এম এ মতিন (বীর প্রতীক)

এম এ মতিন (জন্ম: ৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৩) হলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ও মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।[1]

মেজর জেনারেল (অব.)

এম এ মতিন

বীর প্রতীক
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা
কাজের মেয়াদ
২০০৭  ২০০৮
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্মমোহাম্মদ আবদুল মতিন
৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৩
কাজলা, তাড়াইল, কিশোরগঞ্জ, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত
(বর্তমান বাংলাদেশ)
দাম্পত্য সঙ্গীশওকত আরা বেগম
সন্তানএক মেয়ে
পিতামাতাআবদুল গনি
রওশন আরা বেগম
প্রাক্তন শিক্ষার্থীঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
পুরস্কারবীর প্রতীক
সামরিক পরিষেবা
আনুগত্য বাংলাদেশ
শাখাবাংলাদেশ সেনাবাহিনী
পাকিস্তান সেনাবাহিনী
কাজের মেয়াদ১৯৬৮-১৯৯৮
পদ মেজর জেনারেল

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

মোহাম্মদ আবদুল মতিন ৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৩ সালে কিশোরগঞ্জের তাড়াইলের কাজলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আবদুল গনি এবং মায়ের নাম রওশন আরা বেগম। তার স্ত্রীর নাম শওকত আরা বেগম। তাদের এক মেয়ে।

তিনি ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন।

কর্মজীবন

এম এ মতিন ৫ জুন ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সেনা বাহিনীতে কমিশন প্রাপ্ত হন। তিনি ১৯৭১ সালের মার্চে ছুটিতে পৈতৃক বাড়িতে ছিলেন। ক্যাপ্টেন ও মেজর পদ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত থাকাকালীন তিনি ২৯ মার্চ ১৯৭১ সালে থেকে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ৩ নং সেক্টরে বিভিন্ন পর্যায়ের সাব-সেক্টর, কোম্পানী কমান্ডার ও ব্যাটলিয়ন কমান্ডার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।

মুক্তিযুদ্ধ আনুষ্ঠানিক রূপ পেলে ৩ নম্বর সেক্টরের সিমনা সাবসেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে ‘এস’ ফোর্সের অধীন ১১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ব্রাভো (বি) কোম্পানির অধিনায়ক নিযুক্ত হন। মোহাম্মদ আবদুল মতিন স্বাধীনতার পর পর্যায়ক্রমে মেজর জেনারেল পদে উন্নীত হয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেন। ২০০৮-০৯ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[2]

বাংলাদেশ সেনা বাহিনীতে সুদীর্ঘ চাকুরি জীবনে তিনি নানাবিধ গুরুত্বপূর্ণ কমান্ড ও ষ্টাফ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ব্রিগেডিয়ার পদ মর্যাদাং সামরিক প্রশিক্ষণ পরিচালক ও স্কুল অব ইনফেনন্টি এন্ড ট্যাকটিক্স- এ কমান্ড্যান্ট এবং মেজর জেনারেল পদ মর্যাদায় সেনা সদরে এ্যাডজুটেন্ট জেনারেল ছিলেন। তাছাড়া তিনি তিনটি পদাতিক ডিভিশনের জিওসি এবং ডিজি, ডিজিএফআই হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯৮ সালের সেনাবাহিনী থেকৈ অবসর গ্রহণ করেন। ২০০৮ থেকে ২০০৯ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৯৭১ সালের ২৮ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর থেকে সিলেটমুখী সড়কের ১৮ মাইল পরই মাধবপুর। মুক্তিযুদ্ধকালে এখানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর এক যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর একটি দলের নেতৃত্ব দেন মোহাম্মদ আবদুল মতিন। মাধবপুর এলাকার দুই পাশে তিতাস নদী ও সোনাই নদী। এর পূর্ব পাশে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পতন হলে কে এম সফিউল্লাহর নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধারা সমবেত হন মাধবপুরে। তার দলে ছিলেন আবদুল মতিন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া দখলের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনী ২১ এপ্রিল শাহবাজপুরের দিকে অগ্রসর হয়। সহযোদ্ধাদের নিয়ে সেখানে প্রতিরক্ষা অবস্থানে ছিলেন মোহাম্মদ আবদুল মতিন। তিনি সাহসিকতার সঙ্গে সহযোদ্ধাদের নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অগ্রযাত্রা প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। রক্তক্ষয়ী এক যুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী শাহবাজপুর দখল করলেও মোহাম্মদ আবদুল মতিনের নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানিদের যথেষ্ট দেরি করিয়ে দিতে সক্ষম হন। আবদুল মতিন যখন বুঝতে পারেন যে তাঁদের পক্ষে আর প্রতিরক্ষা অবস্থান ধরে রাখা সম্ভব নয়, তখন তিনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে পশ্চাদপসরণ করেন। ২৮ এপ্রিল সকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আবদুল মতিনের প্রতিরক্ষা অবস্থানে ব্যাপক গোলাবর্ষণ শুরু করে। প্রাথমিক আক্রমণের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অগ্রগামী দল দুপুর ১২টার মধ্যে মাধবপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের সব প্রতিরক্ষার সামনে পৌঁছে যায়। প্রথমে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রায় এক ব্যাটালিয়ন সেনা তিন দিক থেকে আক্রমণ চালায়। বাঁ পাশের দল মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রবর্তী দক্ষিণ ভাগের অবস্থানে আক্রমণ করে এবং দ্বিতীয় দল মুক্তিবাহিনীর দুই প্রতিরক্ষার মাঝ দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে। তৃতীয় দল মুক্তিবাহিনীর অপর প্রতিরক্ষায় আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধাদের ওই দলের নেতৃত্বে ছিলেন আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিম (বীর বিক্রম)। পরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আরেকটি ব্যাটালিয়ন এসে যুদ্ধে যোগ দেয়। বিকেল চারটা পর্যন্ত দুই পক্ষে তুমুল যুদ্ধ হয়। সংকটময় এমন মুহূর্তে মোহাম্মদ আবদুল মতিন বিচলিত হননি। সহযোদ্ধাদের নিয়ে পাকিস্তানি আক্রমণের যথোপযুক্ত জবাব দেন। [3]

গ্রন্থ

এম এ মতিনের উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে: -

  • বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম[4]
  • আমার দেখা ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান ‘৯৬[5]
  • আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ধারাবাহিকতা এবং প্রাসঙ্গিক কিছু কথা[6]

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ১১-১১-২০১২
  2. ডয়চে ভেলে
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ৩০৫। আইএসবিএন 9789849025375।
  4. মেজর জেনারেল এম এ মতিন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামবাংলাদেশ: দি ইউনিভার্সেল একাডেমি। পৃষ্ঠা ৬৪৮। আইএসবিএন 9789893319628।
  5. মেজর জেনারেল (অব.) এম. এ. মতিন। আমার দেখা ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান ‘৯৬বাংলাদেশ: জ্ঞান বিতরণী। পৃষ্ঠা ৪৬৪। আইএসবিএন 9848298029।
  6. মেজর জেনারেল (অব.) এম. এ. মতিন। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ধারাবাহিকতা এবং প্রাসঙ্গিক কিছু কথা। আহমদ পাবলিশিং হাউজ।

পাদটীকা

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.