ওদন্তপুরী

ওদন্তপুরী (ওদন্তপুর, ওদন্তপুরা, উদ্দন্তপুর, উদন্তপুর বা উদন্তপুরা নামেও পরিচিত) বর্তমান ভারতের বিহারে অবস্থিত একটি বৌদ্ধ মহাবিহার। খ্রিষ্টীয় অষ্টম শতাব্দীতে পাল রাজা প্রথম গোপাল পাটলীপুত্র বা বর্তমান পাটনার নিকটে বিহারটি প্রতিষ্ঠা করেন।[1] তবে পাল রাজা ধর্মপাল কর্তৃক (৭৭০ থেকে ৮১০) ওদন্তপুরী বিহার প্রতিষ্ঠা হয় বলেও অনেকে মতামত দেন।[2] মগধের নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের পর ওদন্তপুরীকে দ্বিতীয় প্রাচীন মহাবিহার হিসেবে গণ্য করা হয়।

ওদন্তপুরী
১৮৭০-এর দশকে জোসেফ ডেভিড বেগলারের তোলা বিহারের দুর্গের পুরনো ধ্বংসপ্রাপ্ত গেটের ছবি। দুর্গটি ওদন্তপুরী বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ ছিল বলে মনে করা হয়।
ওদন্তপুরী ভারত-এ অবস্থিত
ওদন্তপুরী
ভারতে অবস্থান
ওদন্তপুরী বিহার-এ অবস্থিত
ওদন্তপুরী
ভারতে অবস্থান
অবস্থানবিহার, ভারত
স্থানাঙ্ক২৫.১৯৭° উত্তর ৮৫.৫১৮° পূর্ব / 25.197; 85.518
ধরনশিক্ষা কেন্দ্র
ইতিহাস
প্রতিষ্ঠিত৮ম - ৯ম শতাব্দী খ্রি
পরিত্যক্ত১৩শ শতাব্দী খ্রি
ঘটনাবলি১২ শতকের শেষের দিকে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খলজি দ্বারা ধ্বংস হয়েছিল

১১০০ এর দশকের শেষের দিকে একজন তুর্কি-মুসলিম আক্রমণকারী মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজির হাতে একাধিক অভিযানে বিহারটি ধ্বংস হয়ে যায়।[3]

অবস্থান

বর্তমানের বিহার এর আদি নাম ছিলো ওদন্তপুরী বিহার।

বর্তমানে ওদন্তপুরী নালন্দা জেলা সদর বিহার শরীফে অবস্থিত। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এর দূরত্ব মাত্র ১০ কিলোমিটার।[2]

ইতিহাস

তিব্বতের ২৭তম শাক্য ত্রিজিন জামগন আবে জাব[2] (ওয়াইলি: ngag dbang kun dga' bsod nams, ১৫৯৭–১৬৫৯) রচিত তিব্বতের কালচক্র তন্ত্রে[4] "সেন্ধ-পা"র অধীনে শ্রাবকযান বৌদ্ধবিহার ওদন্তপুরীর উল্লেখ পাওয়া যায়। তিব্বতীয় ইতিহাসবিদ তারানাথের মতে রাজা মহাপাল ওদন্তপুরীতে প্রায় ৫০০ শ্রাবক ভিক্ষুর ভরণপোষণ করতেন। এছাড়া তিনি ওদন্তপুরীর সাথে ৫০০ সেন্ধ-পা বা সেন্ধব শ্রাবকদের জন্য ঊর্বশ বিহার নামক একটি বিহার প্রতিষ্ঠা করেন।[5] পাল রাজা রামপালের সময় হীনযান ও মহাযান উভয় সম্প্রদায়ের প্রায় সহস্র ভিক্ষু বিহারে থাকতেন। এছাড়া বিহারে ক্ষেত্রবিশেষে কখনো কখনো প্রায় বারো হাজার ভিক্ষুর সমাবেশ ঘটতো।[6] পিটার স্কিলিং-এর মতে সেন্ধ-পা শ্রাবকেরা সম্ভবত সাম্মাতিয়া ছিল। "সেন্ধ-পা" শব্দটি সংস্কৃত "সৈন্ধব" থেকে এসে থাকতে পারে, যার অর্থ হয় সিন্ধুর অধিবাসী। সিন্ধুতে তৎকালে সাম্মাতিয়া বৌদ্ধ বিহারের আধিপত্য ছিল বলে ধারণা করা হয়।[7] তারানাথ সেন্ধ-পা বা সেন্ধব শ্রাবক ভিক্ষুদের বুদ্ধ গয়ার মহাবোধি ও "সিংহ দ্বীপ" বিশেষ করে শ্রীলঙ্কা ও অন্যান্য অঞ্চলের সাথে সম্পর্কিত করেন।[8]

প্রাচীন বাংলা ও মগধে পাল রাজাদের আমলে বেশ কয়েকটি বৌদ্ধ বিহার গড়ে ওঠে, যার মধ্যে পাঁচটি মহাবিহারের নাম পাওয়া যায়। মহাবিহারগুলো হলো: বিক্রমশিলা বিশ্ববিদ্যালয় (পৃথিবীর প্রাচীনতম মহাবিদ্যালয়), নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় (পৃথিবীর প্রথম আবাসিক মহাবিদ্যালয়,[2] অতীতে গৌরবোজ্জ্বল এবং বর্তমানেও আলোচিত), সোমপুর মহাবিহার ওদন্তপুরী ও জগদ্দল[9] পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ই পরস্পর সংযুক্ত ছিল, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় রাজাদের তত্ত্বাবধানে ছিল এবং বিহারগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সংযোগ ছিল। পাল সাম্রাজ্যের অধীনে পূর্ব ভারতে প্রতিষ্ঠিত আন্তঃসম্পর্কিত বিহার বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো একত্রে একটিমাত্র নেটওয়ার্ক হিসেবে বিবেচিত হতো। মহাবিহারগুলোর পণ্ডিতেরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখতে পারতেন,[2] এমনকি বিখ্যাত পণ্ডিতদের মধ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পদবীর ভিত্তিতে স্থানান্তরিত হওয়া সাধারণ ব্যাপার ছিল।[10] নালন্দার মতো ওদন্তপুরীর প্রথম পর্বের অধিকাংশ আচার্য ও শিক্ষার্থী বাঙালি ছিলেন।[2] বিক্রমশিলা বিশ্ববিদ্যালের আচার্য শ্রীগঙ্গাজী ওদন্তপুরীর শিক্ষার্থী ছিলেন। বহু তিব্বতীয় নথি অনুসারে পঞ্চানন নদীর তীরে হিরণ্য প্রভাত পর্বতে অবস্থিত ওদন্তপুরীতে প্রায় ১২,০০০ ছাত্র ছিল।

ধ্বংস

১১৯৩ সালে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খলজীর আক্রমণে নালন্দার মতোই ওদন্তপুরী ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। বখতিয়ার খলজী হিসার-ই-বিহার বা বিহার দুর্গ আক্রমণকালে উঁচু প্রাচীরঘেরা ওদন্তপুরীকে দুর্গ ভেবে ভিক্ষুদের ন্যাড়া মাথা ব্রাহ্মণ ভেবে আক্রমণ করে ধ্বংস করেন এবং ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালান।[2] বিহারে আচার্য শাক্যশ্রী ভদ্র এ ধ্বংসযজ্ঞ দেখে জগদ্দল পালিয়ে যান।[2]

টীকা

  1. Sen, Sailendra (২০১৩)। A Textbook of Medieval Indian History। Primus Books। পৃষ্ঠা 34। আইএসবিএন 978-9-38060-734-4।
  2. আক্তার, নাসরীন। "ওদন্তপুরী"বাংলাপিডিয়া। বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। সংগ্রহের তারিখ ৩১ আগস্ট ২০২০
  3. Singh, Anand (২০১৩)। "'Destruction' and 'Decline' of Nālandā Mahāvihāra: Prejudices and Praxis"Journal of the Royal Asiatic Society of Sri Lanka58 (1): 23–49। আইএসএসএন 1391-720Xজেস্টোর 43854933
  4. ngag dbang kun dga' bsod nams। "༄༅།དཔལ་དུས་ཀྱི་འཁོར་ལོའི་ཟབ་པ་དང་རྒྱ་ཆེ་བའི་དམ་པའི་ཆོས་བྱུང་བའི་ཚུལ་ལེགས་པར་བཤད་པ་ངོ་མཚར་དད་པའི་ཤིང་རྟ་"TBRC। Tibetan Buddhist Resource Center। ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ আগস্ট ২০২০
  5. Chattopadhyaya, Alaka and Chimpa, Lama, translators. Tāranātha’s History of Buddhism in India, Motilal Books UK, আইএসবিএন ৮১২০৮০৬৯৬৪. 2000: 289.
  6. Chattopadhyaya, Alaka and Chimpa, Lama, translators. Tāranātha’s History of Buddhism in India, Motilal Books UK, আইএসবিএন ৮১২০৮০৬৯৬৪. 2000: 313.
  7. Skilling, Peter. “The Saṃskṛtāsaṃskṛtaviniṣcaya of Daśabalaśrīmitra”, Buddhist Studies Review, Vol. 4, No. 1, 1987: 3–23, p. 16.
  8. Chattopadhyaya, Alaka and Chimpa, Lama, translators. Tāranātha’s History of Buddhism in India, Motilal Books UK, আইএসবিএন ৮১২০৮০৬৯৬৪. 2000: 279.
  9. Vajrayogini: Her Visualization, Rituals, and Forms by Elizabeth English. Wisdom Publications. আইএসবিএন ০-৮৬১৭১-৩২৯-X pg 15
  10. Buddhist Monks And Monasteries Of India: Their History And Contribution To Indian Culture. by Sukumar Dutt, George Allen and Unwin Ltd, London 1962. pg 352-3

গ্রন্থপঞ্জি

  • Chandra, Satish (২০০৪)। Volume 1 of Medieval India: From Sultanat to the Mughals। Har-Anand Publications। আইএসবিএন 978-8124110645।
  • Ghosh, Amalananda (১৯৬৫)। A Guide to Nalanda (5 সংস্করণ)। New Delhi: The Archaeological Survey of India।

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.