এ জে এম আমিনুল হক

এ জে এম আমিনুল হক (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ২০১১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম খেতাব প্রদান করে। [1]

এ জে এম আমিনুল হক
মৃত্যু২০১১
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর উত্তম

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

এ জে এম আমিনুল হকের জন্ম গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামে। তার বাবার নাম নূরুল হক এবং মায়ের নাম ফাতেমা জোহরা। তার স্ত্রীর নাম মরিয়ম হক। তাদের এক মেয়ে ও এক ছেলে।

কর্মজীবন

এ জে এম আমিনুল হক চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে ফিল্ড ইন্টেলিজেন্সের অধীনে কর্মরত ছিলেন ঢাকা সেনানিবাসে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঢাকা থেকে পালিয়ে যুদ্ধে যোগ দেন। পরে তাকে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক নিযুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হিসেবে অবসর নেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৯৭১ সালের ৩ আগস্ট শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলায় অবস্থিত নকশী বিওপিতে মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সের অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানে আক্রমণ করে। অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক ছিলেন এ জে এম আমিনুল হক। তাঁর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মূল আক্রমণকারী দল ছিল ব্রাভো (বি) ও ডেল্টা (ডি) কোম্পানি। সেখানে প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ৩১ বালুচ রেজিমেন্টের একটি প্লাটুন। আরও ছিল দুই প্লাটুন আধাসামরিক ও রাজাকার বাহিনীর সদস্য।

এ জে এম আমিনুল হক মুক্তিবাহিনীর কমান্ডো প্লাটুনের কয়েকজনকে নিয়ে ঢুকে পড়েন যুদ্ধক্ষেত্রে। তাঁর অধীন মুক্তিযোদ্ধা দলের বেশির ভাগ আহত ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাকে উদ্ধার করা হয়। কিন্তু তাঁর দলের একটি উপ-দলের দলনেতা আমীন আহম্মেদ চৌধুরী বীর বিক্রম নিখোঁজ। তিনি জীবিত না মৃত, কেউ জানেন না। মুক্তিযোদ্ধারা পশ্চাদপসরণ করার পর চারদিকে পাকিস্তানি সেনারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তারা খুঁজছে জীবিত ও আহত মুক্তিযোদ্ধাদের। মাথার ওপর দিয়ে ছুটে যাচ্ছে গুলি। মাঝেমধ্যে এসে পড়ছে বোমা। এ জে এম আমিনুল হক এতে বিচলিত হলেন না। খুঁজতে থাকলেন উপ-দলনেতাকে। তখন আনুমানিক সকাল সোয়া আটটা। এমন সময় এ জে এম আমিনুল হক শালবনের ভেতর থেকে দেখতে পেলেন তাকে। একটা গর্তের ভেতরে চিত হয়ে। তার গোটা শরীর কর্দমাক্ত। দেখামাত্র তিনি তাকে বললেন, তার কাছে আস্তে আস্তে আসার জন্য। কিন্তু তার কাছ থেকে কোনো সাড়া এল না। তিনি বুঝতে পারলেন উপ-দলনেতা আহত। নড়াচড়া করার শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। এ জে এম আমিনুল হক সহযোদ্ধাদের বললেন, উদ্ধার করে আনতে। কিন্তু তাদের মধ্যে ইতস্তত ভাব। কারণ, সেদিক দিয়ে গুলি ছুটে যাচ্ছে।

এ অবস্থায় তিনি একাই ক্রল করে রওনা হলেন উপ-দলনেতার উদ্দেশে। তখন তার অনুগামী হলেন কয়েকজন সহযোদ্ধা। কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা তখন ২৫/৩০ গজ দূরে। তারা আহত এক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে এগিয়ে আসছিল সেখানে। কাভারিংয়ে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করল। এই সুযোগে এ জে এম আমিনুল হক উদ্ধার করলেন উপ-দলনেতাকে। সেদিন বিয়োগান্তুক ঘটনার মধ্য দিয়ে ওই যুদ্ধ শেষ হয়। যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর প্রায় ২৬ জন শহীদ এবং অনেকে আহত হন। নকশী বিওপির যুদ্ধে এ জে এম আমিনুল হকের নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধারা সফল না হলেও পরবর্তী সময়ে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে বেশ সফলতা অর্জন করেন। অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি থেকে তার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা চা-বাগানে আক্রমণ করেন। ওই সব এলাকা শত্রুমুক্ত করে তারা অগ্রসর হন সিলেট অভিমুখে। [2]

পুরস্কার ও সম্মাননা

পাদটীকা

তথ্যসূত্র

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ১৬-০৫-২০১২
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ৪১। আইএসবিএন 9789849025375।

বহি:সংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.