এলুল

এলুল (হিব্রু ভাষায়: אֱלוּל, ʾĔlūl) সাধারণ পঞ্জিকার শেষ এবং ইহুদি ধর্মপঞ্জির ষষ্ঠ মাস। এই মাসে ২৯টি দিন বিদ্যমান। এলুল সাধারণত গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জির আগস্ট-সেপ্টেম্বরে পড়ে।[1]

এলুল
প্রতি সকালে এলুল মাসের প্রথম তারিখ থেকে
রোস হাসানাহ পর্যন্ত বাদ্যযন্ত্র বাজানো হয় (সাব্বাথ বাদে)।
স্থানীয় নামאֱלוּל  (হিব্রু)
বর্ষপঞ্জিহিব্রু বর্ষপঞ্জি
মাসের ক্রম
দিনের সংখ্যা২৯
ঋতুগ্রীষ্ম (উত্তর গোলার্ধে)
গ্রেগরীয় সমতুল্যআগস্ট–সেপ্টেম্বর

ব্যুৎপত্তি

এলুল মাসের বর্তমান নাম হিব্রু বর্ষপঞ্জির অন্যান্য মাসের মত ব্যাবিলনীয় বন্দিদশার সময়ে আক্কাদীয় ভাষার শব্দ থেকে নেওয়া হয়েছে যার অর্থ "ফসল"। একই রকম নাম পাওয়া যায় আক্কাদীয় বর্ষপঞ্জির "আরা উলুলু" মাস থেকে "এলুলু" নামটি। আরা উলুলুর অর্থ "ফসলের মাস"। তুর্কি ভাষায় এইলুল (Eylül) নামটি দ্বারা সেপ্টেম্বর মাসকে বুঝায় যা এসেছে আরবি: أيلول আয়লুল (ʾAylūl) থেকে যা ইরাকলেভান্তে ব্যবহৃত হয় যা এসেছে সিরিয়াক শব্দ ܐܝܼܠܘܼܠ ইলুল (ʾĪlūl) থেকে।

ঐতিহ্য

ইহুদি ঐতিহ্যে এলুল মাস রোস হাসানাহইয়োম কিপ্পুর পবিত্র দিবসের প্রস্তুতি স্বরূপ প্রায়শ্চিত্তের সময়। "এলুল" শব্দটি আরামিক শব্দ "খোঁজ" শব্দের উৎসের সাথে সাদৃশ্যমান। ১৪তম শতাব্দী ইহুদি সূত্রাদি অনুসারে "এলুল" এর তাৎপর্য এই আখ্যার সংক্ষিপ্ত রূপ থেকে বোঝা সম্ভব "আনি ল'দদি ভা'দদি লি" – "আমি আমার প্রিয়তমার ও আমার প্রিয়তমা আমার"।[2] এলুলকে নিজের হৃদয় খোঁজার সময় হিসেবে দেখা হয় এবং রোস হাসানাহ, ইয়োম কিপ্পুর ও শেষ বিচারের দিনের প্রস্তুতি স্বরূপ ঈশ্বরের কাছাকাছি আকর্ষণ করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হয়।[3] রাব্বাই লিয়াদির শিনিউর জালমান এলুল মাসটিকে রাজার প্রাসাদে ফেরার পূর্বে মাঠে তার কৃষকদের সাথে দেখা করার সাথে তুলনা করেন।

এলুল মাসে বহুসংখ্যক বিশেষ ধর্মানুষ্ঠান উচ্চ পবিত্র দিনগুলোর দিকে ধাবিত করে। রোস হদেস থেকে (এলুল মাসের প্রথম দিবস) থেকে রোস হাসানাহ পর্যন্ত (সাব্বাথ বাদে) প্রতি সকালে শোফার বাজানো ইহুদি ধর্মের ঐতিহ্য। এটা করা হয় মানুষের আত্মাকে জাগানো এবং পবিত্র দিনগুলোকে মানুষকে আত্মার মধ্যে খোঁজার জন্য অনুপ্রাণিত করার জন্য। এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এলুল মাস ক্ষমা চাওয়া ও গ্রহণের কঠিন প্রক্রিয়ার সময় হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।[3] এলুলের রোস হদেস থেকে তিশ্রেই মাসের রোসহানাহ রাব্বাহ এর মধ্য দিয়ে শুক্কতের দিন পর্যন্ত গীতসংহিতা ২৭: পাঠ করা ইহুদিদের ঐতিহ্যের আরেকটি অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।

শোফার বাজানো ছাড়া এলুল মাসে আরো অনেক আচার অনুষ্ঠান পালন করা হয় যেমন রোস হাসানাহের আগে রবিবারের সূর্যাস্তের পূর্বে প্রতি সকালে অথবা যদি রবিবার থেকে পর্যাপ্ত ৪ দিন না পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে এক সপ্তাহ আগে রবিবার থেকে (আশকেনজি নিয়মে) বা পুরো এলুল মাস জুড়ে (শেফার্দি নিয়মে) শেলিখত নামক বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। আশকেনজি ইহুদিরা শেলিখত শনিবার মধ্য সৌর রাত্রিতে ও শেলিখতের সকালের আলোতে শেলিখত প্রার্থনা করেন।

অনেক ইহুদি প্রিয়জনের কবর অতীতের স্মৃতি স্মরণ ও সম্মান প্রদর্শন করতে এই মাসটিতে দর্শন করে যারা ভবিষ্যতে জীবনকে পূর্ণভাবে যাপন করতে তাদের অনুপ্রাণিত করে।

ইহুদিদের আরেকটি বিশেষ সামাজিক ঐতিহ্য রয়েছে তা হচ্ছে এলুল মাসে চিঠির প্রাপকের একটি উত্তম বছরের ইচ্ছাজ্ঞাপনে চিঠির লেখাগুলো হিব্রু বর্ণমালার সমস্ত অক্ষর দিয়ে শুরু ও শেষ করা। তাদের আদর্শ আশীর্বাদ হলো "ক'তিভা ভা'হাতিমা তভা" ("বিচারের একটি ভালো লেখা ও সীলমোহর") যার অর্থ ব্যক্তির নামটি যেন জীবনের পুস্তকে ভালো বছরের জন্য লেখা হয়। ইহুদি ঐহিত্য অনুসারে প্রত্যেক মানুষের আগামী বছর কেমন হবে তা তাদের আগের বছরের কর্ম এবং ভুল ও অপরাধ শুধরানোর ইচ্ছা ও প্রচেষ্টার ভিত্তিতে রোস হাসানাহের দিবসে জীবনের পুস্তকে লেখা হয়ে থাকে এবং ইয়োম কিপ্পুরের দিবসে সেই লেখাটি কার্যকর করা হয়ে থাকে।

ছুটির দিন ও উদযাপিত দিবস সমূহ

  • ১ এলুল (১৩১৩ খ্রিস্টপূর্ব) – মোশি সিনাই পর্বতে তৃতীয়বার ৪০ দিনের জন্য অবস্থান করেন।
  • ১ এলুল (৫২০ খ্রিস্টপূর্ব) – নবী হাজ্ঞাই দ্বিতীয় মন্দির পুননির্মাণ অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেন।
  • ২ এলুল (১৫৫৫) – শুলখান আরুখ প্রকাশিত হয়।
  • ৩ এলুল (১৯৩৫) – আব্রাহাম আইজ্যাক কুকের মৃত্যু।
  • ৫ এলুল – নবী যিহিষ্কেল প্রথম মন্দির ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ার ভবিষ্যতবাণী প্রাপ্ত হন।
  • ১০ এলুল (২১০৫ খ্রিস্টপূর্ব) – নোহ তার নৌকা থেকে দাঁড়কাক ছেড়ে দেন
  • ১২ এলুল (১২৯৪) – নাখামানিদের জন্ম।
  • ১২ এলুল (১৯৪৫) – রাব্বাই শ্লোমো জেভ উইগেনহাফট জনসম্মুখে শেচিতাহ পালন করে যা জার্মান নাৎসিদের দ্বারা ১৯৩৩ সালে নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো।[4][5]
  • ১৩ এলুল (১৯০৯) – ইয়োসেফ হায়িমের মৃত্যু।
  • ১৭ এলুল (২১০৫ খ্রিস্টপূর্ব) – নোহ তার নৌকা থেকে কবুতর ছেড়ে দেন।
  • ১৮ এলুল (১৬০৯) – জুদাহ লোইউ বেন বেজালেলের মৃত্যু।
  • ১৮ এলুল (১৬৯৮) – বা'আল শেম তোভের জন্ম।
  • ১৮ এলুল (১৭৪৫) – রাব্বাই লিয়াদি'র শিউর জালমানের জন্ম।
  • ২৩ এলুল (২১০৫ খ্রিস্টপূর্ব) – কবুতর জলপাই পাতা সমেত নোহের নিকট ফিরে আসে।
  • ২৩ এলুল (১৯৪২) – আলেকজান্ডারের গ্রান্ড রাব্বাই ইশহাক মিনাখিম ডেনজিগারের ট্রেব্লিনকায় মৃত্যু।
  • ২৪ এলুল (১৯৩৩) – ইজরায়েল মেইর কাগানের মৃত্যু।
  • ২৫ এলুল (৩৭৬১ খ্রিস্টপূর্ব) – আদিপুস্তক অনুসারে এটি পৃথিবী সৃষ্টির প্রথম দিন।
  • ২৫ এলুল (৩৩৫ খ্রিস্টপূর্ব) – জেরুজালেমের প্রাচীর পুননির্মাণ করা হয়।
  • ২৫ এলুল (খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দী) – সাইমন বার ইয়োখাই এর পুত্র ইলিয়াজার বেন সাইমন এর মৃত্যু।
  • ২৭ এলুল (১৮৫৫) – শোলম রকেয়াচের মৃত্যু।
  • ২৮ এলুল (১৯৮৩) – য়োয়েল হালপার্নের মৃত্যু।
  • ২৯ এলুল (১৭৮৯) – মিনাখিম মেন্ডেল শিনিয়ার্সনের জন্ম।

অনলাইন তথ্যাদি

রাব্বাই বিনয়োমিন এডলার এলুল প্রসঙ্গের উপরে শিউরিম প্রকাশ করেন এই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে :

তথ্যসূত্র

  1. "Rosh Chodesh Elul / ראש חודש אלול"। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  2. "Shir Hashirim - Song of Songs - Chapter 6"Chabad.org। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  3. Suissa, David (২১ আগস্ট ২০১৩)। "Love in the time of Elul"Jewish Journal। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  4. Hapardes Rabbinical Monthly Journal Volume 19 Issue 7 October 1945 Page 7 (retrieved July 19, 2020)
  5. "Hamodia, Inyan Magazine (Vol. XV, Issue 706), April 25 2012 Kinyan L'Shabbos Page 16"।

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.