একনাথ সোলকার
একনাথ ধান্দু এক্কি সোলকার (উচ্চারণ ; মারাঠি: एकनाथ सोलकर; জন্ম: ১৮ মার্চ, ১৯৪৮ - ২৬ জুন, ২০০৫) বোম্বে এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ভারতীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন।[1] ভারত ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৭ সময়কালে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
ব্যক্তিগত তথ্য | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | একনাথ ধান্দু সোলকার | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম | বোম্বে, বোম্বে রাজ্য, ভারত | ১৮ মার্চ ১৯৪৮||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মৃত্যু | ২৬ জুন ২০০৫ ৫৭) মুম্বই, মহারাষ্ট্র, ভারত | (বয়স||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ডাকনাম | এক্কি | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যাটিংয়ের ধরন | বামহাতি | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বোলিংয়ের ধরন | বামহাতি সিমার, বামহাতি স্পিনার | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ভূমিকা | ব্যাটসম্যান | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
সম্পর্ক | অনন্ত সোলকার (ভ্রাতা) | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আন্তর্জাতিক তথ্য | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় দল |
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
টেস্ট অভিষেক (ক্যাপ ১২৩) | ১৫ অক্টোবর ১৯৬৯ বনাম নিউজিল্যান্ড | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শেষ টেস্ট | ১ জানুয়ারি ১৯৭৭ বনাম ইংল্যান্ড | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ওডিআই অভিষেক (ক্যাপ ৮) | ১৩ জুলাই ১৯৭৪ বনাম ইংল্যান্ড | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শেষ ওডিআই | ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৬ বনাম নিউজিল্যান্ড | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২৬ জুন ২০১৯ |
ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে মুম্বই ও ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সাসেক্স দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলে তিনি মূলতঃ বামহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, বামহাতে সিম বোলিং কিংবা স্পিন বোলিং করতেন ‘এক্কি’ ডাকনামে পরিচিত একনাথ সোলকার। শর্ট-লেগ অঞ্চলে ফিল্ডিং করতেন তিনি।
শৈশবকাল
একটি কক্ষে পিতা-মাতা ও পাঁচ ভাই-বোন বাস করতেন। জালবদ্ধ ঘেরা অনুশীলনীতে বোম্বের খেলোয়াড়দের মোহিত করেছিলেন। একনাথ সোলকারের পিতা মুম্বইয়ের হিন্দু জিমখানার প্রধান মাঠ কর্মকর্তা ছিলেন। সোলকার ঐ মাঠে স্কোরবোর্ডের দায়িত্বে থাকতেন।[1]
বিদ্যালয়ে থাকাকালেই ক্রিকেটের প্রতি তার সুগভীর অনুরাগ লক্ষ্য করা যায়। ১৯৬৪ সালে বিদ্যালয় ক্রিকেটার হিসেবে শ্রীলঙ্কা গমন করেন। এছাড়াও ১৯৬৫-৬৬ মৌসুমে লন্ডন স্কুলসের বিপক্ষে ইন্ডিয়ান স্কুলসের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।[1] ঐ দলটিতে ভবিষ্যতে ভারতের টেস্ট ক্রিকেটার সুনীল গাভাস্কার ও মহিন্দর অমরনাথের অংশগ্রহণ ছিল।[1] ১৯৬৯ ও ১৯৭০ সালে সাসেক্সের দ্বিতীয় একাদশে খেলেন। প্রথমে একাদশে খেলার যোগ্যতা লাভ করলেও একটিমাত্র খেলায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি।[1]
প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট
১৯৬৫-৬৬ মৌসুম থেকে ১৯৮০-৮১ মৌসুম পর্যন্ত একনাথ সোলকারের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সাসেক্সের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি।
১৯৬৬-৬৭ মৌসুমে রঞ্জি ট্রফিতে ৬/৩৮ পান। ১৯৬৯ সালে সাসেক্সের সদস্যরূপে একটি খেলায় অংশ নেন। এরপর তিনি ভারতে চলে আসেন। আব্দুল ইসমাইলের সাথে মুম্বই দলে বোলিং উদ্বোধনে নামতেন। ১৯৭৩ সালের রঞ্জি প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত খেলায় অফ-ব্রেকে দুর্দান্ত সফলতা পান। ভেঙ্কট, ভি. ভি. কুমার ও শিবলকারের স্পিন বোলিংয়ে খেলায় প্রাধান্য বিস্তার করলেও ৫ উইকেট নিয়ে দলকে নাটকীয় জয় এনে দেন। ১৬ বছরব্যাপী প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ২৯.২৭ গড়ে ৬৮৫১ রানসহ ৩০.০১ গড়ে ২৭৬ উইকেট দখল করেন। এছাড়াও ১৯০ ক্যাচ মুঠোয় পুড়েন তিনি।[1]
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট
সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ২৭ টেস্ট ও ৭টি ওডিআইয়ে অংশগ্রহণ করেছিলেন একনাথ সোলকার। ১৫ অক্টোবর, ১৯৬৯ তারিখে হায়দ্রাবাদে সফরকারী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ১ জানুয়ারি, ১৯৭৭ তারিখে কলকাতায় সফরকারী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।
১৯৬৯-৭০ মৌসুমে হায়দ্রাবাদে সফরকারী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। স্বাধীন ভারতে জন্মগ্রহণকারী প্রথম টেস্ট ক্রিকেটার ছিলেন। একই মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সফলতার সাথে বেশ ভালো খেলেন।
১৯৭১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গমন করেন। ১৯৭০-৭১ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ভারতের বিজয়ে অন্যতম ভূমিকা রাখেন। পোর্ট অব স্পেনে ছয়টি ক্যাচসহ গুরুত্বপূর্ণ ৫৫ রানের ইনিংস খেলেন। তন্মধ্যে, টেস্টে ছয় ক্যাচ নিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়েন। ১৯৭০-৭১ মৌসুমের সফলতম ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে ভারতের সংগ্রহ ৭৫/৫ থাকাকালে সোলকার ৬১ রান তুলে দলকে সহায়তার হাত প্রশস্ত করেন। এ পর্যায়ে দিলীপ সরদেশাইয়ের সাথে ২৩৭ রান যুক্ত করেন। তিন টেস্ট পর দলীয় সংগ্রহ ৭০/৬ থাকাকালীন একই জুটি ১৮৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। পরবর্তী সিরিজেই লর্ডসে ৬৭ রান তুলে দলকে বিজয়ী করেন।
ইংল্যান্ড গমন, ১৯৭১
১৯৭১ সালে ভারত দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। সৈয়দ আবিদ আলীর সাথে বোলিং উদ্বোধনে নামেন তিনি। সিরিজের প্রথমে টেস্টে ৬৭ রান তুলেন। এ পর্যায়ে গুণ্ডাপ্পা বিশ্বনাথের সাথে ৯২ রানের জুটি গড়েন। ফলশ্রুতিতে প্রথম ইনিংসে ভারত দল এগিয়ে যায়।
ওভালের তৃতীয় টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৩/২৮ পান। ৪৪ রানের পাশাপাশি দুই ক্যাচ তালুবন্দী করে ভারতের বিজয়ে সবিশেষ ভূমিকা রাখেন। ক্যাচ তালুবন্দী করার সক্ষমতার কারণে ওভালে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারত দলকে প্রথমবারের মতো টেস্টে জয় এনে দিয়েছিলেন।[1] ৪৪ রান ও তিন উইকেট, তিনটি ক্যাচ নিয়েছিলেন তিনি। ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংস তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে পড়লেও অ্যালান নট ৯০ রান তুলেছিলেন।
১৯৭২-৭৩ মৌসুমে ইংল্যান্ড দল ভারত গমন করে। দিল্লির প্রথমে টেস্টে ৭৫ রান করেন। ৫ টেস্টে নিয়ে গড়া ঐ সিরিজে ১২ ক্যাচ নেন। তবে, ১৯৭৪ সালের ফিরতি সফরে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তেমন ভালো খেলা উপহার দিতে পারেননি। তবে, ভারত বনাম ইয়র্কশায়ার ও ভারত বনাম এমসিসি’র মধ্যকার প্রস্তুতিমূলক খেলায় তিন ইনিংসে উপর্যুপরি তিনবার জিওফ্রে বয়কটের ক্যাচ নিয়েছিলেন। ১৯৭২-৭৩ মৌসুমে নিজ দেশে সফরকারী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম তিন টেস্টে ১২ ব্যাটসম্যানকে তিনি কট আউটে বিদেয় করেন। সিড গ্রিগরি’র দীর্ঘদিনের বিশ্বরেকর্ড স্পর্শ করতে তার আর মাত্র তিনটির দরকার ছিল। চতুর্থ টেস্টে গ্রাহাম রূপকে আউট করার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়। দুই বছর পর মুম্বই টেস্টে লয়েডকে ২৪২ রানে তালুবন্দী করেন।
১৯৭৫-৭৬ মৌসুমে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রায় একাকীই ফিল্ডিং সামলিয়েছিলেন। তবে, ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি তেমন নির্ভরযোগ্য ছিলেন না। ১৯৭৫ সালে মুম্বইয়ে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন একনাথ সোলকার। প্রাণান্তকর চেষ্টায় ব্যাঙ্গালোর টেস্টে ক্লাইভ লয়েডের ১৬৩ রানের ঝড়ো ইনিংস থামিয়ে দেন তিনি। ১৯৭৫ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ক্রিকেট বিশ্বকাপের উদ্বোধনী আসরে ভারতের পক্ষে খেলেন।
খেলার ধরন
মি. ডিপেন্ডেবল উপাধিপ্রাপ্ত হন। স্বীয় নামের পার্শ্বে টেস্ট সেঞ্চুরির তকমা লাগিয়েছেন একনাথ সোলকার। যে-কোন অবস্থানে ব্যাটিং করতেন। কখনো ফাস্ট বোলিং, আবার কখনোবা স্লো বোলিং করতেন তিনি। ফলশ্রুতিতে ‘গরীবের সোবার্স’ নামে আখ্যায়িত হতেন।[1] টেস্ট আঙ্গিনায় চকচকে থাকা নতুন বল হাতে নিয়ে ৪ থেকে ৫ ওভার বোলিং করতেন। এরপর স্পিনারদের হাতে বল স্থানান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেন।
মাত্র ২৭ খেলায় ৫৩ ক্যাচ নিয়েছেন তিনি। কমপক্ষে ২০ বা ততোধিক টেস্টে অংশগ্রহণকারী উইকেট-রক্ষকবিহীন যে-কোন খেলোয়াড়ের সেরা অনুপাতে শীর্ষে অবস্থান করছেন একনাথ সোলকার। পরিসংখ্যানগতভাবে টেস্ট ক্রিকেটে ফিল্ডার হিসেবে অধিক সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন। টেস্ট প্রতি সোলকারের ক্যাচ তালুবন্দী করার হার ১.৯৬। তার কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছেন বব সিম্পসন। ৬২ টেস্টে ১১০ ক্যাচ নিয়ে সিম্পসনের হার ১.৭৭।
খেলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিপজ্জ্বনক অবস্থানে থেকে ফিল্ডিং করতেন। হেলমেট কিংবা নিম্নাঙ্গের কোন রক্ষাকবচ পরিধান করতেন না। উইকেটের কাছাকাছি এলাকায় ফিল্ডিং করে প্রভূতঃ সুনাম কুড়িয়েছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন যে, আমি কেবলমাত্র বলই দেখতে পাই।[1][1] ফরোয়ার্ড শর্ট লেগ অঞ্চলে তিনি দণ্ডায়মান থাকতেন।
মূল্যায়ন
ক্রিকেটের অন্যতম সেরা উক্তি করেছিলেন তিনি। জিওফ্রে বয়কটকে উল্লেখ করে তিনি মন্তব্য করেন যে, আমি আপনাকে আউট করবো।[2]
তার সময়কালে ভারতের অন্যতম সেরা স্পিনার বিষেন সিং বেদী মন্তব্য করেন যে, কাছাকাছি এলাকায় তার ক্যাচ নেয়ার প্রবণতা প্রকৃতই দর্শনীয় বিষয় ছিল। আমরা তাকে ছাড়া সফলতা পেতে পারতাম না। ১৯৭১-৭২ মৌসুমে ভারতের মাটিতে তার প্রতিপক্ষীয় খেলোয়াড় ও সাসেক্সের দলীয় সঙ্গী টনি গ্রেগ একবার মন্তব্য করেছিলেন যে, আমার দেখা ফরোয়ার্ড শর্ট লেগ অঞ্চলের সেরা ফিল্ডার তিনি।[3]
অবসর
২৮ বছর বয়সে নিজস্ব শেষ ও ২৭তম টেস্টে অংশ নেন। সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ২৭ টেস্টে অংশ নিয়ে ৫৩ ক্যাচ লাভের পাশাপাশি ২৫.৪২ গড়ে ১০৬৮ রান তুলেন। এছাড়াও, ৫৯.৪৪ গড়ে ১৮ উইকেট লাভ করেছেন তিনি।
তিনি বহুমূত্র রোগে ভুগছিলেন। ২৬ জুন, ২০০৫ তারিখে ৫৭ বছর বয়সে বোম্বেতে হৃদযন্ত্রক্রীয়ায় আক্রান্ত হয়ে একনাথ সোলকারের দেহাবসান ঘটে।[1] একনাথের কনিষ্ঠ ভ্রাতা অনন্ত সোলকার রঞ্জি ট্রফির খেলায় মহারাষ্ট্রের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়েছিলেন।
তথ্যসূত্র
- "Obituary: Eknath Solkar"। The Guardian। সংগ্রহের তারিখ ৭ জানুয়ারি ২০১৪।
- "Ghost-Spoken – Cricinfo"।
- http://www.espncricinfo.com/magazine/content/story/584181.html
আরও দেখুন
বহিঃসংযোগ
- ইএসপিএনক্রিকইনফোতে একনাথ সোলকার (ইংরেজি)
- ক্রিকেটআর্কাইভে একনাথ সোলকার (সদস্যতা প্রয়োজনীয়) (ইংরেজি)