কার্ল লিনিয়াস

কার্ল লিনিয়াস (সুয়েডীয় ভাষায়: Carl Linnaeus; লাতিন ভাষায়: Carolus Linnaeus, ক্যারোলাস লিনিয়াস) (২৩শে মে[1] পুরাতন নিয়মে ১৩ই মে, ১৭০৭ - ১০ই জানুয়ারি, ১৭৭৮) প্রখ্যাত সুয়েডীয় উদ্ভিদবিজ্ঞানী, চিকিৎসক ও প্রাণীবিজ্ঞানী যিনি আধুনিক দ্বিপদী নামকরণের ভিত্তি স্থাপন করে গিয়েছিলেন। তাকে আধুনিক শ্রেণীবিন্যাসবিদ্যার জনক বলা হয়। এছাড়া তিনি আধুনিক বাস্তুবিজ্ঞানের জনকদের মধ্যে অন্যতম।

কার্ল লিনিয়াস (Carl von Linné)
আলেকজান্ডার রোজলিনের তুলিতে লিনিয়াসের পোর্ট্রেট। বর্তমানে রাজকীয় সুয়েডীয় বিজ্ঞান একাডেমিতে আছে।
জন্ম(১৭০৭-০৫-১৩)১৩ মে ১৭০৭
Råshult, Älmhult, সুইডেন
মৃত্যুজানুয়ারি ১০, ১৭৭৮(1778-01-10) (বয়স ৭০)
উপসালা, সুইডেন
জাতীয়তাসুয়েডীয়
মাতৃশিক্ষায়তনউপসালা ইউনিভার্সিটি
University of Harderwijk
পরিচিতির কারণশ্রেণিবিন্যাসবিদ্যা
বাস্তুবিজ্ঞান
উদ্ভিদবিজ্ঞান
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
কর্মক্ষেত্রপ্রাণিবিজ্ঞান, চিকিৎসাবিজ্ঞান, উদ্ভিদবিজ্ঞান
Author abbrev. (botany)L.
স্বাক্ষর
টীকা

The coat of arms of Carl von Linné.

ফরাসি দার্শনিক জঁ-জাক রুসো তাকে একটি বার্তা পাঠিয়েছিলেন এই বলে: "তাকে বলো আমি পৃথিবীতে তার চেয়ে মহান কোন ব্যক্তিকে চিনি না।""[2] জার্মান দার্শনিক ইয়োহান ভোল্‌ফগাং ফন গোটে লিখেছিলেন: "শেক্সপিয়ার ও স্পিনোজাকে বাদ দিলে পৃথিবীতে এ পর্যন্ত বাস করে যাওয়া সকল মানুষের মধ্যে আমার উপর লিনিয়াসের প্রভাবই ছিল সবচেয়ে বেশি।""[2] সুয়েডীয় লেখক August Strindberg লিখেছেন: "লিনিয়াস আসলে ছিলেন একজন কবি, কীভাবে যেন প্রকৃতিবিদ হয়ে গেছেন।"[3]

জীবনী

লিনিয়াসের জন্ম দক্ষিণ সুইডেনের সামালান্দের এক গ্রামে। তার পূর্বপুরুষ কেউই শেষ নাম ব্যবহার করতেন না। তাদের নাম রাখা হতো স্ক্যান্ডিনেভীয় দেশের প্যাট্রোনিমিক (পিতার নামের সাথে সংযুক্ত) নিয়মে। তার বাবাই প্রথম শেষ নামের প্রচলন করেন। বাড়ির সামনের এক বিশাল লিন্ডেন গাছের নামানুসারে লিনিয়াস নামটিই বেছে নেন।ক্যারোলাস লিনিয়াসের জন্ম ১৭০৭ সালে সুইডেনের স্মেলেন প্রদেশের র‌্যাশাল গ্রামে। পিতা নিলস লিনিয়াস গির্জার পাদরি। মা-বাবা চেয়েছেন তিনিও যাজক হবেন, কিন্তু হলেন চিকিৎসক।খনিজ, উদ্ভিদ নিয়ে লেখালেখি করে পরিচিতি লাভ করেন তিনি। লিনিয়াস শিক্ষাজীবনের অধিকাংশ সময়ই কাটিয়েছেন উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ে১৭৩০ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ১৭৩৫ থেকে ১৭৩৮ সাল পর্যন্ত বিদেশে ছিলেন এবং এ সময়ই নেদারল্যান্ড থেকে তার Systema Naturae গ্রন্থের প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এরপর সুইডেনে ফিরে এসে উপসালাতে উদ্ভিদবিজ্ঞানের অধ্যাপক পদে যোগ দেন। ১৭৪০-এর দশকে বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর শ্রেণীবিন্যাস করার জন্য তাকে সুইডেনের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়েছিল। ১৭৫০ ও ৬০-এর দশকে তিনি এই শ্রেণীবিন্যাস চালিয়ে যান এবং ভলিউম ভলিউম বই প্রকাশ করেন। অনেক প্রাণী বা উদ্ভিদের দ্বিপদী নামের শেষে যে নাম রেখেছেন তার নামের সংক্ষিপ্ত রূপ স্থান পায়। লিনিয়াস যে নামগুলো রেখেছেন সেগুলোর শেষে "L" অক্ষরটি থাকে। মৃত্যুর সময় সমগ্র ইউরোপ জুড়ে অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। তিনি ১৭৭৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন। কবরের নামফলকে শেষ ইচ্ছানুসারে লিনিয়াসের নামের পাশে হোমো স্যাপিয়েন্স শব্দটি যুক্ত হয়েছে।[4]

দ্বিপদী নামকরণ

সুইডিশ ক্যারোলাস লিনিয়াসই প্রথম জীবজগৎকে উদ্ভিদ ও প্রাণিকুলে শ্রেণীভাগ করেন। এই অর্থে তিনি হলেন জীবজগৎ শৃঙ্খলাবদ্ধ করার প্রথম প্রবক্তা।লিনিয়াস উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতিগুলোর নামকরণের নৈরাজ্য দূর করে দ্বিপদী নামকরণ চালু করেন। তার প্রবর্তিত নামকরণের আগে বিভিন্ন প্রজাতির বৈজ্ঞানিক নাম ছিল অনেক দীর্ঘ। লিনিয়াস মানুষ প্রজাতির নাম রাখেন হোমো স্যাপিয়েন্স। লিনিয়াস ভিন্নার্থে এটি ব্যবহার করেছিলেন—হোমো স্যাপিয়েন্স হলো—হোমো ‘নসে তে ইপসাম’ অর্থাৎ ম্যান নো দাইসেলফ—আত্মানং বিধ্বি, মানুষ নিজেকে জানো। গভীরতর অর্থবহ এই অভিধা। আগেও মানুষ ছিল হোমো ইরেকটাস, হোমো হ্যাবিলিস, হোমো নিয়ানডারথেলেনসিস ইত্যাদি। তারা লোপ পেয়ে গেছে। সাত হাজার ৭০০ প্রজাতির উদ্ভিদ ও চার হাজার ৪০০ প্রাণীর নামকরণ ছাড়াও তিনি স্পিসিস প্লান্টারাম (১৭৫৩), জেনেরা প্লান্টারাম (১৭৫৪) ও সিস্টেমা ন্যাচারই (১৭৫৮) বইয়ের লেখক। প্রথম দুটি উদ্ভিদ ও তৃতীয়টি প্রাণীর শ্রেণীবিন্যাস ও নামকরণবিষয়ক এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। আধুনিক বিবর্তন-প্রভাবিত নতুন নতুন শ্রেণীবিন্যাস পদ্ধতির দ্বারা লিনিয়াসের যৌন শ্রেণীবিন্যাস প্রতিস্থাপিত হলেও তার নামকরণের নিয়ম এবং ক্রিয়াপদবর্জিত বর্ণনা পদ্ধতি আজও চালু আছে।[4]দ্বিপদ নামকরণ পদ্বতি একটি মজার ব্যাপার হলো নাম শুনলেই চিনে ফেলা।

পাদটীকা

    তথ্যসূত্র

    1. Carl Linnaeus was born in 1707 on 13 May (Swedish Style) or 23 May according to the modern calendar. According to the Julian calendar he was born 12 May. (Blunt 2004, p. 12)
    2. "What people have said about Linnaeus"Linné on lineUppsala University। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০১১
    3. "Linnaeus deceased"Linné on lineUppsala University। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০১১
    4. ক্যারোলাস লিনিয়াস ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৮-০৪-০২ তারিখে,সুধীর কুমার দত্ত, দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ০৩-০৬-২০১২ খ্রিস্টাব্দ।

    বহিঃসংযোগ

    This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.