কর্তৃকারক

ব্যাকরণে, বাক্যস্থিত যে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ ক্রিয়া সম্পন্ন করে তাকে ক্রিয়ার কর্তা বা কর্তৃকারক বলা হয়।[1] ক্রিয়ার সঙ্গে 'কে' বা 'কারা' যোগ করে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, তা কর্তৃকারককে নির্দেশ করে। একে "কর্তাকারক"ও বলা হয়[2]

উদাহরণ: খোকা বই পড়ে। (কে বই পড়ে? খোকা - কর্তৃকারক)। মেয়েরা ফুল তোলে। (কে ফুল তোলে? মেয়েরা - কর্তৃকারক)।

প্রকারভেদ

কর্তৃকারকের বহুবিধ প্রকারভেদ বিদ্যমান।

  • কর্তৃকারক বাক্যের ক্রিয়া সম্পাদনের বৈচিত্র্য বা বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী চার প্রকারের হয়ে থাকে:
  1. মুখ্য কর্তা: যে নিজে নিজেই ক্রিয়া সম্পাদন করে, সে মুখ্য কর্তা। যেমন- ছেলেরা ফুটবল খেলছে। মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে।
  2. প্রযোজক কর্তা: মূল কর্তা যখন অন্যকে কোনো কাজে নিয়োজিত করে তা সম্পন্ন করায়, তখন তাকে প্রযোজক কর্তা বলে। যেমন- শিক্ষক ছাত্রদের ব্যাকরণ পড়াচ্ছেন।
  3. প্রযোজ্য কর্তা: মূল কর্তার করণীয় কাজ যাকে দিয়ে সম্পাদিত হয়, তাকে প্রযোজ্য কর্তা বলা হয়। যেমন- শিক্ষক ছাত্রদের ব্যাকরণ পড়াচ্ছেন।
  4. ব্যতিহার কর্তা: কোনো বাক্যে যে দুটো কর্তা একত্রে একজাতীয় কাজ সম্পাদন করে, তাদের ব্যতিহার কর্তা বলে। যেমন- বাঘে-মহিষে এক ঘাটে জল খায়। রাজায়-রাজায় লড়াই, উলুখাগড়ার প্রাণান্ত।
  • বাক্যের বাচ্য বা প্রকাশভঙ্গি অনুসারে কর্তা তিন রকমের হতে পারে:
  1. কর্মবাচ্যের কর্তা: কর্মপদের প্রাধান্যসূচক বাক্যে বসে। যেমন- পুলিশ দ্বারা চোর ধৃত হয়েছে।
  2. ভাববাচ্যের কর্তা: ক্রিয়ার প্রাধান্যসূচক বাক্যে বসে। যেমন- আমার যাওয়া হবে না।
  3. কর্ম-কর্তৃবাচ্যের কর্তা: বাক্যে কর্মপদই যখন কর্তৃস্থানীয় হয়। যেমন- বাঁশি বাজে। কলমটা লেখে ভালো।

কর্তৃকারকে বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহার

(ক) প্রথমা বা শূন্য বা অ-বিভক্তি হামিদ বই পড়ে।
গগনে গরজে মেঘ
ঘরেতে ভ্রমর এলো গুনগুনিয়ে।
জল পড়ে, পাতা নড়ে।
জেলে মাছ ধরে।
শ্রদ্ধাবান লভে জ্ঞান অন্যে কভু নয়।
সাপুড়ে সাপ খেলায়।
ছেলেরা ফুটবল খেলছে।
মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে।
শিক্ষক ছাত্রদের ব্যাকরণ পড়াচ্ছেন।
রাখাল গরুকে ঘাস খাওয়ায়।
(খ) দ্বিতীয়া বা কে বিভক্তি বশিরকে যেতে হবে।
শিক্ষক ছাত্রদের ব্যাকরণ পড়াচ্ছেন।
রাখাল গরুকে ঘাস খাওয়ায়।
(গ) তৃতীয়া বা দ্বারা বিভক্তি ফেরদৌসী কর্তৃক শাহনামা রচিত হয়েছে।
নজরুল কর্তৃক অগ্নিবীণা রচিত হয়।
পুলিশ দ্বারা চোর ধৃত হয়েছে।
(ঘ) পঞ্চমী বিভক্তি
(ঙ) ষষ্ঠী বা র বিভক্তি আমার যাওয়া হয় নি।
(চ) সপ্তমী বা এ বিভক্তি গাঁয়ে মানে না, আপনি মোড়ল।
দশে মিলে করি কাজ।
বাপে না জিজ্ঞাসে, মায়ে না সম্ভাষে।
পাগলে কিনা বলে, ছাগলে কিনা খায়।
বাঘে-মহিষে খানা একঘাটে খাবে না।
দশে মিলে করি কাজ।
য় বিভক্তি ঘোড়ায় গাড়ি টানে।
রাজায়-রাজায় লড়াই।
তে বিভক্তি গরুতে দুধ দেয়।
বুলবুলিতে ধান খেয়েছে খাজনা দেব কীসে?
গরুতে গাড়ি টানে।

আরো দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. বাংলা ভাষার ব্যাকরণ, নবম-দশম শ্রেণি, শিক্ষাবর্ষ ২০১৬, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা, বাংলাদেশ
  2. বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি, নবম-দশম শ্রেণি, ২০২১ শিক্ষাবর্ষ, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা, বাংলাদেশ
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.