কমিক বই

কমিক বই,[1] কমিক ম্যাগাজিন বা সহজভাবে কমিক নামেও পরিচিত, হল এক ধরনের প্রকাশনা। এতে কমিক্স চিত্র অনুবর্তী ও পাশাপাশি প্যানেলে নির্দিষ্ট দৃশ্যসহ সজ্জিত থাকে। প্যানেলে শব্দ বেলুনের মধ্যে কমিক চিত্রে সংক্ষিপ্ত ছত্র ও লিখিত বর্ণনা থাকে। যদিও ১৮শ শতাব্দীর প্রথমে জাপানে এবং ১৮৩০ এর দশকে ইউরোপে কমিক বই লেখা শুরু হয়, কমিক বই প্রথম জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ১৯৩০ এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে। প্রথম আধুনিক কমিক বই ফেমাস ফানিজ যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৩৩ সালে প্রকাশিত হয় এবং সেসময়ের পত্রিকায় রসাত্মক কমিক কলামগুলোর পুনঃমুদ্রণ। কমিক কলামগুলো কমিক্সের জন্য ব্যবহৃত বেশ কিছু গল্প বলার যন্ত্র তৈরি করে।[2] কমিক বই শব্দটি মার্কিন কমিক বইয়ের এক সময়ের কমিক স্ট্রিপের সংকলন থেকে নেওয়া হয়। যাই হোক, এই রীতির পরিবর্তন আসে যখন শুধু রসাত্মক নয় সব ধরনের গল্প বর্ণিত হতে থাকে।

একটি জাদুঘরে কমিক বইয়ের প্রদর্শনী, ২০শ শতাব্দীর প্রথমার্ধে কীভাবে রেল স্টেশনে প্রদর্শিত হত তা চিত্রিত হয়েছে।
একটি কমিক বইয়ের প্রচ্ছদে সাধারণত নাম, ইস্যু নাম্বার, তারিখ, দাম এবং প্রকাশনীর নাম থাকে।

গঠন

কমিক বই তাদের গঠন ও দৃশ্যায়নের প্রতি যন্তশীল। লেখকগণ পাতার ফ্রেম, আকার, অবস্থান ও প্যানেলের অবস্থানের দিকে নজর রাখেন। কমিক বইয়ের চরিত্রসমূহ লেখকের বিষয়বস্তু ও বার্তা পাঠকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কমিক বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ হলে প্যানেল, বেলুন, ছত্র, ও চরিত্র। বেলুন সাধারণত তথ্য বহনকারী উত্তল স্থান যা লেজ যুক্ত হয়ে চরিত্রের উপরে বিদ্যমান থাকে। লেজের মূল, পথ, ও নির্দিষ্ট দিক বিদ্যমান থাকে।

কমিক বই তৈরির কিছু প্রযুক্তিগত সূত্র রয়েছে, যেমন দিক, কোণ, তথ্য, ও ছন্দ। লেখা, আঁকা ও রঙের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিসমূহ অবলম্বন করা গুরুত্বপূর্ণ।[3]

মার্কিন কমিক বই

আমেরিকায় ১৮৪২ সালে হার্ডকভারে দ্য অ্যাডভেঞ্চার অফ মিঃ ওবাদিয়াহ ওল্ডবাক মুদ্রণের পর থেকে মুদ্রণ মাধ্যম হিসেবে কমিক্স বিদ্যমান,[4] যা প্রথম মার্কিন কমিক বইইয়ের আদিরূপ হিসেবে পরিচিত। প্রোটো-কমিক্স সাময়িকী বিশ শতাব্দীর প্রথম দিকে লেখা হতে থাকে, ঐতিহাসিকদের উদ্ধৃতি অনুসারে ডেল পাবলিশিং'র ৩৬ পৃষ্ঠার ফেমাস ফানিজ: অ্যা কার্নিভাল কমিক্স প্রথম সত্যিকারের মার্কিন কমিক বই; উদাহরণস্বরূপ, গৌলার্ট এই বইটিকে "ম্যাগাজিন প্রকাশনার সবচেয়ে লাভজনক শাখার ভিত্তি" হিসেবে উল্লেখ করেন।[5] ১৯৩৮ সালে জেরি সিগেল ও জো শুস্টার এর সুপারম্যান কমিক বইকে প্রধান শিল্প পরিণত করে,[6] এবং কমিকসের সোনালি যুগের পথ দেখায়। স্বর্ণযুগে সুপারহিরোদের আদিরূপ সৃষ্টি করা হয়।

ইতিহাসবিদরা মার্কিন কমিক বইয়ের সময়কালকে দুটি যুগে ভাগ করেছেন। কমিক বইয়ের সোনালি যুগের সূচনা হয় ১৯৩৮ সালে সুপারম্যান দিয়ে। এ সময়ে কমিক বইয়ের সর্বোচ্চ বিক্রি হয়।[7] কমিক বইয়ের রৌপ্য যুগ এর সূচনা হয় ১৯৫৬ সালের অক্টোবরে সুপ্ত সুপারহিরো রুপে শোকেস কমিক্সের চতুর্থ অংশে ফ্ল্যাশ]] দিয়ে।[8][9] রৌপ্য যুগের সমাপ্তি হয় ১৯৬০ এর দশকের শেষের দিকে বা ১৯৭০ এর দশকের প্রথম দিকে যখন মার্ভেল কমিক্স স্ট্যান লী ও জ্যাক কির্বির ফ্যান্টাস্টিক ফোর এবং স্ট্যান লী ও স্টিভ ডিট্কোর স্পাইডার-ম্যান দিয়ে কমিক্সকে আরো বাস্তবসম্মতভাবে উপস্থাপন করে। রৌপ্য যুগ থেকে কমিক বইয়ের ব্রোঞ্জ যুগ এর সীমারেখা স্পষ্ট নয়, তবে ধারণা করা হয় ব্রোঞ্জ যুগ ১৯৭০ এর দশকের শুরু থেকে ১৯৮০ এর দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল।[10] কমিক বইয়ের আধুনিক যুগ ১৯৮০ এর দশকের মাঝামাঝি থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত চলছে।[11]

মার্কিন কমিক বইয়ের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল মনোবিজ্ঞানী ফ্রেডরিক ওয়ের্থাম এর সমালোচনা, তার ১৯৫৪ সালে রচিত সিডাকশন অফ দ্য ইনোসেন্ট বইটি আমেরিকান সিনেট সাবকমিটি অন জুভেনাইল ডেলিঙ্কোয়েন্সিকে কমিক বইসমূহ তদন্ত করতে তৎপর করে। সরকার ও গণমাধ্যমের এই প্রতিক্রিয়ার পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কমিক বই প্রতিষ্ঠানসমূহ কমিক ম্যাগাজিন অ্যাসোসিয়েশন অফ আমেরিকা গড়ে তুলে।[12] সংঘটি ১৯৫৪ সালে কমিক কোড কর্তৃপক্ষ তৈরি করে এবং স্ব-পরীক্ষণ কমিক রীতি রচনা করে। এই রীতির অধীনে সকল কমিক বইকে একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অনুমোদন লাভ করতে হয়। ১৯৭০ এর দশকের পূর্ব পর্যন্ত কমিক বইসমূহ এই সংঘের তত্ত্বাবধান ছাড়া প্রকাশিত হতে পারত না।[13]

আন্ডারগ্রাউন্ড কমিক্স

১৯৭০ সালের প্রথমার্ধে সৃজনশীলতার একটি ধরনের আবির্ভাব হয়, যা আন্ডারগ্রাউন্ড কমিক্স নামে পরিচিতি লাভ করে। প্রতিষ্ঠিত কমিক্স শিল্পের স্বাধীনভাবে প্রকাশিত এবং বিতরণকৃত, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই ধরনের কমিক বইতে সমসাময়িক যুবকদের বিপরীত এবং মাদক সংস্কৃতি প্রতিফলন দেখা যায়। অনেক বইতে অপ্রাসঙ্গিক লেখনশৈলী ছিল। নগ্নতা, যৌনাচার, গালি গালাজ এবং রাজনীতি বিষয়ে অকপট চিত্রায়নে তাদের কোন সীমা ছিল না। এগুলো "তিজুয়ানা বাইবেল"-এর চেয়েও অশ্লীল এবং আরও বেশি অস্পষ্ট ছিল। আন্ডারগ্রাউন্ড কমিক্স কখনো সংবাদপত্র বিক্রির স্থানে বিক্রি করা হত না, বরং তা যুবকদের যাতায়াত বেশি যে ধরনের দোকানে, যেমন গলির মাথার দোকান এবং রেকর্ড দোকানে এবং ডাকে পাওয়া যায়।

ফুলবার্ট স্টারজিও থেকে প্রকাশিত ফ্রাঙ্ক স্ট্যাক রচিত দ্য অ্যাডভেঞ্চার অফ জিসাস[14] প্রথম আন্ডারগ্রাউন্ড কমিকস হিসেবে স্বীকৃত।[15]

ভিন্নধর্মী কমিক্স

১৯৭০ এর দশকের শেষের দিকে কমিক বই বিশেষ বিপণি বিতান এর আবির্ভাবের পরে যুক্তরাষ্ট্রে "স্বাধীন" ও "ভিন্নধর্মী" কমিক্স বইয়ের বাজার সৃষ্টি হয়। প্রথম এই ধরনের কমিক বইয়ের মধ্যে কমিক বই লেখক মাইক ফ্রিডরিখ-এর ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৯ সালের প্রকাশিত স্টার রীচ, হার্ভি পেকার-এর অ্যামেরিকান স্প্লেন্ডর উল্লেখযোগ্য।[16] অ্যামেরিকান স্প্লেন্ডর বিক্ষিপ্তভাবে ২১শ শতাব্দীতেও প্রকাশিত হতে থেকে এবং শারি স্প্রিঞ্জার বার্ম্যান ও রবার্ট পুলকিনির ২০০৩ সালে অ্যামেরিকান স্প্লেন্ডর নামে একটি চলচ্চিত্রে এই কমিক গৃহীত হয়। কিছু স্বাধীন কমিক্স আন্ডারগ্রাউন্ড কমিক্সের মত করে চলতে থাকে। এসব বইয়ের বিষয়বস্তু অস্পষ্ট থাকায়, ফরম্যাট ও ধরনে মূল ধারার প্রকাশকদের মত বিক্রয় হত না। ফলে একক লেখক বা ছোট কোম্পানি থেকে এই ধরনের বই প্রকাশিত হত। কয়েকজন পরীক্ষামূলকভাবে এই কমিক্সসমূহকে শিল্পের মর্যাদায় নিয়ে আসতে চায়।

১৯৭০ এর দশকে ছোট প্রকাশনা সংস্কৃতি গড়ে উঠে এবং ভিন্নতা লাভ করে। ১৯৮০ এর দশকে এসে কিছু স্বাধীন প্রকাশনা, যেমন - প্যাসিফিক কমিক্স, ইক্লিপস কমিক্স, ফার্স্ট কমিক্স, কমিকো, ও ফ্যান্টাগ্রাফিকস, রঙ্গিন সুপারহিরো, গোয়েন্দা কাহিনী, বিজ্ঞান কল্পকাহিনী থেকে শুরু করে সাদাকালো ম্যাগাজিন ফরম্যাটে লাতিন আমেরিকান জাদু ও বাস্তবতা নিয়ে বিভিন্ন রকমের ও ফরম্যাটের কমিক্স প্রকাশ করতে থাকে।

১৯৯০ এর দশকে কিছু ছোট প্রকাশক মূল ধারার বইয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে তাদের কমিক্সের ফরম্যাট ও বিতরণ ব্যবস্থা পরিবর্তন করে। এসময়ে স্ব-প্রকাশনায় "মিনিকমিক্স" ধরন প্রকাশিত হয়। এই ধরনের কমিক্স ১৯৮০ এর দশকে প্রথম প্রকাশিত হলেও ১৯৯০ এর দশকে ছোট প্রকাশনা থেকেও কম প্রচার পেলেও জনপ্রিয়তা লাভ করে।[17]

ছোট প্রকাশনসমূহ মুদ্রণ প্রযুক্তির উন্নয়নের, যেমন - ডিজিটাল প্রিন্ট অন ডিমান্ড, সাথে সাথে নিয়মিত অ্যাভাটার কমিক্স, হাইপারওয়ার্কস, রেটুনস, ও টার্মিনাল প্রেস প্রকাশ করতে থাকে।

গ্রাফিক কমিক্স

১৯৬৪ সালে রিচার্ড কাইল প্রথম "গ্রাফিক উপন্যাস" শব্দটি ব্যবহার করেন।[18] তবে এই ধরন ১৯২০ এর দশক থেকেই বিদ্যমান ছিল, যা মধ্যযুগীয় কাঠের মুদ্রণেও প্রকাশিত হয়েছে। বেলজিয়ান ফ্র্যান্স মাসেরিল,[19] মার্কিন লিন্ড ওয়ার্ড ও অন্যান্য, স্ট্যান লীও এর অন্তর্ভুক্ত, ছিল মধ্যযুগীয় কাঠের মুদ্রণের উল্লেখযোগ্য প্রকাশনা। ১৯৫০ সালে সেন্ট জন পাবলিকেশন্স বয়স্কদের জন্য প্রথম "চিত্রসহ উপন্যাস" ইট রাইমস উইথ লাস্ট প্রকাশ করে। ১২৮ পৃষ্ঠার উপন্যাসটি "ড্রেক ওয়ালার" ছদ্মনামে লিখেন আর্নল্ড ড্রেক ও লেসলি ওয়ালার; পেন্সিলের কাজ করেন ম্যাট বেকার এবং কালির কাজ করেন রে ওসরিন। বইটি মলাটে লিখা ছিল "একটি মৌলিক পূর্ণদৈর্ঘ্য উপন্যাস"। ১৯৭১ সালে লেখক ও শিল্পী গিল কেইন এবং সহযোগীরা মিলে প্রথম পেপারব্যাক "কমিক্স উপন্যাস" ব্ল্যাকমার্ক রচনা করেন। উইল আইজনার ১৯৭৮ সালে তার অ্যা কনট্রাক্ট উইথ গড বইয়ের পেপারব্যাকের মলাটে "গ্রাফিক উপন্যাস" শব্দটি ব্যবহার করে শব্দটিকে জনপ্রিয় করে তুলেন।

ডিজিটাল কমিক্স

ডিজিটাল কমিক হল এমন এক ধরনের কমিক যা পুরোপুরি কম্পিউটারে প্রস্তুত করা হয় বা ডিজিটালি প্রকাশিত হয় (মুদ্রণের বিপরীত)।[20]

কমিক বই সংগ্রহ

১৯৭০ এর দশকে বিশেষ কমিক বই বিতান দেখা যায়। প্রথম দিকে, প্রকাশকেরা কমিক বইকে শিশুতোষ বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে বাজারজাত করতেন। পরে কমিক্সকে শিল্পে রূপ দান করা হয় এবং পপ সংস্কৃতির বিকাশের ফলে বয়স্করাও কমিক্স বই কিনতে শুরু করে।[21]

কমিক বই সংগ্রাহকগণ আজীবন কমিক বইয়ের গল্প সংগ্রহে আগ্রহী। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় তারা কোন একটি নির্দিষ্ট চরিত্রের সকল গল্প সংগ্রহে লিপ্ত থাকে। কমিক্সসমূহ সংখ্যার ক্রম অনুযায়ী প্রকাশিত হয়। মার্ভেল ম্যাগাজিনের প্রথম ইস্যু "দ্য অ্যামেজিং স্পাইডার-ম্যান" ছিল ১ নং প্রকাশনা এবং পরের প্রকাশনার সংখ্যা ছিল ২। এভাবে এখন পর্যন্ত বইটির শত সংখ্যক প্রকাশনা বের হয়েছে। প্রথম প্রকাশনা সাধারণত সচরাচর পাওয়া যায় না এবং সংগ্রাহকগণের কাছে তা খুবই আকাঙ্ক্ষিত।

কোন চরিত্রের প্রথম উপস্থাপন কোন পূর্ব থেকে বিদ্যমান গল্পেও হতে পারে। যেমন অ্যামেজিং ফ্যান্টাসির ১৫তম সংখ্যায় স্পাইডার-ম্যান চরিত্রটিকে প্রথম উপস্থাপন করা হয়। নতুন চরিত্রসমূহ এভাবেই উপস্থাপন করা হয় এবং এই চরিত্র পাঠকের কাছে জনপ্রিয় ও নায়কোচিত না হয়ে ওঠা পর্যন্ত সেই নামে কোন গল্প প্রকাশিত হয় না। ফলে কমিক্সে কোন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের প্রথম উপস্থাপন খুঁজে বের করা কঠিন হয়ে যায়।

কিছু বিরল কমিক বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ১৯৩৯ সালের অপ্রকাশিত মোশন পিকচার ফানিজ উইকলি #১। যার আটটি কপি ও একটি কভারহীন কপি ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত হয়। বইটির "পে কপি" ২০০৫ হেরিটেজ অকশনে ৪৩, ১২৫ ডলারে বিক্রি হয়।[22]

সবচেয়ে মূল্যবান মার্কিন কমিক্সের মধ্যে দুষ্প্রাপ্যতা ও প্রথম প্রকাশের সময় জনপ্রিয়তা ও চরিত্রের গুণাবলী যুক্ত থাকে। ২০১৬ সালে প্রকাশিত দশ সর্বোচ্চ বিক্রিত কমিক বইয়ের তালিকায় ৩,৩০৭,৮৫২ মার্কিন ডলার মূল্যে বিক্রিত অ্যাকশন কমিক্স এর ১ নং বই, সুপারম্যান এর প্রথম প্রকাশ, প্রথম স্থান অধিকার করে। ১,১০০,০০০ মার্কিন ডলার মূল্যে বিক্রিত অ্যামাজিং ফ্যান্টাসির ১৫ নং বই স্পাইডার-ম্যান ডিটেকটিভ কমিক্স এর ২৭ নং বই, ব্যাটম্যান এর প্রথম প্রকাশকে পিছে ফেলে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে। ১,০৭৫,০০ মার্কিন ডলার মূল্যে বিক্রিত ব্যাটম্যান তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে।[23]

ভুল মুদ্রণ, কমিক ডিলারদের উদ্দীপক প্রদানকারী মুদ্রণ ও স্বল্প বিতরণকৃত ইস্যুসমূহের মূল্য কম হয়ে থাকে। বিরলতম আধুনিক কমিক বই হল দ্য লিগ অফ এক্সট্রাঅর্ডিনার জেন্টলম্যান #৫ এর মূল প্রকাশনা। ডিসি কমিক্সের নির্বাহী পল লেভিৎজ প্রত্যাহার করেছেন কারণ এতে ভিক্টোরীয় যুগের "মার্ভেল ডুশ"-এর একটি বিজ্ঞাপন রয়েছে, যা তিনি বিরক্তিকর বলে মনে করেন। বর্তমানে বইটির মাত্র ১০০ কপি বিদ্যমান রয়েছে এবং এর বেশির ভাগই কমিক্স গ্যারান্টি গ্রেড সিজিসিপ্রাপ্ত। ২০০০ সাল থেকে সার্টিফাইড গ্যারান্টি কোম্পানি (সিজিসি) কমিক বইয়ে পুরু প্লাস্টিকের আচ্ছাদন এবং গ্রেডিং প্রদান শুরু করে। ২০১৪ সাল পর্যন্ত, কমিক বইকে গ্রেডিংয়ের জন্য তিনটি কোম্পানি রয়েছে। সিজিসি ছাড়া বাকি দুই কোম্পানি হল পিজিএক্স ও কমিক বুক সার্টিফিকেশন সার্ভিস (সিবিসিএস)।[24] যাই হোক, এই গ্রেডিং পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। যেমন - গ্রেডিং সেবার ব্যয় অত্যধিক, সংগ্রাহকদের জন্য তা ইতিবাচক কিনা, যদি এই সেবা ফটকাবাজি হয় তবে কারা এ থেকে মুনাফা অর্জন করছে। কমিক গ্রেডিং একটি নির্ধারিত মূল্য মান তৈরি করেছে যার ভিত্তিতে অনলাইন মূল্য তালিকা, যেমন গোকালেক্ট ও জিপিঅ্যানালাইসিস সমসাময়িক বাজার মূল্য সম্পর্কিত প্রতিবেদন পেশ করে।

কমিক বইয়ের মূল চিত্রাঙ্কনের পৃষ্ঠাসমূহও সংগ্রহ করা হয় এবং এগুলো কমিক বই সংগ্রাহকের সবচেয়ে বিরল সংগ্রহ, কারণ প্রতি পৃষ্ঠার চিত্রাঙ্কনের একটি পৃষ্ঠাই মুদ্রিত ও প্রকাশিত হয়। গল্প লেখক নিজে তা তৈরি করেন; একজন পেন্সিল শিল্পী প্রতি পৃষ্ঠায় ধারাবাহিকভাবে খসড়া তৈরি করেন; কালি শিল্পী পেন্সিলের উপর দিয়ে কলম ও কালো কালি ছুঁয়ে যান; শব্দ শিল্পী নিজ হাতে এতে গল্পের সংলাপ ও ব্যাখার প্রতিটি শব্দ লিখেন; এবং সবশেষে রংশিল্পী প্রিন্টারে পাঠানোর পূর্বে এতে রং বসান। যখন মূল চিত্রাঙ্কনের মূল পৃষ্ঠাসমূহ প্রিন্টার থেকে ফেরত নেওয়া হয় তখন তা সাধারণত লেখকদের কাছে ফেরত দেওয়া হয়। লেখক কখনো কখনো তা কমিক বই সম্পর্কিত সম্মেলন, বা গ্যালারি ও আর্ট শোতে বিক্রি করে দেন। সুপারম্যান, ব্যাটম্যান, ওয়ান্ডার ওম্যান ও স্পাইডার-ম্যান চরিত্রসমূহের মূল পৃষ্ঠাসমূহ অমূল্য বলে বিবেচিত হয়।

ইউরোপীয় কমিক্স

ফ্রাঙ্কো-বেলজিয়ান কমিক্স

রেনে গসিনি(১৯২৬-১৯৭৭), এস্ট্রিক কমি বই সিরিজের লেখক।

ফ্রান্স ও বেলজিয়ামে কমিক্স ও কমিক বইয়ের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ফরাসি ভাষায় কমিক বইকে "বান্দে দেসিনি" ও ওলন্দাজ ভাষায় "স্ট্রিপ" বলা হয়। বেলজিয়ান কমিক বইসমূহ মূলত ওলন্দাজ ভাষায় লেখায় হয় এবং এতে ফ্রাঙ্কোফোন "ফ্রাঙ্কো-বেলজিয়ান" কমিক্সের প্রভাব দেখা যায়। তবে দুই ধরনের কমিক্সের কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট রয়েছে।

লা বান্দে দেসিনি নামটি এসেছে মূলত ড্রন স্ট্রিপ থেকে, যা ফিল্ম স্ট্রিপের চিত্র ধারার বিপরীত। চলচ্চিত্র ও কমিক্স দুটি শব্দকেই "বান্দে" শব্দের ইংরেজি সমার্থক হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তবে ফরাসি ভাষার শব্দে কোন নির্দিষ্ট বিষয়কে নির্দেশ করে না, যেখানে মার্কিন শব্দ "কমিক্স" বা "ফানিজ" দিয়ে শিল্পের একটি ধরনকে বুঝায় যা গুরুত্বের সাথে দেখা হয় না। লা ন্যুভিয়েম শিল্প (নবম শিল্প) হিসেবে কমিক্সের সাতন্ত্র ফরাসি পণ্ডিতদের কাছে প্রচলিত, কারণ কমিক্সের ধারণা আলোচিত ও সমালোচিত। উত্তর আমেরিকায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফ্রাঙ্কো-বেলজিয়ান কমিক্সসমূহকে গ্রাফিক উপন্যাসের সমকক্ষ হিসেবে দেখা যায়। কিন্তু দীর্ঘ হোক বা ছোট, অথবা সীমাবদ্ধ হোক বা ম্যাগাজিন ফরম্যাটে, ইউরোপে কোন অত্যাধুনিক শব্দের প্রয়োজন নেই, কারণ কমিক্স নামটি দিয়ে নগণ্য কিছু বুঝায় না।

দেশের জনসংখ্যার কথা মাথায় রেখে ফ্রান্স ও বেলজিয়ামের অসংখ্য লেখক অনেক কমিক বই প্রকাশ করে থাকে। ফ্রান্সে লেখকগণই বেশির ভাগ কমিক্স বইয়ের প্রকাশনা নিয়ন্ত্রণ করে। লেখকগণ নিজেদের সময়সীমার মধ্যে কাজ করেন এবং পাঠকগণও পরবর্তী কিস্তি পেতে ছয় মাস থেকে দুই বছর সময় অপেক্ষা করেন। বেশির ভাগ বই প্রথমে হার্ডকভারে ৪৮, ৫৬ বা ৬৪ পৃষ্ঠাসহ মুদ্রিত হয়।

ব্রিটিশ কমিক্স

অ্যালি স্লপয়ার'স হাফ হলিডে এর ১৮৮৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর মুদ্রণের প্রচ্ছদ।[25]

ব্রিটেনে প্রকাশিত প্রথম কমিক বই অ্যালি স্লোপার'স হাফ হলিডে(১৮৮৪) বয়স্কদের জন্য রচিত হলেও প্রকাশকেরা অতি শীঘ্রই শিশুদের বাজার দখল করে। ফলে বেশিরভাগ প্রকাশকগণ শিশুদের জন্য কমিক বই বাজারজাত করতে থাকে এবং জনমনে গেঁথে যায় যে কমিক বই শিশুতোষ বই। ২০শ শতাব্দীর প্রথমদিকের ব্রিটিশ কমিক বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ভিক্টোরীয় যুগের পেনি ড্রেডফুল, যার জনপ্রিয় চরিত্রসমূহ হল সুইনি টড, ডিক টার্পিন ও ভার্নি দ্য ভ্যাম্পায়ার।[26]

দ্য বিনো এর প্রচ্ছদ জানুয়ারি ৬, ১৯৪০ মুদ্রণের

দ্য বিনোদ্য ড্যান্ডি সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি ব্রিটিশ কমিক বই। দুটি কমিকই ডিসি থমসন ১৯৩০ এর দশকে প্রকাশ করে। ১৯৫০ এর দশকে বই দুটির সাপ্তাহিক প্রকাশনা ২ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যায়।[27][28] এই সময়ে ব্রিটিশ জনপ্রিয় সংস্কৃতি হিসেবে কমিক্সের জনপ্রিয়তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে লন্ডন কার্টুন মিউজিয়ামের তত্ত্বাবধায়ক আনিতা ও'ব্রায়ান বলেন: "১৯৩০ এর দশকে যখন বিনো ও ড্যান্ডির মত কমিক্স প্রকাশিত হয়েছিল, যদিও তা ১৯৫০ ও ১৯৬০ এর দশকে জনপ্রিয়তা লাভ করে, সেই কমিক্সগুলোই শিশুদের বিনোদনের একমাত্র উৎস ছিল।"[27]

১৯৫৪ সালে টাইগার কমিক্স রয় অফ দ্য রোভারস নিয়ে আসে। ফুটবল খেলা নিয়ে রচিত এই স্ট্রিপ ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এতে রয় রেসের জীবনী ও তার দল মেলচেস্টার রোভারসের গল্প তুলে ধরা হয়েছে। এই বই থেকে "রিয়াল 'রয় অফ দ্য রোভারস' স্টাফ" এখন ফুটবল লেখক, ভাষ্যকার ও সমর্থকদের কাছে প্রবাদে পরিণত হয়েছে, যা প্রতিবন্ধকতা দূর করে ভালো খেলা ও বিস্ময়কর ফলাফল প্রকাশকে বিবৃত করতে ব্যবহৃত হয়। অন্যান্য কমিক বই, যেমন ঈগল, ভ্যালিয়েন্ট, ওয়ারিয়র, ভিজ ২০০০ এডিও প্রসিদ্ধ ছিল। কিছু কমিক্স, যেমন জজ ড্রেড এবং অন্যান্য ২০০০ এডির শিরোনাম ট্যাবলয়েড আকারে প্রকাশিত হত। আন্ডারগ্রাউন্ড কমিক্স ও ছোট প্রকাশনার শিরোনামসমূহও যুক্তরাজ্যে দেখা যেত। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ওজ ও এস্কেপ ম্যাগাজিন।

১৯৮০ এর দশকে ব্রিটিশ লেখক ও চিত্রশিল্পীদের উত্থানের ফলে মূলধারার কমিক বই জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং এই উত্থানকে কমিক বইয়ের ইতিহাসে "ব্রিটিশ অনুপ্রবেশ" বলে উল্লেখ করা হয়। এই লেখক ও চিত্রশিল্পীগণ তাদের নিজেদের ধ্যান-ধারণা ও দর্শন নিয়ে আসে, যেমন অরাজতকতা, বিতর্ক, রাজনীতি, যা ব্রিটিশ গণমাধ্যমে বেশি দেখা যেত। এই উপাদানসমূহের মাধ্যমে কমিক বইয়ের পথকে সুদৃঢ় হয় এবং কমিক্সের আধুনিক যুগের সূত্রপাত হয়।[29] লেখকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন ভি ফর ভেন্ডেটা, ফ্রম হেল, ওয়াচম্যান, মার্ভেলম্যানদ্য লিগ অফ এক্সটাঅর্ডিনারি জেন্টলম্যান[30] বইয়ের লেখক অ্যালান মুর; পৌরাণিক দ্য স্যান্ডম্যানবুক অফ ম্যাজিক বইয়ের লেখক নেল গেম্যান, ট্রান্সমেট্রোপলিটানপ্লেনেটারির লেখক এবং অন্যান্যদের মধ্যে ওয়ান্টেডকিক-অ্যাস বইয়ের লেখক মার্ক মিলার। ব্রিটেনের পটভূমিতে রচিত কমিক বই ধারাবাহিক হেলব্লেজার জেমি ডিলানোদের মত ব্রিটিশ লেখকদের ভিত শক্ত করেছে।[31]

ক্রিসমাসের সময়ে প্রকাশকগণ কমিক বার্ষিকী, মুদ্রিত এবং হার্ডকভারে এফোর আকারের বইয়ে পুনঃপ্রকাশ করে। ব্রিটিশ কমিক বার্ষিকীর জনপ্রিয় উদাহরণ হল রুপার্ট। ছুটির মৌসুমে ডিসি থমসন সফটকভারে দ্য ব্রুনসওর ইউলি কলামগুলো পুনঃপ্রকাশ করে।

২০১২ সালের ১৯ মার্চ ব্রিটিশ পোস্টাল সার্ভিস রয়্যাল মেইল ব্রিটিশ কমিক বইয়ের চরিত্র ও সিরিজের ছবি সংবলিত ডাকটিকেট বের করে।[32] ডাকটিকেটে দ্য বিনো, দ্য ড্যান্ডি, ঈগল, দ্য টপার, রয় অফ দ্য রোভারস, বান্টি, বুস্টার, ভ্যালিয়েন্ট, টুইঙ্কল২০০০ এডির ছবি সংযোজন করা আছে।[32]

ইতালীয় কমিক্স

হুগো প্রাত(১৯২৭-১৯৯৫), কর্ত মালতেসে কমিক বই সিরিজের লেখক।

ইতালিতে কমিক্স "ফুমেত্তি" নামে পরিচিত। ইতালীয় কমিক্সের আবির্ভাব হয় ১৯শ শতকে হিউমার স্ট্রিপ হিসেবে এবং পরে রোমাঞ্চকর গল্পে পরিবর্তিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে হুগো প্রাত ও গুইদো ক্রেপাক্সদের মত শিল্পীরা ইতালীয় কমিক্সকে আন্তর্জাতিক দর্শকদের সামনে তুলে ধরেন। জনপ্রিয় কমিক বইয়ের মধ্যে ডায়াবলিক ও সার্জিও বনেলির সম্পাদনায় টেক্স উইলারডিলান ডগ এখন বেস্ট-সেলার।

মূলধারার কমিক্স মাসিক ভিত্তিতে সাদাকালো ডাইজেস্ট সাইজ ফরম্যাটে ১০০ থেকে ১৩২ পৃষ্ঠার মধ্যে প্রকাশিত হয়। সবচেয়ে বিখ্যাত চরিত্রসমূহের সংগ্রহে ২০০ পৃষ্ঠার বইও পাওয়া যায়। লেখকদের কমিক্স বই ফ্রেঞ্চ বিডি ফরম্যাটে প্রকাশিত হয়, যেমন প্র্যাটের কর্তো মালতেস

ইতালীয় কার্টুনিস্টগণের মধ্যে অন্যান্য দেশ, যেমন ফ্রান্স, বেলজিয়াম, স্পেন ও আর্জেন্টিনার কমিক্সের প্রভাব দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ইতালি ওয়াল্ট ডিজনির কমিক গল্প তৈরির জন্য বিখ্যাত। ডোনাল্ড ডাকের সুপারহিরো পেপারিনিক, ইংরেজিতে সুপারডাক নামে পরিচিত, ইতালিতে তৈরি হয়েছিল।

চেক কমিক্স

স্তির্লিস্তেক সবচেয়ে জনপ্রিয় চেক কমিক্স। স্তির্লিস্তেক প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ সালে এবং এর প্রথম লেখক ইয়ারোস্লাভ নেমেচেক। প্রথম দশকের বেশিরভাগ গল্প লেখেন লুমা স্তিপলোভা (১৯৩০-২০০৯)। বর্তমানে কয়েকজন লেখক মিলে বিভিন্ন পর্ব রচনা করেন।[33]

জাপানী কমিক্স

মাঙ্গা

জাপানে প্রথম কমিক বই প্রকাশিত হয় ১৮শ শতাব্দীতে কাঠে মুদ্রিত বুকলেটে। এতে লোকসাহিত্য, কিংবদন্তি ও ঐতিহাসিক ঘটনাবলী সমৃদ্ধ ছোটগল্প থাকত, যা সাধারণ দৃশ্যমান বাগধারার মাধ্যমে বলা হত। এই বইসমূহ আকাহন (লাল বই), কুরোবন (কালো বই), আওহন (নীল বই) নামে পরিচিত ছিল, যা স্বল্পশিক্ষিত পাঠকদের জন্য লেখা হত। ১৭৭৫ সালে কইকাওয়া হারুমাশির কমিক বই (কিনকিন সেন্সেই এইগা নু ইয়ুম (মাস্টার ফ্ল্যাশগোল্ড্স স্পেলন্ডিফেরাস ড্রিম) দিয়ে জাপানে কমিক বইয়ের উন্মেষ ঘটে এবং সাহিত্যবোধ ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ঘটে। কিবিওশিকে বলা হয়ে থাকে প্রথম প্রাপ্ত বয়স্কদের কমিক বই। বইটির হাজারের বেশি কপি প্রকাশিত হয় এবং এখনো প্রায় ২০০০ কপি বিদ্যমান।

জাপানে আধুনিক কমিক বই পূর্বের কমিক বই ও কাঠে মুদ্রিত উকিয়ো-এ এর সাথে পশ্চিমা চিত্রাঙ্কনের ধাঁচ যুক্ত হয়ে নতুনতর হয়েছে। জাপানী কমিক বই বর্তমান রূপ ধারণ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অল্প সময় পরে। সে সময়ে বইসমূহ কভার ব্যতীত বাকি পৃষ্ঠা সাদাকালো মুদ্রণে প্রকাশিত হত। কভারও মাত্র চারটি রঙে প্রকাশিত হত। আবার বিভিন্ন উপলক্ষে প্রথম কয়েকটি পাতা সম্পূর্ণ রঙ্গিন মুদ্রণ করা হত।মাঙ্গা শব্দের অর্থ হল উদ্দেশ্যহীন বা খামখেয়ালিময় ছবি এবং তা ১৮শ শতাব্দীর শেষের দিকে প্রথম সান্তো কিওদেন এর বই শিজি নো ইউকিকাই (১৭৯৮) ও আইকাওয়া মিনওয়ার কমিক স্কেচেস অফ হান্ড্রেড উইমেন (১৭৯৮) এর প্রকাশনায় ব্যবহৃত হয়। মেইজি যুগে, আকাহন শব্দটিও ব্যবহৃত হত। পরবর্তীতে, পশ্চিমা চিত্রশিল্পীদের নিয়ে আসা হয় তাদের ছাত্রদের লাইন, রূপ, ও রঙের ধারণা দেওয়ার জন্য, যা পূর্বে উকিয়ো-এ তে গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। এই সময়ে মাঙ্গাকে পঞ্চি-এ বলা হত এবং তা জাপানে ব্রিটিশদের পাঞ্চ ম্যাগাজিনের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। এতে ব্যঙ্গকৌতুক ও রাজনৈতিক ব্যঙ্গধর্মী রচনা এক বা চার ফরম্যাটে লেখা হত।

ডঃ অসামু তেজুকা (১৯২৮-১৯৮৯) এই রূপকে আরও উন্নত করেন। অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র মমতারোস ডিভাইন সী ওয়ারিয়র্স দেখে তেজুকা কমিক শিল্পী হওয়ার অনুপ্রেরণা লাভ করেন। তিনি কমিক ফরম্যাটে পর্বভিত্তিক গল্পবলা ও চরিত্রের উন্নয়ন নিয়ে আসেন, যেখানে প্রতিটি গল্প একটি বড় গল্পের অংশ। তেজুকার কমিকে লেখা ছিল শুধু চরিত্রের সংলাপ, যা তার কমিক্সকে সিনেমেটিক গুণে গুণান্বিত করে। ওয়াল্ট ডিজনির কাজ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তেজুকা চরিত্রগুলোর মুখের বৈশিষ্ট, যেমন চোখ, নাক, মুখ আঁকা শুরু করেন। মুখের অভিব্যক্তি প্রকাশের এই ধারার সাথে অল্প কয়েক ছত্র ও এই ধারার সহজবোধ্যতার মাধ্যমে তেজুকা সফলতা অর্জন করেন। তেজুকার কাজ উকিয়ো-এ রীতিতে নতুন আকর্ষণ নিয়ে আসে, যেখানে চিত্র বাস্তবতার চিত্রায়ণ নয় বরং তা হল কোন ধারণার প্রতিবিম্ব।

যদিও মাঙ্গা মার্কিন কমিক বইয়ের সমতুল্য, তবুও মার্কিন সংস্কৃতিতে কমিকের যেমন গুরুত্ব মাঙ্গা জাপানি সংস্কৃতিতে তার চেয়েও বেশি গুরুত্ব বহন করে। জাপানি সমাজ শিল্প ও সাহিত্য হিসেবে মাঙ্গাকে ব্যাপক শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে। মার্কিন কমিক্সের মত কিছু মাঙ্গা যৌনতা ও তীব্রতা প্রদর্শনের জন্য সমালোচিত। জাপানে কোন তত্ত্বাবধায়ক বা বিষয়বস্তুর ক্ষেত্রে কোন বিধি-নিষেধ নেই, ফলে শিল্পীরা সকল বয়সের জন্য তাদের ইচ্ছামত বিষয় নিয়ে গল্প রচনা করতে পারে।

মাঙ্গা ম্যাগাজিন, "কবিতাসংগ্রহ" হিসেবেও পরিচিত, যা কখনো কখনো একই সাথে কয়েকটি ধারাবাহিক নিয়ে প্রকাশিত হয় এবং প্রতি ইস্যুর প্রতিটি ধারাবাহিকে প্রায় ২০ থেকে ৪০ পৃষ্ঠা থাকে। এই ম্যাগাজিনসমূহ ২০০ থেকে ৮৫০ পৃষ্ঠার বেশি হয়ে থাকে। মাঙ্গা ম্যাগাজিনে এক-শটের কমিক্স ও চার-প্যানেলের ইয়োনকোমা থাকে। মাঙ্গা ধারাবাহিক যদি সফল হয় তবে বেশ কয়েক বছর ধরে চলতে থাকে এবং গল্প সংগ্রহ ও পুনঃমুদ্রণ করে বই আকারের ভলিউম প্রকাশ করে, যা তাঙ্কোবন নামে পরিচিত। এই তাঙ্কোবন মার্কিন ট্রেড পেপারব্যাকের সমতুল্য। এই ভলিউমসমূহে উন্নতমানের কাগজ ব্যবহার করা হয়। এই ভলিউমসমূহ সেসব পাঠকের জন্য উপযোগী যারা একটি ধারাবাহিকের সাথে নতুন কিছু চান এবং তাদের সাপ্তাহিক বা মাসিক ভিত্তিতে কমিক বই কেনার খরচ কমাতে চান। ডিলাক্স রূপান্তরসমূহ স্মারক বা সংগ্রহযোগ্য সংস্করণে মুদ্রিত হয়।

দজিশি

দজিশি (同人誌) হল ভক্তদের তৈরি জাপানী কমিক্স যা জাপানে মার্কিন "আন্ডারগ্রাউন্ড কমিক্স" এর বাজার থেকেও বেশি অংশ জুড়ে বিদ্যমান। সবচেয়ে বড় দজিশি মেলা কমিকেত প্রতি বছরে দুইবার আয়োজিত হয় এবং প্রতি বছর প্রায় ৫০০,০০০ মানুষ এখানে আসে।[34]

বিতরণ

কমিক বইয়ের বিতরণ কমিক বই শিল্পের শুরু থেকেই একটি বড় সমস্যা কারণ মূলধারার খুচরা বিক্রেতারা চিত্তাকর্ষক ও জনপ্রিয় কমিক বইয়ের বেশি পরিমাণ মজুদ রাখতে চান না। তবে স্মার্টফোনট্যাবলেট কম্পিউটার আসার পর থেকে অনলাইন বিতরণ কমিক বই বিতরণের একটি অন্যতম মাধ্যম হয়ে দাড়ায়।[35]

ডিজিটাল বিতরণ

২০০৭ সালের ১৩ নভেম্বর মার্ভেল কমিক্স পাঠকদের অনলাইনে তাদের পুরনো কমিক্সসমূহ পড়ার সুবিধার্থে মার্ভেল ডিজিটাল কমিক্স আনলিমিটেড চালু করে। এখানে তাদের পাক্ষিক কমিকসমূহ পাওয়া যায়। অ্যাভেঞ্জিং স্পাইডার-ম্যান প্রকাশের মধ্য দিয়ে মুদ্রণ কপির পাশাপাশি প্রথম বিনামুল্যে কমিক বইয়ের ডিজিটাল কপি প্রকাশ করে।[36]

স্মার্টফোন ও ট্যাবলেটের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সাথে সাথে বড় বড় প্রকাশনাসমূহও তাদের কমিকসমূহ ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রকাশ করতে শুরু করে। সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রকাশনা হল কমিক্সোলজি।[37] তবে কিছু প্রকাশনা বন্ধও হয়ে গেছে, যেমন গ্রাফিকলি।[38]

গ্রন্থাগারে কমিক সংকলন

অনেক গ্রন্থাগারে কমিক সংকলন গ্রাফিক উপন্যাস আকারে রাখা হয়। ফলে এটি মানুষকে এই মাধ্যম সম্পর্কে জানানোর একটি সহজ উপায়।[39]

গিনেজ বিশ্ব রেকর্ড

২০১৪ সালের ৩০ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ফ্রিমন্টে সবচেয়ে বড় কমিক বই প্রকাশিত হয়। ওরম মোরালিসের গ্রাফিক উপন্যাসের একটি পরিচ্ছেদ ক্রুজাদের: এজেন্ট অফ দ্য ভ্যাটিকেন বইটি ৯৪.৪৬ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য ও ৬০.৯৬ সেন্টিমিটার প্রস্থবিশিষ্ট।[40]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. Scott Shaw, Mike Kazaleh, "Secret Agent Orange," Annoying Orange #1, New York: Papercutz, pp. 61–2.
  2. A History of the Comic Book ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৫ মে ২০১৩ তারিখে. Retrieved 16 July 2014.
  3. Rigaud, Christophe (২০১৫)। "Knowledge-driven understanding of images in comic books"। International Journal on Document Analysis and Recognition18 (3)। ডিওআই:10.1007/s10032-015-0243-1
  4. The Adventures of M. Obadiah Oldbuck at the Dartmouth College library
  5. Goulart, Ron (২০০৪)। Comic Book Encyclopedia। New York: Harper Entertainmentআইএসবিএন 978-0060538163।
  6. Goulart, Ron (২০০০)। Comic Book Culture: An Illustrated History। Collectors Press। পৃষ্ঠা 43। আইএসবিএন 978-1-888054-38-5।
  7. "The Golden Age of Comics"History Detectives: Special InvestigationsPBS। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০১৭
  8. CBR News Team (২ জুলাই ২০০৭)। "DC Flashback: The Flash"Comic Book Resources। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুন ২০০৮
  9. Zicari, Anthony (৩ আগস্ট ২০০৭)। "Breaking the Border – Rants and Ramblings"Comics Bulletin। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০১৭
  10. Fagan, Bryan D.; Condit, Jody Condit (২০১১)। Comic Book Collections for Libraries। Libraries Unlimited। পৃষ্ঠা 38আইএসবিএন 978-1598845112।
  11. "Glossary"। Overstreet Comic Book Price Guide38। ২০০৮। পৃষ্ঠা 1028।
  12. Brown, Jeffrey (১৯৯৭)। "Comic Book Fandom and Cultural Capital"। Journal of Popular Culture30 (4)।
  13. Brown, Jeffrey (১৯৯৭)। "Comic book fandom and cultural capital"। Journal of Popular Culture30 (4)। আইএসএসএন 0022-3840ডিওআই:10.1111/j.0022-3840.1997.3004_13.x
  14. Stack, Frank; Shelton, Gilbert (২৫ ডিসেম্বর ২০০৬)। "Introduction"। The New Adventures of Jesus। Fantagraphics Books। পৃষ্ঠা 9আইএসবিএন 978-1-56097-780-3।
  15. Skinn, Dez (২০ মে ২০০৪)। "Heroes of the Revolution"। Comix: The Underground Revolution। Thunder's Mouth Press। পৃষ্ঠা 34আইএসবিএন 978-1-56025-572-7।
  16. Hatfield, Charles (২০০৫)। Alternative Comics: An Emerging Literature। Univ. Press of Mississippi। পৃষ্ঠা 182। আইএসবিএন 9781604735871।
  17. "americancomics"www.ocf.berkeley.edu। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
  18. Sabin, Roger (১৯৯৬)। Going underground". Comics, Comix & Graphic Novels: A History Of Comic Art। London, UK: Phaidon Press। আইএসবিএন 0-7148-3008-9।
  19. Sabin, Roger (২০০৫)। Adult Comics: An Introduction। Routledge New Accents Library Collection,। পৃষ্ঠা 291। আইএসবিএন 978-0-415-29139-2।
  20. L. Wilson, Jeffrey (মার্চ ২৫, ২০১৫)। "Everything You Need to Know About Digital Comics"PC Magazine। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
  21. Brown, Jeffrey (১৯৯৭)। "Comic Book Fandom and Cultural Capital"। Journal of Popular Culture। 30 (4)।
  22. "Motion Picture Funnies Weekly #1 Pay Copy (First Funnies, Inc., 1939) CGC VF/NM 9.0 Cream to off-white pages. This is one of... Golden Age (1938–1955)Superhero"Comics.ha.com। ১৪ অক্টোবর ২০০৫। ১৮ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
  23. Cronin, Brian (২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬)। "THE 10 MOST EXPENSIVE COMIC BOOKS EVER SOLD"কমিক বুক রিডার। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
  24. Chin, Peter (জুলাই ১৬, ২০১৪)। "New Grading Company: Comic Book Certification Service"কমিক বুক ডেইলি। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
  25. Birch, Dinah (২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৯)। The Oxford Companion to English Literature। Oxford: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 240
  26. John Sringhall (জুলাই ১৯৯৪)। "Horror Comics: The Nasties of the 1950s"History TodayQuestia Online Library44 (7)। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০১৭
  27. Armstrong, Stephen। "Was Pixar's Inside Out inspired by The Beano?""। The Telegraph। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০১৭
  28. "Dandy owner DC Thomson to end comic's printed edition"। বিবিসি নিউজ। ১৬ আগস্ট ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০১৭
  29. Sanderson, Peter (২৯ মে ২০১৩)। "The British Invasion, Part 3: Neil Gaiman & Swamp Thing"। Sequart। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০১৭
  30. Wolk, Douglas (১৭ ডিসেম্বর ২০০৩)। "Please, Sir, I Want Some Moore"। Slate। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০১৭
  31. Carroll, David (১৯৯৭)। "Interviews with Jamie Delano and Garth Ennis"। Tabula Rasa। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০১৭
  32. "Beano's Dennis the Menace on Royal Mail comic stamps"। বিবিসি নিউজ। ১৯ মার্চ ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০১৭
  33. "Historie Čtyřlístku a zajímavosti"। chrz.wz.cz। ১৯ মার্চ ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০১৭
  34. Mizoguchi Akiko (2003). "Male-Male Romance by and for Women in Japan: A History and the Subgenres of Yaoi Fictions". U.S.-Japan Women's Journal, 25: 49–75.
  35. Gregory Schmidt (জুলাই ২১, ২০১৩)। "Embracing Tablets, Comic Book Publishers Cash In on a Digital Revolution"দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
  36. "Avenging Spider-Man #1 Makes Digital History"। ১২ অক্টোবর ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
  37. "ComiXology Publisher List"কমিক্সোলজি। ১৯ জুলাই ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
  38. Melrose, Kevin। "Graphicly to shut down as Blurb acquires employees"robot6। ৮ মে ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
  39. "Integrating Comics Into Your Exhibits and Collections"CCGC in Libraries। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
  40. "Largest comic book published"Guinness World Records। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.