কার্বি ভাষা
কার্বি ভাষা উত্তর-পূর্ব ভারত এবং উত্তর-পূর্ব বাংলাদেশের কার্বি লোকরা ('মিকিরো বা আর্লেং) বলা ভাষা। এটি চীনা-তিব্বতীয় ভাষা পরিবারর অন্তর্গত কিন্তু এর স্থান স্পষ্ট নয়। শাফার (১৯৭৪) এবং ব্রেডলী (১৯৯৭) মিকির ভাষাকে এক পথচ্যুত (aberrant) কুকি-চিন ভাষা বলে শ্রেণীবদ্ধ করেছেন, অন্যদিকে থারগুড (২০০৩) একে শ্রেণীবদ্ধ না করে চীনা-তিব্বতীদের মধ্যে রেখেছেন। ব্লেন্স এবং পোস্ট (২০১৩) একে গোটা ভাষা পরিবারটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাষার একটি বলেছেন।
কার্বি | |
---|---|
আর্লেং (Arleng) | |
অঞ্চল | আসাম, মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশ |
জাতিতত্ত্ব | কার্বি |
মাতৃভাষী | 5,28,503 (2011)[1]
|
চীনা-তিব্বতি
| |
ভাষা কোডসমূহ | |
আইএসও ৬৩৯-৩ | দুইয়ের মধ্যে এক:mjw – কার্বিajz – কার্বি ভৈয়াম (আমরি) |
গ্লোটোলগ | karb1240 [2] |
ধুমুরালী / কামরূপ কার্বির বাইরে কথিত ভাষাটির স্থানবিশেষে বিশেষ পার্থক্য নেই। মান্য ভাষারূপে সাধারণত ডিফু অঞ্চলের কথিত ভাষাটিকে ধরা হয়।[3]
ইতিহাস
উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রায়গুলি ভাষার মতো কার্বি ভাষাও রোমান লিপিতে এবং কখনও অসমীয়া লিপিতে লেখা হয়। সবচেয়ে পুরানো কার্বি লিখিত পাঠ্যগুলি আমেরিকান বাপ্টিস্ট মিশন এবং ক্যাথলিক গীর্জার খ্রীস্টান মিশনারীরা উদ্ধার করে। মিশনারীরা ১৯০৩ সালে Birta নামের একটি কার্বি সংবাদপত্র ছাপাতেন। রেভারেণ্ড আর এটি নেইবরের ১৮৭৮ সালে প্রকাশিত 'Vocabulary of English and Mikir, with Illustrative Sentences' কে প্রথম কার্বি অভিধান বলা যায়। চার্ডোকা পেরিন কে'র ১৯০৪ সালে প্রকাশিত 'English–Mikir Dictionary' , স্যার চার্লস লিয়াল এবং এডবার্ড ষ্টেকের ১৯০৮ সালে প্রকাশিত কার্বিদের জনগোষ্ঠীয় বিবরণের প্রথম দলিল The Mikirs এবং গি ডি বাকারর ১৯২৫ সালের 'A Dictionary of the Mikir Language' ইত্যাদিগুলি কার্বি লোক, ভাষা এবং ব্যাকরণর কয়েকটি পূর্ণ গ্রন্থ।
কার্বিদের কথিত ভাষাও শহকী। এরে এক উদাহরণ মোসেরা (Mosera বা অতীতর সোঁবরণ) যেখানে কার্বিদের উৎপত্তি এবং প্রব্রজন বর্ণনা করা হয়।
ভিন্নতা
কোনার্থ (২০১৪) কার্বি ভাষার দুটি রূপ দেখিয়ে দিয়েছে।
- পার্বত্য কার্বি: আসামের কার্বি আংলং জেলার রংখাং উপভাষা।
- ভৈয়ামর কার্বি (ডোম্রা কার্বি): আসামের কামরূপ জেলা এবং মরিগাঁও জেলা এবং মেঘালয়ের রি-ভৈ জেলাতে বলা হয়।
ধ্বনি
কার্বি ভাষায় সাতটা স্বরবর্ণ এবং উনিশটা ব্যঞ্জনবর্ণ উচ্চারণ হয় (দুটি মিলে ছাব্বিছটা)। স্বরবর্ণগুলির হ্রস্ব এবং দীর্ঘর পার্থক্য নেই। তলার তথ্যসমূহ কোনার্থের (২০১৭) থেকে উদ্ধৃত।[4]
শুরুর ব্যঞ্জনবর্ণ
ওষ্ঠ্য | দন্তমূলীয় | তালব্য | পশ্চতালব্য | কণ্ঠনালীয় | ||
---|---|---|---|---|---|---|
বিরাম | অল্পপ্রাণ-কণ্ঠীয় | p | t | c | k | |
অল্পপ্রাণ-অকণ্ঠীয় | b | d | ɟ~j | |||
মহাপ্রাণ | pʰ~ɸ | tʰ | kʰ | |||
উষ্ম | β~w | s | h | |||
নাসিক্য | m | n | ||||
লুঠিত | r~ɾ | |||||
সমকারক | l | ɟ~j | ||||
শেষর ব্যঞ্জনবর্ণ
দ্বৌষ্ঠ্য | দন্তমূলীয় | তালব্য | পশ্চতালব্য | কণ্ঠনালীয় | ||
---|---|---|---|---|---|---|
বিরাম | p | t | k | |||
নাসিক্য | m | n | ŋ | |||
লুঠিত | r~ɾ~ɹ | |||||
স্বরবর্ণ
প্রান্তীয় | কেন্দ্রীয় | মূলীয় | |
---|---|---|---|
উচ্চ | /i/ | /u/ | |
উচ্চ-মধ্য | /e/ | /o/ | |
নিম্ন | /a/ |
কার্বির যুক্তাক্ষর | (ei) | ai | oi | ui |
---|
শব্দাংশের গঠন
কার্বি শব্দাংশ মুক্ত (C)(C)V(V) বা বন্ধ (C)(C)VC হতে পারে।এমনধরনের ব্যঞ্জন গোষ্ঠীর সংযোগ হতে পারে: /pl pr pʰl pʰr tʰr kl kr kʰr/.
অসমীয়ার প্রভাব
কার্বি ভাষায় বহু অসমীয়া মূলের শব্দ পাওয়া যায়। কার্বি উচ্চারণে বহুকিছুই অন্য রূপ নিয়েছে। যেমন- চারিজন বুঢ়া> চারবুরা, ঘর> কহর, মধুরী আম> মাদুরাম, ঘণ্টা> খন্তা ইত্যাদি। কিতাপ, আলহী, আপদ, কেরাহী ইত্যাদি শব্দ একই রূপে ব্যবহার হয়।[3]
শব্দ গঠন
মিচিং ভাষায় দুটি শব্দের সংযোগে নতুন একটি শব্দের গঠন হওয়ার মতো কার্বি ভাষায়ও এমন উদাহরণ পাওয়া যায়। এমনভাবে সৃষ্টি হওয়া নতুন শব্দটিতে সাধারণত মূল শব্দ দুটির প্রথম অংশ লোপ পায় এবং দ্বিতীয় অংশটি থেকে যায়। অবশ্য এর ব্যতিক্রমও আছে। উদাহরণস্বরূপ – আরলং+কেচর= লংচর, তমন+কেদেং= মনদেং, কিন্তু থেংপি+আফাং= থেংফাং, কেলোক+পিক= লক্পিক ইত্যাদি।[3]
ভৌগোলিক বিতরণ
কার্বি ভাষা উত্তর-পূর্ব ভারতের এই স্থানসমূহে বলা হয়।
- আসাম:
- দরং জেলা
- ডিমা হাছাও জেলা
- পূর্ব কামরূপ জেলা
- হোজাই জেলা
- কামরূপ মহানগর জেলা
- কার্বি আংলং জেলা
- লখিমপুর জেলা
- মরিগাঁও জেলা
- নগাঁও জেলা
- শোণিতপুর জেলা
- দক্ষিণ কামরূপ জেলা
- পশ্চিম কার্বি আংলং জেলা
- অরুণাচল প্রদেশ:
- মেঘালয়:
- পূর্ব খাসি পাহাড় জেলা
- জয়ন্তীয়া পাহাড় জেলা
- রি-ভৈ জেলা
- পশ্চিম খাসি পাহাড় জেলা
- নাগাল্যান্ড:
- ডিমাপুরের কাছের-পাজরের অঞ্চল
তথ্যসূত্র
- http://www.censusindia.gov.in/Census_Data_2001/Census_Data_Online/Language/Statement1.aspx 2001 census
- হ্যামারস্ট্রোম, হারাল্ড; ফোরকেল, রবার্ট; হাস্পেলম্যাথ, মার্টিন, সম্পাদকগণ (২০১৭)। "Karbic"। গ্লোটোলগ ৩.০ (ইংরেজি ভাষায়)। জেনা, জার্মানি: মানব ইতিহাস বিজ্ঞানের জন্য ম্যাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউট।
- বরুয়া, ভীমকান্ত (২০০৩)। আসামের ভাষা। গুয়াহাটী: বনলতা। পৃষ্ঠা ১৫৩–১৫৪।
- Konnerth, Linda. 2017. "Karbi." In The Sino-Tibetan Languages (2017).
- Konnerth, Linda (২০১৪)। A Grammar of Karbi (PhD)। University of Oregon। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০২-০৩।