উপশহর
উপশহর বা স্যাটেলাইট শহর হলো একটি বৃহৎ শহরের পার্শ্ববর্তী ছোট পৌরসভাসমূহ যেখানে বৃহৎ শহরটি হলো একটি মহানগর এলাকার মূলকেন্দ্র।[1][2] এধরনের শহরগুলো শহরতলী, মহকুমা এবং বিশেষ করে শয়নগৃহ সম্প্রদায় (বেডরুম কমিউনিটি) হতে ভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। স্যাটেলাইট শহরসমূহের পৌর প্রশাসন থাকে যা কেন্দ্রীয় মহানগরী থেকে আলাদা এবং এসব শহরসমূহের আবাসিক জনগোষ্ঠীর জন্য যথেষ্ট কর্মসংস্থান ভিত থাকে। তাত্ত্বিকভাবে, উপগ্রহ শহরগুলি এদের বৃহত্তর মহানগর এলাকা ব্যতীত স্ব-নির্ভর সম্প্রদায় হতে পারে। তবে, একটি মহানগরীর অংশ হওয়ার কারণে, একটি স্যাটেলাইট শহরে ক্রস-কম্যুটিং বা আড়াঅাড়ি যাতায়াত (অর্থাৎ, আবাসিক বাসিন্দারা শহর হতে বাহিরে যায় এবং বহিরাগত পেশাজীবি কর্মচারীরা শহরে প্রবেশ করে) হতে পারে।
স্যাটেলাইট শহর বনাম অন্য ধরনের জনবসতি
স্যাটেলাইট শহরগুলোর সাথে প্রায়শই উন্নয়নের ধরনের দিক থেকে সম্পর্কযুক্ত নিম্নোক্ত জনবসতিগুলোকে গুলিয়ে ফেলা হয় যদিও এরা পরস্পর হতে ভিন্ন।
শহরতলী
উপগ্রহ শহর বা স্যাটেলাইট শহর এবং শহরতলী পরস্পর ভিন্ন যেখানে এদের কেন্দ্রীয় মহানগর কর্তৃক পেশকৃত স্বতন্ত্র কর্মসংস্থান ভিত্তি, যাত্রীছাউনি এবং সংস্কৃতি ছাড়াও একটি স্বাধীন পৌর সরকার রয়েছে।
প্রান্তিক শহর (এজ সিটি)
এজ সিটি (Edge city) বা প্রান্তিক শহরও স্যাটেলাইট শহর হতে ভিন্ন। এজ সিটি বা প্রান্তিক শহর হলো সেসব শহরতলী বা উপশহরসমূহ যেগুলো বৃহৎ কর্মসংস্থান ঘাঁটিযুক্ত এবং সাংস্কৃতিক উপাদানসমৃদ্ধ। পক্ষান্তরে, স্যাটেলাইট শহরে অবশ্যই একটি প্রকৃত ঐতিহাসিক শহরকেন্দ্র, একটি স্বতন্ত্র স্বাধীন পৌর সরকার থাকার পাশাপাশি বৃহত্তর মহানগর কেন্দ্রের সাথে আন্তঃসংযোগ হওয়ার আগে একটি শহর হিসেবে অস্তিত্বশীল থাকতে হবে এবং নিজেদের ও কেন্দ্রীয় নগরের মধ্যে গ্রামীণ অঞ্চল দ্বারা বেষ্টিত হতে হবে।
তাত্ত্বিকভাবে, স্যাটেলাইট সিটি এবং কতিপয় ধরনের এজ সিটি উভয়ই এদের বৃহত্তর মহানগর এলাকা ব্যতীত স্ব-নির্ভর সম্প্রদায় হতে পারে (এবং একদা ছিলো), কিন্তু বৃহত্তর মহানগরীর শহরতলিসুলভ সম্প্রসারণের কারণে এরা আন্তঃসংযুক্ত হয়ে পড়েছে। তবে, এজ সিটি বা প্রান্তিক শহরগুলিতে এদের নিজস্ব সরকার থাকতে পারে এবং উপগ্রহ শহরগুলির সাথে অনেকগুলি বৈশিষ্ট্যের মিল থাকতে পারে, তারা মূল শহরটির সাথে প্রকৃতিগতভাবে অনেক বেশি সংযুক্ত এবং তাদের বর্তমান রূপ কিছুতেই বিদ্যমান থাকতো না যদি না তাদের বৃহত্তর প্রতিবেশীর শহরতলিসুলভ সম্প্রসারণ না ঘটতো। প্রান্তিক শহরগুলি একটি মহানগর এলাকার মধ্যস্থিত কার্যকরী সংযোগস্থল, এরা মহানগর এলাকার ক্ষুদ্র প্রতিরূপ নয়।
উপগ্রহ শহরগুলি যেগুলো তাদের বৃহত্তর প্রতিবেশীদের (মহানগরী) সাথে বিশেষভাবে আবদ্ধ বা উত্তমরূপে সংযুক্ত এবং/অথবা ঐতিহাসিক উপশহরবিশিষ্ট সেগুলি কিছু প্রান্তিক শহরের উপনিবেশ হিসেবে যোগ্যতা অর্জন করতে পারে তবে পরিভাষাদ্বয় সমার্থক নয়।
বহু-কেন্দ্রিক শহর
কিছু ক্ষেত্রে বৃহত্তর মহানগর এলাকায় সমান গুরুত্বের একাধিক কেন্দ্র থাকতে পারে। এসব বহু-কেন্দ্রিক শহরকে প্রায়শই টুইন সিটি বা যমজ নগরী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। নিম্নোক্ত ক্ষেত্রসমূহে স্যাটেলাইট শহর হতে বহু-কেন্দ্রিক শহর ভিন্ন হয়:
- স্যাটেলাইট শহরগুলি যে বৃহত্তর কেন্দের চারপাশে অবস্থিত তার চেয়ে স্পষ্টভাবে অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ, যেহেতু বহু-কেন্দ্রিক শহরের বিভিন্ন সংযোগস্থল একে অপরের কাছাকাছি অবস্থিত
- স্যাটেলাইট শহর গ্রামীণ ভূখন্ডের একটি উল্লেখযোগ্য অঞ্চল দ্বারা বৃহত্তর কেন্দ্র থেকে পৃথক থাকে, যেখানে জমজ নগরীগুলো বৃহত্তর কেন্দ্রের প্রকৃতিগতভাবে সম্পূর্ণরূপে সংযুক্ত থাকে।
উদাহরণস্বরূপ, ফোর্ট ওয়ার্থ হল ডালাস শহরের যমজ নগরী কারণ ডালাসকে উপগ্রহ শহরের পরিবর্তে যমজ নগরী হিসেবে বিবেচনা করার জন্য ফোর্ট ওয়ার্থ কোনোভাবে অপেক্ষাকৃত ছোট হলেও এটি আনুপাতিকভাবে যথেষ্ট কাছাকাছি অবস্থিত এবং প্রকৃতিগতভাবে যথেষ্ট সংযুক্ত। তবে, ওয়াকো হল উভয় শহরের উপগ্রহ শহর। সাধারণভাবে বলতে গেলে, যে শহরগুলিকে একই পৌর এলাকার অংশ হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে তাদের একটির সাথে অন্যটির সম্পর্ক উপগ্রহ শহরের পরিবর্তে যমজ নগরী হিসাবে বিবেচনা করা উচিত।
মহানগর এলাকা
তাত্ত্বিকভাবে, স্যাটেলাইট শহর হলো মহানগর এলাকার ক্ষুদ্র প্রতিচ্ছবি। কিছু ক্ষেত্রে স্যাটেলাইট শহরসমূহকে বৃহত্তর মহানগর এলাকা অংশ হিসেবে তালিকাভভুক্ত করা হয়, এবং কিছু ক্ষেত্রে একেবারেই স্বতন্ত্র হিসেবে তালিকাভভুক্ত করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে, স্যাটেলাইট শহরসমূহকে প্রায়ই (সর্বদা নয়) বৃহত্তর মহানগরীসমূহের সমন্বয়ে গঠিত একটি একক সংযুক্ত পরিসংখ্যান এলাকার অভ্যন্তরে স্বশাসিত মহানগর এলাকা হিসেবে ধরা হয়।
তথ্যসূত্র
- Goldfield, David (২০০৭)। Encyclopedia of American Urban History। আইএসবিএন 9780761928843।
- Shao, Zisheng (১৯ আগস্ট ২০১৫)। The New Urban Area Development: A Case Study in China। আইএসবিএন 9783662449585।
- মাহমুদ, আবু হায়াত (২৬ জানুয়ারি ২০১৪)। "Rajuk's big projects facing several hurdles"। ঢাকা ট্রিবিউন (ইংরেজি ভাষায়)। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ নভেম্বর ২০১৯।