ওয়াদুদ ভূইয়া

ওয়াদুদ ভূইয়া (জন্ম: ৫ জানুয়ারি, ১৯৬৫) দুইবারের সাবেক সংসদ সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, খাগড়াছড়ি জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সভাপতি। পাশাপাশি, দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক।[1] ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ও ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসেবে খাগড়াছড়ি (২৯৮ নং) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[2]

ওয়াদুদ ভূইয়া
পার্বত্য খাগড়াছড়ি আসনের
সংসদ সদস্য
কাজের মেয়াদ
১০ অক্টোবর, ২০০১  ২৯ অক্টোবর, ২০০৬
পূর্বসূরীকল্পরঞ্জন চাকমা
উত্তরসূরীযতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা
কাজের মেয়াদ
২৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৬  ৩০ মার্চ, ১৯৯৬
পূর্বসূরীকল্পরঞ্জন চাকমা
উত্তরসূরীকল্পরঞ্জন চাকমা
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম (1965-01-05) জানুয়ারি ৫, ১৯৬৫
খাগড়াছড়ি, বাংলাদেশ
জাতীয়তাবাংলাদেশী
রাজনৈতিক দলবাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল
সন্তানবাঁশরী ওয়াদুদ, অপ্সরী ওয়াদুদ
পেশারাজনীতি
ধর্মইসলাম
ওয়েবসাইটhttp://www.wadudbhuiyan.com

জীবন বৃত্তান্ত

ওয়াদুদ ভূইয়া ১৯৬৫ সালের ৫ জানুয়ারি প্রাক্তন পার্বত্য চট্টগ্রাম (বর্তমান খাগড়াছড়ি) জেলার রামগড় মহকুমা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সালেহ আহমদ ভূইয়া এবং মায়ের নাম বিয়া ছালেহ। তার দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। তাদের নাম যথাক্রমে বাঁশরী ওয়াদুদ ও অপ্সরী ওয়াদুদ। [3]

শিক্ষা

১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে ওয়াদুদ ভূইয়া পঞ্চম শ্রেণি পাশ করে রামগড় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এসএসসি পাশ করেন। ১৯৮২-১৯৮৩ শিক্ষাবর্ষে তিনি এইচএসসি পাশ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজতত্ত্ব বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৮৫-১৯৮৬ শিক্ষাবর্ষে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজতত্ত্ব বিভাগ থেকে বিএসএস (অনার্স) এবং এমএসএস পাশ করেন।[3]

রাজনৈতিক জীবন

জাতীয়তাবাদী রাজনীতি

১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তিনি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের রামগড় রাজনৈতিক জেলা শাখার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৭ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত ছাত্রদলের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহবায়ক এবং সভাপতি হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। ১৯৯০ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি রামগড় রাজনৈতিক জেলা যুবদল সভাপতি হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। ১৯৯৩ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপি'র- এর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে তিনি খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা বিএনপি-এর সভাপতি এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-এর কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৬ সালে তিনি বিএনপি-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন।

জনপ্রতিনিধিত্ব

১৯৮৯ সালে তিনি খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল মনোনীত প্রার্থী হিসেবে খাগড়াছড়ি পাবর্ত্য জেলা (সংসদীয় আসন নং-২৯৮) থেকে ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[4] উল্লেখ্য, তিনি ১৯৯১ (পঞ্চম) ও ১৯৯৬ (সপ্তম) সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। তবে অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। ১৯৮৯ সালে অনুষ্ঠিত খাগড়াছড়ি স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচনে তিনি রেকর্ড এক লক্ষেরও অধিক ভোট পেয়ে সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে তৎকালীন চেয়ারম্যান সমীরণ দেওয়ানের “স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়ম”-এর প্রতিবাদে পদত্যাগ করেন।[5]

২০০২ সালে তিনি সরকার কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন।[6] ২০০১ সালে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নিযুক্ত হয়েছিলেন। এছাড়া তিনি সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

আন্দোলন

তিন পার্বত্য জেলার জাতীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে তিনি সুপরিচিত। ৯০-এর এরশাদ বিরোধী গণ-আন্দোলনে তিনি ছাত্রদলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। শান্তিচুক্তি-বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি দেশজুড়ে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে জনসংহতি সমিতির চুক্তির বিরুদ্ধে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া পার্বত্য চট্টগ্রাম জুড়ে যেই লংমার্চ কর্মসূচি পালন করেন, তার প্রধান সংগঠক ছিলেন ওয়াদুদ ভূইয়া। তিনি লংমার্চের সমাপনী দিনে তিনি সভাপতিত্ব করেন। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম সম-অধিকার আন্দোলন নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক।[7]

গ্রেফতার

ছাত্রাবস্থায় ‘৯০-এর এরশাদ-বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনে তিনি গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন। এছাড়া ২০০৭ সালের সেনা সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকারের সময় তাকে গ্রেফতার করা হয়। তখন আটককৃত অন্যান্য রাজনীতিকের মত তাকেও কারা-অন্তরীন করে রাখা হয়। চট্টগ্রামের বিশেষ আদালত একটি মামলায় তাকে ২০ বছরের কারাদন্ড প্রদান করে।[8] জরুরী আইনের বিশেষ ধারায় তিনি ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষিত হন। কিন্তু পরবর্তিতে হাইকোর্ট থেকে সাজার উপর স্থগিতাদেশ লাভ করেন এবং জেল থেকে মুক্তি পান।[9][10]

তথ্যসূত্র

  1. "Cases, arrests worrying opposition candidates"New Age | The Most Popular Outspoken English Daily in Bangladesh (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-০৫
  2. "পাহাড়ের আলোচিত ওয়াদুদ ভূইয়া ফের নির্বাচনে অযোগ্য! | কালের কণ্ঠ"Kalerkantho। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-১৪
  3. "জননেতা ওয়াদুদ ভূইয়ার জীবনী"। ১৯ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ ডিসেম্বর ২০১৩
  4. "Members Of Parliament : Profile"। ২৫ জুন ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ ডিসেম্বর ২০১৩
  5. "প্রথম নির্বাচিত পরিষদের সদস্যদের তালিকা : খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ"। ১৩ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ ডিসেম্বর ২০১৩
  6. Amena Mohsin (২০০৩)। The Chittagong Hill Tracts, Bangladesh: On the Difficult Road to Peace। Lynne Rienner Publishers।
  7. "Curfew clamped on Khagrachari town"Dhaka Mirror
  8. "Ex-BNP MP Wadud Bhuiyan jailed for 20 years"bdnews24.com। ৩০ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ ডিসেম্বর ২০১৩
  9. "HC grants bail to ex-BNP MP Wadud Bhuiyan for six months"The Daily Star
  10. "Conviction order of seven stayed by HC"The Daily Star
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.