কস্তার লাড্ডু

কস্তার লাড্ডু বাংলার একটি ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন। পঞ্চকোট রাজের রাজা জ্যোতিপ্রসাদ সিংহ দেও -এর পৃষ্ঠপোষকতার এই মিষ্টির প্রচলন হয়। মিষ্টান্ন প্রিয় রাজার রসনা তৃপ্তির কথা ভেবে লাড্ডু বানানো হয়। এই মিঠাই কাশিপুর এবং সংলগ্ন অঞ্চল ছাড়া আর কোথাও তেমন পরিচিত না। বিলুপ্তপ্রায় এই লাড্ডু দু চারটি মিষ্টির দোকানে এখনও পাওয়া যায়। পঞ্চকোট রাজবংশের এক সদস্য সোমেশ্বর লাল সিংহ দেও জানান, "রাজবাড়িতে বিজয়ার মিষ্টিমুখে এই লাড্ডু প্রজাদের বিলি করতেন রাজা। লাড্ডু তৈরির সময় গাওয়া ঘিয়ের গন্ধে এলাকা ম-ম করত।"তিনি আরো বলেন, রাজা এই মিঠাই খাওয়ার প্রতিযোগিতা করতেন প্রজাদের মধ্যে। কে কত বেশি খেতে পারেন"[1]

কস্তার লাড্ডু
উৎপত্তিস্থলভারত
অঞ্চল বা রাজ্যকাশিপুর, পুরুলিয়া, পশ্চিমবঙ্গ
পরিবেশনসাধারণ তাপমাত্রা
প্রধান উপকরণছানা, ক্ষীর (ক্ষীর), বেসন, ময়দা (বা আটা), এলাচ, জায়ফল, জইত্রি, কাজু, কিসমিস

ইতিহাস

রাজা জ্যোতিপ্রসাদ সিংহ দেও

১৮৩২ খ্রীষ্টাব্দে তৎকালীন মানভূমের রাকাব পরগনার কেশরগড় থেকে পঞ্চকোট রাজবংশের রাজধানী স্থানান্তরিত হয় কাশীপুরে। এই রাজবংশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নৃপতি জ্যোতিপ্রসাদ সিংহ দেওয়ের অভিষেক ১৯০১ সালে।[2] এই রাজ্যের জমিদারি সেই সময় মানভূম, বাঁকুড়া, বর্ধমান ও রাঁচি জেলায় বিস্তৃত ছিল। মহারাজা জ্যোতিপ্রসাদ কটক জেলার অন্তর্গত ডালিজোড়া জমিদারি কিনে নিয়ে তার সীমানা আরও বাড়ান। এই ডালিজোড়া জমিদারি এলাকাটি ছিল ঘন জঙ্গলে পূর্ণ। আজও এই এলাকার বেশ কিছুটা এলাকাতে ঘন জঙ্গল রয়েছে। রাজত্ব বাড়ানোর পরে নতুন জঙ্গলে শিকার করতে যাওয়া ছিল মহারাজা জ্যোতিপ্রসাদের অন্যতম শখ। বছরে একাধিকবার শিকারে যেতেন তিনি। যখন যেতেন, টানা বেশ কয়েকদিন জঙ্গলেই থাকতেন। জঙ্গলে নিয়ে যাওয়ার মতো মিষ্টি পাওয়ার বাসনাটা সেই সময়ের। একদিন রাজপরিবারের মোদককে ডেকে রাজা বললেন,

মিষ্টান্ন প্রিয় রাজার রসনা তৃপ্তির কথা ভেবে যে লাড্ডু বানানো হল—নাম কস্তার লাড্ডু বা কস্তার মিঠাই। রাজ পরিবারের ভিয়েন বংশের বর্তমান উত্তরসূরি জনার্দন দাস মোদকের কথায়,

জঙ্গলে শিকারে গিয়ে সেই মিষ্টির প্রেমে পড়লেন রাজা। তাঁর সেই মিষ্টি খেয়ে এতটাই ভাল লাগল যে ফিরে এসে আরও বানানোর বরাত দিলেন। আর এই ভাবেই উত্তর ভারতের লাড্ডুর সাথে বাঙালিয়ানা জুড়ে সৃষ্টি হলো কস্তার মিঠাই ঢুকে পরে মানভূমের ইতিহাসে।[1][2]

প্রস্তুত প্রণালী

কস্তার লাড্ডুতে ব্যবহার করা হয় নাগেশ্বর গাছের ফুল

কস্তার লাড্ডু তৈরির জন্য দরকার উৎকৃস্ট ছানা, ক্ষীর, বেসন, ময়দা (বা আটা), জায়ফল, জইত্রি, লবঙ্গ, এলাচ, দারুচিনি, নাগেশ্বরকুসুম ফুল, জাফরান,[3] কিসমিসকাজু[2]

ছানা, খোওয়া (ক্ষীর), বেসন, ময়দা (বা আটা)-র মিশ্রণে এলাচ, জায়ফল, জইত্রি, কাজু, কিসমিস একত্রে মেশাতে হবে। চিনির পরিমাণ খুব কম। এ বার ওই মিশ্রণটিকে লম্বা টানা দানার মতো আকার দিতে হবে। এবার ওই ছোট লম্বা টানা দানা গুলিকে খাঁটি গাওয়া ঘিয়ে ভেজে নিতে হবে। এই লম্বা টানা দানা দেখতে অনেকটা সরু নিখুঁতির মতো, বা গোল গাঠিয়ার মতো। ভাজা দানা রসে ভিজিয়ে নরম করে লাড্ডুর মতো পাকিয়ে নিলেই তৈরী হয় এই মিঠাই।[1][2]

পুনরোদ্ধার

রাজতন্ত্র বিদায় নেওয়ার পর পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় হারিয়ে গেছে কস্তার পুরোনো স্বাদ। তবে কাশীপুরের দু-একটি দোকানে এখনও কস্তা পাওয়া যায়। কিন্ত আগের গন্ধ ও স্বাদ কোনোটাই আজ আর নেই। এক মিষ্টি দোকানির কথায়, ‘‘পুরনো সেই স্বাদের কস্তার লাড্ডু বানাতে যে খরচ পড়বে, তার মূল্য দিয়ে কেনার মতো লোক কই এখানে?’’ কিন্তু চাহিদার ও ঐতিহ্যের কারণে পঞ্চকোট রাজের হারিয়ে যাওয়া কস্তার সেই স্বাদ তাই ফিরিয়ে আনছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের প্রাণিসম্পদ বিকাশ দপ্তর। এর অধীনস্থ পুরুলিয়ার মানভূম সমবায় দুগ্ধ উৎপাদক সঙ্ঘ লিমিটেড[1] সমবায়ের পরিচালন অধিকর্তা পীযূষ রায় বলেন,

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "জলখাবারে কস্তার মিঠাই"আনন্দবাজার। ২০ অক্টোবর ২০১৫।
  2. "কস্তার প্রেমে কাশীপুরের রাজা"আনন্দবাজার। ১৯ মার্চ ২০১৬।
  3. "হাঁড়ি উপুড় করলেও কিন্তু পড়বে না একফোঁটা দই"আনন্দবাজার পত্রিকা। এবিপি গ্রুপ। ১৬ এপ্রিল ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১৭
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.