জীবন জীবিকা নির্বাহ হুমকীর সম্মুখীন হবে। তৎকালীন সময়ে এতদঅঞ্চলে মাঝি ও জেলেদের নেতা ছিল ‘কালু’ মাঝি।
এলাকায় কুচকুচে কালো রঙের এই লোকটি অত্যন্ত সাহসী ও শক্তিশালী ছিল। ঐ সময় তার নেতৃত্বে স্থানীয় মাঝিমাল্লা জেলে সম্প্রদায়ের মানুষ সংঘটিত হয়। তাদের আন্দোলনের মুখে সেতু নির্মাণকারী কর্তৃপক্ষ তীব্র বিরোধীতার সম্মুখীন হয়। কিন্তু সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ ব্রিটিশদের সাথে পেরে উঠা কি সম্ভব? আন্দোলন চলাকালীন সময়ে হঠাৎ একদিন জলদাস সম্প্রদায়ের এই কালুমাঝি নিখোঁজ হয়ে পড়ে। বেশ কিছুদিন পর কর্ণফুলী নদীর পূর্বাংশে, প্রস্তাবিত সেতু নির্মাণের জায়গাটিতে তার মৃত দেহ ভেসে উঠে। নেতার মৃত্যুতে আন্দোলন স্থিমিত হয়ে যায়। এরপর ‘ব্রæনিক অ্যান্ড কোম্পানি ব্রিজ বিল্ডার্স হাওড়া’ নামক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সেতু তৈরীর আনুষ্ঠানিকতা ও বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহন সহজ হয়। অতঃপর ১৯৩০ সালে বর্তমান সেতুটি নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়, এবং একই বছর জুন মাসে এটি উদ্বোধন করা হয়। উল্লেখ্য নৌকা পারাপারে কালুমাঝি’র নিয়ন্ত্রিত সেই ঘাটটিতে, কালুর প্রভাব প্রতিপত্তির জন্যে, তার নামানুসারে পুরো এলাকাটি কালুরঘাট পরিচিতি পায় এবং কালক্রমে সেতুটির নামও কালুরঘাট (হালুরঘাডর ফোল) হয়ে যায়। একমুখী এই সেতুটিতে প্রথম ২৮ বছর পর্যন্ত রেল চলাচল করলেও ১৯৫৮ সাল থেকে সব ধরণের যান চলাচলের জন্যে উন্মুক্ত করা হয়। বর্তমানে এর বয়স ৯৩ বছর।[5] এটি ২৩৯ মিটার দীর্ঘ।[2]
চিত্রশালা
তথ্যসূত্র
- https://www.openstreetmap.org/way/232875499#map=17/22.39529/91.88974&layers=N.
- "ANALYSIS OF PROBLEMS" [সমস্যার বিশ্লেষণ] (পিডিএফ)। বাংলাদেশ রেলওয়ে (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-২৭।
- ""ঝুঁকিপূর্ণ" কালুরঘাট সেতুই ভরসা"। দৈনিক প্রথম আলো। ১৯ জুন ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুন ২০২১।
- মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম : কিছু স্মৃতি কিছু বিস্মৃতি
- "কালুরঘাট সেতু"। বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন।