কলকাতা মেট্রো লাইন ২

কলকাতা মেট্রো লাইন ২ যা পূর্ব-পশ্চিম মেট্রো বা ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো নামে পরিচিত কলকাতা মেট্রো রেল ব্যবস্থার অংশ, মা বর্তমানে আংশিক ভাবে পরিষেবা প্রদান করছে। এই রেলপথে ১২টি স্টেশন রয়েছে। এই স্টেশনগুলি উত্তোলিত ও ভূগর্ভস্থ। ৬টি উত্তোলিত ও ৬টি ভূগর্ভস্থ। এই পথের দৈর্ঘ্য ১৬.৪১ কিমি। সম্পূর্ণ হবার পর, এটি সল্টলেক সেক্টর ৫ ও হাওড়া ময়দানকে যুক্ত করবে। এই রেলপথটি গঙ্গা নদীর নীচ দিয়ে যাবে। বর্তমানে সল্টলেক সেক্টর ৫ ও শিয়ালদহ-র মধ্যে ৯.১ কিমি পরিষেবা এবং ৮টি স্টেশন চালু আছে। পূর্ব দিকে তেঘোরিয়া পর্যন্ত আরো ১৫.১ কিমি সম্প্রসারণ করার প্রস্তাবনা আছে।

কলকাতা মেট্রো লাইন ২
ইস্ট–ওয়েস্ট মেট্রো
সংক্ষিপ্ত বিবরণ
অন্য নামইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো
স্থিতি
  • প্রথম পর্ব - চালু (৯.১ কিমি) * দ্বিতীয় পর্ব - নির্মানাধীন (৭.৩১ কিমি) * প্রস্তাবিত - ১৫.৭ কিমি
মালিককলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন
বিরতিস্থল
ওয়েবসাইটKMRC
পরিষেবা
ধরনদ্রুত পরিবহন
সিস্টেমকলকাতা মেট্রো
পরিচালককলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন
ডিপোসেন্ট্রাল পার্ক, সল্টলেক
রোলিং স্টকভারত আর্থ মুভার লিমিটেড ( বিএইএমএল )
ইতিহাস
উদ্বোধন২০০৯
চালু১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০[1]
কারিগরি তথ্য
রেলপথের দৈর্ঘ্য৩২.০৪ কিমি (১৯.৯১ মা)
৯.১ কিমি (৫.৭ মা) (চালু)
৭.৩১ কিমি (৪.৫৪ মা) (নির্মাণাধীন)
১৫.৭ কিমি (৯.৮ মা) (প্রস্তাবিত)(ভূগর্ভস্থ: ১১.০৪ কিমি (৬.৮৬ মা)
উত্তোলিত: ২১ কিমি (১৩ মা))
ট্র্যাকসংখ্যা
বৈশিষ্ট্যউত্তোলিত এবং ভূগর্ভস্থ
ট্র্যাক গেজ১,৪৩৫ এমএম (৪ ফুট ৮ ১⁄২ ইঞ্চি) স্ট্যান্ডার্ড গেজ
বিদ্যুতায়ন৭৫০ ভি ডিসি;[2] তৃতীয় রেল ব্যবহার করে
চালন গতি৮০ কিমি/ঘঃ (সব থেকে দ্রুত)
Route Map
কলকাতা মেট্রো লাইন ২ রুট
Mainline rail interchange
Mainline rail interchange
পূর্ব-পশ্চিম মেট্রো মানচিত্র

ইতিহাস

মহাপরিকল্পনাটি ১৯৭১ সালে নির্বাচিত পথকে কলকাতা মেট্রো লাইন ২-এর জন্য নির্বাচিত করে। ভারতের প্রথম মেট্রো এবং দিল্লি মেট্রো নেটওয়ার্কের সাফল্যের অভিজ্ঞতা পূর্ব-পশ্চিম মেট্রো করিডরয়ের অনুমোদন দেয় যা হাওড়া রেলওয়ে স্টেশনকে হুগলি নদীর নিচে দিয়ে সুড়ঙ্গ পথে উপনগরী শহর সল্ট লেকের সাথে সংযুক্ত করবে। জানুয়ারী ২০০৪ সালে, প্যাসিফিক কনসালটেন্ট ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপ লাইন জন্য একটি সম্ভাব্যতা গবেষণা পরিচালনা করে। এর পর সংস্থাটি হুগলি নদীর নিচে রাস্তা ও সুড়ঙ্গ নির্মাণের প্রস্তাব করে।

কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন (কেএমআরসি) নামে একটি নতুন সংগঠন গঠন করা হয়, ২০০৯ সালে, যা এই লাইনের কার্যক্রম পরিচালনা করবে। [3] কেএমআরসি-এর আট জন পরিচালক রয়েছেন, যার মধ্যে চার জন রাজ্য সরকার এবং বাকি চারজন কেন্দ্রীয় সরকার থেকে নিযুক্ত হয়। প্রথমে ঠিক হয় প্রকল্পের খরচ রাজ্য সরকার (৩০ শতাংশ), কেন্দ্রীয় শহর উন্নয়ন মন্ত্রক (২৫ শতাংশ) এবং জাপান ব্যাঙ্ক ফর ইন্টারন্যাশনাল কোর্পোরেশন (জেবিআইসি) (৪৫ শতাংশ) মিলিত ভাবে প্রদান করবে। [4] কিন্তু ২০১১ সালে এই প্রকল্পের অধিকাংশ অংশ ভারতীয় রেলয়র উপর ন্যস্ত হয় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জেবিআইসি-র সঙ্গে। প্রকল্পটির জন্য খরচ অনুমান করা হয় ₹ ৫০ বিলিয়ন (US $ ৭৩০ মিলিয়ন)। [5]

কিন্তু কিছু কারণে প্রকল্পটি বিলম্বিত হয়েছিল। এই বিলম্বিত প্রধানত হয়েছিল ভূমি অধিগ্রহণ, বস্তি স্থানান্তর এবং রুট পরিবর্তনের ফলে উৎপন্ন সমস্যাগুলির কারণে। পূর্ব-পশ্চিম মেট্রো করিডর মূলত ২০১২ সাল নাগাদ চালু হওয়ার কথা ছিল, তবে পরবর্তীতে এটি ২০১৫ সালের মধ্যে চালু করার কথা বলা হয়। কিন্তু ওই সময়ে প্রকল্প শেষ করতে নির্মান সংস্থা ব্যর্থ হয়। প্রকল্পটি এখন চারটি পর্যায়ে বাস্তবায়িত হবে। প্রথম পর্যায়ে সেক্টর -৫ থেকে সল্ট লেক স্টেডিয়ামে ২০১৮ সালের জুনে লাইনটি চালুর জন্য কাজ শুরু হয়। কিন্তু সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় এই পথে প্রথম মেট্রো রেল ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে চালু করা হবে বলে ঘোষণা করা হয়। এটাও ঠিক হয় যে ২০১৯ সালের জুন মাসের মধ্যে এই প্রকল্পের প্রথম ধাপের দ্বিতীয় অংশে ফুলবাগান পর্যন্ত মেট্রো চালু হবে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শিয়ালদহ পর্যন্ত কার্যক্রম চলু হবে প্রথম ধাপের তৃতীয় অংশ হিসাবে। চূড়ান্ত পর্যায়ে বা দ্বিতীয় ধাপে যা গঙ্গার নিচে সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত মেট্রো রেল যাত্রা করবে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে।

একাধিক বিলম্বের পর, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তে লাইন চালু হয় সেক্টর-৫ এবং যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গণ এর মধ্যে।


সময়রেখা

  • ২০০৯: কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন স্পেনের কনস্ট্রুসিওনিন্স অ্যান্ড অক্কি দে ডিফ্রোকারিলিলেস (সিএএফ) -এর কাছে মেট্রো ট্রেন নির্মান চুক্তি প্রদান করে।
  • ২০০৯: ভূগর্ভস্থ স্টেশনগুলি এবং উড়ালসেতু (ভায়াডাক) নির্মাণের জন্য চুক্তি বদ্ধ হয় গ্যামন এবং সিম্পল্ফ অব ইনফ্রাস্ট্রাকচার
  • ২০০৯: সুভাষ সরবর থেকে সেন্ট্রাল স্টেশন পর্যন্ত ভূগর্ভস্থ অংশ নির্মাণের চুক্তি "আইটিড-আইটিড সিমেন্টেশন জেভি"কে প্রদান করা হয়।
  • ২০০৯: ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর নির্মাণ শুরু।
  • ২০১০: সেন্ট্রাল স্টেশন থেক হওড়া ময়দান পর্যন্ত ভূগর্ভস্থ অংশ নির্মানের জন্য আফকোনস-এর সঙ্গে চুক্তি করা হয়।
  • ২০১২: ব্রাবোন রোডের বৌউবাজার এলাকা ও হাকার সহ ৮০ টি পরিবারকে স্থানান্তর করার প্রয়াসের প্রস্তাব।
  • ২০১৪: "কেএফএল"কে রোলিং স্টক নির্মানের জন্য চুক্তি করে "কেএমআরসি" খরচ বৃদ্ধির কারণে।
  • ২০১৫: শিয়ালদাহ থেকে হাওড়া স্টেশন পর্যন্ত রেলওয়ে এবং জাইকা কর্তৃক অনুমোদিত স্বাক্ষর।
  • ২০১৫: সংশোধিত ব্লুপ্রিন্টের একটি প্রধান স্টেশন- সুবোধ মুলিক স্কয়ার স্টেশন, যা হকারদের নির্বাসন এড়াতে নির্মাণ বাতিল করা হয়েছে।
  • ২০১৫: দত্তাবাদে ৩৬৫ মিটার ব্যতীত উত্তোলিত ট্র্যাক নির্মাণ।
  • ২০১৬-ফেব্রুয়ারি: বিইএমএলকে ৬ কোচ বিশিষ্ট ১৪ টি রেকের নির্মাণের চুক্তি।
  • ২০১৭-জুন: সমস্ত উত্তোলিত স্টেশনগুলির কাঠামোগত ও ছাদ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন।
  • ২০১৭-মার্চ: ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পুনর্বাসনের পর দত্তাবাদে ৩৬৫ মিটার উত্তোলিত বিভাগে কাজ শুরু হয়। উত্তলিত অংশটি ইস্পাত গার্ডার দ্বারা তৈরি করা হয়।
  • ২০১৭-মার্চ: কর্মী কন্যার নাম থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে টানেল বোরিং মেশিনের নাম রাখা হয় প্রেরণা ও রচনা।
  • ২০১৭ মে ২৩: প্রথম টিবিএম হুগলি নদীর নিচে পূর্বমুখী সুড়ঙ্গের খনন সম্পন্ন করে।
  • ২০১৭-জুন ২১: দ্বিতীয় টিবিএম হুগলি নদীর নিচে পশ্চিমমুখী সুড়ঙ্গ খনন সম্পন্ন করে।
  • ২০১৭-জুন: তিনটি ঐতিহ্যবাহী ভবনের ১০০ মিটারের মধ্যে সুড়ঙ্গ নির্মাণের জন্য ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ থেকে অনুমতি পাওয়া যায়।
  • ২০১৭-জুলাই: এসপ্ল্যানডে ট্রাম ডিপো মেট্রো স্টেশন নির্মাণের জন্য সরানো হয়েছে।
  • ২০১৭-জুলাই: ব্রোবোর্ন রোডে ১১ টি ভবন থেকে মানুষ পর্যায়ক্রমে স্থানান্তর করা হ যখন টিবিএম এই পুরানো বাড়ির নিচে চলে আসে।
  • ২০১৭-আগস্ট: ভূগর্ভস্থ স্টেশন নির্মাণে করার জন্য মহাকরণে মিনি-বাস স্ট্যান্ড স্থানান্তরিত হয়।
  • ২০১৭-সেপ্টেম্বর: প্যানাসনিক ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যান্ড ঝুঝো সিআরআরসি টাইমস ইলেকট্রিককে ১২ টি স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম স্ক্রিনের ডোর প্রদান করা চুক্তি প্রদান করা হয়।
  • ২০১৭-অক্টোবর: দত্তাবাদে ৩৬৫ মিটার উত্তোলিত বিভাগ স্টিলের গার্ডার ব্যবহার করে সম্পন্ন করা হয়।
  • ২০১৭-ডিসেম্বরে: মহাকরণ স্টেশন এবং এসপ্ল্যানেড স্টেশনের মধ্যে খনন চলে।
  • ২০১৭-ডিসেম্বরে: কেএমআরসি ফুলবাগানের পরিবর্তে সেক্টর ফাইভ থেকে সল্ট লেক স্টেডিয়ামের মধ্যে প্রথম পর্বের মেট্রো রেল উদ্বোধন হবে ২০১৮ সালের জুনে।
  • ২০১৮ জানুয়ারী: ডেমো কোচ সল্ট লেক মেট্রো ডিপোতে পৌঁছায়।
  • ২০১৮ ফেব্রুয়ারি ১২: মেট্রো জেনারেল ম্যানেজার অজয় জয়ভারগিয়া আবার জুনের পরিবর্তে সেপ্টেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ের উদ্বোধন স্থগিত করেন।[6]
  • ২০২০ ফেব্রুয়ারি ১৩: লাইনের উদ্বোধন সেক্টর -৫ থেকে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গণ অবধি
  • ২০২০ অক্টোবর ৪: সম্প্রসারণ ফুলবাগান অবধি
  • ২০২২ জুলাই ১৪: সম্প্রসারণ শিয়ালদহ অবধি

পথ পরিবর্তন

লাইন ২ প্রথমে লাইন ১-এর সঙ্গে সেন্ট্রাল স্টেশনে যুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও পরে সিদ্ধান্ত হয় লাইন ১ ও লাইন ২ এসপ্ল্যানেডে যুক্ত হবে। এর ফলে লাইন ২-এর দৈর্ঘ্য ২ কিলোমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং নির্মাণ খরচ ₹ ৬০০ কোটি বৃদ্ধি পায়।

মেট্রোর রুট বদলের নেপথ্যে মমতার সক্রিয় ভূমিকা ছিল। সাবেক পরিকল্পনায় ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোকে সরাসরি বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিট বিবাদী বাগে নিয়ে যাওয়ার যে নকশা ছিল, তাতে মমতা আপত্তি করেছিলেন। সেখানকার একদল দোকানদার তাদের ব্যবসা সরিয়ে নিতে চান নি। রাজ্যে তখন বাম-শাসন। বিরোধী নেত্রী মমতা ওই ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়ান।

দোকানদারদের ‘উপযুক্ত’ পুনর্বাসনের দাবিতে সরব ছিল কংগ্রেসও। বউবাজারে ওই এলাকার কাছেই ছিল তৎকালীন সরকারের শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য দফতর। দোকানদারদের উঠে যাওয়ার জন্য তারাও কিন্তু কোনও ‘সদর্থক’ চেষ্টা করে নি। কার্যত একটু নরম মনোভাবই ছিল তাদের। মমতার আমলে রুট বদলাল। সেই রুটে সুড়ঙ্গ খুঁড়তে গিয়ে ধস নামল।

মেট্রোরও আনুমানিক হিসাব ছিল, ক্রসিং স্টেশনে ঘণ্টায় কমপক্ষে ৫০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করবেন। ভিড় পরে আরও বেড়ে যাবে। সেন্ট্রালের পক্ষে যা সামাল দেওয়া শক্ত। তাছাড়া বিভিন্ন দিক থেকে এসে যাঁরা ক্রসিং স্টেশনে নামবেন, তাদের একাংশ উপরে উঠে এসে অন্য পরিবহনের সুযোগ নিতে চাইলেও এসপ্লানেড অর্থাৎ ধর্মতলার বিকল্প নেই। এই ব্যাপারে রাইটস-কে দিয়ে রাজ্য যে সার্ভে করেছিল, রেল বোর্ড তা মেনে নেয়। এমনকি জাপানের অর্থলগ্নি সংস্থাও বাণিজ্যিক দিক বিবেচনা করে এই রুট বদলে সায় দেয়। এতে কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ বাড়া সত্ত্বেও বাস্তবতার দিকটি কেউ অস্বীকার করতে পারে নি। [7]

প্রথম অংশ

এই মেট্রো পথটিকে দুটি অংশে নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রথম অংশ হল সল্টলেক সেক্টর ফাইভ থেকে শিয়ালদহ স্টেশন। এই অংশে ৮টি স্টেশন রয়েছে এবং এই স্টেশন গুলির মধ্য ৬টি উত্তোলিত ও ২টি ভূগর্ভস্থ। এই অংশের দৈর্ঘ্য ৯.১ কিমি। শিয়ালদহ ও ফুলবাগান স্টেশন দুটি ভূগর্ভস্থ আর বাকি ৬টি উত্তোলিত। এই অংশটি ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে সল্টলেক সেক্টর ফাইভ থেকে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গণ অবধি চালু হয়। ৪ অক্টোবর ২০২০ তারিখে ফুলবাগান এবং ১৪ জুলাই ২০২২ তারিখে শিয়ালদহ অবধি সম্প্রসারিত হয়।

দ্বিতীয় অংশ

এই অংশটি শিয়ালদহ স্টেশন থেকে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত গেছে। এই অংশের দৈর্ঘ্য ৭.৩১ কিমি। এই অংশে ৪ টি স্টেশন রয়েছে; এর সব গুলি স্টেশন ভূগর্ভস্থ। মহাকরণ ও হাওড়া স্টেশন এর মাঝে গঙ্গা নদীর নীচ দিয়ে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো সুড়ঙ্গ খুড়ে রেলপথ নির্মিত হয়েছে। চালু হবার পর, এটিই হবে ভারত তথা দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম নদীর নিচের মেট্রো সুড়ঙ্গ বা রেল সুড়ঙ্গ। এই রেলপথ চালুর সময় হিসাবে ২০২৩ সাল ধরা হয়েছে।

অবকাঠামো

স্টেশন

নির্মাণাধীন করুণাময়ী মেট্রো স্টেশন - তৃতীয় এভিনিউ, সল্ট লেক সিটি, কলকাতা

যাত্রীদের মেট্রো রেল ট্র্যাক থেকে দূরে রাখার জন্য এই লাইনের সমস্ত স্টেশনগুলি প্লাটফর্ম স্ক্রিন ডোর দ্বারা সজ্জিত। [8] ম্যাট ম্যাকডোনাল্ড সমস্ত উঁচু স্টেশনগুলির জন্য বিশদ ডিজাইন পরামর্শদাতা, লি হ্যারিস পোমরয় আর্কিটেক্টস সমস্ত ভূগর্ভস্থ স্টেশন ডিজাইন করেছেন। ৬ টি ভূগর্ভস্থ স্টেশনগুলির মধ্যে ৩ টি নির্মাণ করা হবে আইটিড সিমেন্টেশন, ইটালিয়ান-থাইল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানীর একটি অংশ এবং অন্য ৩ টি স্টেশন নির্মাণ করবে এফকনস, যার মধ্যে ৫২০ মিটার সুড়ঙ্গ হুগলী নদীর নিচে নির্মিত হবে। সমস্ত ঊর্ধ্বতন স্টেশনগুলি কলকাতা ভিত্তিক সিম্পলক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড দ্বারা নির্মিত হবে। [9][10]

বিদ্যুৎ ও সংকেত ব্যবস্থা

লাইনে ANSALDO STS দ্বারা সরবরাহকৃত দু'ধরনের সিগন্যালিং সরঞ্জাম থাকবে। একটি স্বয়ংক্রিয় ট্রেন সুরক্ষা সঙ্গে ক্যাব সংকেত এবং ক্রমাগত স্বয়ংক্রিয় ট্রেন নিয়ন্ত্রণ বৈশিষ্ট্য যুক্ত হবে এবং অন্যান্য সংকেত সরঞ্জামটি ফাইবার অপটিক তার, এসসিএডিএ, রেডিও এবং একটি পিএ ব্যবস্থা দ্বারা গঠিত। লাইনের একটি ট্রেন তথ্য ব্যবস্থা, টেলিফোন নিয়ন্ত্রণ এবং একটি কেন্দ্রীয় ঘড়ি ব্যবস্থা থাকবে।

ক্রিয়াপ্রণালী

উত্তর-দক্ষিণ করিডোরের বিপরীতে, পূর্ব-পশ্চিমা মেট্রো পথে ব্যস্ত সময় ২.৫ মিনিটের অন্তঃর এবং অন্য সময়ে ৫ মিনিট অন্তঃর মেট্রো রেল চলাচল করবে প্রতিদিন সকাল ০৬৫৫ থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত।[11]

রোলিং স্টক

মেলকোর সহযোগিতায় সিএএফ এই লাইনের জন্য ১৪ টি ট্রেন সরবরাহ করে।[12] ১৪ টি রেকে €১১০ মিলিয়ন[12] ₹৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (৮৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) খরচ করে ক্রয় করা হয়। ৬ টি কোচ নিয়ে গঠিত প্রতিটি রেকের যাত্রী ধারণক্ষমতা ২,০৬৮ জন। [19] ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি ৯০ কিমি/ঘণ্টা। প্রথম ট্রেনটি স্পেনে তৈরি করা এবং নভেম্বর ২০১৪ সালে কলকাতায় আমদানি করা হয়। পরবর্তীতে ভারতে রেক তৈরি করার কথা ছিল। তবে কারিগরি কারণে[13] এবং প্রকল্পে অত্যধিক বিলম্বের কারণে কেএমআরসি কর্তৃক দরপত্র বাতিল করা হয় এবং জুলাই ২০১৫ সালে পুনরায়-দরপত্র জারি করা হয়। রোলিং স্টক সরবরাহের জন্য চতুর্থ রাউন্ডে বিইএমএল একমাত্র দরকষাকষি সংস্থা হিসাবে আবির্ভূত হয়।[14] সুতরাং, রেকে নির্মাণের চুক্তিটি বিইএমএল-কে প্রদান করা হয়।[15] বিইএমএল পূর্বে দিল্লি এবং ব্যাঙ্গালোর মেট্রো জন্য রেক প্রদান করেছে। ৬ কোচ বিশিষ্ট ১৪ টি রেক নির্মাণের আদেশ দেওয়া হয়। চৌদ্দ টির মধ্যে কেএমআরসি ইতিমধ্যেই ১১ টি রেকে পেয়েছে।

পরিবেশগত প্রভাব

সল্টলেকে (বিধাননগর) নির্মিত উত্তোলিত অংশটি কেন্দ্রীয় মেরিডিয়ানের গাছগুলিকে অপসারণ করেছে। এ্যালিভেটেড ভিয়ডাক্ট নির্মাণের উদ্দেশ্যে সব গাছ কেটে ফেলা হয়। পুনরায় গাছ লাগানোর কোন প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। সেন্ট্রাল পার্ক ট্রেন ডিপো সেন্ট্রাল পার্কে নির্মিত হয়েছে, যা পূর্বে একটি ঘন বৃক্ষবিশিষ্ট এলাকা ছিল। কেন্দ্রীয় পার্কের প্রায় ৩০% ট্রেন ডিপো নির্মাণের জন্য দখল করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় পার্কের অন্যান্য অংশগুলি ক্রিকেট এবং ফুটবল স্পোর্টস সেন্টার, সুইমিং পুল, বাস স্ট্যান্ড, ফেয়ার গ্রাউন্ড, ভূগর্ভস্থ জলের সঞ্চয় সুবিধা এবং কনভেনশন হলের সবচেয়ে তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।

স্টেশনগুলির তালিকা (পূর্ব থেকে পশ্চিম)

সল্টলেক (বিধাননগর) ও হাওড়া ময়দানের মধ্যে নির্মাণাধীন কলকাতা মেট্রো রেলের কলকাতা মেট্রো লাইন ২ (পূর্ব-পশ্চিম করিডর) এর স্টেশন গুলি হল-

লাইন ২ (ইস্ট ওয়েস্ট করিডোর)
ক্রম স্টেশনের নাম অবস্থান উদ্বোধন সংযোগ বিন্যাস স্থানাঙ্ক টীকা
বাংলাইংরেজি
কেষ্টপুর Keshtopur নয়াপট্টি, কেষ্টপুর পরিকল্পনাধীন না উত্তলিত
সল্ট লেক সেক্টর ফাইভSalt Lake Sector Vসেক্টর ৫,বিধাননগর১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০[1]    কলকাতা মেট্রো লাইন ৬ (নির্মাণাধীন)উত্তলিত২২°৩৪′৫২″ উত্তর ৮৮°২৫′৪৪″ পূর্বকলকাতার আই.টি. হাব হিসাবেও পরিচিত
করুণাময়ীKarunamoyeeসেক্টর ৩,

বিধাননগর

১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০[1]নাউত্তলিত২২°৩৫′১২″ উত্তর ৮৮°২৫′১৭″ পূর্বআন্তর্জাতিক বাস টার্মিনাস
সেন্ট্রাল পার্কCentral Parkসেক্টর ১,

বিধাননগর

১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০[1]নাউত্তলিত
সিটি সেন্টারCity Center-1ইসি ব্লক , সেক্টর ১,

বিধাননগর

১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০[1]নাউত্তলিতবিধাননগর কলেজের কাছাকাছি
বেঙ্গল কেমিক্যালসBengal Chemical and Pharmaceuticalsমানি স্কোয়ার,

বিধাননগর

১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০[1]নাউত্তলিত
যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনSalt Lake Stadiumকাদাপাড়া,

বিধাননগর

১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০[1]নাউত্তলিতভারতে বৃহত্তম স্টেডিয়াম
ফুলবাগানPhoolbaganফুলবাগান০৪ অক্টোবর ২০২০নাভূগর্ভস্থ
শিয়ালদহSealdahশিয়ালদহ১৪ জুলাই ২০২২Mainline rail interchange শিয়ালদহ রেলওয়ে স্টেশন (ভারতীয় রেল)ভূগর্ভস্থশহরতলি এবং দূরপাল্লার ট্রেনের জন্য পরিবর্তন
এসপ্ল্যানেডEsplanadeধর্মতলানির্মানাধীন     কলকাতা মেট্রো লাইন ১     কলকাতা মেট্রো লাইন ৩ভূগর্ভস্থএছাড়াও ধর্মতলা নামে পরিচিত
১০মহাকরণMahakaranবিবিদি বাগ নির্মানাধীননাভূগর্ভস্থবি. বি. দি বাগ নামেও পরিচিত
১১হাওড়া স্টেশনHowrah Stationহাওড়ানির্মানাধীনMainline rail interchange হাওড়া স্টেশন (ভারতীয় রেলওয়ে)ভূগর্ভস্থস্থানীয় এবং জাতীয় ট্রেনের জন্য পরিবর্তন
১২হাওড়া ময়দানHowrah Maidanহাওড়ানির্মানাধীননাভূগর্ভস্থ

সম্প্রসারণ

রাজ্য সরকার ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পকে ভিআইপি রোডের হলদিরাম পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় প্রস্তাব দেয়। তাতে সম্মতি দিয়েছে রেল বোর্ড। ঠিক হয়েছে, সেন্ট্রাল পার্ক মেট্রো স্টেশন থেকে ভিআইপি রোড দিয়ে বাগুইআটি, দমদম পার্ক হয়ে প্রকল্প শেষ হবে হলদিরামে গিয়ে। ওখানেই সেটি জুড়বে নিউ গড়িয়া-বিমানবন্দর মেট্রো প্রকল্পের সঙ্গে। এই প্রকল্প বিমানবন্দরের সঙ্গে যুক্ত হলে নিত্যযাত্রীদের সুবিধে হবে।[16]

অপর দিকে হাওড়া ময়দান থেকে সাঁতরাগাছি পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হবে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পকে। সেখানে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ২১ হেক্টর জমিতে মেট্রোর ডিপো তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে সাঁতরাগাছি ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর শেষ স্টেশন হলেও ওই রুটে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন হতে চলেছে শালিমার। সম্প্রতি মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রাজ্য প্রশাসনের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ভবিষ্যতে রেলের যে ‘স্পিড করিডর’ তৈরি করার কথা চলছে, সেটিকে শালিমার পর্যন্ত নিয়ে আসা হবে। সে ক্ষেত্রে শালিমার স্টেশন থেকেই মেট্রো ধরে কলকাতায় দ্রুত চলে আসতে পারবেন যাত্রীরা। সে কারণেই শালিমার ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন মেট্রোর কর্তারা।

রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে ঠিক করা হয়েছে, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো সাঁতরাগাছি পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সম্প্রসারণ করা হবে। এর মধ্যে তিন কিলোমিটার পথ যাবে মাটির তলা দিয়ে। বাকি সাত কিলোমিটার মাটির উপর দিয়ে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, হাওড়া ময়দান থেকে নবান্ন পর্যন্ত মাটির নীচ দিয়েই চলবে মেট্রো। নবান্ন পর্যন্ত মেট্রোকে মাটির উপর দিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ কার্যত নেই বললেই চলে। এক দিকে দ্বিতীয় হুগলি সেতু থেকে নামা উড়ালপুল আর অন্য দিকে ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকা। সেই কারণে ওই এলাকায় সব রকম সমীক্ষা চালানোর পরে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার পথই নির্দিষ্ট করা হবে।[17] নবান্নের পর থেকে মেট্রো উত্তোলিত বা মাটি থেকে উপরে উঁচু পথ (এলিভেটেড রুট) ধরে পৌঁছবে সাঁতরাগাছি পর্যন্ত। ময়দান থেকে সাঁতরাগাছি অবধি ১০ কিলোমিটার পথে ৮টি স্টেশন থাকবে, যার একটি হবে ভূগর্ভস্থ (মাটির নিচে)।[18]

আরও

তথ্যসূত্র

  1. "অবশেষে চলার পথে, ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো"। এই সময়। ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০
  2. UK, DVV Media। "CAF to supply Kolkata metro trains"
  3. "East-West Metro gets new boss"The Telegraph
  4. "East-West Metro's route likely to change"Business Standard
  5. Pramanik, Abhishek Law, Ayan (১৭ জুলাই ২০১২)। "Kolkata Metro inks purchase pact for coaches for East-West corridor"
  6. "Metro to connect Sector V to Salt Lake Stadium soon"Millennium Post
  7. "Politics behind the route change"
  8. "KMRC=2013-07-22"
  9. "Mott MacDonald is detailed design consultant on Salt Lake City Stations"। ২০১০-০৭-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৭-২২
  10. "Railway Technology"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৭-২২
  11. "Kolkata East West Metro"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৭-২২
  12. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৯ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুন ২০১৯
  13. "Kolkata loses Spanish Rides"The Telegraph
  14. "Bid saves Metro blushes"The Telegraph (Calcutta)
  15. "Central PSU wins Rs 900-crore Metro rake order"The Times of India
  16. "East-West eyes easy route to airport"The Telegraph (Calcutta)
  17. "Waterlogging due to E-W Metro slurry under green tribunal's lens"The Times of India
  18. "2017 start for Howrah EW Metro"The Times of India

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.