কর্ভেট

কর্ভেট এক ধরনের ছোট যুদ্ধ জাহাজ। ঐতিহ্যগতভাবে করভেট হচ্ছে সবচেয়ে ছোট আকৃতির জাহাজ যাকে প্রকৃত যুদ্ধজাহাজ হিসেবে ধরা হয়। কর্ভেটের উপরের শ্রেণির যুদ্ধজাহাজ হলো ফ্রিগেট, এবং নিচের শ্রেণির যুদ্ধজাহাজ হচ্ছে স্লুপ-অফ-ওয়ার যা বর্তমানে ইতিহাসের অংশ। আধুনিক যুগে করভেটের নিচের শ্রেণির জাহাজের মধ্যে রয়েছে উপকূলীয় টহল জাহাজ, মিসাইল বোট এবং ফাস্ট অ্যাটাক ক্রাফট। আধুনিক পরিভাষায়, একটি কর্ভেটের ওজন সাধারণত ৫০০ টন থেকে ২,০০০ টন এর মধ্যে হয়ে থাকে। তবে সাম্প্রতিক নকশাগুলোতে এর ওজন ৩,০০০ টন পর্যন্ত হয়ে থাকে, যেটিকে কর্ভেটের পরিবর্তে একটি ছোট ফ্রিগেট বলা যেতে পারে।

ইতালী নৌবাহিনীর কর্ভেট কমান্দান্তে ফোসকারি

"কর্ভেট" শব্দটি প্রথম পাওয়া যায় মধ্য ফরাসি ভাষায়, যা ওলন্দাজ শব্দ কর্ফ, যার অর্থ "ক্ষুদ্র জাহাজ", ও অর্থ ল্যাটিন শব্দ কর্বিস, যার অর্থ "ঝুড়ি", থেকে পরিবর্তিত। [1]

অনেক নৌবাহিনীতে ব্যবহৃত কর্ভেট ক্যাপ্টেন পদটি লেফটেন্যান্ট কমান্ডার পদের সমতুল্য যা এই ধরনের জাহাজের নাম থেকে এসেছে। এই র‍্যাঙ্কটি বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় (যেমন, ফ্রান্স, স্পেন, ইতালি, ক্রোয়েশিয়া) এবং দক্ষিণ আমেরিকান (যেমন, আর্জেন্টিনা, চিলি) নৌবাহিনীর তিনটি "ক্যাপ্টেন" পদের মধ্যে সবচেয়ে কনিষ্ঠ, কারণ কর্ভেট যুদ্ধজাহাজের মধ্যে সবথেকে ছোট শ্রেণির হওয়ায়, ঐতিহ্যগতভাবে এটি "ক্যাপ্টেন" র‍্যাঙ্কধারী অধিনায়ক থাকা জাহাজের মধ্যে ক্ষুদ্রতম।

পালতোলা নৌযান

ফরাসি করভেট লা ড্রাগন, সাবেক ইংরেজ বেসরকারি যুদ্ধজাহাজ ড্রাগন এবং সাবেক যুক্তরাষ্ট্র ব্রিগেটিন ওয়াশিংটন ১৭৭৬

পালতোলা যুগের সময়, করভেট ছিল ফ্রিগেটের থেকে আকারে ছোট ও একটি কামানবাহী ডেকযুক্ত যুদ্ধজাহাজ। [2] এরা স্লুপস-অফ-ওয়ারের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত ছিল। কর্ভেটের মূল ভুমিকা ছিল উপকূলীয় টহল, ছোটখাটো যুদ্ধে লড়াই, বড় নৌবহরকে সমর্থন দেয়া এবং পতাকা-প্রদর্শন মিশনে অংশগ্রহণ করা। ইংরেজ নৌবাহিনী ১৬৫০ এর দশকে ছোট যুদ্ধজাহাজ ব্যবহার করা শুরু করলেও, এদেরকে করভেটের বদলে স্লুপ হিসেবে অভিহিত করত। করভেটের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ১৬৭০ এর দশকে ফরাসি নৌবাহিনীতে, সম্ভবত সেখান থেকেই এই শব্দটির উৎপত্তি। ফরাসি নৌবাহিনীর করভেটগুলো সময়ের সাথে উন্নত হতে থাকে এবং ১৭৮০ দশকের মধ্যে এগুলো প্রায় বিশটি কামানবাহী জাহাজে পরিণত হয়, যা ছিল ব্রিটিশ নৌবাহিনীর পোস্ট শিপ এর প্রায় সমতুল্য। ব্রিটিশ নৌবাহিনী ১৮৩০ এর দশকের আগে এই শব্দটি গ্রহণ করেনি, যা নেপলীয় যুদ্ধ এরও অনেক পরে একটি ছোট ষষ্ঠ-মাত্রার ও স্লুপের চেয়ে সামান্য বড় নৌযান বোঝাতে ব্যবহৃত হত।

আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে ফ্রান্স কর্তৃক হারানো শেষ নৌযানটি ছিল করভেট লা ড্রাগন, যেটিকে এর অধিনায়ক ১৭৮৩ এর জানুয়ারিতে হাইতির মন্টে ক্রিস্টি থেকে আগত একটি ব্রিটিশ সৈন্যদলের হাতে ধরা না পড়ার জন্য ছিদ্র করে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন। [3]

সপ্তদশ শতকের বেশিরভাগ করভেট ও স্লুপস দৈর্ঘ্যে প্রায় ৪০ থেকে ৬০ ফু (১২ থেকে ১৮ মি) এবং ৪০ থেকে ৭০ টন বার্থেন ওজনের হত। এগুলো একটি ডেকে চার থেকে আটটি ছোট কামান ব্যবহার করত। সময়ের সাথে সাথে কর্ভেটের আকার ও ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং ১৮০০ সালের মধ্যে এদের দৈর্ঘ্য ১০০ ফু (৩০ মি) এর বেশি ও ৪০০ থেকে ৬০০ টন বার্থেন ওজনের হয়ে দাঁড়ায়।

বাষ্পচালিত জাহাজ

ফরাসি বাষ্প চালিত করভেট ডুপ্লে (১৮৫৬-১৮৮৭)

বাষ্প যুগের সময় তৈরি জাহাজগুলি তাদের পূর্ববর্তী পালতোলা জাহাজগুলোর চেয়ে অনেক দ্রুত এবং নিপুণভাবে পরিচালনযোগ্য হয়ে ওঠে। এই যুগের করভেটগুলি সাধারণত ঔপনিবেশিক অভিযানের সময় গানবোটের পাশাপাশি ব্যবহৃত হত। দূরপ্রাচ্য ও আফ্রিকার স্থানীয় অধিবাসীদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য ব্যাটলশিপ এবং অন্যান্য বড় নৌযান অপ্রয়োজনীয় ছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় একটি সহজে নির্মিতব্য টহল জাহাজ এবং জাহাজবহর প্রহরী হিসেবে আধুনিক করভেটের উদ্ভব হয়েছিল। [2] ব্রিটিশ নৌযান নকশাকার উইলিয়াম রিড, স্মিথস ডক কোম্পানির একক শ্যাফ্ট বিশিষ্ট তিমি শিকারি জাহাজ সাউদার্ন প্রাইড এর নকশার উপর ভিত্তি করে একটি ছোট যুদ্ধজাহাজের নকশা করেন। এর সরল নকশা এবং বাণিজ্যিক নির্মাণের মানদণ্ডের ফলে এটিকে নৌবাহিনীর অব্যবহৃত ছোট ইয়ার্ডগুলোতে গণহারে দ্রুত উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছিল। ব্রিটিশ রাজকীয় নৌবাহিনীর রাজনৈতিক প্রধান এবং পরবর্তীকালের প্রধানমন্ত্রী, উইনস্টন চার্চিল "করভেট" নামটি পুনরূজ্জীবিত করার পেছনে ভূমিকা রাখেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পূর্ববর্তী সামরিক শক্তি নির্মাণের সময়, "করভেট" শব্দটি ট্রাইবাল-শ্রেণী ডেস্ট্রয়ার এর ক্ষেত্রে ব্যবহার করার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। ট্রাইবাল শ্রেণিটি অন্যান্য ব্রিটিশ ডেস্ট্রয়ার থেকে যথেষ্ট বড় ও আলাদা হওয়ায় "করভেট" শ্রেণীবিভাগটির পুনরুত্থান ও ট্রাইবালকে এই বিভাগের অন্তর্ভুক্ত করার বিবেচনা করা হয়েছিল। এই পরিকল্পনাটি ব্যর্থ হয় ও কর্ভেট শব্দটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফ্লাওয়ার শ্রেণীর মত ছোট আকারের ও গণহারে উৎপাদিত ডুবোজাহাজ-বিধ্বংসী প্রহরী নৌযানের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।

প্রথম আধুনিক করভেট ছিল ফ্লাওয়ার শ্রেণী (ব্রিটিশ রাজকীয় নৌবাহিনীর জাহাজের নাম রাখা হত ফুলের নামানুসারে এবং রাজকীয় কানাডিয়ান নৌবাহিনীর অধীনস্থ জাহাজের নাম হত কানাডার ছোট ছোট শহরের নামে)। এদের প্রধান কাজ ছিল আটলান্টিক যুদ্ধ ও যুক্তরাজ্য থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নের মারমান্সক-এ রসদ সরবরাহের সময় নৌবহরের নিরাপত্তা প্রদান।

ফ্লাওয়ার-শ্রেণী করভেট প্রাথমিকভাবে নকশা করা হয় অগভীর সমুদ্রে পাহারার জন্য, এগুলো ডুবোজাহাজ-বিধ্বংসী প্রহরী হিসেবে উপযোগী ছিল না। জাহাজগুলো গভীর সমুদ্রে নৌবহর প্রহরার অত্যন্ত ছোট ছিল, আকাশ প্রতিরক্ষার জন্য যথেষ্ট অস্ত্র ধারণ করত না এবং যে সব বাণিজ্যতরী পাহারা দিত তাদের তুলনায় এগুলো খুব বেশি গতিসম্পন্ন ছিল না। যে কারণে সে সময় দ্রুতগতিসম্পন্ন জার্মান ইউ-বোট নকশার উদ্ভব ঘটে। তবে করভেটগুলো বেশ সমুদ্রোপযোগী ও নিপুণভাবে পরিচালনযোগ্য ছিল ছিল কিন্তু এগুলোতে বসবাসের ব্যবস্থা খুব একটা সুবিধার ছিল না। এইসমস্ত ত্রুটির কারণে রাজকীয় নৌবাহিনীতে প্রহরী জাহাজ হিসেবে ফ্রিগেট এর জনপ্রিয়তা করভেটকে ছাপিয়ে যায় কারণ ফ্রিগেট ছিল আকারে বড়, দ্রুততর, অধিক অস্ত্রবিশিষ্ট ও এর দুটি শ্যাফ্ট থাকত। তবে অনেক জাহাজ নির্মাণের ছোট ইয়ার্ড ফ্রিগেট এর মত বড় আকারের নৌযান প্রস্তুত করতে পারত না ফলে পরবর্তীতে ক্যাসল শ্রেণী নামে একটি উন্নত ধরনের কর্ভেটের আবির্ভাব ঘটে। এদের মধ্যে অনেকগুলো ১৯৫০ এর দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়।

রাজকীয় অস্ট্রেলিয়ান নৌবাহিনী ৬০টি ব্যাথার্স্ট-শ্রেণী কর্ভেট নির্মাণ করে, যাদের মধ্যে ২০টি রাজকীয় নৌবাহিনীর অস্ট্রেলিয়ান নাবিকদের দ্বারা পরিচালিত হয় ও চারটি ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য প্রস্তুত করা হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে এদেরকে অস্ট্রেলীয় মাইনসুইপার বা রাজকীয় নৌবাহিনীর মাইনসুইপিং স্লুপ বলা হত এবং এদের নাম রাখা হয় অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহরের নামানুসারে।

রাজকীয় নিউজিল্যান্ড নৌবাহিনীতে বার্ড-শ্রেণী মাইনসুইপার বা ট্রলার করভেট হিসেবে অভিহিত হত। ১৯৪৩ সালে সলোমন দ্বীপপুঞ্জে কিউইমোয়া নামের এরকম দুইটি জাহাজ, আই-১ নামের একটি অপেক্ষাকৃত বড় জাপানী ডুবোজাহাজকে আক্রমণ করে ও ডুবিয়ে দেয়।

ইতালিতে, রেজিয়া মেরিনা এর নৌবহরের প্রহরী নৌযানের তীব্র সংকটের কারণে গ্যাবিয়ানো-শ্রেণী করভেট তৈরি করে। ১৯৪২ থেকে ১৯৪৩ সালের মধ্যে এরকম ২৯টি জাহাজ তৈরি করা হয় (পরিকল্পিত ৬০টির মধ্যে); ভূমধ্যসাগর-এ বিভিন্ন অভিযানে এরা অত্যন্ত কার্যকরী হিসেবে প্রমাণিত হয়। বিশেষত বিমান-বিধ্বংসী ও ডুবোজাহাজ-বিধ্বংসী সক্ষমতায় এরা এতটাই কার্যকরী ছিল যে এগুলো যুদ্ধের পরেও ১৯৭২ সাল পর্যন্ত ইতালিয়ান নৌবাহিনীতে টিকে ছিল।

আধুনিক কর্ভেট

বিংশ শতকের শেষ ও একাবিংশ শতকের শুরুর দিকে আধুনিক নৌবাহিনী গুলোতে ছোট আকার এবং অধিক নিপুণভাবে পরিচালন সক্ষম যুদ্ধজাহাজ ব্যবহারের প্রবণতা শুরু হয়। করভেটের ওজন ৫০০ থেকে ৩,০০০ লং টন (৫১০ থেকে ৩,০৫০ t) এবং দৈর্ঘ্য ১৮০–৪২০ ফু (৫৫–১২৮ মি) হয়ে থাকে। সাধারণত এরা মধ্যম ও স্বল্প পাল্লার কামান, জাহাজবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ও ডুবোজাহাজ-বিধ্বংসী অস্ত্র দ্বারা সজ্জিত থাকে। অনেক করভেট একটি ছোট বা মাঝারি আকারের ডুবোজাহাজ-বিধ্বংসী হেলিকপ্টার বহন করতে সক্ষম। [4]

সমুদ্রসীমাযুক্ত অধিকাংশ দেশ তাদের বাণিজ্যিক জাহাজনির্মাণ কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে অথবা উদ্দেশ্য-নির্মিত শিপইয়ার্ডে করভেট আকারের জাহাজ তৈরি করতে পারে। তবে এর সেন্সর, অস্ত্র এবং যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য সরঞ্জামাদি বিশেষায়িত হয়ে থাকে এবং এর পেছনে মোট নির্মাণব্যয়ের প্রায় ৬০% খরচ হয়। এই উপাদানগুলো আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ক্রয় করা হয়ে থাকে।

বর্তমান কর্ভেটের শ্রেণীসমূহ

জার্মান নৌবাহিনীর করভেট ব্রাউনশেইগ
আর্জেন্টাইন নৌবাহিনীর এস্পোরা-শ্রেণী কর্ভেট মেকো।
একটি সুইডিশ ভিসবি-শ্রেণীর করভেট।
চীনা নৌবাহিনীর একটি টাইপ ০৫৬ কর্ভেট

বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশ করভেট-শ্রেণির যুদ্ধজাহাজ পরিচালনা করে; যাদের মধ্যে আর্জেন্টিনা,[5] বাংলাদেশ, ব্রাজিল, বুলগেরিয়া, চীন, জার্মানি, মিশর, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইসরায়েল, ইতালি, নরওয়ে, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, রোমানিয়া, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, সুইডেন, মালয়েশিয়াতুরস্ক অন্যতম। বাল্টিক সাগর বা পারস্য উপসাগর এর মত অপেক্ষাকৃত ছোট সমুদ্রের তীরবর্তী দেশগুলোতে ক্ষুদ্রতর ও নিপুণতর করভেট তৈরির প্রবণতা দেখা যায়। রাশিয়া বিশ্বের সর্বাধিক সংখ্যক কর্ভেট পরিচালনাকারী দেশ।

১৯৬০ এর দশকে পর্তুগীজ নৌবাহিনী জোয়াও কৌচিনহো-শ্রেণী কর্ভেট নামে বহুমুখী-ভূমিকাসম্পন্ন ছোট আকারের ফ্রিগেটের প্রচলন করে যা কোন ছোট নৌবাহিনীর পক্ষে সাশ্রয়ী হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল। শীঘ্রই জোয়াও কৌচিনহো-শ্রেণী একটি অনুরূপ ধারার কার্যক্রমকে উদ্বুদ্ধ করে – যার মধ্যে স্পেনীয় দেস্কুবিয়ের্তা, জার্মান মেকো ১৪০, ফরাসি এ৬৯ এবং পর্তুগীজদের নিজস্ব বাপ্তিস্তা দে আন্দ্রাদে – এগুলো বেশ কয়েকটি মধ্যম ও ছোট আকারের নৌবাহিনী কর্তৃক গৃহীত হয়।

স্টেলথ প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে তৈরি প্রথম কার্যকরী কর্ভেট হচ্ছে রয়্যাল নরওয়েজিয়ান নৌবাহিনীর শল্ড শ্রেণীর কর্ভেট। সুইডিশ নৌবাহিনী একই রকম স্টেলথ ক্ষমতা সম্পন্ন ভিসবি শ্রেণীর প্রচলন করে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লিটোরাল কম্ব্যাট শিপ নির্মাণ করছে যা মূলত বৃহদাকার কর্ভেট। এদের প্রশস্ত কাঠামো মিশন মডিউলের জন্য স্থানসংকুলান করে, যার ফলে এরা এমন সব কাজের দায়িত্ব নিতে পারে যা পূর্বে শুধুমাত্র মাইনসুইপার বা ডুবোজাহাজ-বিধ্বংসী অলিভার হ্যাজার্ড পেরি-শ্রেণী ফ্রিগেট এর মত বিশেষ শ্রেণীর নৌযানের উপরেই ন্যাস্ত হত।

ইসরায়েলি নৌবাহিনী তিনটি সা'র ৫ শ্রেণীর করভেট পরিচালনা করে। এগুলো ইসরায়েলি নকশা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি করা হয়। এগুলো একটি হেলিকপ্টার বহন করতে সক্ষম এবং আক্রমণাত্মক ও প্রতিরক্ষামূলক অস্ত্র ব্যবস্থা (যার মধ্যে বারাক ৮ আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র অন্তর্ভুক্ত), অত্যাধুনিক ইলেক্ট্রনিক সেন্সর ও কাউন্টারমেজার দ্বারা সুসজ্জিত। এটি সর্বোচ্চ ১,২০০ টন পরিমাণ ভর বহন করতে পারে।

ভারতীয় নৌবাহিনী চারটি কামোর্তা-শ্রেণী কর্ভেট পরিচালনা করে যা গার্ডেন রিচ শিপবিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স কর্তৃক নির্মিত হয়। এই কর্ভেটগুলো মূলত ডুবোজাহাজ-বিধ্বংসী জন্য নির্মিত হয়েছে।

জার্মান নৌবাহিনীর নতুন ব্রাউনশেইগ শ্রেণী করভেট জার্মানির ফাস্ট অ্যাটাক ক্রাফট বহর প্রতিস্থাপন করতে তৈরি হয়। এটিতে স্টেলথ প্রযুক্তি ও ভুমিতে আক্রমণ করার সক্ষমতা রয়েছে। ইসরায়েলি নৌবাহিনী এই শ্রেণীর আরও ভারী অস্ত্রযুক্ত সংস্করণের চারটি সা'র ৬ শ্রেণী করভেট তৈরির আদেশ দেয়, যেগুলো ২০১৯ সাল থেকে হস্তান্তর করা হচ্ছে।

২০০৫ সালে তুরস্ক মিলগেম-শ্রেণীর কর্ভেট নির্মাণ শুরু করে। মিলগেম শ্রেণীটি ডুবোজাহাজ-বিধ্বংসী যুদ্ধ ও উপকূলীয় প্রহরার কাজে ব্যবহারের জন্য তৈরি। এদের মধ্যে প্রধান জাহাজ টিসিজি হেবেলিয়াডা ২০১১ সালে নৌবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হয়। মিলগেম শ্রেণীর গঠনশৈলী ও মিশন প্রোফাইল যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রিডম শ্রেণীর উপকূলীয় যুদ্ধজাহাজের অনুরূপ।

ফিনল্যান্ড নৌবাহিনীর প্রজেক্ট স্কোয়াড্রন ২০২০ এর অংশ হিসেবে ২০২০ সালে চারটি বহুমুখী-ভূমিকা যুক্ত করভেট, যা পোহজানমা শ্রেণী নামকরণ করা হয়েছে, নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এই করভেটগুলোর হেলিকপ্টার বহন, মাইন স্থাপন, বরফ ভাঙা, বিমান-বিধ্বংসী ও জাহাজ-বিধ্বংসী ক্ষমতা থাকবে। এরা ১০০ মিটার (৩৩০ ফু) এরও বেশি লম্বা হবে ও এর নির্মাণে প্রায় ১.২ বিলিয়ন ইউরো খরচ হবে।

গ্রীক নৌবাহিনী করভেটকে ফাস্ট অ্যাটাক মিসাইল ক্রাফট হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করেছে। এর একটি অনুরূপ নৌযান হচ্ছে তুর্কী নৌবাহিনীর কুলুচ-শ্রেণীর ফাস্ট অ্যাটাক মিসাইল ক্রাফট, যেটিকে জার্মান জাহাজ নকশাকার লুর্সেন ভের্ফ্ট কর্ভেট হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

২০০৪ সালে, সংযুক্ত আরব আমিরাত আরাধনা শ্রেণী তহল জাহাজ প্রতিস্থাপন করার জন্য আবু ধাবি শিপ বিল্ডিং এর সাথে বাইনুনাহ ক্লাস কর্ভেট নির্মাণের চুক্তি করে। এই শ্রেণির যুদ্ধজাহাজগুলো টহল, নজরদারি, মাইন বসানো এবং জাহাজবিধ্বংসী ক্ষমতা রয়েছে।

চীনা নৌবাহিনী ২০১০ সালে টাইপ ০২২ মিসাইল বোট এবং টাইপ ০৫৪এ ফ্রিগেট-এর মাঝের শূণ্যস্থান পূরণের জন্য টাইপ ০৫৬ কর্ভেট নির্মানের পরিকল্পনা হাতে নেয়। ২০১৩ সালে এই করভেটের উন্নত রূপ টাইপ ০৫৬এ তৈরি হয় যা ডুবোজাহাজ-বিধ্বংসী যুদ্ধের জন্য বিশেষভাবে সজ্জিত। চীনা নৌবাহিনীতে এই শ্রেণির মোট ৪৪টি করভেট কর্মরত আছে। ২০১৩ সাল পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনী এই শ্রেণির ৪টি করভেট ক্রয় করে।

সংরক্ষিত করভেট

এআরএ উরুগুয়ে, ১৮৭৪ সালের একটি আর্জেন্টাইন করভেট যা ১৯৬৭ সাল থেকে বুয়েনস এইরেসের একটি জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।
  • এআরএ উরুগুয়ে, ১৮৭৪ বাষ্পীয় ও পালতোলা বার্ক, বুয়েন্স এইরেস, আর্জেন্টিনা
  • এইচএমএএস ক্যাসলমেইন, ১৯৪১ ব্যাথ্রাস্ট-শ্রেণী করভেট, উইলিয়ামসটাউন, ভিক্টোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া
  • এইচএমসিএস স্যাকভিল, ১৯৪১ ফ্লাওয়ার-শ্রেণীর করভেট, হ্যালিফ্যাক্স, নোভা স্কশিয়া, কানাডা
  • এইচএমএএস হয়ালা, ১৯৪১ ব্যাথ্রাস্ট-শ্রেণী করভেট, হয়ালা, সাউথ অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রেলিয়া
  • কারজালা ' (2), ১৯৬৮ টুরুনমা-শ্রেণীর করভেট, টুর্কু, ফিনল্যান্ড
  • হিডেনসি ' (2), ১৯৮৪ টারান্টুল-শ্রেণীর ক্ষেপণাস্ত্রবাহী করভেট, ফল রিভার, ম্যাসাচুসেটস, যুক্তরাষ্ট্র
  • এইচটিএমএস ম্যাকলং , সামুত প্রাকান প্রদেশ, থাইল্যান্ড.
  • আরওকেএস পোহাং (পিসিসি-৭৫৬), একটি পোহাং-শ্রেণী করভেট পোহাং, দক্ষিণ কোরিয়া.

আরো দেখুন

  • কর্ভেট শ্রেণীর তালিকা
  • রয়াল নৌবাহিনীর কর্ভেট ও স্লুপ শ্রেণীর তালিকা
  • দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কর্ভেটের তালিকা
  • ফরাসি নৌবাহিনীর এস্কর্টারের তালিকা
  • কর্ভেট ৩১, এই শ্রেণীর সম্মানে নামাঙ্কিত একটি পালতোলা নৌযান

তথ্যসূত্র

  1. "corvette"Merriam-Webster। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৮-১৩
  2. Keegan, John (১৯৮৯)। The Price of Admiralty। Viking। পৃষ্ঠা 277আইএসবিএন 978-0-670-81416-9।
  3. Freddy Van Daele "The Enigmatic Ostend Model "The Dragon-1783"-Alfred Van Daele publisher September 2015
  4. Magnuson, Stew. "East/West Divide Grows In the International Navy Shipbuilding Business." ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৯ মে ২০১১ তারিখে National Defense Industrial Association, 16 May 2011.
  5. Corbeta Clase Espora (Meko 140) ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৮ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে, Armada Argentina, Unidades, Corvetas.

আরও পড়ুন

  • The collection Three Corvettes by Nicholas Monsarrat recounts the writer's World War II experiences on corvettes, starting as an inexperienced small-boat sailor and ending as captain.
  • The novel The Cruel Sea (1951), also by Nicholas Monsarrat, about the life and death of a Flower-class corvette and the men in her, is regarded as one of the classic naval stories of World War II.
  • James B. Lamb's two books, The Corvette Navy and On the Triangle Run, give an autobiographical and historical perspective of life on Royal Canadian Navy corvettes in World War II. The author served on them for six years from Halifax to the beaches of D-Day.

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.