ঐতিহাসিক পূর্ব-ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল
ঐতিহাসিক পূর্ব-ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল ভূমধ্যসাগরের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার একটি বৃহৎ প্রাচীন ঐতিহাসিক অঞ্চল। এটি উত্তরে বৃষ পর্বতমালা, পশ্চিমে ভূমধ্যসাগর, দক্ষিণে আরব মরুভূমি ও পূর্বে মেসোপটেমিয়া দ্বারা সীমায়িত। এটি উত্তরে তুরস্কের বৃষ পর্বতমালা থেকে দক্ষিণে মিশরের সিনাই মরুভূমি পর্যন্ত প্রায় ৬৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং পশ্চিমে ভূমধ্যসাগর থেকে পূর্বে আরব মরুভূমি পর্যন্ত ১১০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার প্রশস্ত।[2][3] আধুনিক ভূগোলের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি সাইপ্রাস, জর্দান, লেবানন, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, ইসরায়েল এবং দক্ষিণ তুরস্কের (পুরাতন নাম আলেপ্পো ভিলায়েত) অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত ছিল। পশ্চিম এশিয়া, পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল ও উত্তর-পূর্ব আফ্রিকা[4] এবং আরব উপদ্বীপ অঞ্চলের উত্তর-পশ্চিমাংশের সাথে সংযুক্ত অঞ্চল হিসেবে এটি সুপরিচিত ছিল।[5]
ঐতিহাসিক পূর্ব-ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল | |
---|---|
দেশ এবং অঞ্চল | সাইপ্রাস তুরস্ক (হাতাই প্রদেশ ও উসমানীয় সিরিয়ার উত্তরীয় সাঞ্জাকগুলি) ইসরায়েল জর্ডান লেবানন ফিলিস্তিন সিরিয়া |
জনসংখ্যা | ৪৭,১২৯৩২৫[1] |
ভাষা | পূর্ব-ভূমধ্যসাগরীয় আরবি ভাষা, আরামীয় ভাষা, আর্মেনীয় ভাষা, সিরকাসীয় ভাষা, গ্রিক ভাষা, হিব্রু ভাষা, কুর্দি ভাষা, লাদিনো ভাষা, তুর্কি ভাষা. |
সময় অঞ্চল | ইউটিসি+০২:০০ (EET) (তুরস্ক এবং সাইপ্রাস) |
ঐতিহাসিক এই অঞ্চলটি ইংরেজি ভাষায় "লিভ্যান্ট" বা "লেভ্যান্ট" (Levant) ও আরবি ভাষায় "আশ-শাম" (ٱلشَّام) নামে পরিচিত। ইংরেজি "লিভ্যান্ট" কথাটি ফরাসি ভাষার শব্দ "ল্যভঁ" (Levant) থেকে এসেছে, যার অর্থ "উদীয়মান"। ইউরোপের দৃষ্টিকোণ থেকে পূর্বদিকে অবস্থিত এই অঞ্চল থেকে সূর্যোদয় হত বলে ইউরোপীয়রা এই অঞ্চলটির এরূপ নামকরণ করেছিল। অন্যদিকে আরব উপদ্বীপের লোকেরা সূর্যোদয়ের দিকে অর্থাৎ পূর্বদিকে মুখ করলে হাতের বামদিকে অর্থাৎ উত্তর দিকে পড়া অঞ্চলগুলিকে "শাম" শব্দটি দিয়ে নির্দেশ করত। বর্তমানে "শাম" বলতে মূলত বৃহত্তর সিরিয়া অঞ্চলকে বোঝানো হয়।
আরবিতে "আল-মাশরিক" (যেখানে সূর্য উদিত হয়) বলে আরেকটি কাছাকাছি পদবন্ধ আছে, যা দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের অপেক্ষাকৃত বৃহত্তর একটি ভৌগোলিক অঞ্চলকে নির্দেশ করা হয় এবং যেটিতে ঐতিহাসিক পূর্ব -ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল ছাড়াও আরব বিশ্বের পূর্বভাগের আরও অন্যান্য দেশ (যেমন ইরাক) অন্তর্ভুক্ত। বৃহত্তর অর্থে মাশরিক অঞ্চলে সৌদি আরব, মিশর, সুদান এবং আরব উপদ্বীপের অন্যান্য ক্ষুদ্র দেশগুলিকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
ঐতিহাসিক পূর্ব-ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের দক্ষিণের অংশবিশেষকে প্রাচীন মিশরীয় ও হিব্রু গ্রন্থ (বিশেষ করে হিব্রু বাইবেল বা খ্রিস্টানদের ধর্মপুস্তক বাইবেলের পুরাতন নিয়ম অংশে) "কনান" (ইংরেজি উচ্চারণে কেনান) নামে উল্লেখ করা হয়েছে, যেটি বর্তমান ইসরায়েল, আধুনিক ফিলিস্তিনি পশ্চিম তীর ও গাজা ভূখণ্ডদ্বয়, এবং লেবানন ও সিরিয়ার দক্ষিণের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত। কনানকে ঐসব ধর্মগ্রন্থে ইহুদিদের বা ইসরায়েলি গোত্রের লোকদের ঈশ্বর কর্তৃক প্রতিজ্ঞাত দেশ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে এবং ঐসব পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী ইসরায়েলিরা খ্রিস্টপূর্ব ২য় সহস্রাব্দের শেষদিকে (আজ থেকে ৩ হাজার বছরেরও আগে) কনান বিজয় করে সেখানে প্রাচীন ইসরায়েল দেশ প্রতিষ্ঠা করেছিল। এই ব্যাপারটি আধুনিক রাজনৈতিক সিয়োনবাদ বা জায়নবাদের কেন্দ্রীয় একটি মতবিশ্বাস, যার শেষ পরিণামে আধুনিক ইসরায়েল রাষ্ট্রটির উৎপত্তি ঘটেছে।
তথ্যসূত্র
- Population found by adding all the countries' populations (Cyprus, Lebanon, Syria, Jordan, Israel, Palestine and Hatay Province)
- A History of Ancient Israel and Judah by Miller, James Maxwell, and Hayes, John Haralson (Westminster John Knox, 1986) আইএসবিএন ০-৬৬৪-২১২৬২-X. p.36
- Harris, William W. The Levant: a Fractured Mosaic
- The Oxford Encyclopedia of Ancient Greece and Rome, Volume 1, p247, "Levant
- Egyptian Journal of Geology - Volume 42, Issue 1 - Page 263, 1998