উমাশঙ্কর যোশী
উমাশঙ্কর জেঠালাল যোশী (গুজরাতি: ઉમાશંકર જોશી) (২১ জুলাই ১৯১১ - ১৯শে ডিসেম্বর ১৯৮৮) ছিলেন একজন বিখ্যাত বিদ্বজ্জন, কবি এবং ঔপন্যাসিক। ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে গুজরাতি সাহিত্য তথা ভারতীয় সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি জ্ঞানপীঠ পুরস্কারে ভূষিত হন।[2]
উমাশঙ্কর যোশী | |
---|---|
জন্ম | বামনা, সাবরকাঁঠা, গুজরাত | ২১ জুলাই ১৯১১
মৃত্যু | ১৯ ডিসেম্বর ১৯৮৮ ৭৭) মুম্বাই, মহারাষ্ট্র, ভারত | (বয়স
পেশা | কবি, ঔপন্যাসিক |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান | গুজরাত কলেজ, এলফিনস্টোন কলেজ[1] |
সংক্ষিপ্ত জীবনী
শৈশব
গুজরাতের সাবরকাঁঠা অঞ্চলে ইডর তালুকায় অবস্থিত বামনা নামক একটি ছোট গ্রামে উমাশঙ্করের জন্ম হয়। তিনি জন্মসূত্রে ত্রিবেদী মেওয়াড় গোত্রের ব্রাহ্মণ ছিলেন। তার পিতা জেঠালাল কমলজি কতকগুলি 'জাগির'-এর অধিকারী ক্ষুদ্র শাসক বা 'করভারী' ছিলেন। মা ছিলেন নভল বাঈ। উমাশঙ্করেরা ছিলেন ছয় ভাই ও দুই বোন।[3] পাহাড়ি এলাকা ও গ্রামজীবনের সৌন্দর্য, মেলা ও অন্যান্য উৎসবের মধ্য থেকে উমাশঙ্কর সাহিত্য সৃষ্টির অনুপ্রেরণা পান।[4]
শিক্ষা
১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে বামনা গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উমাশঙ্করের শিক্ষাজীবন শুরু হয়। ১৯২১ এ ইডর বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর ১৯২৭ খ্রিঃ পর্যন্ত তিনি ইডরের প্রতাপ উচ্চবিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। এই বিদ্যালয়ে স্থানীয় ভাষা ও ইংরেজিতে শিক্ষাদান করা হত। ১৯২৭ এ আমেদাবাদের প্রোপ্রাইটরি উচ্চবিদ্যালয় থেকে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৯২৮ এ গুজরাত কলেজে ভর্তি হন ও সেখানে ১৯৩০ পর্যন্ত ছাত্রাবস্থায় অতিবাহিত করেন। এর পর মুম্বাইয়ের এলফিনস্টোন কলেজে তিনি স্নাতক স্তরের পাঠক্রমে ভর্তি হন। সেখান থেকে অর্থনীতি ও ইতিহাস বিষয়ে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এর পর মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংস্কৃত ও গুজরাতি ভাষায় প্রথম শ্রেণীতে এম.এ. ডিগ্রি লাভ করেন।[3]
আন্দোলন তথা স্বাধীনতা সংগ্রাম
উমাশঙ্কর যোশী মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে চলমান স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন এবং ইতিহাস সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করেন।[4] ১৯২৯ এর জানুয়ারি মাসে গুজরাত কলেজের ছাত্রদের অনুষ্ঠিত ৩৪ দিন ব্যাপী অনশন আন্দোলনেও তিনি অংশ নেন। ১৯৩০ এ তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেন এবং ঐ বছর এপ্রিলের প্রথম দিকে সত্যাগ্রহী হিসেবে বিরামগাম সমিতির সদস্য হন। এর পর চোদ্দ সপ্তাহের জন্য তাকে কারাবরণ করতে হয়; ১৯৩০ এর নভেম্বরে সবরমতী জেলে শুরু হয়ে তার কারাবাস শেষ হয় পরের বছর ইয়েরওয়াড়ায়। এর পর ১৯৩১ খ্রিঃ তিনি করাচিতে অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের জাতীয় অধিবেশনে যোগ দেন এবং জুলাই থেকে ছয় মাস গুজরাত বিদ্যাপীঠে অবস্থান করেন। ১৯৩২ খ্রিঃ সবরমতী ও বিসাপুর জেলে তাকে দ্বিতীয়বার আট মাসের জন্য কারাবাস করতে হয়।[3]
শিক্ষক জীবন
১৯৩৭ খ্রিঃ মুম্বাইয়ের ভিলে পার্লে-তে অবস্থিত গোকলিবাঈ উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে উমাশঙ্করের কর্মজীবন শুরু হয়। স্নাতকোত্তর স্তরের পঠনপাঠন শেষ করে তিনি ১৯৩৯ পর্যন্ত মুম্বাইয়েরই সিডেনহ্যাম কলেজ অব কমার্সে আংশিক সময়ের অধ্যাপক নিযুক্ত থাকেন। এর পর গুজরাত বিদ্যাসভা বা গুজরাত মাতৃভাষা সমিতির স্নাতকোত্তর গবেষণা বিভাগের অধিকর্তা নিযুক্ত হন। ১৯৪৬ পর্যন্ত এই পদে আসীন থেকে তিনি স্বেচ্ছাবসর নেন। ১৯৪৮ এ মুম্বাই সরকার তাকে গুজরাতি পাঠ্যপুস্তক কমিটিতে নিয়োগ করে। ১৯৫৩-তে লোকভারতী শিক্ষণ সংস্থায় আমন্ত্রিত সদস্য হিসেবে কাজ করেন। এটি ছিল গুজরাতের ভাবনগর জেলায় অবস্থিত একটি শিক্ষামূলক সংস্থা। ১৯৫৪ এর জুন মাসে তিনি গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয়ে গুজরাতি সাহিত্যের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতত্ত্ব বিভাগেরও প্রধান ছিলেন তিনি। মার্কিন ও কিছুসংখ্যক ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ে 'সাধারণ শিক্ষা'র মান সংক্রান্ত খোঁজখবর করার জন্য ভারত সরকার যুক্তরাষ্ট্র ও ইংল্যান্ডে একটি কমিটি প্রেরণ করেন। উমাশঙ্কর যোশী ছিলেন এর অন্যতম সদস্য। ১৯৬৪ তে গুজরাত সরকার সৌরাষ্ট্র ও দক্ষিণ গুজরাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ভাবনাচিন্তা শুরু করলে তিনি সেই সংক্রান্ত একটি কমিটির সদস্য হন। ৩০শে নভেম্বর ১৯৬৬ থেকে তিনি গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। ১৯৭২ এর ১৭ই নভেম্বর তিনি এই পদ থেকে অবসর নেন।[3]
ব্যক্তিগত জীবন
১৯৩৪ এ উমাশঙ্করের পিতৃবিয়োগ হয়। ১৯৩৭ এর ২৫শে মে তিনি আমেদাবাদের জ্যোৎস্না এন. যোশীকে বিবাহ করেন। নন্দিনী এবং স্বাতী নামে তার দুই মেয়ে ছিল। ১৯৫৭ তে তিনি সপরিবার আমেদাবাদের সর্দার পটেল নগরের 'সেতু' নামক বাড়িতে বসবাস আরম্ভ করেন। ১৯৬৬ তে তার মাতৃবিয়োগ হয়।[3]
মৃত্যু
১৯৮৮ খ্রিঃ ফুসফুসের ক্যানসারের জন্য উমাশঙ্কর মুম্বাইয়ের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি হন। ১৯৮৮ খ্রিঃ ১৯শে ডিসেম্বর ৭৭ বছর বয়সে তার দেহাবসান হয়।[3]
তথ্যসূত্র
- Modern Gujarati Poetry: A Selection by Rita Kothari। ১৯৯৮। পৃষ্ঠা 82, 85।
- "Jnanpith Laureates Official listings"। Jnanpith Website। ১৩ অক্টোবর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।
- "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৭ জুন ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।
- "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৪ জুন ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।