উয়েফা ইউরোপা কনফারেন্স লিগ
উয়েফা ইউরোপা কনফারেন্স লিগ হচ্ছে ইউরোপীয় ফুটবল ক্লাবগুলোর মধ্যে উয়েফা কর্তৃক ২০২১ সালে শুরু হওয়া একটি পরিকল্পিত বার্ষিক ফুটবল ক্লাব প্রতিযোগিতা।[1] ক্লাবগুলো তাদের ঘরোয়া লিগ এবং কাপ প্রতিযোগিতার ফলাফলের ভিত্তিতে এই প্রতিযোগিতায় খেলার জন্য যোগ্যতা অর্জন করে। উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ এবং উয়েফা ইউরোপা লিগের পরে এটি হচ্ছে ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের তৃতীয় স্তরের লিগ।
প্রতিষ্ঠিত | ২০২১ |
---|---|
অঞ্চল | ইউরোপ (উয়েফা) |
দলের সংখ্যা | ৩২ (গ্রুপ পর্ব)[lower-alpha 1] ১৮৪ (সর্বমোট) |
উন্নীত | উয়েফা ইউরোপা লিগ |
সম্পর্কিত প্রতিযোগিতা | উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ (প্রথম স্তর) উয়েফা ইউরোপা লিগ (দ্বিতীয় স্তর) |
বর্তমান চ্যাম্পিয়ন | রোমা (১ম শিরোপা) |
সবচেয়ে সফল দল | রোমা (১টি শিরোপা) |
টেলিভিশন সম্প্রচারক | সম্প্রচারকের তালিকা |
ওয়েবসাইট | uefa.com |
২০২২–২৩ উয়েফা ইউরোপা কনফারেন্স লিগ |
এই প্রতিযোগিতাটি ২০২১–২২ মৌসুম থেকে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে এবং এটি বিদ্যমান উয়েফা ইউরোপা লিগ প্রতিযোগিতার নিচের স্তর লিগ হিসেবে কাজ করে, যার গ্রুপ পর্বে ৬৪টি দলের পরিবর্তে ৩২টি দল অংশগ্রহণ করে। এই প্রতিযোগিতায় মূলত নিম্ন স্তরের উয়েফা সদস্য দেশগুলোর দলগুলো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।[1] এই প্রতিযোগিতার মূল পর্বে কোনও দলই সরাসরি উত্তীর্ণ হতে পারে না, ইউরোপা লিগের প্লে-অফে পরাজিত ১০টি দলের পাশাপাশি বাকি দলগুলো ইউরোপা কনফারেন্স লিগের বাছাইপর্ব হতে উত্তীর্ণ হয়।
এই প্রতিযোগিতার বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে ইতালীয় ক্লাব রোমা, যারা ২০২২ সালের ২৫শে মে তারিখে আয়োজিত ফাইনালে ওলন্দাজ ক্লাব ফেইয়ানর্টকে ১–০ গোলে হারিয়ে উয়েফা ইউরোপা কনফারেন্স লিগের ইতিহাসে প্রথম দল হিসেবে শিরোপা ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছিল।[2]
ইতিহাস
উয়েফা ২০১৫ সাল থেকে ইউরোপীয় ফুটবলের জন্য তৃতীয় স্তরের প্রতিযোগিতা আয়োজন করার কথা বলে আসছিল। নিম্ন স্তরের এই প্রতিযোগিতাটি উয়েফার নিম্ন স্তরের সদস্য দেশগুলোর ক্লাবগুলোকে (যারা চ্যাম্পিয়নস লিগ এবং ইউরোপা লিগের একটি নির্দিষ্ট পর্যায় হতে বাদ পড়েছে) উয়েফা প্রতিযোগিতায় সাফল্য অর্জন করার আরেকটি সুযোগ হিসেবে কাজ করতে পারে বলে বিশ্বাস করা হয়।[3] ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে, এক ঘোষণায় এই প্রতিযোগিতা আয়োজনের কথা আরও তীব্রভাবে জানানো হয়েছিল, একটি সংবাদ সূত্র দাবি করেছিল যে এই প্রতিযোগিতাটি চালু হওয়ার জন্য ইতিমধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে এবং এর ফলে ৪৮ দলের ইউরোপা লিগের গ্রুপ পর্বটি দুটি ভাগে বিভক্ত হবে, নিম্নার্ধটি এই নতুন প্রতিযোগিতার মূল গঠন করবে।[4]
২০১৮ সালের ২রা ডিসেম্বর তারিখে, উয়েফা এক ঘোষণায় জানায় যে, এই প্রতিযোগিতাটি অস্থায়ীভাবে "ইউরোপা লিগ ২" অথবা শুধুমাত্র "ইউইএল ২" নামক পরিচিতি লাভ করবে। এই প্রতিযোগিতা উয়েফা কর্তৃক প্রদত্ত ২০২১–২৪ তিন বছরের প্রতিযোগিতা চক্রের অংশ হিসেবে উদ্বোধন করা হবে। উয়েফা আরও জানায় যে, নতুন এই প্রতিযোগিতাটি "সদস্য দেশের আরও বেশি ক্লাবের জন্য আরও বেশি ম্যাচ"-এর আয়োজন করতে সহায়তা করবে।[5]
২০১৯ সালের ২৪শে সেপ্টেম্বর তারিখে, এক ঘোষণায় জানানো হয়েছে যে, এই প্রতিযোগিতার আনুষ্ঠানিক নাম হবে "উয়েফা ইউরোপা কনফারেন্স লিগ"।[6]
বিন্যাস
বাছাইপর্ব
উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের মতো, ইউরোপা কনফারেন্স লিগ-ও উত্তীর্ণ দল নির্ধারণের জন্য দুটি "পথ"-এ বিভক্ত হবে; একটি হচ্ছে চ্যাম্পিয়নস পথ এবং অন্যটি হচ্ছে লিগ পথ। চ্যাম্পিয়নস লিগের বিপরীতে, চ্যাম্পিয়নস পথে শুধুমাত্র এমন দলগুলো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে যারা চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বের জন্য আয়োজিত বাছাইপর্বে পরাজিত হওয়ার পর সরাসরি ইউরোপা কনফারেন্স লিগে যোগদান করেছে।
উয়েফা দেশ গুণাঙ্ক নিয়ম অনুযায়ী উয়েফার অ্যাসোসিয়েশন র্যাঙ্কিং করা হয়, যার মাধ্যমে এই প্রতিযোগিতায় প্রত্যেক অ্যাসোসিয়েশন হতে কতটি দল লিগ পথে অংশগ্রহণ করবে তা নির্ধারণ করা হয়:[7]
- অ্যাসোসিয়েশন ১–৫ হতে ১টি করে দল খেলার যোগ্যতা লাভ করবে।
- অ্যাসোসিয়েশন ৬–১৫ হতে ২টি করে দল খেলার যোগ্যতা লাভ করবে।
- অ্যাসোসিয়েশন ১৬–৫০ হতে ৩টি করে দল খেলার যোগ্যতা লাভ করবে।
- অ্যাসোসিয়েশন ৫১–৫৫ হতে ২টি করে দল খেলার যোগ্যতা লাভ করবে।
- লিশটেনস্টাইন কোনও ঘরোয়া লিগ ঘরোয়া লিগ আয়োজন করে না, এর ফলে উয়েফা গুনাঙ্কে তাদের অবস্থান গণনায় না এনে লিশটেনস্টাইন ফুটবল কাপের বিজয়ী দল অংশগ্রহণ করবে।
এই পুনর্গঠনের উপর ভিত্তি করে, সকল অ্যাসোসিয়েশনই ২০২১–২৪ প্রতিযোগিতা চক্রের পূর্বে বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা লাভ করবে, নতুন এই প্রতিযোগিতা চালু হওয়ার ফলে কোন অ্যাসোসিয়েশনই কোন বাড়তি সুযোগ-সুবিধা লাভ করবে না। এই প্রতিযোগিতাটি মূলত বিদ্যমান ইউরোপা লিগ প্রতিযোগিতার নিম্নতর স্তর হলেও একটি স্বতন্ত্র প্রতিযোগিতায় বিভক্ত।
গ্রুপ পর্ব এবং নকআউট পর্ব
বিন্যাস অনুযায়ী চারটি দলের আটটি গ্রুপ অংশগ্রহণ করবে, পরবর্তীতে ১৬ দলের পর্ব, কোয়ার্টার-ফাইনাল, সেমি-ফাইনাল এবং ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে। গ্রুপে দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী দল এবং উয়েফা ইউরোপা লিগের পয়েন্ট তালিকায় তৃতীয় স্থান অর্জনকারী দলগুলোর মধ্যে ১৬ দলের পর্ব আয়োজনের পূর্বে একটি অতিরিক্ত প্রাথমিক নকআউট পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। এই প্রতিযোগিতায় ১৫ সপ্তাহের জুড়ে মোট ১৪১টি ম্যাচ আয়োজিত হবে।[5]
এই প্রতিযোগিতার বিজয়ী পরবর্তী মৌসুমে উয়েফা ইউরোপা লিগে অংশ নেওয়ার জন্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে উত্তীর্ণ হবে। এই প্রতিযোগিতার ম্যাচগুলো প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে।[5]
বণ্টন
উয়েফার স্বয়ংক্রিয় অধিগ্রহণের উপর ভিত্তি করে সকল দলের যোগ্যতা নির্ধারণ করা হবে; অধিগ্রহণটি হচ্ছে প্রতিটি অ্যাসোসিয়েশন চ্যাম্পিয়নস লিগে প্রবেশের জন্য যোগ্য দলের নাম প্রদানের পর উচ্চ স্তরের বাছাইপর্বে দেশীয় কাপ বিজয়ী দলের নাম জমা দেবে এবং দলগুলোর পদমর্যাদা পূর্ববর্তী লিগ মৌসুমে তাদের অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হবে। ইংল্যান্ডের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার নিম্ন স্তরের বাছাইপর্বে তাদের দ্বিতীয় ঘরোয়া কাপ বিজয়ীর জন্য স্থান বরাদ্দ করা হয়েছে। (এই বণ্টনটি ২০২১–২২ মৌসুম হতে ২০২৩–২৪ পর্যন্ত প্রযোজ্য):
পর্বসমূহ | যেসকল দল এই পর্বে প্রবেশ করে | যেসকল দল পূর্ববর্তী পর্ব হতে প্রবেশ করে | যেসকল দল চ্যাম্পিয়নস লিগ হতে স্থানান্তরিত হবে | যেসকল দল ইউরোপা লিগ হতে স্থানান্তরিত হবে | |
---|---|---|---|---|---|
প্রথম বাছাইপর্ব (৭২টি দল) |
|
||||
দ্বিতীয় বাছাইপর্ব (১১০টি দল) |
চ্যাম্পিয়ন (২০টি দল) |
|
|||
লিগ (৯০টি দল) |
|
|
|||
তৃতীয় বাছাইপর্ব (৬২টি দল) |
চ্যাম্পিয়ন (১০টি দল) |
|
|||
লিগ (৫২টি দল) |
|
|
|||
প্লে-অফ (৪৪টি দল) |
চ্যাম্পিয়ন (১০টি দল) |
|
| ||
লিগ (৩৪টি দল) |
|
|
| ||
গ্রুপ পর্ব (৩২টি দল) |
|
| |||
প্রাথমিক নকআউট পর্ব (১৬টি দল) |
|
| |||
নকআউট পর্ব (১৬টি দল) |
|
সারাংশ
- ২০২১–২২ মৌসুম পর্যন্ত হালনাগাদকৃত।
অতিরিক্ত সময়ে ফলাফল নির্ধারণ | |
পেনাল্টি শুট-আউটের মাধ্যমে ফলাফল নির্ধারণ |
- "মৌসুম" কলামটি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হওয়ার মৌসুমকে নির্দেশ করে।
মৌসুম | আয়োজক | বিজয়ী | ফলাফল | রানার-আপ | শীর্ষ গোলদাতা |
---|---|---|---|---|---|
২০২১–২২ | আলবেনিয়া | রোমা | ১–০ | ফেইয়ানর্ট | সিরিল ডেসার্স (১০) |
২০২২–২৩ | চেক প্রজাতন্ত্র |
পরিসংখ্যান
ক্লাব অনুযায়ী
ক্লাব | বিজয়ী | রানার-আপ | বিজয়ের মৌসুম | রানার-আপের মৌসুম |
---|---|---|---|---|
রোমা | ১ | ০ | ২০২২ | — |
ফেইয়ানর্ট | ০ | ১ | — | ২০২২ |
দেশ অনুযায়ী
দেশ | বিজয়ী | রানার-আপ | সর্বমোট |
---|---|---|---|
ইতালি | ১ | ০ | ১ |
নেদারল্যান্ডস | ০ | ১ | ১ |
সর্বমোট | ১ | ১ | ২ |
টীকা
- প্রতিটি গ্রুপে দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী দলগুলো প্রাথমিক নকআউট পর্বে এগিয়ে যাবে, যেখানে তারা ইউরোপা লিগের গ্রুপ পর্বে আটটি তৃতীয় স্থান অর্জনকারী দলের মুখোমুখি হবে।
তথ্যসূত্র
- "'Europa League 2': Uefa confirms new tournament from 2021" ['ইউরোপা লিগ ২': উয়েফা ২০২১ থেকে নতুন প্রতিযোগিতার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে]। বিবিসি স্পোর্ট (ইংরেজি ভাষায়)। ২ ডিসেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০২০।
- "Roma-Feyenoord - UEFA Europa Conference League 2021/22"। UEFA.com। ২২ এপ্রিল ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুন ২০২২।
- "Uefa ponders third competition beneath Champions League and Europa League" [উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ এবং ইউরোপা লিগের নিচে তৃতীয় স্তরের প্রতিযোগিতা আয়োজনের বিবেচনা]। দ্য গার্ডিয়ান (ইংরেজি ভাষায়)। ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০২০।
- "Uefa set to introduce third European club competition from 2021–22" [উয়েফা ২০২১–২২ মৌসুমে তৃতীয় ইউরোপীয় ক্লাব প্রতিযোগিতা প্রবর্তনে প্রস্তুত]। দ্য গার্ডিয়ান (ইংরেজি ভাষায়)। ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০২০।
- "UEFA Executive Committee approves new club competition" [উয়েফার নির্বাহী কমিটি নতুন ক্লাব প্রতিযোগিতা অনুমোদন দিয়েছে]। উয়েফা (ইংরেজি ভাষায়)। ২ ডিসেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০২০।
- "Format change for 2020/21 UEFA Nations League" [২০২০–২১ উয়েফা নেশনস লিগের বিন্যাস পরিবর্তন]। উয়েফা (ইংরেজি ভাষায়)। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০২০।
- "UEL2 Access List 2021–24" [২০২১–২৪ চক্রের প্রবেশাধিকার তালিকা] (পিডিএফ)। উয়েফা (ইংরেজি ভাষায়)। ২ ডিসেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০২০।