কান্নাতিল মুত্তামিত্তাল

কান্নাতিল মুত্তামিত্তাল (তামিল: கன்னத்தில் முத்தமிட்டால், অনুবাদ 'পাখির আদরের চুম্বন') হচ্ছে ২০০২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি তামিল চলচ্চিত্র যেটি মণি রত্নম প্রযোজনা এবং পরিচালনা করেছিলেন। সুজাতা এর লেখা ছোটো গল্প আমুদাভুম আভানুম অবলম্বনে এই চলচ্চিত্রটির কাহিনী নির্মিত হয়েছিলো। মাধবন, সিমরান এবং পি এস কীর্তানা চলচ্চিত্রটিতে মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন, সহ-ভূমিকায় ছিলেন নন্দিতা দাস, জে ডি চক্রবর্তী, প্রকাশ রাজ এবং পশুপতি। চলচ্চত্রটির চিত্রগ্রাহক ছিলেন রবি কে চন্দ্র এবং সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন এ আর রহমান

কান্নাতিল মুত্তামিত্তাল
পরিচালকমণি রত্নম
প্রযোজকমণি রত্নম
জি শ্রীনিবাস
রচয়িতাসুজাতা রঙ্গরাজন (সংলাপ)
চিত্রনাট্যকারমণি রত্নম
কাহিনিকারসুজাতা রঙ্গরাজন (আসল গল্প)
মণি রত্নম (গল্প সংকলন)
শ্রেষ্ঠাংশেমাধবন
সিমরান
পি এস কীর্তানা
নন্দিতা দাস
প্রকাশ রাজ
জে ডি চক্রবর্তী
পশুপতি
শশীকুমার
ঈশ্বরী রায়
সুরকারএ আর রহমান
চিত্রগ্রাহকরবি কে চন্দ্র
সম্পাদকএ শ্রীকর প্রসাদ
প্রযোজনা
কোম্পানি
মাদ্রাজ টকিজ
পরিবেশকমাদ্রাজ টকিজ
মুক্তি
  • ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০০২ (2002-02-14)
দৈর্ঘ্য১৩৭ মিনিট
দেশভারত
ভাষাতামিল

চলচ্চিত্রটির কাহিনী শ্রীলংকার গৃহযুদ্ধ এর একটি বাচ্চাকে দত্তক নেয়া নিয়ে, মাধবন এবং সিমরান বাচ্চাটি দত্তক নেয়। চলচ্চিত্রটি ৬টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (ভারত), তিনটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার দক্ষিণ[1] এবং ৭টি তামিলনাড়ু রাজ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলো, তন্মধ্যে পরিচালক মণি রত্নম শ্রেষ্ঠ পরিচালক বিভাগে তামিলনাড়ু রাজ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন। অভিনেত্রী সিমরান ফিল্মফেয়ার সেরা অভিনেত্রী পুরস্কার - তামিল পেয়েছিলেন।

কাহিনীসংক্ষেপ

শ্রীলঙ্কায় গৃহযুদ্ধ চলাকালীন এক নারী গর্ভবতী হয় যার নাম শ্যামা, সে উত্তর শ্রীলঙ্কা দিয়ে ভারতের তামিলনাড়ুতে (রামেশ্বরম) পালিয়ে আসে বেশ কয়েকজনের মানুষের সঙ্গে, ওখানে তার বাচ্চা প্রসব হয়। বাচ্চাটিকে ভারতীয় নাগরিক তিরুসেলভান এবং ইন্দিরা দত্তক নেয়। তিরুসেলভান হচ্ছে একজন ঔপন্যাসিক যে তার স্ত্রীর নাম দিয়ে উপন্যাস প্রকাশ করে। তিরুসেলভান-ইন্দিরা দম্পতির আরো দুটি পুত্রসন্তান হয় পরে। শ্যামার বাচ্চার নাম তারা আমুদা রাখে এবং শ্যামাকে একদিন (শ্যামার বয়স তখন ৯) তিরুসেলভান সত্য বলে দেয় যে সে তাদের নিজের মেয়ে নয়। আমুদা পরে অনুসন্ধানের জন্য রামেশ্বরম চলে যায় প্রদীপ নামের একটি ছেলের সঙ্গে যে তিরুসেলভানের বোনের ছেলে।

তিরুসেলভান আর ইন্দিরা পরে আমুদাকে নিয়ে শ্রীলঙ্কা চলে যায়, এবং ওখানে শ্রীলঙ্কা সেনাবাহিনীর সঙ্গে স্থানীয় উগ্রপন্থী তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সংঘর্ষ অবলোকন করে। অনেক কষ্টে তারা শ্যামাকে খুঁজে পায় কিন্তু শ্যামা আমুদাকে নিজের কাছে নিতে চায়না কারণ সে একজন তামিল গেরিলা যোদ্ধা, সে আমুদাকে তিরুসেলভান আর ইন্দিরার সঙ্গেই থাকতে বলে।

অভিনয়ে

  • মাধবন - তিরুসেলভান
  • সিমরান - ইন্দিরা
  • পি এস কীর্তানা - আমুদা
  • নন্দিতা দাস - শ্যামা
  • প্রকাশ রাজ - ডক্টর হ্যারোল্ড বিক্রমসিংহ
  • জে ডি চক্রবর্তী - দিলীপ
  • দিল্লী কুমার - ডি গণেশ
  • পশুপতি - পশুপতি
  • বল সিং - দেবনাথ
  • এম এস ভাস্কর - শঙ্করলিঙ্গ
  • শশীকুমার - আত্মঘাতী বোমাহামলাকারী
  • কমলা কৃষ্ণস্বামী
  • ঈশ্বরী রায় - অন্য শ্যামা
  • সিদ্ধার্থ - বাসযাত্রী (কৃতিত্ব দেওয়া হয়নি)
  • শেফালী চৌধুরী - শরণার্থী (কৃতিত্ব দেওয়া হয়নি)

প্রযোজনা

মণি রত্নম আগে নিজের চলচ্চিত্র বের করার আগে ঐ চলচ্চিত্রটি সম্পর্কে কোনো তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ করতেন না, ২০০১ সালের শুরুর দিকে এই কান্নাতিল মুত্তামিত্তাল চলচ্চিত্র সম্পর্কে ছোটো-খাটো খবর পাওয়া গিয়েছিলো যদিও ভুল নামে, অনেকে বলেন মাঞ্জলা কুড়াই (বাংলা অর্থ: হলুদ ছাতা) কিংবা কুড়াইগাল (বাংলা অর্থ: ছাতাগুলো) নামে একটি চলচ্চিত্র বের করতে চলেছেন মণি।[2] চলচ্চিত্রটির কাহিনী মণির আগের তিনটি যুদ্ধ এবং প্রেমের সংমিশ্রণ ভিত্তিক চলচ্চিত্র রোজা (১৯৯২), বম্বে (১৯৯৫) এবং দিল সে.. (১৯৯৮) এর মত হবে বলে অনেকে বলাবলি করছিলো। নারী গেরিলা যোদ্ধা নিয়ে মণি কাহিনী বানাবেন বলে মনস্থির করেছিলেন এবং ওখানে প্রেম-ভালোবাসাও থাকবে বলে তিনি চিন্তা করেন, এরপর শ্রীলংকার গৃহযুদ্ধ নিয়ে একটি চলচ্চিত্র বানানোর পরিকল্পনা মণি চূড়ান্ত করেছিলেন যেখানে একজন নারী গেরিলা যোদ্ধার গর্ভ নিয়ে গল্প থাকবে।[3] মাধবনকে মণি চলচ্চিত্রটির মুখ্য ভূমিকায় নেওয়ার কথা ভেবেছিলেন এবং তাকেই নিয়েছিলেন, মাধবন এর আগে মণির আলাইপায়ুদে (২০০০) এবং তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান মাদ্রাজ টকিজ এর দম দম দম (২০০১) এ জ্যোতিকার সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন। ইন্দিরা চরিত্রের জন্য মণি রাণী মুখার্জী, সৌন্দর্য সত্যনারায়ণ, ভূমিকা চাওলা এবং স্নেহাকে নেওয়ার কথা ভেবেছিলেন, পরে সিমরানকে নেন তিনি।[4] সিমরান এই চলচ্চিত্র দ্বারা মাধবনের সঙ্গে দুইবার জুটিবদ্ধ হবার সুযোগ পেয়েছিলেন, সিমরান কৈলাস বলচন্দের চলচ্চিত্র পারথালে পারাভাসাম (২০০১) এ মাধবনের সঙ্গে কাজ করেছিলেন।[5] নন্দিতা দাস তামিল গেরিলা নারীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, এই চলচ্চিত্রই ছিলো তার জীবনের প্রথম তামিল ভাষার চলচ্চিত্র, তিনি বলেন যে তাদেরকে প্রতিদিন তেরো ঘণ্টা ধরে শুটিং করতে হতো।[6] আমুদার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন শিশুশিল্পী পি এস কীর্তানা, যিনি অভিনেতা পার্তিবান এবং অভিনেত্রী সীতার সন্তান ছিলেন, প্রকাশ রাজ হ্যারোল্ড বিক্রমসিংহ নামের একজন সিংহলী ব্যক্তির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। মণি অভিনেতা বিক্রমকে আমুদার বাবার চরিত্রে নিতে চেয়েছিলেন, বিক্রম রাজী না হলে পরে জে ডি চক্রবর্তী ঐ চরিত্রে অভিনয় করতে রাজী হন।[7]

২০০১ সালের জুলাই মাসে চলচ্চিত্রটির নাম কান্নাতিল মুত্তামিত্তাল রাখা হয়, নামটি কবি সুব্রমণিয়া ভারতীর একটি কবিতার লাইন থেকে নেওয়া হয়। শ্রীলঙ্কার দৃশ্যগুলো ভারতেই হয়েছিলো, যেমনঃ কলম্বো শহরের দৃশ্য পুদুচেরীতে এবং তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের একটি দৃশ্য কেরালা প্রদেশের একটি জঙ্গলে হয়েছিলো, এছাড়া বাকী সব দৃশ্য ভারতেই শুটিং করা হয়েছিলো।[8][9]

গানের তালিকা

বৈরামুথুর গীতিতে সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন এ আর রহমান, একটি সিংহলী গানের গীতি শ্রীলঙ্কার আব্দুল হামিদ লিখেছিলেন। বৈরামুথু সেরা গীতিকার বিষয়শ্রেণীতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন।[10]

নংগানকণ্ঠশিল্পীদৈর্ঘ্যনোট
"ভেল্লাই পুক্কাল" এ আর রহমান ৫ঃ০৫
"সুন্দরী" হরিহরণ, টিপু, সুজাতা মোহন, কার্তিক, শ্রীমধুমিতা ৪ঃ৩৯
"কান্নাতিল মুত্তামিত্তাল" চিন্ময়ী, পি জয়চন্দ্র ৬ঃ২৪
"সিংহলী গান"
"ভিদাই কোড়ু এঙ্গাল নাদে" এম এস বিশ্বনাথ, বলরাম, ফবি মণি, এর আর রেহানা, মণিকা বিনয়গম ৬ঃ১৬
"কান্নাতিল মুত্তামিত্তাল" পি জয়চন্দ্র, চিন্ময়ী ৫ঃ২৮
"সাত্তেনা নেনাইনদাদু নেঞ্জাম" মিনমিনি ১ঃ৫৫ ওএসটির অতিরিক্ত গান

তথ্যসূত্র

  1. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৮ আগস্ট ২০০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ আগস্ট ২০০৪
  2. "S U B A S"। Cinematoday3.itgo.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৮-০৫
  3. "Wistful after V-Day"The Hindu। Chennai, India। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০০২। ৩০ নভেম্বর ২০০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুলাই ২০১৯
  4. "rediff.com, Movies: Simran: Absolutely hot!"। Rediff.com। ২০০১-০৬-১৪। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৮-০৫
  5. "A success story unfolds"The Hindu। Chennai, India। ৯ নভেম্বর ২০০১। ২৩ জুন ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ আগস্ট ২০১৯
  6. "The Tribune, Chandigarh, India - Arts Tribune"। Tribuneindia.com। ২০০১-০৭-২৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৮-০৫
  7. http://www.caravanmagazine.in/arts/man-steel?page=0,3
  8. "Director Mani Rathnam and P S Keerthana Chat Transcript"। Geocities.ws। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৮-০৫
  9. "It's All There"The Times Of India। জুলাই ২০০১। ৯ অক্টোবর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০১৩
  10. "50th National Film Awards"International Film Festival of India। ১৯ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মার্চ ২০১২

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.