এ কে এম জয়নুল আবেদীন খান

এ কে এম জয়নুল আবেদীন খান (জন্ম: অজানা) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[1]

এ কে এম জয়নুল আবেদীন খান
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

এ কে এম জয়নুল আবেদীন খানের জন্ম ঝালকাঠি জেলার সদর উপজেলার ধারাখানা গ্রামে। তার বাবার নাম ছোমেদ আলী খান এবং মায়ের নাম বেগম চান বুড়ু। তার স্ত্রীর নাম ফেরদৌসী আরা জয়নুল। তাদের এক ছেলে ও দুই মেয়ে। [2]

কর্মজীবন

১৯৭১ সালে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এ কে এম জয়নুল আবেদীন খান। পাকিস্তানের করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত অবস্থায় শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। ২১ এপ্রিল সেখান থেকে কৌশলে দেশে ফেরেন তিনি। কয়েক দিন পর ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। প্রশিক্ষণ শেষে ২ নম্বর সেক্টরে বৃহত্তর ঢাকার বিভিন্ন স্থানে গেরিলাযুদ্ধ করেন। তিনি ছিলেন প্লাটুন কমান্ডার।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৯৭১ সালের শেষ দিক। রাতে গোপন শিবির থেকে বেরিয়ে পড়লেন এ কে এম জয়নুল আবেদীন খানসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা। তারা বেশির ভাগ স্বল্প প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। জলপথে নৌকায় করে পৌঁছালেন লক্ষ্যস্থলে। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের পুবাইল-আড়িখোলা রেলস্টেশনের মাঝামাঝি এক স্থানে। সেখানে আছে ছোট একটি রেলসেতু। রেলপথের দুই পাশের বেশির ভাগ স্থানই ছিল জলমগ্ন। বেশ দূরে একটি গ্রাম। দু-তিন ঘণ্টা পরপর ট্রেন চলাচলের শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। মুক্তিযোদ্ধাদের অপারেশনের জন্য উপযুক্ত স্থান। পরিকল্পনা অনুসারে মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত শুরু করলেন তাদের কাজ। জয়নুল আবেদীনসহ কয়েকজন থাকলেন অপারেশনস্থলে। বাকিরা বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিলেন কাট অব পার্টি হিসেবে। বিস্ফোরকের প্রশিক্ষণ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধারা রেল স্লিপারের নিচের পাথর সরিয়ে বসালেন নিয়ন্ত্রিত মাইন। এক ঘণ্টার মধ্যেই সম্পন্ন হলো তাদের কাজ। মাইনের সঙ্গে তার লাগিয়ে তা টেনে নিলেন কাছাকাছি নিরাপদ স্থান পর্যন্ত। মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নিলেন সেখানে। এবার রেলগাড়ির জন্য অপেক্ষার পালা। মুক্তিযোদ্ধারা তার টেনে অবস্থান নিয়েছেন একটা পুকুরের পাড়ে। চারদিকে পানি। সেখানে পোকামাকড়ের দংশনে তারা সবাই অতিষ্ঠ। জয়নুল আবেদীন অসুস্থ হয়ে গেলেন। এদিকে রাত শেষে ভোর হয়। কিন্তু ট্রেনের আর দেখা নেই। মুক্তিযোদ্ধারা চিন্তিত হয়ে পড়লেন। কারণ যত বেলা হবে, তাদের সেখানে অবস্থান করা বিপজ্জনক হয়ে পড়বে। এমন সময় ট্রেনের হুইসেলের শব্দ। তখন আনুমানিক সকাল ছয়টা। কিছুক্ষণের মধ্যেই রেলগাড়ি দৃষ্টিগোচর হলো। মুক্তিযোদ্ধাদের বিস্ফোরক দল প্রস্তুতই ছিল। অপেক্ষা করছেন রেলগাড়ি নির্দিষ্ট স্থানে আসার জন্য। ইঞ্জিনের সামনে বালুভর্তি ওয়াগন। বালুভর্তি ওয়াগন চিহ্নিত স্থান অতিক্রম করামাত্র বিস্ফোরক দল মাইনের বিস্ফোরণ ঘটালেন। বিকট শব্দে গোটা এলাকা প্রকম্পিত। কালো ধোঁয়া ও জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডু ওপরের দিকে উঠতে থাকল। ইঞ্জিন ও পেছনের কয়েকটি বগি মাইনের বিস্ফোরণে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত। ইঞ্জিন ও দুটি বগি সম্পূর্ণ ধ্বংস। সেগুলো রেলপথ থেকে ছিটকে নিচে পড়ে। ইঞ্জিনের পরের বগিতে ছিল পাকিস্তানি সেনা। তারা বেশির ভাগ হতাহত। অপারেশন শেষে মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত স্থান ত্যাগ করে চলে গেলেন নিরাপদ স্থানে। [3]

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ১৬-১০-২০১১
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449।
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ১৭১। আইএসবিএন 9789843338884।

বহি:সংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.