উত্তরা গণভবন সংগ্রহশালা

বাংলাদেশের নাটোর জেলার উত্তরা গণভবনের মধ্যে উত্তরা গণভবন সংগ্রহশালা অবস্থিত ।[1][2] যা ২০১৮ সালের ৯মার্চ স্থাপিত হয়। [3][4] উত্তরা গণভবনের পুরাতন ট্রেজারি ভবনে স্থাপিত সংগ্রহশালায় বিভিন্ন রাজার আমলের অন্তত শতাধিক জিনিসপত্র স্থান পেয়েছে।[5] মন্ত্রী পরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সংগ্রহশালাটি উদ্বোধন করেন। [5]

উত্তরা গণভবন সংগ্রহশালা
উত্তরা গণভবন সংগ্রহশালা
স্থাপিত মার্চ ২০১৮ (2018-03-09)
অবস্থানউত্তরা গণভবন, নাটোর, বাংলাদেশ
ধরনসংগ্রহশালা জাদুঘর
সংগ্রহদিঘাপতিয়া রাজপরিবারের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সংগ্রহশালা
প্রতিষ্ঠাতাজেলা প্রশাসক, নাটোর
মালিকগণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
নিকটবর্তী গাড়ি পার্কিংউত্তরা গণভবন প্রাঙ্গণ (পার্কিং চার্জ প্রযোজ্য)

বর্ণনায় সংগ্রহশালা

উত্তরা গণভবন সংগ্রহশালার সামনে
সংগ্রহশালার সামনের বোর্ড
সংগ্রহশালা কাউন্টার

নাটোরের উত্তরা গণভবনের সংগ্রহশালা রাজার আমলের শতাধিক দুষ্প্রাপ্য সামগ্রীর সমাহারে সাজানো হয়েছে।[4] অতীতের সাথে বর্তমানের মেলবন্ধন তৈরী করেছে   এই সংগ্রহশালা।

সংগ্রহশালার করিডরে রাজা প্রমদানাথ রায় ও সস্ত্রীক রাজা দয়ারাম রায়ের ছবি আর রাজবাড়ীর সংক্ষিপ্ত বিবরণ। মার্বেল পাথরের রাজকীয় বাথটাব। ডান পাশের কক্ষে রাজার পালংক, ঘূর্ণায়মান চেয়ার, টেবিল, আরাম চেয়ার আর ড্রেসিং টেবিল স্থাপন করে যেন তৈরী করা হয়েছে রাজার শয়ন কক্ষ।

বাম পাশের দ্বিতীয় কক্ষে শোভা বাড়াচ্ছে রাজ সিংহাসন, রাজার মুকুট আর রাজার গাউন। আরও আছে মার্বেল পাথরের থালা, বাটি, কাঁচের জার, পিতলের গোলাপ জলদানী, চিনামাটির ডিনার সেট। এই কক্ষে লেখক গবেষকরা অনায়াসে লেখার উপাদান পেয়ে যাবেন রাজ পরিবারের লাইব্রেরির বই আর শেষ রাজা প্রতিভা নাথ রায়ের ইন্সুরেন্স বিষয়ক কাগজপত্রের মধ্যে।

একটি কক্ষ রাজকুমারী ইন্দুপ্রভা চৌধুরাণীর। সুলেখক ইন্দুপ্রভাকে রাখা হয়েছে তারই পিতলের ছবির ফ্রেমে। আছে তার ব্যক্তিগত ডায়েরি, আত্মজীবনী, পান্ডুলিপি ও তার কাছে লেখা স্বামী মহেন্দ্র নাথ চৌধুরীর রাশি রাশি চিঠি[6]

দর্শনার্থীদের জন্যে ইন্দুপ্রভার লেখা বঙ্গোপসাগর কবিতাটি ফ্রেমে বাধাই করে দেয়ালে টানানো হয়েছে। ৬৭ লাইনের এই কবিতায় মুগ্ধ কবি বর্ণনা করেছেন বঙ্গোপসাগরের অপরুপ সৌন্দর্য।

করিডোর ছাড়াও সংগ্রহশালার দশটি কক্ষের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছে দৃষ্টি নন্দন সব আসবাবপত্র। বিশেষ করে রকমারি সব টেবিল। এরমধ্যে ডিম্বাকৃতির টেবিল, গোলাকার টেবিল, দোতলা টেবিল, প্রসাধনী টেবিল, অস্টভূজ টেবিল, চর্তুভূজ টেবিল, কর্ণার টেবিল, গার্ডেন ফ্যান কাম টি টেবিল ইত্যাদি।

প্রায় ৩০০ বছর আগে ১৭৩৪ খ্রিস্টাব্দে দয়ারাম রায় উত্তরা গণভবন খ্যাত দিঘাপতিয়া রাজবাড়ীর গোড়াপত্তন করেন। ১৮৯৭ সালের প্রলয়ংকারী ভূমিকম্পে রাজবাড়িটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়ার পর থেকে ১৯০৮ সাল পর্যন্ত ১১ বছর ধরে বিদেশী বিশেষজ্ঞ, প্রকোশলী, চিত্রশিল্পি এবং কারিগরদের সহায়তায়  এই নয়নাভিরাম রাজপ্রাসাদ নির্মাণ করেন। দিঘাপতিয়া রাজপরিবারকে নিয়েই এই সংগ্রহশালার পূর্ণতা দেয়া হয়েছে।

সংগ্রহের বর্ণনা

১৬৭ বছরের পুরনো স্বর্ণের প্রলেপযুক্ত বই ‘বানিয়ান’স পিলগ্রিন’স প্রোগ্রেস এবং আন্তর্জাতিক মানচিত্র ‘ভিক্টোরিয়া এটলাস অব দ্য ওয়ার্ল্ড’, রাজার স্মৃতিবিজড়িত দেয়াল ঘড়ি, রাজপরিবারের কলিংবেল ও শেষ রাজকুমার (বড় রাজকুমার) প্রভাত কুমার রায়ের ছবি নাটোরের উত্তরা গণভবনের সংগ্রহশালায় হস্তান্তর করা হয়েছে। নাটোরের  দিঘাপতিয়া পিএন স্কুল কর্তৃপক্ষ গণভবন সংগ্রহশালার জন্য রাজপরিবারের স্মৃতিবিজড়িত এসব সামগ্রী হস্তান্তর করে। [7]

এছাড়া রাজপরিবারের  ব্যবহৃত হারানো সিন্দুক, পাঠা বলি দেওয়ার খড়্গ্, হরিনের মাথা অনেক দিন ধরে নিখোঁজ ছিল যা নাটোরের জেলা প্রশাসক দিঘাপতিয়া অঞ্চল থেকে উদ্ধার করে এবং উত্তরা গণভবন সংগ্রহশালায় স্থান দেয়। [8]

সংগৃহীত নিদর্শন

উত্তরা গণভবন সংগ্রহশালায় সংগৃহীত নিদর্শনের সংখ্যা প্রায় শতাধিক। প্রতিটি নিদর্শনের একটি একসেশন নম্বর প্রদানের  কাজ চলছে। নিদর্শনের নাম ও সংক্ষিপ্ত পরিচয় নিয়ে কম্পিউটার ডেটাবেইস প্রণয়ন করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি  নিদর্শনের মুদ্রিত বর্ণনামূলক ক্যাটালগ আছে। সংগৃহীত নিদর্শনসমূহের  সবগুলো  ১০টি প্রদর্শন কক্ষে জনসাধারণের দর্শনের জন্য সাজিয়ে রাখা আছে। তারমধ্যে  একটি কক্ষ রাজকুমারী ইন্দুপ্রভা চৌধুরাণীর। সুলেখক ইন্দ্রপ্রভাকে রাখা হয়েছে তারই পিতলের ছবির ফ্রেমে। আছে তার ব্যক্তিগত ডায়েরি, আত্মজীবনী, পান্ডুলিপি ও তার কাছে লেখা স্বামী মহেন্দ্র নাথ চৌধুরীর রাশি রাশি চিঠি।[5]

দর্শনার্থীদের জন্যে ইন্দুপ্রভার লেখা বঙ্গোপসাগর কবিতাটি ফ্রেমে বাধাই করে দেয়ালে টানানো হয়েছে। ৬৭ লাইনের এই কবিতায় মুগ্ধ কবি বর্ণনা করেছেন বঙ্গোপসাগরের অপরুপ সৌন্দর্য। অন্য এক কক্ষে সোভা পেয়েছে ততকালীন রাজপরিবারের বিভিন্ন মূহুর্তের ছবি যা উত্তরা গণভবন সংগ্রহশালা গ্যালারি নামে পরিচিত রুমটিতে রাখা আছে। এছাড়া আরো কিছু ফাঁকা কক্ষে রাজপরিবারের প্রাচীন নিদর্শন দিয়ে পূর্ণ করার কাজ চলছে।

দর্শনার্থী

উত্তরা গণভবন সংগ্রহশালায় প্রতিদিন গড়ে ১৫০-২০০ জনের বেশি দর্শনার্থী পরিদর্শনে আসেন। এদের মধ্যে বিদেশীরাও আছেন। দর্শনীর পরিমাণ ৪০ টাকা, ছাত্রদের জন্য ৫০% ছাড় বা ২০ টাকা। বিদেশীদের জন্য ১০০ টাকা। তবে সার্কভুক্ত দেশের দর্শনার্থীরা ৪০টাকার টিকেটেই প্রবেশাধিকার পাবেন। [4]

ব্যবস্থাপনা কাঠামো

উত্তরা গণভবন সংগ্রহশালা নাটোরের জেলা প্রশাসকের দ্বারা ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের গনপূর্ত বিভাগের  দ্বারা পরিচালিত  হয়ে আসছে। [2]

দর্শনের সময়

উত্তরা গণভবন সংগ্রহশালাটি গ্রীষ্মকালীন সময়সূচী হলো বেলা ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। দুপুর ১টা থেকে ত্রিশ মিনিট মধ্যাহ্ন বিরতি। আর শীত কালীন সময়সূচী হলো সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা। দুপুর ১টা থেকে ৩০ মিনিট মধ্যাহ্ন বিরতি। উত্তরা গণভবন সংগ্রহশালা শুক্র-শনিবার ছাড়া  সরকারি ছুটির দিনগুলোতে বন্ধ থাকে। [4]

আরো দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. সংগ্রহশালা। "উত্তরা গণভবন সংগ্রহশালা নাটোর"uttaraganabhaban.gov.bd
  2. "উত্তরা গণভবনে সংগ্রহশালা ও চিড়িয়াখানা উদ্বোধন | ব্রেকিংনিউজ.কম.বিডি"ব্রেকিংনিউজ.কম.বিডি। ২০১৮-১১-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১০-২২
  3. "উত্তরা গণভবনে সংগ্রহশালা ও চিড়িয়াখানা উদ্বোধন"ব্রেকিংনিউজ.কম.বিডি। ২০১৮-১১-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১০-২২
  4. "সংগ্রহশালা – Uttara Ganabhaban"uttaraganabhaban.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১০-২২
  5. "উত্তরা গণভবন দর্শণার্থীদের জন্য ৮০ভাগ এলাকা উন্মুক্ত: সংগ্রহশালার যাত্রা শুরু"silkcitynews.com। ২০১৮-১১-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১০-২২
  6. "উত্তরা গণভবন দর্শণার্থীদের জন্য ৮০ভাগ এলাকা উন্মুক্ত: সংগ্রহশালার যাত্রা শুরু | Silkcity News"silkcitynews.com। ২০১৮-১১-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১০-২২
  7. Bhorerkagoj। "উত্তরা গণভবন সংগ্রহশালা  : রাজপরিবারের ব্যবহৃত সামগ্রী হস্তান্তর"www.bhorerkagoj.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১০-২২
  8. "উত্তরা গণভবনের হারিয়ে যাওয়া সিন্দুক মিলেছে"কালের কণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১০-২২
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.