উপকূলীয় অন্ধ্র

উপকূলীয় অন্ধ্র (কোস্টাল অন্ধ্রা), ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের একটি অঞ্চল। এই অঞ্চলটি ১৯৫৩ সালের পূর্বে মাদ্রাজ রাজ্য এবং ১৯৫৩ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত অন্ধ্র প্রদেশের অংশ ছিল। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে এটির আয়তন ৯৫,৪৪২ বর্গ কিলোমিটার (৩৬,৮৫০ বর্গ মাইল) যা মোট রাজ্যের ৫৭.৯৯% এবং জনসংখ্যা ৩,৮১,৯৩,৮৬৮ জন, যা অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের জনসংখ্যার ৬৯.২০%। এই অঞ্চলটি পূর্ব ঘাট পর্বতমালা ও বঙ্গোপসাগরের মধ্যবর্তী অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলীয় জেলাগুলির অন্তর্ভুক্ত। উপকূলীয় অন্ধ্রার উত্তরে ওড়িশা সীমান্ত থেকে দক্ষিণে কৃষ্ণ নদীর বদ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত।

উপকূলীয় অন্ধ্র
অন্ধ্র প্রদেশের অঞ্চল
ভারতের মানচিত্রে উপকূলীয় অন্ধ্র লাল রঙে আলোকিত হয়েছে
দেশ ভারত
রাজ্যঅন্ধ্রপ্রদেশ
জনসংখ্যা
  মোট৩,৪১,৯৩,৮৬৮
ভাষা
  সরকারিতেলুগু
সময় অঞ্চলআইএসটি (ইউটিসি+০৫:৩০)
যানবাহন নিবন্ধনএপি
বৃহত্তম শহরবিশাখাপত্তনম
২ জুন ২০১৪ সালে নতুন অন্ধ্রপ্রদেশ গঠনের সময়ে উপকূলীয় অন্ধ্র অঞ্চল।
বিশাখাপত্তনাম জেলার পদ্দিপালেম গ্রামে সন্ধ্যার সুন্দর দৃশ্য।

গোদাবরী নদীকৃষ্ণা নদীর বদ্বীপের কারণে উপকূলীয় অন্ধ্রে সমৃদ্ধ কৃষি জমি রয়েছে। উপকূলীয় অন্ধ্রের সমৃদ্ধির কারণ হিসাবে তার সমৃদ্ধ কৃষি ভূমি এবং এই দুটি নদী থেকে প্রচুর পরিমাণে জল সরবরাহের জন্য উল্লেখ করা যেতে পারে। এখানে ধানে প্রধান শস্য, ডাল এবং নারকেলও গুরুত্বপূর্ণ ফসল। মাছ ধরার শিল্প অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ইতিহাস

রামথের্থমের ঘনিকোন্ডার রক্কট গুহায় জৈন তীর্থঙ্করের চিত্র।

মৌর্য রাজবংশের সময় অন্ধ্র রাজ্য একটি রাজনৈতিক ক্ষমতায় আবির্ভূত হয়েছিল। মেগাস্থিনিস উল্লেখ করেছিলেন যে, খ্রিস্ট পূর্ব থেকে অন্ধ্র সাতভাহনের এক সমৃদ্ধ সাম্রাজ্য ছিল। ৭ শতক থেকে ১০ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বিখ্যাত চালুক্য রাজবংশ উপকূলীয় অন্ধ্রের শাসন করত। এই সময়ের পরে অন্যান্য রাজবংশের উপকূলীয় অন্ধ্রে রাজত্ব করেছে। যেমন চোল, কাকতীয়বিজয়নগর সাম্রাজ্য

অন্ধ্র প্রদেশের অন্তর্দেবী মন্দির গোদাবরী নদীর তীরে।

১১ শতকের শিলালিপি অনুযায়ী, উপকূলীয় অন্ধ্রের সীমানা হল মহেন্দ্রগিরি পর্বতমালা (উড়িষ্যার গাজপতি জেলার উত্তর-পূর্ব সীমান্তে), কালাহস্তি মন্দির (নেলোর জেলার সীমানার কাছে চিত্তুর জেলায়), শ্রীশাইলাম মন্দির (কুরুলুল জেলা মাহবুব নগর জেলা ও প্রকাশম জেলার সীমান্তের কাছে)।[1]

ওড়িশার গজপতি জেলাগঞ্জাম জেলা ১৭৫২ খ্রিষ্টাব্দে ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে দেওয়া হয়। পরে ফরাসিদের থেকে ব্রিটিশদের কাছে স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তীতে ওঙ্গল তালুক পর্যন্ত বিস্তৃত নেলোর, প্রতিষ্ঠানের অধীনে আর্কোটের নবাবদের থেকে প্রাপ্ত হয়। বর্তমানের নেলোর ও চিতুরের কিছু অংশ ভেঙ্কটগিরি রাজাদের হাতে ছিল। ১৮০২ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশরাও সেই অঞ্চলগুলিতে ক্ষমতার দাবিতে ভেঙ্কটগিরির রাজাদের সাথে একটি চুক্তি করেছিল।

অন্ধ্র (সার্ককার) ও রায়লসীমার জেলা ব্রিটিশদের প্রদান করে নিজাম, যা মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির অংশ হয়ে ওঠে।[2]

ভৌগোলিক অবস্থান

উপকূলীয় অন্ধ্রপ্রদেশ অন্ধ্রপ্রদেশের পূর্ব অঞ্চলে অবস্থিত এবং ছয়টি জেলা নিয়ে গঠিত। উত্তরান্ধ্র, রায়লসীমা অঞ্চল ও ওড়িশা রাজ্য এবং তেলেঙ্গানা রাজ্যের সঙ্গে সীমানা রয়েছে উপকূলীয় অন্ধ্রার। কৃষ্ণা নদীগোদাবরী নদীর উপস্থিতি ও নদী থেকে জল সেচ উপকূলীয় অন্ধ্রকে উর্বর এলাকায় পরিণত হয়েছে।[3] এই অঞ্চলের উপকূলীয় তটরেখা দেশের দ্বিতীয় দীর্ঘতম যা ৯৭৪ কিমি পর্যন্ত দীর্ঘ।[3]

জনসংখ্যার উপাত্ত

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে এই এলাকার মোট জনসংখ্যার ৩,৪১,৯৫,৬৫৫ জন ছিল। এখানকার মূল এবং সর্বাধিক কথ্য ভাষা হল তেলুগু[4]

সংস্কৃতি

কুচিপুড়ি রাজ্যের শাস্ত্রীয় নৃত্য রূপ, যা কৃষ্ণা জেলার কুচিপুড়ি গ্রামে উদ্ভূত হয়েছিল।[5]

রন্ধনপ্রণালী

ভাত প্রধানত উপকূলীয় রান্নার খাবার এবং এটি সাধারণত বিভিন্ন তরকারি এবং ডাল বা উভয় দিয়ে খাওয়া হয়। উপকূলীয় অন্ধ্রের রান্না সামুদ্রীক খাদ্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়।

শহর এবং নগরগুলির

বিশাখাপত্তনম শহরের সংক্ষিপ্ত দৃশ্য।
বিজয়ওয়াড়া শহরের সংক্ষিপ্ত দৃশ্য।

বিজয়ওয়াড়া, গুন্টুর, রাজামুন্দ্রি, কাকিনাড়া, এলুরু, নেল্লোর, ওঙ্গোল এই অঞ্চলের প্রধান শহর। অন্যান্য প্রধান শহরগুলি হচ্ছে মাছলিপত্তনাম, গুদিভাদা, তেনালী, নরসাপুরাম, গুন্টুর, কাভালি, তাদেপল্লীগুদাম, ভীমভারাম, আমলাপুরাম, নার্সরাওপেট, চিলাকালউরিপিট, কান্দুকুর, চিড়ালা।

পরিবহন

এনওএইচ -১৬ এর বিজয়ওয়াড়া-গুন্টুর এক্সপ্রেসওয়ে বিভাগ
কাকিনাড়া টাউন জংশন রেলওয়ে স্টেশনের প্রধান প্রবেশদ্বার
নেল্লোরের কাছে মাইপাদু সৈকত।
  • পূর্ব উপকূলীয় রেল (ইসিআর) শ্রীকাকুলাম, ভিজিয়ানগরম জেলা, এবং বিশাখাপাতনম সিটি সহ বিশাখাপত্তনম জেলার অংশে কাজ করে। বিজয়ওয়াড়া ভারতে সবচেয়ে ব্যস্ত রেল জংশনের মধ্যে একটি, অনেক এক্সপ্রেস ট্রেন পরিবেশন করা হয় এই স্টেশন থেকে।
  • বাস ও ট্রেনগুলি এই অঞ্চলের স্টেশন থেকে পাওয়া যায়, যার মধ্যে রয়েছে বিশাখাপাত্তনম, কাকিনাড়া বন্দর, কাকিনাড়া টাউন রেলওয়ে স্টেশন, নরসাপুরাম, মাছলিপত্তনাম, বিজয়ওয়াদড়া, গুন্তুরগুন্টুর, নেল্লোর রেলওয়ে স্টেশন, এবং রেপেল।
  • এই অঞ্চলের অনেকগুলি বিমানবন্দর রয়েছে, যার দুটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। বিশাখাপত্তনম বিমানবন্দরবিজয়ওয়াড়া বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং রাজমন্ড্রী বিমানবন্দর গার্হস্থ্য বিমানবন্দর।
  • বিশাখাপত্তনম বন্দর এবং কাকিনাড়া বন্দর উপকূলীয় অন্ধ্রপ্রদেশের প্রধান বন্দর। পণ্যদ্রব্য পরিচালনার ক্ষেত্রে অন্ধ্রপ্রদেশ দেশের দ্বিতীয় সর্বাধিক ব্যস্ততম সামুদ্রিক রাজ্য (গুজরাটের পরে)।[6] বিশাখাপাতনম বন্দর দেশের সবচেয়ে ব্যস্ততম মালবাহী বন্দরগুলির মধ্যে একটি।[7]
  • নেল্লোরের কৃষ্ণাপত্তনাম বন্দরগঙ্গাভরম বন্দর প্রধান বেসরকারি বন্দর, এবং গুন্টুরে মাছলিপত্তনাম বন্দর এবং নিজামপত্তনাম বন্দর নামে দুটি ছোট বন্দর রয়েছে।

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব

জাতীয় পতাকা নকশা

গায়ক

তেলুগু সাহিত্য, শিল্প ও সিনেমা

  • নন্নয়্য
  • তিক্কানা
  • তানালী রামকৃষ্ণ
  • গুরুজাদা আপারাও
  • কন্দুকুরি ভীরেসলিংগম
  • দেবুলাপল্লী ভেঙ্কট কৃষ্ণ শাস্ত্রী
  • ত্রিপুরানিণী রামাস্বামী চৌধুরী
  • গুরুম জাশুভা
  • এস. ভি. রাঙ্গা রাও
  • ঘান্টসালা (গায়ক)
  • পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া
  • নন্দামুরী তরিকা রামারাও
  • আক্কেনেনী নাগেশ্বর রাও
  • কৃষ্ণা
  • চিরঞ্জীবী
  • মহেশ বাবু ঘাটমাননী
  • গোপারাজু রামচন্দ্র রাও
  • প্রভাস
  • এস. এস. রাজমৌলি

অন্য

  • চদলওয়াদা কৃষ্ণমূর্তি - টিটিডি চেয়ারম্যান।

এছাড়াও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. Austin Cynthia Talbot Assistant Professor of History and Asian Studies University of Texas (২৩ আগস্ট ২০০১)। Precolonial India in Practice : Society, Region, and Identity in Medieval Andhra: Society, Region, and Identity in Medieval Andhra। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 36–। আইএসবিএন 978-0-19-803123-9।
  2. "Andhra Pradesh – end of an era"Business Standard। Hyderabad। ৩০ জুলাই ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ৮ এপ্রিল ২০১৬
  3. "Administrative and Geographic profile" (পিডিএফ)msmehyd.ap.nic.in। ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ এপ্রিল ২০১৭
  4. "AP Government Portal – Official Andhra Pradesh State Govt. Portala Pradesh" (পিডিএফ)www.ap.gov.in। ৩ জুন ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ এপ্রিল ২০১৭
  5. "'Art has to be nurtured to sustain'"The Hindu। সংগ্রহের তারিখ ৫ এপ্রিল ২০১৭
  6. P.Manoj (১০ মে ২০১৩)। "Dugarajapatnam in Andhra Pradesh to have new major port"Live Mint and The Wall Street Journal। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০১৪
  7. Rama Mohan (১৩ জুলাই ২০১৪)। "AP to Set up Maritime Board to Develop Ports"ibtimes.co.in। International Business Times, India। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০১৪

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.