উধারবন্দ
উধারবন্দ হলো উত্তরপূর্ব ভারতে অবস্থিত আসাম রাজ্যের দক্ষিণে কাছাড় জেলার উধারবন্দ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের একটি শহর৷ এটি জেলাসদর শিলচর শহর থেকে ১৭ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত৷
উধারবন্দ কাচাকান্দিপুর | |
---|---|
শহর | |
ডাকনাম: দুর্গানগর পঞ্চম খণ্ড | |
উধারবন্দ উধারবন্দ | |
স্থানাঙ্ক: ২৪°৫২′১১.১৮২৮″ উত্তর ৯২°৫২′১০.০১৬৪″ পূর্ব | |
রাষ্ট্র | ভারত |
জেলা | আসাম |
জেলা | কাছাড় |
আয়তন | |
• মোট | ২.৫৯ বর্গকিমি (১.০০ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ৯,০৫১ |
• জনঘনত্ব | ৩,৫০০/বর্গকিমি (৯,১০০/বর্গমাইল) |
ভাষা | |
• সরকারী | বাংলা |
• সহসরকারী | ইংরাজী |
সময় অঞ্চল | ভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+৫:৩০) |
পিন | ৭৮৮০৩০ |
যানবাহন নিবন্ধন | এএস |
ভূগোল
উধারবন্দ(দুর্গানগর পঞ্চম খণ্ড) শহরটি কাছাড় জেলার উধারবন্দ ব্লকের অন্তর্ভুক্ত৷ এটি মধুরা নদীর পশ্চিম তীরে এবং বরাক নদীর উপত্যকার উত্তরাংশে অবস্থিত৷[1]
জনতত্ত্ব
২০১১ খ্রিস্টাব্দে ভারতের জনগণনা অনুসারে উধারবন্দ শহরের জনসংখ্যা ৯০৫১ জন, যার মধ্যে ৪৫২২ জন পুরুষ এবং ৪৫২৯ জন নারী৷ ৬ বৎসর বয়স অবধি শিশুসংখ্যা ৮৬৮ জন, যা সমগ্র জনসংখ্যার ৯.৫৯%৷ শহরটিতে প্রতি হাজার পুরুষে নারী সংখ্যা ১০০২ জন, যা রাজ্যের গড় ৯৫৮ থেকে বেশি৷ প্রতি হাজার শিশুপুত্রে কন্যাশিশুর সংখ্যা ৯৫৫ জন, যা রাজ্যের গড় ৯৬২ থেকে কম৷ শহরটির মোট সাক্ষরতা হার ৯২.৭৪%, পুরুষ সাক্ষরতার হার ৯৩.৯৭% এবং নারী সাক্ষরতার হার ৯১.৫২%৷[2]
দর্শনীয় স্থান
কাঁচাকান্তি মন্দির
কাঁচাকান্তি মন্দির হলো ডিমাসা-কাছাড়িদের আরাধ্যা এক হিন্দু দেবীর মন্দির৷ এটি কাছাড় জেলাতে অবস্থিত এবং কাছাড়ি রাজাদের দ্বারা নির্মিত অন্যতম পুরানো মন্দিরগুলির মধ্যে একটি৷ বর্তমানে এটির নবনির্মাণ করা হয়েছে৷ কাঁচাকান্তি দেবীকে মা দুর্গা ও মা কালীর মিলিত রূপ হিসাবে মনে করা হয়৷ শুরুতে কাছাড়ি রাজাদের রাজত্বকালে এই মন্দিরে নরবলি হতো বলে জানা যায়৷
হিন্দুদের বিবাহ মাসের প্রায় প্রতিদিনই এই মন্দিরে গরীব ও নিম্নবিত্ত বহুলোকের বিবাহ সম্পন্ন হয়৷ মোটামুটি ভাবে শিলচর শহরসহ জেলাটির অন্যান্য বিভিন্ন স্থান থেকে এই মন্দিরে আসার জন্য উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা রয়েছে৷
ডালু হ্রদ
জেলাসদর শিলচর শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে এবং উধারবন্দ শহরর কাছে অবস্থিত জেলার অন্যতম সুদর্শন হ্রদটি হলো ডালু লামা বা ডালু হ্রদ৷ এই হ্রদটি বহির্রাজ্য থেকে আগত পর্যটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষণ৷ এটি দক্ষিণ আসামের বৃৃহত্তম ডালু চা-বাগান দিয়ে চারদিকে পরিবেষ্ঠিত৷ এটি নৌকাবাইচ ও চড়ুইভাতির জন্য উল্লেখযোগ্য৷
খাসপুর রাজবাড়ি
শিলচর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরত্বে উধারবন্দের কাছে খাসপুর নামে ডিমাসা-কাছাড়ি রাজাদের একটি বিরাট ঐতিহাসিক এবং গুরুত্বপূর্ণ রাজধানী গড়ে উঠেছিল। যার নির্মাণ ১৬৯০ খ্রিষ্টাব্দ মধ্যে হয়েছিল। এখানকার প্রধান দর্শনীয় বস্তুগুলি হলো সিংহদ্বার, সূর্যদ্বার এবং প্রাচীন রাজাদের মন্দির, যা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। মূল প্রাসাদটি বর্তমানে প্রায় অস্তিত্বহীন হলেও এর সংলগ্ন প্রধান প্রবেশদ্বার, সূর্যদ্বার ও অভ্যন্তরস্থ দেবালয়টি অক্ষত আছে। প্রবেশপথে হস্তীমূর্তিখচিত সুন্দর শিল্পনিদর্শন রয়েছে।
মধুরা
উধারবন্দ শহরের থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তরে একটি সুন্দর ও সুবিধাজনক পিকনিক করার স্থান হলো মধুরা৷ এটি পাহাড়ি অঞ্চলের মাঝে বরাক নদীর ডানদিকের উপনদী মধুরার তীরবর্তী৷ নদী পারাপার করার জন্য এখানে একটি ঝুলন্ত সেতু রয়েছে৷
টিংটং
টিংটং হলো পাহাড়ি পার্বত্য অঞ্চলের মাঝে পাথুরে মাটিতে অবস্থিত একটি পিকনিক স্পট৷ পাহাড় থেকে থেকে ভোরের সূর্যোদয় দেখার জন্য এটি পর্যটকদের কাছে প্রিয়৷
রাণীদিঘি উদ্যান
এটি একটি ঐতিহাসিক দিঘি৷ ডিমাসা-কাছাড়ি রাজত্বের সময় তাদের রাজধানী খাসপুরের নিকট উধারবন্দে তারা এই দিঘিটি খনন করেছিলেন৷ বর্তমানে পুকুরটির চারিদিকে একটি উদ্যান নির্মান করা হয়েছে, যা রাণীদিঘি উদ্যান নামে পরিচিত৷ বর্তমানে এটি অবহেলার শিকার৷
চা-বাগান
উধারবন্দ শহরটি চারিদিকে চাবাগান দ্বারা পরিবেষ্ঠিত৷ পারসিং, চণ্ডীঘাট, অরুণাবন্দ, দয়াপুর, মাঝেরগ্রাম, থালিগ্রাম, টিকাল, কুম্ভা, কুম্ভীরগ্রাম, হাতিছড়া, পাতিমারা এবং ডালু চা বাগানগুলি সৌন্দর্যের কারণে বহু পর্যটককে আকর্ষণ করে৷
স্বাস্থ্যকেন্দ্র
- টিকাল মডেল হাসপাতাল
- উধারবন্দ ব্লক প্রাইমারী হেল্থ সেন্টার
- দিগর কাশীপুর প্রাইমারী হেল্থ সেন্টার
- রংপুর প্রাইমারী হেল্থ সেন্টার
- থালিগ্রাম প্রাইমারী হেল্থ সেন্টার
খেলাধুলা
টেবিল টেনিস ক্লাব
ক্লাবটি জাতীয় এবং রাজ্যস্তরে টেবিল টেনিস প্রতিযোগীতার আয়োজন করে থাকে৷ এর ইন্ডোর স্টেডিয়ামটিতে ব্যাডমিন্টন খেলা হয়৷
রাজীব গান্ধী স্টেডিয়াম
ফুলবল, ক্রিকেটসহ অন্যান্য খেলা এখানে আয়োজিত হয়৷ ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের আসাম অলিম্পিকের কিছু খেলা এখানে হয়েছিলো৷
সংস্কৃতি
স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে উদ্ভূত বিবেকানন্দ পাটমন্দির সামাজিক সংস্কৃতি সংগঠন উধারবন্দের চা বাগানগুলিতে অবৈতনিক বিদ্যালয় সহ দেনন্দিন জীবনযাত্রার প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করে থাকে৷
মাতৃভাষা ঐক্যমঞ্চ হল একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন৷ উধারবন্দে ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে ভাষার জন্য হওয়া ১১ ভাষাশহিদের উদ্দেশ্যে এখানে একটি স্মারক রয়েছে৷
অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানগুলি হলো , বরাক বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন, যুব শক্তি পরিষদ, অভিষেক ইন্ডিয়া৷
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
মহাবিদ্যালয়
- জগন্নাথ সিংহ কলেজ, উধারবন্দ.
বিদ্যালয়
- দুর্গানগর নয়ারাম উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়
- উধারবন্দ শিক্ষাসদন বিদ্যালয়
- জে.সি. বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
- কাঁচাকান্দি বিদ্যামন্দির
- আনন্দমার্গ বিদ্যালয়
- গুরুকুল ইংলিস একাডেমি
- ব্লু বেলস স্কুল
- এফ.আর. মেমোরিয়াল স্কুল
- জে.আর.ডি. পাবলিক স্কুল
- জয়রাম বিদ্যালয়
- পরিমল বালা বিদ্যালয়
- সাইবাগ বিদ্যালয়
পরিবহন
রেলপথ
উধারবন্দ শহরের নিকটে কোনো রেলওয়ে স্টেশন না থাকলেও শিলচর রেলওয়ে স্টেশনটি এখিন থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত৷
সড়কপথ
২৭ নং জাতীয় সড়কটি এই শহরের ওপর দিয়ে দীর্ঘায়িত৷ এটি উধারবন্দকে ভারতের অন্যান্য রাজ্য যেমন গুজরাত, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, অত্তর প্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গের সাথে এবং আসামের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহরের সাথে যুক্ত করেছে৷
ব্যাঙ্কিং পরিষেবা
- ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক-এর উধারবন্দ শাখা
- ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া-র উধারবন্দ শাখা
- বন্ধন ব্যাঙ্ক-এর উধারবন্দ শাখা
- আসাম গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্ক-এর উধারবন্দ শাখা
এটিএম পরিষেবা
এসবিআই মেইন রোড, উধারবন্দ৷ এসবিআই উত্তরপাড়া৷ এসবিআই হাসপাতাল রোড৷ ইউবিআই বাসস্ট্যান্ড৷ অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক বাসস্ট্যান্ড৷
রাজনীতি
উধারবন্দ শহরটি শিলচর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত[3] উধারবন্দ বিধানসভা কেন্দ্রের অংশ৷
তথ্যসূত্র
- http://cachar.gov.in/information-services/police-fire-service
- https://www.census2011.co.in/data/subdistrict/2098-udarbond-cachar-assam.html
- "List of Parliamentary & Assembly Constituencies" (পিডিএফ)। Assam। Election Commission of India। ২০০৬-০৫-০৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।