কাজী কৃষ্ণকলি ইসলাম
কাজী কৃষ্ণকলি ইসলাম হলেন একজন বাংলাদেশী সঙ্গীতশিল্পী ও গীতিকার। তিনি ২০০৭ সালে সূর্যে বাঁধি বাসা অ্যালবাম দিয়ে আত্মপ্রকাশ করেন।[1] ২০০৯ সালে তিনি এই অ্যালবামের "যাও পাখি" গানের জন্য মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার লাভ করেন। পরের বছর মনপুরা চলচ্চিত্রে "যাও পাখি বলো তারে" গানে কণ্ঠ দিয়ে তিনি প্রথমবারের মত শ্রেষ্ঠ নারী কণ্ঠশিল্পী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।[2]
কাজী কৃষ্ণকলি ইসলাম | |
---|---|
জন্ম নাম | কাজী শ্রাবন্তী ইসলাম |
জন্ম | খুলনা জেলা, বাংলাদেশ |
ধরন | পপ, রক সঙ্গীত |
পেশা | গায়িকা, গীতিকার |
লেবেল | বেঙ্গল মিউজিক |
প্রাথমিক জীবন
কৃষ্ণকলির জন্মনাম ছিল কাজী শ্রাবন্তী ইসলাম। তিনি যখন ছোট তখন খুলনায় এক রবীন্দ্রজয়ন্তীতে শান্তিদেব ঘোষ "কৃষ্ণকলি আমি তারে বলি" গানটি গেয়েছিলেন। সেখান থেকে তার মা মেহেরুননেসার নামটি ভালো লাগে এবং মেয়ের নাম পরিবর্তন করে রাখেন কাজী কৃষ্ণকলি ইসলাম।[3] কৃষ্ণকলি খুলনায় বেড়ে উঠেন। তার মা খুলনার একটি কলেজের বাংলার শিক্ষক। তিনি বাম রাজনীতি ও নকশাল আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। এছাড়া তিনি ছাত্র জীবনে জাতীয় পর্যায়ের অ্যাথলেট ছিলেন। কৃষ্ণকলির গানে হাতেখড়ি হয় তার মায়ের কাছে। পরে তিনি তালিম নেন ওয়াহিদুল হকের কাছে। তার মায়ের ইচ্ছা ছিল মেয়ে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিখুক কিন্তু কৃষ্ণকলির পছন্দ ছিল রবীন্দ্র সঙ্গীত।[4] তিনি সাধন ঘোষের কাছে রবীন্দ্র সঙ্গীত এবং বসুদেব বিশ্বাসের কাছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তালিম নেন। পরে ১৯৯৮ সালে তিনি ছায়ানটে রবীন্দ্র সঙ্গীত বিভাগে ভর্তি হন এবং তিনি বছর রবীন্দ্র সঙ্গীতের তালিম নেন।[5]
সঙ্গীত জীবন
কৃষ্ণকলির প্রথম একক অ্যালবাম সূর্যে বাঁধি বাসা বেঙ্গল মিউজিকের ব্যানারে ২০০৭ সালে প্রকাশিত হয়। অ্যালবামটির সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন শায়ান চৌধুরী অর্ণব।[6] এই অ্যালবামের "যাও পাখি" গানের জন্য তিনি ১১তম মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ গায়িকা বিভাগে প্রথমবারের মত মনোনয়ন পান এবং পুরস্কার লাভ করেন।[7] ২০০৯ সালে তিনি গিয়াস উদ্দিন সেলিম পরিচালিত মনপুরা চলচ্চিত্রে "যাও পাখি বলো তারে" গানে কণ্ঠ দেন এবং চন্দনা মজুমদারের সাথে যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ নারী কণ্ঠশিল্পী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।[8]
তার দ্বিতীয় একক অ্যালবাম আলোর পিঠে আঁধার ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জি-সিরিজের ব্যানারে প্রকাশিত হয়।[9] এতে মোট গান রয়েছে ৮টি। সব কয়টি গানের কথা লিখেছেন ও সুর তিনি নিজেই এবং সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন অর্ক সুমন ও রোকন ইমন। এতে গায়ক বব মার্লের অনুকরণে একটি গান ও একটি আরাধনা সঙ্গীত রয়েছে।[10] এই অ্যালবামের জন্য তিনি ১৪তম মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারে দ্বিতীয়বারের মত শ্রেষ্ঠ গায়িকার পুরস্কারে মনোনয়ন লাভ করেন। পরের বছর অক্টোবরে তার তৃতীয় একক অ্যালবাম বুনোফুল প্রকাশিত হয়। এতে মোট ৯টি গান রয়েছে, যার মধ্যে ২টি সাঁওতালি গান রয়েছে। গান দুটি হল "ফুলগাছটি লাগাইছিলাম" ও "কালো জলে কুজলা তালে"। অ্যালবামটি প্রকাশ করে বেঙ্গল মিউজিক।[11] ২০১৪ সালে মাসরম এন্টারটেইনমেন্ট অনলাইনে অ্যালবামটি প্রকাশ করে।[12] এই অ্যালবামের জন্য তিনি ১৫তম মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারে তৃতীয়বারের মত শ্রেষ্ঠ গায়িকা বিভাগে মনোনীত হন। ২০১৬ সালে তিনি তার চতুর্থ একক অ্যালবামের কাজ শুরু করেন। এছাড়া তিনি গিয়াস উদ্দিন সেলিম পরিচালিত স্বপ্নজাল চলচ্চিত্রে "থেমে থাকে উদাস দুপুর" গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। গানটির সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন শায়ান চৌধুরী অর্ণব।[13]
ব্যক্তিগত জীবন
কৃষ্ণকলি ২০১০ সালে সঙ্গীত পরিচালক ও গিটারিস্ট অর্ক সুমনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। অর্ক 'সমগীত' গানের দলের সাথে গান করেন এবং কৃষ্ণকলির সাথে গিটার বাজান।
গৃহকর্মী ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগঃ ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ কৃষ্ণকলির শেরে বাংলা নগর থানা এলাকার বাসায় একটি কক্ষের সিলিং ফ্যানে ঝুলন্ত অবস্থায় গৃহকর্মী জান্নাত আক্তার শিল্পীকে (১৫) পাওয়া যায়। তাকে নামিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান কৃষ্ণকলির স্বামী অর্ক ওরফে খালেকুরসহ কয়েকজন। পরে চিকিৎসক গৃহকর্মীকে মৃত ঘোষণা করেন। সেদিনই গ্রেফতার করা হয় অর্ক ওরফে খালেকুরকে। খালেকুর দাবি করেছিলেন, গৃহকর্মী আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু খালেকুর রহমানের মুখে খামচির কালো দাগ দেখে সন্দেহভাজন হিসেবে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তবে পুলিশ তারপরও ওই গৃহকর্মীর লাশের ময়নাতদন্ত করার জন্য ঢামেক হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। শিল্পীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে কিনা তার জন্য মৃতদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে সুরতহাল প্রতিবেদনে শিল্পীর গলায় ও মুখে খামচির দাগ লক্ষ্য করা গেছে। অভিযুক্ত খালেকুরকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে আদালতে পাঁচদিনের রিমান্ড চান এসআই সুশীল চন্দ্র বর্মন। আদালত তাকে দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে হাজির করে পুলিশ। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। [14]
অ্যালবামের তালিকা
- সূর্যে বাঁধি বাসা (২০০৭)
- আলোর পিঠে আঁধার (২০১১)
- বুনোফুল (২০১২)
পুরস্কার ও মনোনয়ন
বিভাগ | বছর | গান (চলচ্চিত্র) | ফলাফল |
---|---|---|---|
শ্রেষ্ঠ নারী কণ্ঠশিল্পী | ২০০৯ | "যাও পাখি বলো তারে" (মনপুরা) | বিজয়ী |
বিভাগ | বছর | গান (অ্যালবাম) | ফলাফল |
---|---|---|---|
শ্রেষ্ঠ গায়িকা | ২০০৯ | "যাও পাখি" (সূর্যে বাঁধি বাসা) | বিজয়ী |
২০১২ | আলোর পিঠে আঁধার | মনোনীত | |
২০১৩ | বুনোফুল | মনোনীত |
তথ্যসূত্র
- "বিবিসি'র সাথে গান-গল্প"। বিবিসি বাংলা। ৮ জুলাই ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ১ মে ২০১৭।
- "কৃষ্ণকলি আবার..."। বণিক বার্তা। সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১ মে ২০১৭।
- নূর, জাহীদ রেজা (৭ মে ২০১৩)। "তোমারই নাম..."। দৈনিক প্রথম আলো। ১৮ আগস্ট ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ মে ২০১৭।
- "সূর্যে বাঁধি বাসা"। দৈনিক জনকণ্ঠ। ১১ মার্চ ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ১ মে ২০১৭।
- Waheed, Karim (১৭ সেপ্টেম্বর ২০১১)। "Birth of a song: The whole nine yards"। দ্য ডেইলি স্টার। সংগ্রহের তারিখ ১ মে ২০১৭।
- Waheed, Karim (২০ এপ্রিল ২০০৭)। "Krishnokoli's debut album 'Shurjey Bandhi Basha'"। দ্য ডেইলি স্টার। সংগ্রহের তারিখ ১ মে ২০১৭।
- "Meril-Prothom Alo Award ceremony held"। দ্য ডেইলি স্টার। ১১ এপ্রিল ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ১ মে ২০১৭।
- "NATIONAL FILM AWARDS FOR 2009: "Ganga Jatra" and "Monpura" shine"। দ্য ডেইলি স্টার। ২৫ জুলাই ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ১ মে ২০১৭।
- "অবশেষে কৃষ্ণকলি"। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ১ মে ২০১৭।
- "আগামী মাসেই 'আলোর পিঠে আঁধার'"। দৈনিক প্রথম আলো। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ১ মে ২০১৭।
- "কৃষ্ণকলির বুনোফুল"। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। ২ অক্টোবর ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ১ মে ২০১৭।
- "গানের কলি কৃষ্ণকলি"। যায়যায়দিন। ৬ জানুয়ারি ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১ মে ২০১৭।
- "গানে ফিরছেন কৃষ্ণকলি"। যায়যায়দিন। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১ মে ২০১৭।
- "বিয়ে করলেন কৃষ্ণকলি"। দৈনিক জনকণ্ঠ। ১৮ অক্টোবর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১ মে ২০১৭।