ওয়াল্টার হ্যাডলি
ওয়াল্টার আর্নল্ড হ্যাডলি, সিবিই (ইংরেজি: Walter Hadlee; জন্ম: ৪ জুন, ১৯১৫ - মৃত্যু: ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০০৬) ক্যান্টারবারির লিঙ্কনে জন্মগ্রহণকারী নিউজিল্যান্ডীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন।[1] এছাড়াও নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন ওয়াল্টার হ্যাডলি। ১৯৩৭ থেকে ১৯৫১ সময়কালে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
ব্যক্তিগত তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | ওয়াল্টার আর্নল্ড হ্যাডলি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম | লিঙ্কন, ক্যান্টারবারি, নিউজিল্যান্ড | ৪ জুন ১৯১৫|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মৃত্যু | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ৯১) ক্রাইস্টচার্চ, নিউজিল্যান্ড | (বয়স|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যাটিংয়ের ধরন | ডানহাতি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বোলিংয়ের ধরন | ডানহাতি মিডিয়াম | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
সম্পর্ক | পুত্রত্রয়: রিচার্ড হ্যাডলি, ডেল হ্যাডলি ও ব্যারি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আন্তর্জাতিক তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় দল |
| |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
টেস্ট অভিষেক (ক্যাপ ২৯) | ২৬ জুন ১৯৩৭ বনাম ইংল্যান্ড | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শেষ টেস্ট | ২৪ মার্চ ১৯৫১ বনাম ইংল্যান্ড | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ১৯ আগস্ট ২০১৭ |
ঘরোয়া পর্যায়ের ক্রিকেটে ক্যান্টারবারি ও ওতাগো দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি।[2] পাঁচ সন্তানের মধ্যে রিচার্ড, ডেল ও ব্যারি - এ তিনজনই নিউজিল্যান্ডের পক্ষে খেলেছেন।
প্রারম্ভিক জীবন
ক্যান্টারবারির লিঙ্কনে হ্যাডলির জন্ম। বাবা কামার ছিলেন। ৯ সন্তানের জনক হিসেবে ১৮৬৯ সালে ডুনেডিনে বসতি গড়েন। ১০ বছর বয়সে ক্রিকেটের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ক্রিকেটের ইতিহাস সম্পর্কে সম্যক জানতে চেষ্টা করেন, ল্যাঙ্কাস্টার পার্কে অনুষ্ঠিত গুরুত্বপূর্ণ খেলাগুলোর স্কোরকার্ড সংরক্ষণ করতেন এবং মনেপ্রাণে অনুশীলন করতেন। ক্রাইস্টচার্চ বয়েজ হাইস্কুলে থাকাকালে ক্রিকেটের পাশাপাশি হকি ও রাগবিতে অংশ নিতেন তিনি। মারকুটে ব্যাটসম্যান বিশেষ করে ড্রাইভ করার দিকে সবিশেষ মনোযোগী হন। দলের প্রথম একাদশের অধিনায়ক থাকাবস্থায় তার বিদ্যালয় জীবনের সমাপ্তি ঘটে। এরপর চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট হিসেবে প্রশিক্ষণ নেন।
প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট
১৯৩৩-৩৪ মৌসুমে ক্যান্টারবারির পক্ষে প্রথম মৌসুমে ৫০-এর অধিক গড়ে রান সংগ্রহ করেন। দ্বিতীয় খেলায় ৯৪ তোলার পর প্রদেশের পক্ষে ১০ সেঞ্চুরি করেছিলেন। ১৯৫১-৫২ মৌসুমে অবসর নেয়ার পূর্ব-পর্যন্ত ক্যান্টারবারির পক্ষে ৪৪ খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। ৪৩.৬০ গড়ে ৩,১৮৩ রান তুলেন ও সর্বোচ্চ অপরাজিত ১৯৪* করেছিলেন।
দীর্ঘদেহী ও উজ্জ্বীবিত শক্তির অধিকারী হ্যাডলি ডানপ্রান্তে আক্রমণাত্মক ঢংয়ে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে অনেকের মতো তিনিও খেলার সুযোগ হারিয়েছেন। চোখের দৃষ্টিশক্তি কম থাকার ফলে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে পারেননি। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ১১৭ খেলায় অংশ নিয়ে ৪০.৪৪ গড়ে ৭৫২৩ রান করেছিলেন। তন্মধ্যে ১৮টি সেঞ্চুরিও করেছিলেন তিনি। ১৯৪৫-৪৬ মৌসুমে সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওতাগোর সদস্য হিসেবে ১৯৮ রান তুলেন।
খেলোয়াড়ী জীবন
সফরকারী এমসিসি দলের বিপক্ষে খেলার পর লর্ডসে ১৯৩৭ সালে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার টেস্ট অভিষেক হয়। এর ১১ এগারো বছর পূর্বে ইম্পেরিয়াল ক্রিকেট কনফারেন্সে নিউজিল্যান্ড দল যোগ দেয় ও প্রথম টেস্ট খেলার ৭ বছর পর পরবর্তী টেস্ট খেলতে নামে। ১৯৩৭ সালে ১,২২৫ রান তুলেছিলেন। তন্মধ্যে, ওল্ড ট্রাফোর্ডে এক ইনিংসে ৯৩ রান তুলে স্ট্যাম্পে আঘাত লেগে আউট হয়েছিলেন। শান্তিকালীন সময়ে নিউজিল্যান্ডের প্রথম টেস্টে অধিনায়কত্ব করার সুযোগ পান ও ঐ বছরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলেন। ওয়েলিংটনের বৃষ্টিবিঘ্নিত পিচে নিউজিল্যান্ড ৪২ ও ৫৪ রানে অল-আউট হয়। ঐ টেস্টে তারা ইনিংসের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। ১৯৭৩-৭৪ মৌসুমের পূর্ব-পর্যন্ত আর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলেনি।
১৯৪৯ সালে ইংল্যান্ড সফরে নিউজিল্যান্ডের সর্বাপেক্ষা সেরা দলের নেতৃত্বভার নেন ও তার খেলোয়াড়ী জীবনের সেরা মুহূর্ত অতিবাহিত করেন। ১৯৪৯ সালের দলটি বিদেশে যাওয়া অন্যতম সেরা নিউজিল্যান্ড দল ছিল। এতে বার্ট সাটক্লিফ, মার্টিন ডনেলি, জন রিড, জ্যাক কাউয়ি, টম বার্ট, হ্যারি কেভ, মার্ভ ওয়ালেস, ভার্ডান স্কট, জিওফ রাবোন ও ফ্রাঙ্ক মুনি’র ন্যায় খেলোয়াড়েরা ছিলেন। ঐ সফরে তিনি ৩৬ গড়ে দুই সেঞ্চুরি সহযোগে ১,৪৩৯ রান তুলেন। ৩৫ খেলার মধ্যে তার দল কেবলমাত্র একটিতে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপক্ষে পরাজিত হয়েছিল। বৃষ্টিতে আক্রান্ত পিচে চার টেস্টের সিরিজটি ০-০ ড্র হয়।
১১ টেস্টের ১৯ ইনিংসে খেলে ৩০.১৬ গড়ে ৫৩৪ রান তুলেন। কোন টেস্টেই তিনি এক অঙ্কের রান তুলেননি। ১৯৫০-৫১ মৌসুমে সফরকারী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ টেস্টে অংশ নেন। ১৯৪৬-৪৭ মৌসুমে ক্রাইস্টচার্চে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে ১১৬ রানের একমাত্র সেঞ্চুরিটি করেন। এরপরও তিনি পরবর্তী ১৫ বছর ক্রাইস্টচার্চের বড়দের ক্লাব ক্রিকেটে অংশ নিয়ে ১৫,৩৯১ রানের রেকর্ডসংখ্যক রান তুলেছিলেন।
অবসর
প্রশাসক হিসেবে ১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটকে পরিচালনা করেন। এসময়েই খেলাটি পেশাদারীত্বের দিকে উত্তরোত্তর ধাবিত হয়। ক্যারি প্যাকারের সিরিজ দক্ষভাবে মোকাবেলা করেন ও দক্ষিণ আফ্রিকায় দল প্রেরণে বাঁধা দেন।
১৯৫০-৮৩ সময়কালে জাতীয় দল নির্বাচক, দলীয় ম্যানেজার, ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের সদস্য ছিলেন। ১৯৭৩-৭৮ সময়কালে চেয়ারম্যান ও ১৯৮১-৮৩ সময়কালে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
‘মাওরি নেই, সফর নেই’ প্রতিবাদী আন্দোলনের সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৬০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অল ব্ল্যাকস নামে পরিচিত নিউজিল্যান্ড জাতীয় রাগবি ইউনিয়ন দলের সফরের বিরুদ্ধেও সোচ্চার ছিলেন। ১৯৮২ সালে উইজডেনে এক নিবন্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে আসার বিষয়ে লেখার কারণে সাউথ আফ্রিকান নন-র্যাসিয়াল অলিম্পিক কমিটি (এসএএনআরওসি) কর্তৃক কালো তালিকাভূক্ত হন। ১৯৫০ সালে ওবিই এবং ১৯৭৮ সালে সিবিই পদবীতে ভূষিত হন তিনি।
নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার টেস্ট সিরিজটি চ্যাপেল-হ্যাডলি ট্রফি নামে পরিচিত যা হ্যাডলি পরিবার ও অস্ট্রেলীয় চ্যাপেল পরিবারের (ইয়ান চ্যাপেল, গ্রেগ চ্যাপেল) সম্মানার্থে প্রবর্তিত হয়েছে।
ব্যক্তিগত জীবন
১৯৪০ সালে লীলা মনরো নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। ১৯৩৭ সালে ইংল্যান্ড সফরে যাবার সময় জাহাজে তাদের প্রথম স্বাক্ষাৎ হয়। তাদের পাঁচ পুত্র রয়েছে। তন্মধ্যে তিনজনই নিউজিল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ডেল হ্যাডলি টেস্টে ফাস্ট বোলার, ব্যারি হ্যাডলি লন্ডনে অনুষ্ঠিত ১৯৭৫ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের উদ্বোধনী আসরে ব্যাটসম্যান ও প্রবাদপ্রতীম রিচার্ড হ্যাডলি শীর্ষস্থানীয় অল-রাউন্ডার ছিলেন। একসময় ৪৩১ টেস্ট উইকেট নিয়ে বিশ্বরেকর্ড ও ১,৪৯০টি প্রথম-শ্রেণীর উইকেটসহ ২৭.১৬ গড়ে টেস্টে রান তুলেছিলেন। রিচার্ড ক্রিকেটে অসামান্য অবদান রাখার প্রেক্ষিতে নাইট পদবীতে ভূষিত হয়েছিলেন। চতুর্থ সন্তান মার্টিন ক্রাইস্টচার্চের ক্লাব ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন।
১৯৯৩ সালে ‘ইনিংস অব এ লাইফটাইম’ শীর্ষক আত্মজীবনী প্রকাশ করেন। জীবনের শেষদিকে লন বল খেলে সময় অতিবাহিত করতেন। ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০০৬ তারিখে ৯১ বছর বয়সে ক্রাইস্টচার্চের প্রিন্সেস মার্গারেট হাসপাতালে ওয়াল্টার হ্যাডলি’র দেহাবসান ঘটে। এরপূর্বে অস্ত্রোপাচারের ছয়সপ্তাহ পর স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি।
২০ জানুয়ারি, ২০১৭ তারিখে ওয়াল্টার হ্যাডলির পুত্র স্যার রিচার্ড হ্যাডলি তার পিতার অধিনায়কত্বে ১৯৪৯ সালের ইংল্যান্ড সফরের বিষয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ নিয়ে কথা বলেন। সেখানে তিনি তার জীবনে ওয়াল্টার হ্যাডলি’র প্রভাব সম্পর্কে আলোকপাত করেন।[3]
তথ্যসূত্র
- "Walter Hadlee"। Cricbuzz। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০১৭।
- "Otago players". Cricket Archive. Retrieved 25 April 2016.
- "My father's contribution to the game has been extraordinary"। ESPN Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০১৭।
আরও দেখুন
বহিঃসংযোগ
- ইএসপিএনক্রিকইনফোতে ওয়াল্টার হ্যাডলি (ইংরেজি)
- ক্রিকেটআর্কাইভে ওয়াল্টার হ্যাডলি (সদস্যতা প্রয়োজনীয়) (ইংরেজি)
- Walter Hadlee dies aged 91, Cricinfo, 29 September 2006.
- Obituary, The Times, 30 September 2006
- Obituary, The Daily Telegraph, 30 September 2006
- Obituary, The Independent, 2 October 2006
- Obituary, The Daily Telegraph, 3 October 2006
ক্রীড়া অবস্থান | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী কার্লি পেজ |
নিউজিল্যান্ড জাতীয় ক্রিকেট অধিনায়ক ১৯৪৫/৪৬-১৯৫০/৫১ |
উত্তরসূরী বার্ট সাটক্লিফ |