কাদম্বরী
কাদম্বরী (সংস্কৃত: कादम्बरी) সংস্কৃত সাহিত্যের এক মহান উপন্যাস । এই উপন্যাসের রচয়িতা বাণভট্ট । এটি বিশ্বের প্রাচীনতম তথা প্রথম উপন্যাস হিসেবে বিবেচনা করা যায় । উপন্যাসটি বাণভট্টের জীবনকালে সমাপ্ত করতে পারেন নাই । বাণভট্টের মৃত্যুর পর তাঁর ভুষণভট্ট রচনাটি সম্পূর্ণ করেছেন । বাণভট্ট দ্বারা রচিত অংশটি পূর্বভাগ ও ভূষণভট্ট দ্বারা রচিত অংশটি উত্তরভাগ নামে পরিচিত। উপন্যাসটি ইংরেজি সহ ভারতের বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদিত হয়েছে। তারাশঙ্কর তর্করত্ন মহাশয় উপন্যাসটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন।
সংক্ষিপ্ত কাহিনী
উপন্যাসটিতে দুই মিত্রের তিন জন্মের প্রেম কাহিনী লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। একজন মিত্রের নাম পুণ্ডরীক তিনি দ্বিতীয় জন্মে বৈশম্পায়ন ও তৃতীয় জন্মে শুকরূপে অর্থাৎ তোতাপাখি রূপে জন্মগ্রহণ করেন। অপর মিত্র চন্দ্রদেব তিনি দ্বিতীয় জন্মে চন্দ্রাপীড় ও তৃতীয় জন্মে শূদ্রক রূপে জন্মগ্রহণ করেন। শূদ্রক রাজার রাজসভা থেকে কাহিনীটি শুরু করা হয়। একদিন এক চণ্ডালকন্যা একটি তোতাপাখি নিয়ে শূদ্রক রাজার রাজসভায় আসেন। কন্যাটি পাখিটিকে রাজার কাছে দান করেন। পাখিটি মানুষের মত কথা বলিতে পারে ও হিন্দুশাস্ত্র, বেদ, উপনিষদের সমুদয় জ্ঞান জানিত ফলে রাজা পাখিটির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তাঁর জীবনবৃত্তান্ত জানার আগ্রহ করে। তখন পাখিটি রাজাকে কাহিনী শুনিয়ে বলেন যে একসময়ে উজ্জীয়ন নগরে চন্দ্রাপীড় নামক এক রাজার বৈশম্পায়ন নামক এক মন্ত্রীপুত্রের সাথে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল। একদিন গভীর অরণ্যে মহাশ্বেতা ও কাদম্বরী নামক সুন্দরী কন্যার সাথে তাঁদের পরিচয় হয়। এদিকে কাদম্বরী ও চন্দ্রাপীড়ের সম্পর্ক প্রণয়ের রূপ নেয়। অন্যদিকে বৈশম্পায়ন মহাশ্বেতার প্রতি অতি আকৃষ্ট হয়ে উঠে। কিন্তু মহাশ্বেতা এই সম্পর্কে আগ্রহ প্রকাশ করেন না। কারণ তিনি পুণ্ডরীক নামক এক মৃত ব্যক্তির প্রণয়ী কিন্তু তাঁর নিকট উপস্থিত বৈশম্পায়ন যে পুণ্ডরীকের দ্বিতীয় জন্ম একথা মহাশ্বেতা ও বৈশম্পায়ন কেউ জানতেন না । অবশেষে মহাশ্বেতা কুপিত হয়ে বৈশম্পায়নকে শুকপক্ষী অর্থাৎ তোতাপাখি হওয়ার অভিশাপ দেন । ফলে তিনি তোতাপাখি রূপে জন্ম নেন । এদিকে প্রিয় মিত্রের অভিশাপের কথা শুনে চন্দ্রাপীড় দেহত্যাগ করেন। তোতাপাখির কাহিনী সমাপ্ত করার পর চণ্ডালকন্যা শূদ্রকরাজাকে বলেন যে তিনিই পূর্বজন্মে চন্দ্রাপীড় ছিলেন । অবশেষে শূদ্রক রাজার পূর্বজন্ম বৃত্তান্ত সকল স্মরণ হয় ও তিনি চন্দ্রাপীড়ের বেশ ধারণ করেন এবং তোতাপাখি পুণ্ডরীকের বেশে চলে আসে। তারপর তাঁরা নিজ নিজ প্রণয়ী কাদম্বরী ও মহাশ্বেতার সহিত মিলিত হয়। এখানেই কাহিনীর সমাপ্তি ঘটে।