এস এম সোলায়মান
শেখ মোহাম্মদ সোলায়মান বা এস এম সোলায়মান একজন বাংলাদেশী অভিনেতা। তিনি ১৯৫৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মঞ্চ নাটক পরিচালনা করতেন এবং তাতে সঙ্গীত পরিচালনাও করতেন। তাকে বাংলাদেশের থিয়েটারের জগতে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৪ সালে একুশে পদক লাভ করেন তিনি। [1]
এস এম সোলায়মান | |
---|---|
জন্ম | শেখ মোহাম্মদ সোলায়মান ২৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৩ |
মৃত্যু | ২২সেপ্টেম্বর, ২০০১ |
পেশা | অভিনয় |
পরিচিতির কারণ | অভিনেতা, মঞ্চ নাটক পরিচালক এবং সঙ্গীত পরিচালক। |
পুরস্কার | একুশে পদক |
প্রাথমিক জীবন
এস এম সোলায়মান খুব অল্প বয়সেই সঙ্গীতের প্রতি আকৃষ্ট হন। তিনি মঞ্চ নাটকের সাথে জড়িয়ে যান তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টি এস সিতে তখন রাত দিন নাটক নিয়ে পড়ে থাকতেন। সাথে থাকত হারমোনিয়াম। তিনি আসলে বুঝতে পেরেছিলেন নাটকে শুধু শিল্প বুঝলে হয় না, সাথে সাংগঠনিক দক্ষতাও লাগে।
কর্মজীবন
সোলায়মান প্রায় ৩০টির মতো মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেছেন। তার কিছু উল্লেখযোগ্য নাটক হলো ইলেকশন ক্যারিকেচার, ইঙ্গিত, গণি মিয়ার একদিন, এই দেশে এই বেশে, কোর্ট মার্শাল, গোলাপজান যা এই দেশের সামাজিক বৈষম্যকে প্রতিফলিত করেছে। তিনি বাংলাদেশের গ্রামীণ পটভূমিতে আলোকপাত করেছেন তার আমিনা সুন্দরী, সোনাই কন্যার পালা এবং আলাল দুলালের পালা নামক নাটকগুলোতে। সোলায়মান কিছু বছর আমেরিকাতে কাটিয়েছেন এবং তিনি সেখানে কিছু বাংলা মঞ্চ নাটকে অভিনয়ও করেছেন। তিনি তার একটি নাটককে নিউইয়র্কের অফ অফ ব্রডওয়েতে মঞ্চস্থ করতে সক্ষম হন।[2] গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে তিনি দুইবার নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার সব কাজ কর্ম তার সহযাত্রী অনেকেই মেনে নেয়নি। তারা এস এম সোলায়মানকে এড়িয়ে চলতেন। তাই তিনি নিজেকে অনেকটা অভিমান বশত গুটিয়ে নিয়েছিলেন শেষের দিকে। তিনি বাংলাদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক সংকটের সময় ছিলেন প্রথম কাতারের অংশগ্রহণকারী।[3]
পারিবারিক জীবন
১৯৮৩ সালে অভিনেত্রী রোকেয়া রফিক বেবীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের একমাত্র মেয়ে মঞ্চনাটক অভিনেত্রী আনিকা মাহিন একা।
সঙ্গীত
সোলায়মান তার বিশেষ সঙ্গীত বৈশিষ্ট্যকে নাটকে ব্যবহার করেন। তিনি অভূতপূর্ব কম্পোজিশন সৃষ্টি করেছিলেন, এমনকি প্যারোডিও।[2]
উৎসব
বাংলাদেশে প্রতিবছর সোলায়মান মেলা নামের একটি উৎসব পালিত হয় এস এম সোলায়মানকে স্মরণ করে। এতে ঢাকার প্রতিটি মঞ্চ নাটকের দল অংশ গ্রহণ করে।[4] এস এম সোলায়মানের স্মৃতি রক্ষার্থে থিয়েটার আর্ট ইউনিট এস এম সোলায়মান প্রণোদনা বৃত্তি প্রদান শুরু করে ২০০৬ সাল থেকে।[5] এই পুরষ্কারটি দেওয়া হয় তরুণ নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করার জন্য। এই পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তি নগদ ১০ হাজার টাকা ও একটি ক্রেস্ট লাভ করেন।[6] রামেন্দু মজুমদার তার সম্পর্কে বলেনঃ ‘এস এম সোলায়মান একজন অসাধারণ ব্যক্তি। নাটকে সংগীত প্রয়োগে তাঁর সাফল্য ছিল বিশাল। নাটকে সংগীত প্রয়োগ করার মধ্য দিয়ে তিনি বাংলার মঞ্চে একটি নতুন ধারা তৈরি করেছিলেন। তাঁর চলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের থিয়েটার অনেক কিছুই হারিয়েছে।’[7]
মৃত্যু
তিনি ২২সেপ্টেম্বর, ২০০১ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
সম্মাননা
- রংপুর পদাতিক সম্মাননা (১৯৮৮)
- বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ফ্লোরিডা সম্মাননা (১৯৯৪)
- বাংলাদেশ থিয়েটার অব আমেরিকা সম্মাননা (১৯৯৫)
- বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) পুরস্কার (১৯৯৬)
- বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব লস এঞ্জেলেস সম্মাননা (১৯৯৬)
- সুবচন নাট্য সংসদ সম্মাননা (১৯৯৬)
- থিয়েটার আর্ট ইউনিট (নাট্যদল) সম্মাননা (১৯৯৮)
- মহাকাল নাট্যসম্প্রদায় সম্মাননা (২০০০)
- আরণ্যক (নাট্যদল) এর 'দীপু স্মৃতি পদক' (মরণোত্তর, ২০০১)
- ঢাকা পদাতিক নাট্যদল এর 'আবুল কাসেম দুলাল স্মৃতিপদক' (মরণোত্তর, ২০০১)
- একুশে পদক (২০১৪)
তথ্যসূত্র
- দৈনিক প্রথম আলো
- মজুমদার, রামেন্দু (৪ অক্টোবর, ২০০৭)। "আমার প্রিয় নাট্যসঙ্গী", আনন্দ, দৈনিক প্রথম আলো (মাহফুজ আনাম), পৃষ্ঠা-২
- শাহরিয়ার, হাসান (২২ সেপ্টেম্বর ২০১০)। "খ্যাপা পাগলাকে নিয়ে প্যাঁচাল"। দৈনিক প্রথম আলো। ২০১৭-০২-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১১।
- রশীদ,মামুনুর (৪ অক্টোবর ২০০৭), "সোলায়মান মেলা: ক্ষ্যাপা তারুণ্যের সৃজনের গান", আনন্দ, দৈনিক প্রথম আলো, মাহফুজ আনাম: পৃষ্ঠা-১
- "এস এম সোলায়মান প্রণোদনা বৃত্তি"। দৈনিক ইত্তেফাক। অক্টোবর ৫, ২০১০। ৭ অক্টোবর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১১।
- "এস এম সোলায়মান প্রণোদনা বৃত্তি"। দৈনিক কালের কন্ঠ। ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১১।
- "এস এম সোলায়মান প্রণোদনা বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান"। দৈনিক প্রথম আলো। ১৪ অক্টোবর ২০১০। ২০১০-১০-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১১।