ঐতিহাসিক বৈদিক ধর্ম

বৈদিক যুগের ধর্ম (খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দ থেকে ৫০০ অব্দ[1]) (অথবা বৈদিক ধর্ম- বা বেদ সম্পর্কিত ধর্ম বা প্রাচীন হিন্দুধর্ম) হল আধুনিক হিন্দুধর্মের আদি রূপ। ঐতিহাসিক বৈদিক ধর্ম ও আধুনিক হিন্দুধর্মের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য দেখা যায়।[note 1] এটি হল আর্য ধর্মের একটি শাখা।

বৈদিক যুগে উত্তর ভারতের মানচিত্র। বৈদিক শাখাগুলির অবস্থান সবুজ রঙে ও থর মরুভূমি কমলা রঙে চিহ্নিত।

চার বেদের মন্ত্র অংশে বেদের অনুষ্ঠান ও কর্মকাণ্ডের পদ্ধতি রক্ষিত আছে। এই অংশটি সংস্কৃত ভাষায় রচিত। ধর্মীয় অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন পুরোহিতেরা। পূজার পদ্ধতি আধুনিক হিন্দুধর্মে অনেকাংশে অপরিবর্তিত থাকলেও, রক্ষণশীল বৈদ্য/শ্রৌতদের একটি অংশ এখনও মৌখিকভাবে স্তোত্র শিক্ষার পরম্পরা বজায় রেখেছে। পৌরাণিক পূজা অর্চনার প্রভাব বেড়ে যাওয়ায় রক্ষণশীল বৈদিক ব্রাহ্মণ বৈদ্য/শ্রৌতরা অথর্ব-আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাচর্চাকে পেশা হিসেবে নেয় তাই বৈদ্য অর্থ বৈদিক ব্রাহ্মণ হলেও চিকিৎসক অর্থটি বহুল প্রচলিত।

ধর্মগ্রন্থের ইতিহাস

বৈদিক যুগে রচিত ধর্মগ্রন্থগুলি বৈদিক সংস্কৃত ভাষায় রচিত। এগুলি প্রধানত চারটি বৈদিক সংহিতা। তবে ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও কয়েকটি প্রাচীন উপনিষদ্‌ (বৃহদারণ্যক, ছান্দোগ্য) এই যুগে রচিত বলে মনে করা হয়। বেদের অনুষ্ঠানপদ্ধতি লিপিবদ্ধ করা আছে। ১৬ বা ১৭ জন শ্রৌত ও বৈদিক পুরোহিত মিলে এই অনুষ্ঠান সম্পাদনা করতেন। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, ঋগ্বেদের স্ত্রোত্রগুলি এবং অন্যান্য বৈদিক স্তোত্রগুলি ঋষিদের কাছে দিব্য উপায়ে প্রকাশিত হয়েছিল। তাই এই ঋষিদের ওইসব স্তোত্রের "মন্ত্রদ্রষ্টা" (যিনি মন্ত্র দেখেন বা শোনেন) মনে করা হয়; রচয়িতা মনে করা হয় না। বেদকে অপৌরুষেয় মনে করা হয়। কারণ, হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, কোনো মানুষ বেদ রচনা করেননি। তাছাড়া বেদকে অপরিবর্তনশীলও মনে করা হয়।

বৈশিষ্ট্য

ক্রিয়াকাণ্ড

দক্ষিণ ভারতে শ্রৌত সম্প্রদায়ের যজ্ঞানুষ্ঠান।

আগুন বা নদনদীর পূজা, ইন্দ্র প্রমুখ দেবতার পূজা, মন্ত্রপাঠ ও যজ্ঞ ছিল বৈদিক সমাজে প্রধান উপাসনার পদ্ধতি। বৈদ্যপুরোহিতেরা ক্ষত্রিয়বৈশ্যদের জন্য ক্রিয়াকাণ্ড অনুষ্ঠান করতেন। মানুষ দেবতার কাছ থেকে অধিক সন্তান, বৃষ্টিপাত, গবাদি পশু, দীর্ঘায়ু ও মৃত্যুর পর স্বর্গ কামনা করত। আধুনিক হিন্দুধর্মেও পুরোহিতরা বৈদিক স্তোত্র পাঠ করে উন্নতি, ধনসম্পত্তি ও সর্বসাধারণের কল্যাণ প্রার্থনা করেন। তবে বৈদিক দেবদেবীদের গুরুত্ব কমে পৌরাণিক দেবদেবীদের গুরুত্ব আধুনিক হিন্দুধর্মে বেড়ে গিয়েছে।

বৈদিক ধর্মে যেসব প্রধান যজ্ঞ ও অনুষ্ঠানগুলি প্রচলিত ছিল, সেগুলি হল:[2]

  • সোম-সংক্রান্ত অনুষ্ঠানগুলি:
    • অগ্নিষ্টোম
  • হবির্যজ্ঞ:
  • পুরুষমেধ
  • অথর্ববেদে লিখিত চিকিৎসামূলক ক্রিয়াকাণ্ড ও মন্ত্রপাঠ।[4]

হিন্দুদের অন্ত্যেষ্টী ক্রিয়া ঋগ্বৈদিক যুগ থেকে একই ভাবে প্রচলিত। তবে এই সব অনুষ্ঠান সেমেট্রি আইচ কালচারেও দেখা যেত। ঋগ্বৈদিক যুগের শেষ দিকে মৃত (“অগ্নিদগ্ধ”) ও জীবিত (“অনগ্নিদগ্ধ”) পুর্বপুরুষদের আবাহনের একটি ক্রিয়া যুক্ত হয়।[5][6]

দেবমণ্ডলী

বেদে বহুদেবতার উপাসনা দৃষ্ট হয়। এঁদের মধ্যে তেত্রিশ দেবতাকে প্রধান হিসেবে ধরা হয়। এঁরা ১১ জন করে পৃথিবী, অন্তরীক্ষ ও স্বর্গের দেবতা।[7] বৈদিক দেবমণ্ডলীতে দেবঅসুর নামে দুটি শ্রেণীর উল্লেখ পাওয়া যায়। অন্যান্য দেবতারা হলেন বিষ্ণু, রুদ্র (পরবর্তীকালে শিবের সমার্থক), প্রজাপতি (পরবর্তীতে ব্রহ্মা) প্রভৃতি।[8] বৈদিক দেবীর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। এঁদের মধ্যে ঊষা, পৃথিবী, অদিতি, সরস্বতী, সাবিত্রী, বাক, রাত্রি, অরণ্যানী ইত্যাদি ঋগ্বেদে বর্ণিত।.[9] শ্রী বা লক্ষ্মীও পরবর্তী বৈদিক সাহিত্যে আছেন।[10] প্রত্যেক দেবতা এক একটি করে বিশেষ জ্ঞান বা প্রাকৃতিক শক্তির প্রকাশক।[11][12] বেদ হল বিভিন্ন দেবতার স্তোত্রের একটি সংকলন। এই দেবতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উল্লেখিত দেবতারা হলেন ইন্দ্র, অগ্নি এবং সোম।[13] অগ্নিদেবকে সমগ্র মানবজাতির মিত্র বলে উল্লেখ করা হয়েছে। জলদেবতা বরুণবিশ্বদেব নামে এক দেবমণ্ডলীও প্রধান ছিলেন।[14]

দর্শন

বৈদিক দর্শনের সূচনা হয় ছিল ঋগ্বৈদিক যুগের শেষভাগে, খ্রিস্টপূর্ব ১১০০ অব্দ নাগাদ।[15] ঋগ্বেদের পুরুষসূক্তনাসদীয় সূক্ত হল ঋগ্বৈদিক দর্শনের আকর-অংশ।[16]

ঋগ্বৈদিক যুগের প্রধান দার্শনিকেরা হলেন ঋষি নারায়ণ, কান্ব, ঋষভ, বামদেবঅঙ্গিরস[17]

নীতিশাস্ত্র — সত্য ও ঋত

বৈদিক নীতিশাস্ত্রের ভিত্তি হল সত্যঋত ধারণাদুটি। সত্য ধারণায় পরম উপাস্যের সঙ্গে একাত্মতার তত্ত্ব ব্যাখ্যা করা হয়েছে।[18] ঋত ধারণায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে সত্যের সেই প্রকাশটি, যার মাধ্যমে সত্য এই ব্রহ্মাণ্ড ও তার অন্তর্ভুক্ত সব কিছুকে পরিচালনা করেন।[19] পানিক্কর বলেছেন:

ঋত হল সবকিছুর চরম ভিত্তি; এটিই "সর্বোচ্চ", যদিও এটি ইন্দ্রিয়ের দ্বারা অনুভব করা যায় না [...] প্রত্যেকের সহজাত শক্তির অভিপ্রকাশের মধ্যেই এটি নিহিত রয়েছে... "[20]

এই শব্দটি আদি বৈদিক (ইন্দো-আর্য) ও জরথুস্ট্রবাদী (ইরানীয়) শাস্ত্রেরও আগেকার প্রোটো-ইন্দো-ইরানীয় ধর্ম থেকে এসেছে। আবেস্তান ভাষার অশ কথাটি (বৈদিক ভাষায় ঋত শব্দটির অনুরূপ) জরথুস্ট্র ধর্মতত্ত্ব ও দর্শনে একটি অন্যতম প্রধান ধারণা। [21]

ঋতের অনুগামী হলে প্রগতি সম্ভব, এবং ঋতের বিরুদ্ধাচারণ করলে শাস্তি পেতে হয় – এই হল মূল ধারণা। ব্রাহ্মণ্য দর্শনে ধর্ম শব্দটির ব্যবহার ছিল। এটিকে ঋতেরই একটি প্রকাশ মনে করা হত।[22]

যজ্ঞ ধারণাটিও স্পষ্ট উল্লিখিত হয়েছে পুরুষসূক্তে। এই সূক্তে উল্লেখ করা হয়েছে, ব্যক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে সর্বোচ্চ উপাস্য স্বয়ং হলেন একটি অতিন্দ্রীয় যজ্ঞ।[23]

উত্তর-বৈদিক ধর্মসমূহ

খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ অব্দে বৈদিক যুগ শেষ হয়। বৈদিক ধর্মের ঠিক পরবর্তী পর্যায়টি (খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ থেকে ২০০ অব্দ) হল হিন্দুধর্ম, জৈনধর্মবৌদ্ধধর্মের গঠনের সময়।[24][25][26][27] মিশেলের মতে, খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ থেকে ২০০ অব্দ হল “প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের” যুগ।[28][note 2] মেসের মতে, খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ থেকে ২০০ অব্দ ছিল পরিবর্তনের যুগ। এই সময়টিকে তিনি বলেছেন “ধ্রুপদি যুগ”:

...এই সময় প্রথাগত ধর্মীয় বিশ্বাস ও রীতিনীতিগুলির পুনর্মূল্যায়ণ চলছিল। ব্রাহ্মণেরা ও তাঁদের আচরিত অনুষ্ঠানগুলি বৈদিক যুগে যে মর্যাদা পেত, সেই মর্যাদা এই যুগে ক্ষুণ্ণ হয়েছিল।"[30]

মেসের মতে, হিন্দুধর্মের কিছু মৌলিক ধারণা; যেমন কর্মবাদ, অবতারবাদ এবং “ব্যক্তিগত জ্ঞানলাভ ও বিবর্তন” বৈদিক ধর্মে ছিল না। এগুলির উদ্ভহ হয় খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ থেকে ২০০ অব্দের মধ্যে:[26][note 3]

ভারতীয় দার্শনিকেরা মনে করেন, মানুষের অমর আত্মা একটি মরণশীল দেহের মধ্যে কর্মের প্রভাবে আবদ্ধ থাকে। এটি একটি অনন্ত অস্তিত্বের চক্র।[32]

বৈদিক ধর্ম ধীরে ধীরে হিন্দুধর্মের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অঙ্গীভূত হয়ে পড়ে। এর ফলে পৌরাণিক হিন্দুধর্মের জন্ম হয়।[33] তবে বৈদিক ধর্ম ভারতের কয়েকটি অঞ্চলে এখনও বিদ্যমান। যেমন, কেরল রাজ্যে নাম্বুদ্রি ব্রাহ্মণেরা এখনও শ্রৌত অনুষ্ঠানগুলি পালন করেন, যা ভারতের অন্যত্র পালিত হয় না।

উত্তর-বৈদিক হিন্দুধর্ম

...সুপ্রাচীন কালে বেদ, ব্রাহ্মণ, গৃহ্যসূত্র, ধর্মশাস্ত্র, স্মৃতি ও অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ প্রথা, রীতিনীতি ও অনুষ্ঠানগুলির বর্ণনা দিত।[34]

পূজা-অনুষ্ঠানগুলি এমনভাবে প্রচলিত হয়, যাতে

শ্রৌত অনুষ্ঠান (বৈদিক মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে কৃত অনুষ্ঠান), যেগুলি পুরোহিতরাই শুধু পালন করতে পারতেন, এবং গৃহস্থ অনুষ্ঠান, যেগুলি আর্য গৃহস্থরা পালন করতে পারত, সেগুলির মধ্যে একটি প্রথাগত পার্থক্য বজায় থাকে। তবে উভয় ধরনের অনুষ্ঠানকেই পুরোহিতশ্রেণী প্রভাবিত করে। কিছু কিছু গার্হস্থ্য অনুষ্ঠানও পুরোহিতদের শ্রৌত অনুষ্ঠানের সম্পূর্ণ অনুরূপ হয়ে ওঠে। এবং যেখানে প্রাচীন অনুষ্ঠানগুলি পালন করা হতে থাকে, সেখানেও সেগুলির মধ্যে পুরোহিতদের ক্রিয়াকর্ম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[35]

বঙ্গের বৈদ্যব্রাহ্মণ আয়ুর্বেদ চর্চা এখনও অব্যাহত রেখেছেন, বৈদিক যজ্ঞানুষ্ঠান লুপ্ত হলে এরা বৈদিক চিকিৎসা পেশায় ঝুঁকে পরে।

বেদান্ত

বৈদিক ধর্ম উপনিষদের অনুসারী হয়। উপনিষদ্ থেকে পরবর্তীকালে বেদান্ত দর্শনের উদ্ভব ঘটে। কোনো কোনো গবেষকের মতে, বেদান্তই হিন্দুধর্মের প্রধান কেন্দ্র। বেদান্তের মতে, এই শাস্ত্র হল “বেদের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য (অন্ত)।”।[36] বেদান্ত দর্শন বৈদিক বিশ্বচেতনাকে একত্ববাদী দর্শনে রূপান্তরিত করে। এই দর্শনই তান্ত্রিক আধ্যাত্মিকতা এবং যোগের কিছু নতুন বিভাগের (যেমন জ্ঞানযোগভক্তিযোগ) জন্ম দেয়।[37] কিছু কিছু রক্ষণশীল ধারায় ঐতিহাসিক বৈদিক ধর্ম অবিকৃত অবস্থাতেও পালিত হতে থাকে।[38]

বৈদিক ধর্মের নতুন ধারায় রূপান্তর সম্পর্কে জেনান ডি. ফাওলার বলেছেন:

ভক্তি

বৈদিক দেবতাদের মর্যাদা হ্রাস পেলেও[40] তারা অবলুপ্ত হয়ে যাননি। বরং স্থানীয় দেবতাদের বৈদিক-ব্রাহ্মণ্য দেবমণ্ডলীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। যার ফলে হিন্দু দেবমণ্ডলীর রূপ পরিবর্তিত হয়।[41] যে সব দেবতাদের প্রাধান্য বৃদ্ধি পায় যাঁরা বেদে উল্লিখিত হননি বা যাঁদের বেদে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এঁদের মধ্যে শিববিষ্ণু প্রধান।[40] এই দুই দেবতাকে কেন্দ্র করে পরবর্তীকালে হিন্দুধর্মে শৈববৈষ্ণব সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়।[40]

বৈদিক মন্ত্রের ব্যাখ্যা

হিন্দুদের বিভিন্ন সম্প্রদায়ে বৈদিক মন্ত্রগুলিকে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়।

মীমাংসা দার্শনিকদের মতে, বেদ রচনার জন্য যেমন কোনো লেখকের দরকার নেই, বা অনুষ্ঠান অনুমোদনের জন্য যেমন কোনো দেবতার দরকার নেই, তেমনি জগতের সঙ্গেও একজন স্রষ্টার নাম যুক্ত করার কোনো প্রয়োজন নেই।[42] মীমাংসা দর্শনের মতে, বেদে উল্লিখিত দেবতাদের উল্লেখ তাদের নাম-সংবলিত মন্ত্রগুলির বাইরে কোথাও নেই। তাই মন্ত্রের শক্তিই দেবতার শক্তি।[43]

আদি শঙ্কর বেদকে অদ্বৈতবাদের সাহায্যে ব্যাখ্যা করেছেন।[44] যদিও, আর্য সমাজের মতে, বেদমন্ত্রগুলি একেশ্বরবাদী।[45] এমনকি ঋগ্বেদের প্রাচীনতম মণ্ডলগুলির (প্রথম থেকে নবম মণ্ডল) স্তোত্রগুলির ঝোঁকও একেশ্বরবাদের দিকে।[46] ঋগ্বেদের কয়েকটি পদ (১।১৬৪।৪৬) অনুসারে:

ইন্দ্রং মিত্রং বরুণমঘনিমাহুরথোদিব্যঃ স সুপর্ণো ঘরুত্মান,
একং সদ্ বিপ্রা বহুধা বদন্ত্যঘ্নিং যমং মাতরিশ্বানমাহুঃ।

অর্থাৎ,

তারা তাঁকে ইন্দ্র, মিত্র, বরুণ, অগ্নি নামে ডাকে, এবং তিনিই দিব্য পক্ষী গরুত্মান।
যিনি এক, ঋষিগণ তাঁকেই অগ্নি, যম, মাতরিশ্বান ইত্যাদি বহু নামে ডাকেন।

তাছাড়া নাসদীয় সূক্তে (১০।১২৯-১৩০) বলা হয়েছে, সর্বোচ্চ সত্য এক (একং সৎ)। এই সূক্তেরই অন্য একটি পংক্তিতে (১০।১২৯।৭) অনুসারে:

ইয়ং বিসৃষ্টির্যত আবভূব/ যদি বা দধে যদি বা ন । / যো অস্যাধ্যক্ষঃ পরমে ব্যোমন্ / সো অঙ্গ বেদ যদি বা ন বেদ ॥

বঙ্গানুবাদ,

যিনি এই সৃষ্টির আদি উৎস, তিনি তা সৃষ্টি করুন আর নাই করুন, তিনি তা সর্বোচ্চ স্বর্গে বসে প্রত্যক্ষ করেন। তিনি হয় সব অনুপুঙ্খ জানেন, বা হয়ত জানেন না।

শ্রমণ ধর্মমত

অ-বৈদিক শ্রমণ ধর্মমতগুলিও ব্রাহ্মণ্য হিন্দুধর্মের পাশাপাশি প্রচলিত ছিল।[47][48][note 4][note 5][note 6] এগুলি বৈদিক ধর্ম থেকে প্রত্যক্ষভাবে উৎসারিত হয়নি। তবে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের নানা প্রভাব এগুলির মধ্যে দেখা যায়।[47] এগুলিতে “প্রাচীনতর প্রাক-আর্য উত্তর-পূর্ব ভারতের উচ্চবিত্ত সমাজের বিশ্বতত্ত্ব ও নৃতত্ত্ব” প্রতিফলিত হয়েছে।[49] জৈনধর্ম ও বৌদ্ধধর্ম শ্রমণ ধর্মমত থেকে উৎসারিত হয়েছিল। [50][51]

জৈনধর্মে ২২ জন প্রাগৈতিহাসিক তীর্থঙ্করের উল্লেখ পাওয়া যায়। অর্থাৎ, মহাবীরের সময়কালে (খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দী) এই ধর্মের বিকাশ সম্পূর্ণ হয়েছিল। [52][53] বৌদ্ধধর্মের বিকাশ হয় খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ অব্দে। খ্রিস্টীয় পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময় পৌরাণিক হিন্দুধর্ম ও ইসলামের প্রভাবে এই ধর্মের পতন হয়। [54][55][56][57]

আরও দেখুন

টীকা

  1. Stephanie W. Jamison and Michael Witzel, Vedic Hinduism, 199, "... to call this period Vedic Hinduism is a contradiction in terms since Vedic religion is very different from what we generally call Hindu religion – at least as much as Old Hebrew religion is from medieval and modern Christian religion. However, Vedic religion is treatable as a predecessor of Hinduism."
  2. According to Michaels, the period between 200 BCE and 1100 CE is the time of "classical Hinduism", since there is "a turning point between the Vedic religion and Hindu religions".[29]
  3. Although the concept of reincarnation originated during the time of the Shramanic reforms and the composition of the Upanishads,[26] according to Georg Feuerstein the Rig-Vedic rishis believed in reincarnation and karma.[31]
  4. Cromwell: "Alongside Brahmanism was the non-Aryan shramanic culture with its roots going back to prehistoric times."[47]
  5. >Y. Masih (2000) In : A Comparative Study of Religions, Motilal Banarsidass Publ : Delhi, আইএসবিএন ৮১-২০৮-০৮১৫-০ Page 18. "There is no evidence to show that Jainism and Buddhism ever subscribed to vedic sacrifices, vedic deities or caste. They are parallel or native religions of India and have contributed to much to the growth of even classical Hinduism of the present times."
  6. P.S. Jaini, (1979), The Jaina Path to Purification, Motilal Banarsidass, Delhi, p. 169 "Jainas themselves have no memory of a time when they fell within the Vedic fold. Any theory that attempts to link the two traditions, moreover fails to appreciate rather distinctive and very non-vedic character of Jaina cosmology, soul theory, karmic doctrine and atheism"

পাদটীকা

  1. INITIATION OF RELIGIONS IN INDIA
  2. Prasoon, (Prof.) Shrikant. Indian Scriptures. Pustak Mahal (11 August 2010). Ch.2, Vedang, Kalp. আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-২২৩-১০০৭-৮.
  3. Ralph Thomas Hotchkin Griffith, The Texts of the White Yajurveda. Translated with a Popular Commentary (1899), 1987 reprint: Munshiram Manoharlal, New Delhi, আইএসবিএন ৮১-২১৫-০০৪৭-৮.
  4. Bloomfield Maurice. Hymns of the Atharva Veda. Kessinger Publishing (1 June 2004). P. 1-8. আইএসবিএন ১৪১৯১২৫০৮৭.
  5. Dudi, Amar Singh. Ancient India History. Neha Publishers and Distributors (10 January 2012). Ch. 9. Vedic Religion, Rituals. আইএসবিএন ৯৭৮-৯৩-৮০৩১৮-১৬-৫.
  6. Sabir, N. Heaven Hell OR??. Publisher: Xlibris (7 October 2010). P. 155. আইএসবিএন ১৪৫৩৫৫০১১৯.
  7. Singhal, K. C; Gupta, Roshan. The Ancient History of India, Vedic Period: A New Interpretation. Atlantic Publishers and Distributors. আইএসবিএন ৮১২৬৯০২৮৬৮. P. 150.
  8. Hajime Nakamura (1998), A Comparative History of Ideas, Motilal Banarsidass, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১২০৮১০০৪৪, pages 26-33
  9. David Kinsley (2005), Hindu Goddesses: Vision of the Divine Feminine in the Hindu Religious Traditions, University of California Press, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১২০৮০৩৯৪৭, pages 6-17, 55-64
  10. David Kinsley (2005), Hindu Goddesses: Vision of the Divine Feminine in the Hindu Religious Traditions, University of California Press, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১২০৮০৩৯৪৭, pages 18, 19
  11. George Williams (2008), A Handbook of Hindu Mythology, Oxford University Press, আইএসবিএন ৯৭৮-০১৯৫৩৩২৬১২, pages 24-33
  12. Bina Gupta (2011), An Introduction to Indian Philosophy, Routledge, আইএসবিএন ৯৭৮-০৪১৫৮০০০৩৭, pages 21-25
  13. "Botany of Haoma", from Encyclopædia Iranica. Accessed 15 June 2012
  14. Renou, Louis. L'Inde Classique, vol. 1, p. 328, Librairie d'Ameriqe et d'Orient. Paris 1947, reprinted 1985. আইএসবিএন ২-৭২০০-১০৩৫-৯.
  15. Oberlies (1998:155) gives an estimate of 1100 BC for the youngest hymns in book 10. Estimates for a terminus post quem of the earliest hymns are more uncertain. Oberlies (p. 158) based on 'cumulative evidence' sets wide range of 1700–1100
  16. Krishnananda. Swami. A Short History of Religious and Philosophic Thought in India, Divine Life Society. p. 18-19.
  17. P. 285 Indian sociology through Ghurye, a dictionary By S. Devadas Pillai
  18. Krishnananda. Swami. A Short History of Religious and Philosophic Thought in India, Divine Life Society. p. 21
  19. Holdrege (2004:215)
  20. Panikkar 2001:350–351
  21. Duchesne-Guillemin 1963, পৃ. 46.
  22. Day, Terence P. (1982). The Conception of Punishment in Early Indian Literature. Ontario: Wilfrid Laurier University Press. P. 42-45. আইএসবিএন ০-৯১৯৮১২-১৫-৫.
  23. The Purusha Sukta in Daily Invocations by Swami Krishnananda
  24. Smart 2003
  25. Michaels 2004
  26. Muesse 2003
  27. Flood 1996, পৃ. 82, 224–49।
  28. Michaels 2004, পৃ. 36।
  29. Michaels 2004, পৃ. 38।
  30. Muesse 2011, পৃ. 115।
  31. (Page 169) The Yoga Tradition By Georg Feuerstein
  32. Muesse 2003, পৃ. 14।
  33. Swami Krishnananda, A Short History of Religious and Philosophic Thought in India, Divine Life Society. p. 42
  34. Pandey, Rajbali, "Hindu Samskaras" (Motilal Banarasidass Publ., 1969)
  35. Hopkins, Thomas J., The Hindu Religious Tradition (Belmont: Dickenson Publications, 1971), 15
  36. Robert E. Hume, Professor Emeritus of History of Religions at the Union Theological Seminary, wrote in Random House's The American College Dictionary (1966): "It [Vedānta] is concerned with the end of the Vedas, both chronologically and teleologically."
  37. "Patanjali’s Yoga Darsana – The Hatha Yoga Tradition," InfoRefuge.
  38. Kelkar, Siddharth. UNESCO’s leg-up for city Veda research ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৬ অক্টোবর ২০১২ তারিখে. Express India. Retrieved 16 June 2012.
  39. P. 46 Perspectives of Reality: An Introduction to the Philosophy of Hinduism By Jeaneane D. Fowler
  40. Michaels 2004, পৃ. 40।
  41. Michaels 2004, পৃ. 39।
  42. Neville, Robert। Religious ruth। পৃষ্ঠা 51।
  43. Coward, Harold। The perfectibility of human nature in eastern and western thought। পৃষ্ঠা 114।
  44. Sharma, Chandradhar (১৯৬২)। "Chronological Summary of History of Indian Philosophy"। Indian Philosophy: A Critical Survey। New York: Barnes & Noble। পৃষ্ঠা vi।
  45. Light of Truth by Swami Dayanand Saraswati, Chapter 7
  46. Macdonell, Arthur Anthony. Vedic Mythology. Forgotten Books (23 May 2012). P. 17. আইএসবিএন ১৪৪০০৯৪৩৬৫.
  47. S. Cromwell Crawford, review of L. M. Joshi, Brahmanism, Buddhism and Hinduism, Philosophy East and West (1972)
  48. Dr. Kalghatgi, T. G. 1988 In: Study of Jainism, Prakrit Bharti Academy, Jaipur
  49. Zimmer 1989, পৃ. 217।
  50. Jain, Arun. 2008. Faith & philosophy of Jainism. p. 210.
  51. Svarghese, Alexander P. 2008. India : History, Religion, Vision And Contribution To The World. p. 259-60.
  52. Helmuth von Glasenapp,Shridhar B. Shrotri. 1999. Jainism: an Indian religion of salvation. P.24. "Thus not only nothing, from the philosophical and the historical point of view, comes in the way of the supposition that Jainism was established by Parsva around 800 BCE, but it is rather confirmed in everything that we know of the spiritual life of that period."
  53. Dundas, Paul. 2002. The Jains. P.17. "Jainism, then, was in origin merely one component of a north Indian ascetic culture that flourished in the Ganges basin from around the eighth or seventh centuries BCE."
  54. "Buddhism". (2009). In Encyclopædia Britannica. Retrieved 26 November 2009, from Encyclopædia Britannica Online Library Edition.
  55. P. 78 - 83 Freeing the Buddha: Diversity on a Sacred Path--large Scale Concerns By Brian Ruhe
  56. P. 183 Islamic Jihad: A Legacy of Forced Conversion, Imperialism, and Slavery By M. A. Khan
  57. P. 110 A text book of the history of Theravāda Buddhism by K. T. S. Sarao, University of Delhi. Dept. of Buddhist Studies

তথ্যসূত্র

  • Flood, Gavin D. (১৯৯৬), An Introduction to Hinduism, Cambridge University Press
  • King, Richard (১৯৯৯), Orientalism and Religion: Post-Colonial Theory, India and "The Mystic East", Routledge
  • Michaels, Axel (২০০৪), Hinduism. Past and present, Princeton, New Jersey: Princeton University Press
  • Muesse, Mark William (২০০৩), Great World Religions: Hinduism
  • Smart, Ninian (২০০৩), Godsdiensten van de wereld (The World's religions), Kampen: Uitgeverij Kok
  • Von Stietencron, Heinrich (২০০৫), Hindu Myth, Hindu History: Religion, Art, and Politics, Orient Blackswan
  • Zimmer, Heinrich (১৯৮৯), Pholosophies of India, Princeton University Press
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.