ওকিনাওয়া প্রশাসনিক অঞ্চল
ওকিনাওয়া প্রশাসনিক অঞ্চল (沖縄県? ওকিনাওয়া কেন্) হল জাপানের দক্ষিণে অবস্থিত ১০০০ কিমি দীর্ঘ রিউকিউ দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণের দুই তৃতীয়াংশ। এটি জাপানের দক্ষিণতম প্রশাসনিক অঞ্চল।[1] এর রাজধানী ওকিনাওয়া দ্বীপের দক্ষিণে অবস্থিত নাহা নগর।[2] বর্তমানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী নিরাপত্তা চুক্তি অনুযায়ী ৫৩,০০০ মার্কিন সেনা ওকিনাওয়ায় ঘাঁটি গেড়ে আছেন।[3]
ওকিনাওয়া প্রশাসনিক অঞ্চল 沖縄県 | |
---|---|
প্রশাসনিক অঞ্চল | |
জাপানি প্রতিলিপি | |
• জাপানি | 沖縄県 |
• রোমাজি | Okinawa-ken |
ওকিনাওয়ান প্রতিলিপি | |
• ওকিনাওয়ান | 沖縄県(ウチナーチン) |
• রোমাজি | Uchinaa-chin |
পতাকা ওকিনাওয়া প্রশাসনিক অঞ্চলের প্রতীক | |
দেশ | জাপান |
অঞ্চল | কিউশু |
দ্বীপ | ওকিনাওয়া |
রাজধানী | নাহা |
আয়তন | |
• মোট | ২,২৭১.৩০ বর্গকিমি (৮৭৬.৯৫ বর্গমাইল) |
এলাকার ক্রম | ৪৪ তম |
জনসংখ্যা (১লা অক্টোবর ২০১৩) | |
• মোট | ১৪,১৬,৫৮৭ |
• ক্রম | ২৭শ |
• জনঘনত্ব | ৬২২/বর্গকিমি (১,৬১০/বর্গমাইল) |
আইএসও ৩১৬৬ কোড | JP-47 |
জেলা | ৫ |
পৌরসভা | ৪১ |
ফুল | দীইগো (এরিথ্রিনা ভ্যারিগাটা) |
গাছ | পাইনাস লুচুয়েন্সিস ("রিউকিউমাৎসু") |
পাখি | ওকিনাওয়া কাঠঠোকরা (সাফেওপাইপো নোগুচিয়াই) |
মাছ | কলা মাছ (সিজিও ডায়াগ্রামা,"তাকাসাগো", "গুরুকুন") |
ওয়েবসাইট | www |
ইতিহাস
নাহা ও ইয়াএসে অঞ্চল থেকে প্রস্তর যুগের মানুষের বসতির চিহ্ন পাওয়া গেছে।[4] সাকিশিমা দ্বীপে প্রাপ্ত মাটির বাসনের সাথে তাইওয়ানের শিল্পরীতির সাদৃশ্য আছে।
অষ্টম শতাব্দী থেকে রিউকিউতে কৃষিভিত্তিক সভ্যতার পত্তন হয়। অচিরেই জাপান, চীন, তাইওয়ান প্রভৃতি দেশের ভৌগোলিক নৈকট্যের কারণে রিউকিউ একটি সমৃদ্ধ বাণিজ্যনির্ভর রাষ্ট্র হয়ে ওঠে। পঞ্চদশ শতাব্দীতে রিউকিউ চীনের মিং রাজবংশের করদ রাজ্যে পরিণত হয়।
১৬০৯ খ্রিঃ কাগোশিমা অঞ্চলের তৎকালীন শাসক শিমাজু পরিবার রিউকিউ আক্রমণ ও অধিকার করে। সাৎসুমা পরিবার ও তোকুগাওয়া শোগুনতন্ত্রের সাথে শোষণমূলক একটি ব্যবস্থা মেনে নিতে রিউকিউকে বাধ্য করা হয়; একই সময়ে চীনের করদ রাজ্যের কর্তব্যও তারা পালন করে চলে। ১৮৬৮ খ্রিঃ মেইজি পুনর্গঠনের সময় জাপান প্রত্যক্ষ সামরিক অভিযানের মাধ্যমে রিউকিউ জয় করে তার নতুন নামকরণ করে রিউকিউ হান্। ১৮৭৯ খ্রিঃ রিউকিউ হান্ ওকিনাওয়া নাম ও প্রশাসনিক অঞ্চলের মর্যাদা পায়। ওকিনাওয়ার অধিবাসীরা ১৯১২ খ্রিঃ প্রথম জাতীয় ডায়েটে প্রতিনিধি নির্বাচনে ভোট দানের অধিকার পান।[5]
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১,৮৫,০০০ সেনা নিয়ে ওকিনাওয়া অধিকার করে। প্রশাসনিক অঞ্চলটির এক তৃতীয়াংশ মানুষ প্রাণ হারান।[6] কেবল ১৯৪৫ এর ওকিনাওয়ার যুদ্ধেই এক চতুর্থাংশের মৃত্যু হয়। মৃতদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়েছে শান্তির প্রস্তরফলক। এই সময় থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ওকিনাওয়ায় তার সামরিক উপস্থিতি বজায় রেখেছে।
কোরীয় যুদ্ধ ও ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় ওকিনাওয়ার বিমানঘাঁটি থেকে অনেকগুলি মার্কিন অভিযান চালনা করা হয়।[7] ১৯৬০ খ্রিঃ থেকে একটি চুক্তির মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ওকিনাওয়ায় পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার মজুত রাখতে পারে ও রাখে,[8] যদিও কখনও ১০০০ টির বেশি অস্ত্র একসাথে নয়।[9]
ওকিনাওয়ায় মার্কিন সামরিক উপস্থিতির বিরুদ্ধে জনমত জোরালো। ২০১০ খ্রিঃ আসাহি শিন্বুন সংবাদপত্রের একটি সমীক্ষায় দেখা যায় ৪৩% ওকিনাওয়ান মার্কিন ঘাঁটিগুলি বন্ধ করতে চান, ৪২% তাদের প্রভাবের হ্রাস চান এবং ১১% স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে চান।
১৯৭২ ও ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে ওকিনাওয়ায় নিযুক্ত মার্কিন সেনা ৫,৬৩৪ টি অপরাধে অভিযুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে আছে ২৫ টি খুন, ৩৮৫ টি ছিনতাই, ২৫ টি অগ্নিসংযোগ, ১২৭ টি ধর্ষণ, ৩০৬ টি নিগ্রহ ও ২৮২৭ টি চুরির অভিযোগ।[10]
ভূগোল
ওকিনাওয়া প্রশাসনিক অঞ্চল রিউকিউ দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণের দুই তৃতীয়াংশ নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে বসবাসযোগ্য দ্বীপগুলিকে মূলত তিনটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়, যথা: ওকিনাওয়া দ্বীপপুঞ্জ, মিয়াকো দ্বীপপুঞ্জ ও য়ায়েয়ামা দ্বীপপুঞ্জ।
২০০৮ এর ৩১শে মার্চের হিসেব অনুযায়ী সমগ্র ওকিনাওয়া প্রশাসনিক অঞ্চলের ১৯% সংরক্ষিত বনাঞ্চল। এর মধ্যে আছে ইরিওমোতে-ইশিগাকি জাতীয় উদ্যান; ওকিনাওয়া কাইগান ও ওকিনাওয়া সেন্সেকি উপ-জাতীয় উদ্যান এবং তিনটি প্রশাসনিক আঞ্চলিক উদ্যান।[11]
তথ্যসূত্র
- Nussbaum, Louis-Frédéric. (2005). "Okinawa-ken" in গুগল বইয়ে Japan Encyclopedia, p. 746-747, পৃ. 746,
- Nussbaum, "Naha" in গুগল বইয়ে p. 686, পৃ. 686,
- 'Under a decades-old security alliance, Okinawa hosts about 26,000 U.S. service personnel, more than half the total Washington keeps in all of Japan, in addition to base workers and family members.' "U.S. civilian arrested in fresh Okinawa DUI case; man injured"। The Japan Times। জুলাই ২০১৬।
- 山下町第1洞穴出土の旧石器について ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১২ অক্টোবর ২০০৭ তারিখে(জাপানি), 南島考古22
- Steve Rabson, "Meiji Assimilation Policy in Okinawa: Promotion, Resistance, and "Reconstruction" in New Directions in the Study of Meiji Japan (Helen Hardacre, ed.). Brill, 1997. p. 642.
- "No home where the dugong roam"। The Economist। অক্টোবর ২৭, ২০০৫।
- John Morrocco. Rain of Fire. (United States: Boston Publishing Company), pg 14
- "New Documents On Okinawa Reversion"। ১৬ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০১৬।
- Norris, Robert S.; Arkin, William M.; Burr, William (নভেম্বর ১৯৯৯)। "Where They Were"। Bulletin of the Atomic Scientists। 55 (6): 26–35। ডিওআই:10.2968/055006011।
- David Hearst (মার্চ ১১, ২০১১)। "Second battle of Okinawa looms as China's naval ambition grows"। The Guardian। UK।
- "General overview of area figures for Natural Parks by prefecture" (পিডিএফ)। Ministry of the Environment। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১২।