কড়া ভাজা

কড়া ভাজা (যাকে কড়া তেলে ভাজাও বলা হচ্ছে) এমন একটি রন্ধন প্রণালী যেখানে খাবারকে গরম স্নেহপদার্থ মূলত তেলে ডুবিয়ে রান্না করা হয়। সাধারণত কড়াই অথবা ডিপ ফ্রাইয়ারে এই পদ্ধতিতে রান্না কড়া হয়। বাণিজ্যিকক্ষেত্রে এই পদ্ধতিতে রান্না করতে প্রেসার ফ্রাইয়ার অথবা ভ্যাকুয়াম ফ্রাইয়ার ব্যবহার করা হয়। পাত্রে গরম করা তেল দিয়েও কড়া ভাজা পদ্ধতিতে রান্না করা যায়। কড়া ভাজাকে গরম তেলে রাঁধার পদ্ধতি হিসেবে শ্রেণীভুক্ত কড়া হয়। সাধারণত এই পদ্ধতিতে খাদ্য তাড়াতাড়ি রান্না হয় এবং সম্পূর্ণ খাদ্য সমানভাবে রান্না হয়। এর অন্যতম কারণ তেলের উচ্চ তাপ পরিবাহিতা।  

কড়া ভাজা রন্ধনপ্রণালী
চেক ব্র্যাম্বোরেক রুটি কড়া ভাজা হচ্ছে
একটি ডীপ ফ্রায়ারে কাসাউফ্লসের রান্নার একটি নিকটতম দৃশ্য

কড়া ভাজা শব্দটি এবং এবং এই পদ্ধতিতে রান্না করা অনেক খাবারই ১৯ শতকে অনাবিষ্কৃত ছিল। কিন্তু এর চর্চা শত সহস্র বছর ধরে চলে আসছিল। তৎকালীন নথিপত্র এবং রান্নার বই থেকে জানা যায় যে অন্য দেশে এই পদ্ধতি প্রচলিত হওয়ার আগে কিছু ইউরোপিয়ান এবং আরব্য দেশে এই রান্নার প্রচলন শুরু হয়। 

কড়া ভাজা সাড়া বিশ্বজুড়ে খুবই জনপ্রিয়। কড়া ভাজা খাবারগুলোর মাধ্যমেই সাড়া বিশ্বে সর্বোচ্চ ক্যালরি গ্রহণ হয়ে থাকে। অনেক খাবার এখন ডুবো তেলে ভাজা হয় এবং এই রন্ধনপ্রণালীকে কেন্দ্র করে সংস্কৃতির বিকাশ ঘটেছে। বিশেষ করে আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চলে অনেক অনুষ্ঠান আছে যা কড়া ভাজা খাবার এবং অভোজ্য জিনিস নিয়ে আয়োজিত হয়। 

ইতিহাস

পেইক্সিনহোস দাঁ হোর্তা, জাপানিজ টেম্পুরার পর্তুগীজ রূপ। 

যদিও কড়া ভাজা শব্দটি ১৯১৬, ১৯৩২ এবং ১৯৩৩ সালের আগে পাওয়া যায়নি, এই রন্ধনপ্রণালীটি অনেক আগে থেকেই প্রচলিত ছিল। এই প্রণালীর সবচেয়ে প্রাচীন উল্লেখ পাওয়া যায় মিশরে খ্রিষ্টপূর্ব ৫ম সহস্রাব্দের দিকে। পরে খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীতে গ্রীক সভ্যতায় এই রন্ধন প্রণালীর উন্নতি সাধিত হয়, তারা জলপাইয়ের তেলে খাবার ভাজা শুরু করে। ১ম শতাব্দীতে জানা যায় আপিসিয়াস নামের একটি রোমান রন্ধনবিষয়ক বইতে প্রাচীন রোমানদের এই রন্ধনপ্রণালীর ব্যবহার প্রথম লিপিবদ্ধ হয়। তারা এই রন্ধনপ্রণালী প্রথম ব্যবহার করেন পাল্লাম ফ্রন্তনিয়ানাম রাঁধতে, যা মুরগীর একটি পদ। পরবর্তী শতাব্দীগুলোতে ইউরোপ এবং আরবের অন্যান্য দেশে এই পদ্ধতি ছড়িয়ে পরে। ১৩শ শতাব্দীতে ইউরোপের উত্তরাঞ্চলে ফানেল কেকের মত কড়া ভাজা খাবারের উদ্ভব ঘটে। একই সময়ে স্পেন আর পর্তুগালের রন্ধনবিষয়ক বইগুলোতে কড়া ভাজা মাছের রেসিপির উল্লেখ পাওয়া যায়। ১৪শ শতাব্দীতে মধ্যপ্রাচ্যে মিশরীয়রা যখন অভিবাসী হিসেবে আসে, তখন তাদের সাথে আসে ফালাফাল নামের এক প্রকার খাদ্য।১৬শ শতাব্দীতে কড়া ভাজার এই রন্ধনপ্রণালী জাপানে পরিচিত হয়েছিল পর্তুগীজদের দ্বারা। ১৭শ শতাব্দীর শেষের দিকে ইউরোপে আলু ভাজার প্রমাণ পাওয়া যায়।

১৯শ শতাব্দীতে ঢালাই লোহার পাত্রের জনপ্রিয়তার সাথে সাথে এই রন্ধন প্রণালীর আধুনিকায়ন হয়, এই কারণে বিশেষত আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চলে কড়া ভাজার অনেক পাত্র আবিষ্কৃত হয়। ১৮শ শতাব্দীতে আবিষ্কৃত হওয়া ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ১৯শ শতাব্দীতে এসে পশ্চিম ইউরোপের দিকে জনপ্রিয় হয়ে উঠে। ১৯শ শতাব্দীর মধ্যভাগে ডোনাট আবিষ্কৃত হয়। পেঁয়াজু, কড়া ভাজা টার্কি, কর্নডগ প্রভৃতি খাবার বিংশ শতাব্দীতে আবিষ্কৃত হয়। বর্তমানে ফাস্ট ফুডের, বিশেষত ফ্রেঞ্চ ফ্রাইএর ব্যাপক প্রচলন কড়া ভাজা খাবারের সহজলভ্যতা বাড়াচ্ছে।

কৌশল

কড়া ভাজার এই রন্ধনপ্রণালী এমন একটি প্রক্রিয়া যাতে ৩৫০ডিগ্রি ফা. (১৭৭ ডিগ্রি সে.) থেকে ৩৭৫ ডিগ্রি ফা. (১৯১ ডিগ্রি সে.) তাপমাত্রার গরম তেলে খাদ্য সম্পূর্ণরূপে ডুবিয়ে রান্না করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় রান্না করা সব খাবারের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এদের গায়ে বিভিন্ন রকম পিটালির, যেমন- ময়দা, ভুট্টার ময়দা অথবা বিস্কুট এবং শুকনো পাউরুটির গুঁড়া ইত্যাদির বেশ কয়েক পরত আবরণ থাকে। খাদ্য তেলে ডোবানোর পর থেকে খাদ্যের জলীয় অংশ বিলুপ্ত হতে থাকে, এবং এতে ম্যালিয়ার্ড বিক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। ফলে চিনি ও প্রোটিন ভেঙ্গে যায় এবং খাবারের বহিঃত্বক সোনালি বাদামি হতে শুরু করে। যখন বহিঃত্বক সম্পূর্ণরূপে পানিশুন্য হয়ে যায় তখন তা মচমচে হয়ে যায় যা খাদ্যকে পুনরায় পানি শোষণ থেকে বিরত রাখে। উচ্চ তাপমাত্রা প্রোটিনকে ডিন্যাচার করে, স্টার্চের ক্ষেত্রে স্টার্চ জেলাটিনাইজেশন ঘটায় এবং খাদ্যের আঁশকে নরম করে।

বেশির ভাগ খাদ্য এই প্রক্রিয়ায় রান্না করতে পিটালি লাগলেও নুডুলস এবং আলুর ক্ষেত্রে তা লাগে না, যার কারণ এদের মধ্যে বিদ্যমান উচ্চ পরিমানের স্টার্চ। স্টার্চ এদের আর্দ্রতা ধরে রাখতে এবং কোঁচকানো রোধ করতে সাহায্য করে। মাংস কখন কখন কড়া ভাজার আগে একটু রেধে নিতে হয় যাতে তা ভালোভাবে রান্না হয় এবং এর রসালো ভাব বজায় থাকে।

ঠিকভাবে রান্না করা হলে এই পদ্ধতিতে রান্না করা খাবার অতিরিক্ত পরিমাণে তেলতেলে হয় না খাবারের আর্দ্রতার কারণে। গরম তেল খাবারে থাকা পানিকে গরম করে তা জলীয় বাষ্পে পরিণত করে। এই জলীয় বাষ্প শক্তিশালী প্রবাহের মাধ্যমে বের হয়। জলীয় বাষ্পের শক্তির বিরুদ্ধে যেয়ে তেল খাদ্যের ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না। সাধারণত সঠিক তাপমাত্রায় ভাজা খাবার প্রতি ২ ১/২ (আড়াই) কাপে ১-২ চা চামচের বেশি তেল শোষণ করতে পারে না। 

Smultring being deep-fried

যদি খাবার তেলে বেশি সময় ধরে রান্না করা হয় তবে তা থেকে সব পানি জলীয় বাষ্পে রুপান্তরিত হবে এবং খাদ্য তেল শোষণ শুরু করবে।  খাবার রান্নার সঠিক তাপমাত্রা নির্ভর করে খাবারের প্রকার এবং এর পুরুত্বের উপর। কিন্তু বেশির ভাগ সময় তাপমাত্রার স্বাভাবিক বিচরণক্ষেত্র ৩৫০-৩৭৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট (১৭৭-১৯১ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। তেলের তাপমাত্রা সঠিক আছে কিনা তা বোঝার  জন্য একটা পরীক্ষা করা হয়। তেলে একটু ময়দা ছেড়ে দিলে তা যদি সাথে সাথে পুরে না গিয়ে বুদ্বুদ উদ্গিরন শুরু করে তা হলে বোঝা যায় তেল সঠিক ভাবে উত্তপ্ত হয়েছে। সঠিক তাপমাত্রায় এক টুকরো খাবার ছেড়ে দিলে তা প্রথমে ডুবে পরে ভেসে উঠে। খাবার না ডুবলে বুঝতে হবে তেল বেশি গরম হয়ে গেছে। খাবার না ভাসলে বুঝতে হবে তেল ঠাণ্ডা রয়ে গেছে। 

এই পদ্ধতিতে খাবার রান্না করার পর পাত্র ধুয়ে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়, যাতে সংক্রমণ না হয়। এই পদ্ধতিতে রান্না করলে আশপাশে তেল ছিটে পরায় আশপাশের স্থান নোংরা হয়। তেলের বাষ্পে দেয়াল এবং ছাদও নোংরা হয়। ডিশ ডিটারজেন্ট এবং বেকিং সোডা এই সব ময়লা পরিষ্কার করতে পারে। 

ব্যবহৃত বাসন

কড়া ভাজা রান্নাগুলো সাধারণত ডিপ ফ্রাইয়ারে করা হয়। এছাড়া ফ্রাই বাস্কেট ব্যবহার করা হয়, যেখানে ভাজা খাবার তুলে রাখা হয় এবং কুকিং থার্মোমিটারও ব্যবহার করা হয় যা দিয়ে তেলের সঠিক তাপমাত্রা মাপা হয়। চিমটা, কাঠের চামচ, খুন্তি, ছাকনি প্রভৃতি তেল থেকে খাবার উঠাতে ব্যবহৃত হয়। [1]

জাপানীরা এক্ষেত্রে লম্বা ধাতব চপস্টিক ব্যবহার করে;  আগেমোনো-নাবে নামক পাত্র ব্যবহার করে, যা খুব ভারী এবং গভীর; আমি-শাকুশি নামক ঝাঁঝরি ব্যবহার করে; এবং আবুরা-কিরি নামক তেল ঝরানোর প্যান ব্যবহার করে।

পদ, খাদ্য, এবং সংস্কৃতি

কড়া ভাজা খাবার সব দেশেই জনপ্রিয় এবং এদের বেশির ভাগ স্ট্রিট ফুড হিসেবেই পরিচিত। প্রায় সব খাদ্যই এভাবে রান্না কড়া যায় বিধায় এই পদ্ধতিতে রান্না করা পদের সংখ্যা শতাধিক। প্রায় সব ধরনের মাছ, মাংস এবং সবজি এভাবে খাওয়া যায়। পুরি, আলুর চপ, ডিমের চপ, পেঁয়াজু, পাকোড়া, বেগুনি, বড়া প্রভৃতি কিছু সাধারণ কড়া ভাজা খাবার। এছাড়াও রয়েছে চাইনিজ ইউ-বিং, দক্ষিণপূর্ব এশিয়ান জিন-দুই, এবং জাপানের টেম্পুরা। ইউরোপের  ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, ডোনাট, অনিয়ন রিং, হাশপাপ্পি ও খুব জনপ্রিয় কড়া ভাজা খাবার।  [2]

আমেরিকার শিকাগো ট্রিবিউন এ বলা হয়েছিল "প্রায় যেকোনো কিছু কড়া ভাজা পদ্ধতিতে রান্না করা যায়"। আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চলকে ভাজা-পোড়া খাবারের আঁতুড়ঘর বলা হয়ে থাকে। ভাজা-পোড়া খাবারের এক রেস্তোরাঁর মালিকের মতে, "এমন কোন খাবার জিনিস নেই যাকে ম্যাক্সন-ডিক্সন লাইনের দক্ষিণে তেলে ভেজে রান্নার চেষ্টা হয়নি।" [3]

আফ্রিকা

উত্তর আফ্রিকার রন্ধন শৈলীর একটি অন্যতম অংশ কড়া ভাজা খাবার। এই এলাকার একটি সাধারণ খাবার হচ্ছে ফ্রিটার। আফ্রিকার দক্ষিণ দিকের রাস্তার খাবারের মধ্যে আলু ভাজা এবং কাসাভা চিপস খুবই জনপ্রিয়। 

এশিয়া

মানুষের খাওয়ার জন্য কড়া ভাজা পোকা-মাকড় ব্যাংকক, থাইল্যান্ড

জাপানিজ টেম্পুরা একটি জনপ্রিয় কড়া ভাজা খাবার। মূলত পিটালির আবরন দিয়ে ভাজা সবজি এবং সামুদ্রিক খাবারকে টেম্পুরা বলে। এছাড়া অন্যান্য জাপানিজ ভাজা খাবারের মধ্যে আছে আগেমোনো, কারাগে, কোরোক্কে, এবং তনকাতসু। দক্ষিণপূর্ব এশিয়া বিশেষত থাইল্যান্ডে পোকা-মাকড় ভেজে খাওয়া হয়। 

কড়া ভাজা মাছ, টফু এগুলো সাধারণত ভিয়েতনামে খাওয়া হয়। অনেক রকমের বান বানাতেও এই রন্ধনপ্রণালী ব্যবহৃত হয়। যেমন - বান রান (ফ্রায়েড রাইস বল), বান কাম (তিলের বল), বান তিউ (ডোনাট), বান রে (মিষ্টি আলুর প্যানকেক), বান গোই (বালিশ পিঠা) ইত্যাদি।

কড়া ভাজা ময়দার কাঠি চীনে ইয়াতিউ নামে পরিচিত। এটি পূর্ব এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে খাওয়া হয়।

হং কং এ শূকরের ভাজা অন্ত্র একটি জনপ্রিয় খাবার।

ইউরোপ

ফিশ অ্যান্ড চিপস

ইউরোপের অনেক দেশে সরিষার তেল ব্যবহার করা হয় এই পদ্ধতিতে রান্না করতে। কড়া ভাজা মার্স বার আবিষ্কার হয়েছিল স্কটল্যান্ডে, স্টোনহ্যাভেনের "দ্য ক্যারন ফিশ বার" ১৯৯০ সালের শুরুর দিকে এটি আবিষ্কার করেছেন বলে দাবি জানান। ১৯ শতকে লন্ডনে আবিষ্কার হওয়া ফিশ অ্যান্ড চিপস ইংল্যান্ডের একটি জনপ্রিয় খাবার। আবিষ্কারের সময়ই এটি কর্মজীবী লোকেদের মাঝে দারুণ জনপ্রিয় হয়েছিল। এটি এখনও এতই জনপ্রিয় যে প্রতি বছর শুধু ইংল্যান্ডেই ২২৯ মিলিয়ন ফিশ অ্যান্ড চিপস বিক্রি হয়।

ইউরোপে বার্ষিক এক বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হয় শুধুমাত্র এই ভাজা-পোড়া খাবার নিয়ে, যার নাম "তেলে ভাজা খাবারের আন্তর্জাতিক সম্মেলন" (International Symposium on Deep-Fat Frying)। এই সম্মেলনে এই রন্ধন শৈলী নিয়ে আলোচনা সভা হয় এবং এই পদ্ধতিতে রান্না করা খাবারের প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।

উত্তর আমেরিকা

আমেরিকায় এই পদ্ধতিতে রান্নার জন্য সয়াবিন তেল ব্যবহার করা হয়। বেন্যেঁ, যা মূলত একটি ফ্রেঞ্চ খাবার, আমেরিকার নিউ অরল্যান্সে ভীষণ জনপ্রিয় একটি কড়া ভাজা পেস্ট্রি। কড়া ভাজা খাবার আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চলের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানকার এক রেস্তোরাঁ মালিক বলেন এই খাবারগুলো তাদের জীবন-যাপনের একটি অংশ হয়ে গেছে। আমেরিকার উত্তরাঞ্চলে ফাস্ট ফুড এই রন্ধন শৈলীর খাদ্যগ্রহণের একটি অন্যতম উপায়।

আমেরিকার মেলাগুলোতে নতুন নতুন কড়া ভাজা খাবার খুব জনপ্রিয় হয়, বিশেষত আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চলে। শত শত পদের খাবার মেলায় পরিবেশিত হয়। তার মধ্যে কড়া ভাজা বিয়ার, মাখন এবং বাবলগামও থাকে। আবার কোন খাওয়ার অনুপযোগী খাদ্য বিশেষ করে ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী ভেজে তাকে শিল্পের রূপ দেওয়া যায়। হেনরি হারগ্রিভসের মত শিল্পীরা এই কৌশল অবলম্বনে নতুন শিল্পকর্মের রচনা করে যাচ্ছেন।

বিভিন্ন মেলা যেমন- টেক্সাস রাজ্য মেলায় কড়া ভাজা খাবারের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়, এখানে দেখা হয় কে কত সৃজনশীল কড়া ভাজা খাবার রাঁধতে পারে। কিছু উল্লেখযোগ্য বিজয়ী খাবার হল ভাজা কোক এবং কড়া ভাজা মাখন, দুটি পদেরই আবিষ্কারক অ্যাবেল গনজালেস।

ওশেনিয়া

অস্ট্রেলিয়ার মিল্ক বার এর কিছু উপাদান কড়া ভাজা হয়। আবার কিছু উপাদান অন্যান্য পদ্ধতিতেও রাঁধা হয়।

বুনুয়েলোস

দক্ষিণ আমেরিকা

বুনুয়েলোস, মধ্য আমেরিকা ও গ্রিসের এক প্রকার ময়ানের ভাজা বল, দক্ষিণ আমেরিকার জনপ্রিয় রাস্তার খাবার। পিকারনো, একটি পেরুভিয়ান খাবার যা ঔপনিবেশিক যুগে উদ্ভূত হয়েছিল, একটি জনপ্রিয় মিষ্টি খাবার। এটি মিষ্টি কুমড়া এবং মিষ্টি আলুর তৈরি পিঠা। পেরু এবং বলিভিয়ায় এটি খুব খাওয়া হয়, বিশেষ করে নতুন ফসল ঘরে তোলার সময়।

তেলের ক্ষয়

অতিরিক্ত তাপ প্রদান এবং অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে তেলে জারণ, পলিমারকরণ প্রভৃতি বিক্রিয়া শুরু হয়, ফলে নানা রকম অযাচিত রাসায়নিক পদার্থের সৃষ্টি হয়, এই নতুন সৃষ্ট পদার্থের মধ্যে অনেক বিষাক্ত পদার্থও থাকতে পারে যেমন - অ্যাক্রিলিন (স্টার্চ জাতীয় খাবার থেকে)। সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা গেছে পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করতে তেলের ক্ষয় পরিবেশের যতটুকু ক্ষতি হয় তার থেকে অনেক বেশি ক্ষতি হয় তেলে ভেজে খাবার রান্না করতে গেলে। বায়ুশুন্য স্থানে কড়া ভাজা পদ্ধতিতে রান্না করলে অ্যাক্রিলামাইডের গঠন উল্লেখযোগ্য হারে কম হয়। কিন্তু খাবার তৈরির কারখানাগুলোতে এই পদ্ধতি নেই বললেই চলে; তার কারণ এর পিছের প্রকৌশলগত খরচ।

অতিরিক্ত তেল ক্ষয়ের পরীক্ষা এবং নির্দেশকসমূহ নিম্নরূপ:

  • অনুভব - গরম করার সময় তেলের গাঢ় রঙ, ধোঁয়া, বুদবুদ ওঠা, অপ্রীতিকর গন্ধ এর নির্দেশক। এগুলো তেল বদলানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণের সবচেয়ে অনির্ভরযোগ্য উপায়, কেননা এই লক্ষণগুলো নানা রকম শর্তে তেলে দেখা যেতে পারে।
  • পরীক্ষার স্ট্রিপ - কখন তেল বদলাতে হবে তা নির্ণয় করে শুধুমাত্র FFA (Free Fatty Acid) এর উপর ভিত্তি করে।
  • তেল পরীক্ষক (Oiltester) - টিপিএম/টিপিসি মেপে তেলের ক্ষয় শুরুর সঠিক বিন্দু নির্ণয়ের যন্ত্র
  • পরীক্ষাগার - অম্লতা, সান্দ্রতা, মোট পোলার যৌগ, পলিমারিক ট্রাইগ্লিসারাইডস, অ্যানিসিডাইন মান।

যে যন্ত্রসমূহ তেলে অবস্থিত মোট পোলার যৌগ নির্ণয় করে, আপাতত সেগুলোই তেলের অবস্থা জানার উত্তম পন্থা। এই যন্ত্রগুলোই বিভিন্ন কারখানা এবং রেস্তোরাঁয় ব্যবহৃত হয়।

ক্ষয়ক্ষতি

কড়া ভাজা পদ্ধতিতে রাঁধতে যেয়ে আগুন লাগলে তা ভয়াবহ হতে পারে, আমেরিকায় আগুন লাগার বড় একটি কারণ এটি[4]

রান্নার তেল দাহ্য পদার্থ, তেলের তাপমাত্রা অতিরিক্ত পরিমাণে বৃদ্ধি পেলে তাতে আগুন ধরে যেতে পারে। তার উপর কেউ যদি তেলে লাগা আগুন পানি ঢেলে নিভাতে যায় তবে আগুন আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করে, আগুন উথলে পরে, কারণ তেলের উচ্চ তাপমাত্রা পানিকে বাষ্পীভূত করে, বাষ্প তেলের কণাগুলোকে চারদিকে ছড়িয়ে দেয় এবং তেলের সাথে সাথে আগুনও ছড়িয়ে পরে। আমেরিকার বেশির ভাগ আগুন সংক্রান্ত দুর্ঘটনার পেছনে কারণ এটি। তেলে লাগা আগুন নেভাতে পানি নেই এমন কোন অগ্নি নির্বাপক বস্তু ব্যবহার করতে হবে অথবা আগুন ঢাকনা দিয়ে চাপা দিতে হবে। পানি নেই এমন অগ্নি নির্বাপক বস্তুসমূহের মধ্যে আছে শুকনো গুঁড়া (যেমন - বেকিং সোডা, লবণ ইত্যাদি) বা অগ্নি নির্বাপক ফোম। কারখানায় ব্যবহার করা হয় এমন ডিপ ফ্রাইয়ার গুলোতে ফোম দিয়ে আগুন নিভিয়ে দেওয়ার স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা বিদ্যমান।

ছিটকে পরা গরম তেলও ৩য়-ডিগ্রির পোড়া ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে। খুব বাজে অবস্থা হলে এই পোড়াই প্রাণঘাতী হতে পারে। বাচ্চারা রান্নার সময় গরম পাত্র ছুঁয়ে ফেলতে পারে বা তা টেনে গায়ের উপর ফেলতে পারে, এতেও ভয়াবহ ক্ষত সৃষ্টি হয়। এই পদ্ধতিতে রাঁধতে গেলে সবসময় সচেতন থাকতে হবে যাতে কোন প্রকার দুর্ঘটনা না ঘটে।

প্রভাব

একটি রিসাইক্লিং কোম্পানির স্থাপিত রান্না করা তেল ফেলার স্থান। অস্টিন,টেক্সাস।

পরিবেশগত

এই পদ্ধতিতে রান্না করলে প্রচুর পরিমাণ তেল নষ্ট হয়, যা সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিবেশে মুক্ত করা উচিত। এই তেল নর্দমায় ফেললে তা নর্দমার পাইপে আটকে যেতে পারে, নর্দমা প্লাবিত করতে পারে, নর্দমার ব্যবস্থা নষ্ট করে ফেলতে পারে। এখন বর্জ্য তেলকে ব্যাপক পরিমাণে পুনর্ব্যবহার উপযোগী এবং পরিশোধিত করে বায়োডিজেল বানানো হচ্ছে।

স্টোরহাউসে রাখা আলুগুলো অধিক পানি ধারণ করে ফলে এগুলো ভাজতে সময় বেশি লাগে। এর ফলে বাতাসে বাড়ছে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ।

স্বাস্থ্যগত

এই রন্ধনপ্রণালী সাধারণত খাবারের পুষ্টিগুণ কমিয়ে দেয়। এবং এতে খাদ্য প্রচুর পরিমাণ তেল শোষণ করে, যা খাবারে চর্বির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, বিশেষ করে সম্পৃক্ত চর্বি এবং ট্রান্স চর্বি। যা অতিরিক্ত পরিমানে গ্রহণ করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। অতিরিক্ত চর্বিগ্রহণে শরীরে সঞ্চিত চর্বির পরিমাণ বেড়ে যায়, বাড়ে স্থুলতা, হার্ট আট্যাক এবং ডায়াবেটিস সম্ভাবনা। এসব খাবারে অ্যাক্রিলামাইডও থাকতে পারে, যা একটি সম্ভাব্য কারসিনোজেন। এছাড়া কড়া ভাজা খাবারের চর্বি কমাতে গেলে খাদ্যের পুষ্টিগুণ হ্রাস পায়। রান্নায় ব্যবহৃত তেল বারবার ব্যবহার করলে তা উচ্চরক্তচাপ এবং ভাসকুলার হাইপারট্রফির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিছু গবেষণা থেকে জানা যায় জলপাই, সূর্যমুখির তেল শরীরের জন্য কম ক্ষতিকর, উপরন্তু এগুলো শরীরের ইনসুলিন লেভেলের উপর ভাল প্রভাব ফেলে। একটি খাবার রাঁধার পর আর অল্প কয়েক বার সেই ব্যবহৃত তেল পুনরায় ব্যবহার করা যায়। তবে এই তেলের অতিরিক্ত ব্যবহার হলে তেল ক্ষয় হওয়া শুরু করে বিভিন্ন কারসিনোজেনিক উপাদান উৎপন্ন হতে পারে, এরা দেহের ভিটামিন শোষণের প্রক্রিয়াতেও প্রভাব ফেলে। কিছু কিছু ইউরোপিয়ান দেশে ভাজা তেল থেকে বাঁচার জন্য পাবলিক হেলথ স্ট্যান্ডার্ড দেওয়া শুরু করেছে।

তথ্যসূত্র

  1. Dee Atkin। Delicious Deep Fried Recipes: Classic & Exotic Fried Chicken Recipes, Fried Rice Recipes, Fried Tofu Recipes, Fried Zucchini Recipes and More। পৃষ্ঠা 16। GGKEY:2LNT2E533SU। ২৬ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মার্চ ২০১৭
  2. Kaercher, D.; Stefko, B. (২০০৬)। Taste of the Midwest: 12 States, 101 Recipes, 150 Meals, 8,207 Miles and Millions of Memories। Best of the Midwest book series। Globe Pequot Press। পৃষ্ঠা 52। আইএসবিএন 978-0-7627-4072-7। ২৬ মে ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মার্চ ২০১৭
  3. "Chip pans"cambsfire.gov.uk। Cambridgeshire Fire and Rescue Service। ২০ মে ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০১৫
  4. America, Culinary Institute of (২০০৭)। Techniques of Healthy Cooking, Professional Edition। Wiley। পৃষ্ঠা 86। আইএসবিএন 978-0-470-05232-7।
  5. Food Preparation and Cooking: Cookery units. Student guide। Catering and hospitality, NVQ/SVQ2। Stanley Thornes। ১৯৯৬। পৃষ্ঠা 18। আইএসবিএন 978-0-7487-2566-3।
  6. Sumnu, S.G.; Sahin, S. (২০০৮)। Advances in Deep-Fat Frying of Foods। Contemporary Food Engineering। CRC Press। পৃষ্ঠা 6–7। আইএসবিএন 978-1-4200-5559-7।
  7. Trudie du Toit, L.B. (২০০৭)। FCS Food Preparation L2। FET college series। Pearson Education South Africa। পৃষ্ঠা 95। আইএসবিএন 978-1-86891-824-9।
  8. Ferrier, S.; Shuttleworth, T. (১৯৮২)। The KidsFood Cookbook। James Lorimer Limited, Publishers। পৃষ্ঠা 60। আইএসবিএন 978-0-88862-596-0।
  9. Simpson, A. (২০১০)। Food Porn Daily: The Cookbook। Sweetwater Press। পৃষ্ঠা 11। আইএসবিএন 978-1-59955-765-6।
  10. Tsuji, Shizuo (১৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৭)। Japanese Cooking: A Simple Art। Cookery, Food and Drink Series। Kodansha International Limited। পৃষ্ঠা 103, 230। আইএসবিএন 978-4-7700-3049-8।
  11. Johanson, P. (২০১০)। Biofuels: Sustainable Energy in the 21st Century। In the News। Rosen Pub.। পৃষ্ঠা 18। আইএসবিএন 978-1-4358-3584-9।
  12. Beasley, R.W. (২০০৩)। Beasley's Surgery of the Hand। Beasley's Surgery of the Hand। Thieme। পৃষ্ঠা 75। আইএসবিএন 978-1-58890-161-3।
  13. Krystina Castella (৩ জানুয়ারি ২০১২)। A World of Cake: 150 Recipes for Sweet Traditions from Cultures Near and Far; Honey cakes to flat cakes, fritters to chiffons, tartes to tortes, meringues to mooncakes, fruit cakes to spice cakes। Storey Publishing, LLC। পৃষ্ঠা 268–270। আইএসবিএন 978-1-60342-446-2।
  14. Fantozzi, Joanna (৯ অক্টোবর ২০১৪)। "Eating Deep-Fried Maple Leaves Is Big in Japan"ABC News। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মে ২০১৫
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.