কর্মধারয় সমাস
যে সমাসে বিশেষণ বা বিশেষণভাবাপন্ন পদের সাথে বিশেষ্য বা বিশেষ্যভাবাপন্ন পদের সমাস হয় এবং পরপদের অর্থই প্রধানরূপে প্রতীয়মান হয়, তাকে কর্মধারয় সমাস বলে।[1] যেমন: নীল যে পদ্ম= নীলপদ্ম, শান্ত অথচ শিষ্ট= শান্তশিষ্ট, কাঁচা অথচ মিঠা= কাঁচামিঠা, খাস যে মহল= খাসমহল, হেড যে মাস্টার= হেডমাস্টার, রক্ত যে চন্দন= রক্তচন্দন, যিনি গিন্নি তিনি মা= গিন্নিমা।
বাংলা ব্যাকরণ |
---|
ইতিহাস |
ধ্বনিতত্ত্ব |
|
রূপতত্ত্ব/শব্দতত্ত্ব |
|
বাক্যতত্ত্ব |
|
অর্থতত্ত্ব |
|
ছন্দ ও অলংকার |
|
অনেক ব্যাকরণবিদ কর্মধারয় সমাসকে তৎপুরুষ সমাসের অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করেন।
প্রকারভেদ
কর্মধারয় সমাস কয়েক প্রকার হতে পারে।[1] যেমন:
মধ্যপদলোপী কর্মধারয়
যে কর্মধারয় সমাসে ব্যাসবাক্যের মধ্যপদের লোপ হয়, তাকে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন: সিংহ চিহ্নিত আসন= সিংহাসন, সাহিত্য বিষয়ক সভা= সাহিত্যসভা, স্মৃতি রক্ষার্থে সৌধ= স্মৃতিসৌধ, ব্রাহ্মণ ধর্মীয় প্রধান পুরোহিত= ব্রাহ্মণ পুরোহিত, জগতের রক্ষাকারী ঈশ্বর= জগদীশ্বর, সূর্য উদয়কালীন মন্ত্র= সূর্যমন্ত্র, মৌ ভর্তি চাক= মৌচাক, গাছকদম= গাছে ফুটিত কদম, সন্ধিগীত= সন্ধি যোগঘটানো গীত, কাঁচকলা= কাঁচা অবস্থায় কলা, চিকিৎসাশাস্ত্র= চিকিৎসা বিষয়ক শাস্ত্র, ঘরজামাই= ঘর আশ্ৰিত জামাই, পল মিশ্রিত অন্ন= পলান্ন, হাসি মাখা মুখ= হাসিমুখ, বৌ পরিবেশন করা ভাত= বউভাত, মৌ সংগ্রহকারী মাছি= মৌমাছি, গাড়ি রাখার জন্য বারান্দা= গাড়িবারান্দা, মোম নির্মিত বাতি= মোমবাতি।
উপমান কর্মধারয়
সাধারণ ধর্মবাচক পদের সাথে উপমান পদের যে সমাস হয় তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে।[1] যেমন: ভ্রমরের ন্যায় কৃষ্ণ কেশ= ভ্রমরকৃষ্ণকেশ। এখানে 'ভ্রমর' উপমান ও 'কেশ' উপমেয় এবং 'কৃষ্ণত্ব' সাধারণ ধর্ম। (উপমান অর্থ তুলনীয় বস্তু। প্রত্যক্ষ কোনো বস্তুর সাথে পরোক্ষ কোনো বস্তুর তুলনা করলে প্রত্যক্ষ বস্তুটিকে বলা হয় উপমেয়, এবং যার সাথে তুলনা করা হয়েছে তাকে বলা হয় উপমান।[1])
এরূপ- তুষারের ন্যায় শুভ্র= তুষারশুভ্র, অরুণের ন্যায় রাঙা= অরুণরাঙা, রক্তের ন্যায় লাল= রক্তলাল, চন্দনের মতো স্নিগ্ধ= চন্দনস্নিগ্ধ।
উপমান কর্মধারয় সমাসে বিশেষ্য পদের সাথে বিশেষণের সমাস হয়। যেমন: “তুষার” হচ্ছে বিশেষ্য এবং “শুভ্র” হচ্ছে বিশেষণ। যদি দুটোই বিশেষ্য হয়ে যায়, তবে সেটি উপমিত কর্মধারয় সমাস হয়।
উপমিত কর্মধারয়
সাধারণ গুণের উল্লেখ না করে উপমেয় পদের সাথে উপমান পদের যে সমাস হয়, তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে। এক্ষেত্রে সাধারণ গুণটি ব্যাসবাক্য বা সমস্তপদে থাকে না, বরং অনুমান করে নেওয়া হয়। এ সমাসে উপমেয় পদটি পূর্বে বসে। যেমন: মুখ চন্দ্রের ন্যায়= চন্দ্রমুখ, পুরুষ সিংহের ন্যায়= সিংহপুরুষ।
রূপক কর্মধারয়
উপমান ও উপমেয়ের মধ্যে অভিন্নতা কল্পনা করা হলে রূপক কর্মধারয় সমাস হয়।[1] এ সমাসে উপমেয় পদ পূর্বে বসে ও উপমান পদ পরে বসে এবং সমস্যমান পদে 'রূপ' অথবা 'ই' যোগ করে ব্যাসবাক্য গঠন করা হয়। যেমন: ক্রোধ রূপ অনল= ক্রোধানল, বিষাদ রূপ সিন্ধু= বিষাদসিন্ধু, মন রূপ মাঝি= মনমাঝি।
অন্যান্য কর্মধারয় সমাস
কখনো কখনো সর্বনাম, সংখ্যাবাচক শব্দ এবং উপসর্গ আগে বসে পরপদের সাথে কর্মধারয় সমাস গঠন করতে পারে। যেমন: কুকর্ম, যথাযোগ্য (অব্যয়), সেকাল, একাল (সর্বনাম), একজন, দোতলা (সংখ্যাবাচক শব্দ), বিকাল, সকাল, বিদেশ, বেসুর (উপসর্গ)।
কর্মধারয় সমাসের নিয়ম
- দুটি বিশেষণ পদে একটি বিশেষ্যকে বোঝালে কর্মধারয় সমাস হয়। যেমন: যে চালাক সেই চতুর= চালাক-চতুর।
- দুটি বিশেষ্য পদে একই ব্যক্তি বা বস্তুকে বোঝালে কর্মধারয় সমাস হয়। যেমন: যিনি জজ তিনিই সাহেব= জজসাহেব।
- কার্যে পরম্পরা বোঝাতে দুইটি কৃদন্ত বিশেষণ পদেও কর্মধারয় সমাস হয়। যেমন: আগে ধোয়া পরে মোছা= ধোয়ামোছা।
- পূর্বপদে স্ত্রীবাচক বিশেষণ থাকলে কর্মধারয় সমাসে সেটি পুরুষবাচক হয়। যেমন: সুন্দরী যে লতা= সুন্দরলতা, মহতী যে কীর্তি= মহাকীর্তি।
- বিশেষণবাচক মহান বা মহৎ শব্দ পূর্বপদ হলে, 'মহৎ' ও 'মহান' স্থলে 'মহা' হয়। যেমন: মহৎ যে জ্ঞান= মহাজ্ঞান, মহান যে নবি= মহানবি।
- পূর্বপদে 'কু' বিশেষণ থাকলে এবং পরপদে প্রথমে স্বরধ্বনি থাকলে 'কু' স্থানে 'কৎ' হয়। যেমন: কু যে অর্থ= কদর্থ, কু যে আচার= কদাচার।
- পরপদে 'রাজা' শব্দ থাকলে কর্মধারয় সমাসে 'রাজ' হয়। যেমন: মহান যে রাজা= মহারাজ।
- বিশেষণ ও বিশেষ্য পদে কর্মধারয় সমাস হলে কখনো কখনো বিশেষণ পরে আসে, বিশেষ্য আগে যায়। যেমন: সিদ্ধ যে আলু= আলুসিদ্ধ, অধম যে নর= নরাধম।
আরো দেখুন
তথ্যসূত্র
- বাংলা ভাষার ব্যাকরণ, নবম-দশম শ্রেণি, শিক্ষাবর্ষ ২০১৬, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা, বাংলাদেশ