উচ্চ লম্ফ

উচ্চ লম্ফ হল একটি ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড ইভেন্ট যেখানে প্রতিযোগীদের মাপা উচ্চতায় স্থাপন করা একটি অনুভূমিক দন্ডের উপর দিয়ে, কোন সাহায্য ছাড়া, ঝাঁপিয়ে যেতে হয়, দন্ডটিকে ফেলে না দিয়ে। এর আধুনিকতম অনুশীলিত বিন্যাসে, মাপ বিশিষ্ট দুটি উল্লম্ব দন্ডের মধ্যে একটি অনুভূমিক দন্ড স্থাপন করা হয় এবং অবতরণের জন্য একটি নিরাপদ মোটা গদি থাকে। আধুনিক যুগে, ক্রীড়াবিদরা দন্ডের দিকে ছুটে যায় এবং ফসবারি ফ্লপ লম্ফন পদ্ধতিটি ব্যবহার করে। এই পদ্ধতিতে মাথা প্রথমে এগিয়ে যায় এবং পিঠের দিকটি দন্ডের দিকে থাকে। প্রাচীন কাল থেকে, নানারকম কার্যকর কৌশল ব্যবহার করে প্রতিযোগীরা বর্তমান অবস্থায় পৌঁছেছে।

অ্যাথলেটিক্স
উচ্চ লম্ফ
কানাডার উচ্চ লম্ফ ক্রীড়াবিদ নিকোল ফরেস্টার "ফসবারি ফ্লপ" প্রদর্শন করছেন
পুরুষদের রেকর্ড
বিশ্বরেকর্ডজ্যাভিয়ার সোটোমায়োর 2.45 মি. (8 ফু. 0 ই.) (১৯৯৩)
অলিম্পিক রেকর্ডচার্লস অস্টিন 2.39 মি. (7 ফু. 10 ই.) (১৯৯৬)
প্রমিলাদের রেকর্ড
বিশ্বরেকর্ডস্টেফকা কোস্তাদিনোভা 2.09 মি. (6 ফু. 10 ই.) (১৯৮৭)
অলিম্পিক রেকর্ডইয়েলেনা স্লেসারেঙ্কো 2.06 মি. (6 ফু. 9 ই.) (২০০৪)

পোল ভল্টের সাথে এই খেলাটি অলিম্পিক অ্যাথলেটিকসে স্থান পাওয়া উল্লম্ব দৈর্ঘ্য পার করার দুটি প্রতিযোগিতার মধ্যে একটি। বিশ্ব অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপ এবং আইএএএফ বিশ্ব ইনডোর চ্যাম্পিয়নশিপে এই প্রতিযোগিতাটি হয়। ট্র্যাক এবং ফিল্ড প্রতিযোগিতায় এটি থাকেই। মহিলাদের জন্য গ্রহণযোগ্য বলে মনে করা প্রথম প্রতিযোগিতাগুলির মধ্যে উচ্চ লম্ফ ছিল এবং ১৯২৮ অলিম্পিক গেমসে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

জাভিয়ের সোটোমায়োর (কিউবা) বর্তমানে পুরুষদের বিভাগে সর্বোচ্চ লম্ফনের রেকর্ডধারক, তিনি ১৯৯৩ সালে লাফিয়েছিলেন ২.৪৫ মিটার;– পুরুষদের উচ্চ লম্ফনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ লম্ফের দীর্ঘদিন ব্যাপী স্থায়ী রেকর্ড। স্টেফকা কোস্টাডিনোভা (বুলগেরিয়া), ১৯৮৭ সাল থেকে, মহিলাদের বিভাগে বিশ্ব রেকর্ডের অধিকারী, তাঁর মান ছিল ২.০৯ মিটার, এটিও দীর্ঘতম দিন ধরে স্থায়ী রেকর্ড।

জাভিয়ের সোটোমায়োর, একমাত্র ব্যক্তি যিনি ৮ ফুট উঁচুতে লাফিয়েছেন

উচ্চ লম্ফের নিয়মাবলী

ইয়েলেনা স্লেসারেঙ্কো ফসবারি ফ্লপ কৌশলটি ব্যবহার করার সময় বারটিকে আঘাত করে ফেলেছেন।

উচ্চ লাফের জন্য নিয়মগুলি আন্তর্জাতিকভাবে আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন (আইএএএফ) দ্বারা নির্ধারিত হয়েছে।

১. উচ্চ লম্ফ শুরুর পূর্বে প্রতিযোগীদের লাফের উচ্চতা সম্পর্কে অবহিত করতে হবে এবং প্রতি রাউন্ড উচ্চতা কি পরিমাণ বাড়াতে হবে তা ঘোষণা করতে হবে।

২. প্রতি পর্ব বা রাউন্ড শেষে কমপক্ষে ২ সেন্টিমিটার উঠাতে হবে।

৩. দৌড়পথ বা রানওয়ের দৈর্ঘ্য কমপক্ষে ১৫ মিটার হবে।

৪. একজন প্রতিযোগী তার সুবিধার জন্য প্রাক-লম্ফ দৌড় (রানআপ) ও উত্থান (টেক-অফ) মিলানোর জন্য একাধিক নির্দেশক বা মার্কার ব্যবহার করতে পারবে।

৫. দু’খুঁটির মধ্যে দূরত্ব থাকবে ৪.০৪ মিটার।

৬. আনুভূমিক দন্ড বা ক্রসবার ধাতু, কাঠ বা ঐ জাতীয় কোন বস্তু দ্বারা তৈরি হবে। দৈর্ঘ্য হবে ৩.৯৮ থেকে ৪.০২ মিটার। ব্যাস ২৯ মিঃমিঃ থেকে ৩১ মিঃমিঃ।

৭. উচ্চ লম্ফের অবতরণ এলাকা বা ল্যান্ডিং এরিয়ার মাপ ৫×৫ মিটার।

৮. প্রতিযোগীকে অবশ্যই এক পায়ে লাফাতে হবে।

একজন প্রতিযোগী কখন একটি সুযোগ হারায়-

ক) নাম ডাকার ৯০ সেকেন্ডের মধ্যে লাফ দিতে না পারলে।

খ) দু’ পায়ে লাফ দিলে বা টেক অফ নিলে।

গ) লাফ দেওয়ার সময় আনুভূমিক দন্ড বা ক্রসবার পড়ে গেলে।

ঘ) তিনবার সঠিক লাফ না হলে।

যে মূলপর্বে সবচেয়ে বেশি উচ্চতায় লাফায়, সে বিজয়ী হয়। যে কোন স্থানের জন্য একই মাপে লাফানো একাধিক প্রতিযোগী থাকলে টাইভাঙা পদ্ধতি নেওয়া হয়। এই পদ্ধতিতে সে বিজয়ী হয় যার: ১) টাইভাঙাতে সবচেয়ে কম ভুল লাফ হয়েছে; এবং ২) সারা প্রতিযোগিতা জুড়ে সবচেয়ে কম ভুল হয়েছে।

যদি প্রতিযোগিতাটি প্রথম স্থানের জন্য হয় (বা পরবর্তী প্রতিযোগিতায় স্থান পাওয়ার জন্য হয়), পরের বৃহত্তর উচ্চতাকে উদ্দেশ্য করে লাফ শুরু হয়। প্রতিটি প্রতিযোগী একবার সুযোগ পায়। এরপরে বারটি পর্যায়ক্রমে নিচে নামানো হয় এবং ওঠানো হয় যতক্ষণ না কেবল একজন প্রতিযোগী একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় সফল হয়।[1]

ইতিহাস

কনস্টান্টিনোস সিক্লিটিরাস ১৯১২ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের দন্ডায়মান উচ্চ লম্ফ প্রতিযোগিতার সময়

প্রথম নথিভুক্ত উচ্চ লম্ফ প্রতিযোগিতাটি ১৯ শতকে স্কটল্যান্ডে হয়েছিল। প্রারম্ভিক প্রতিযোগীরা বিস্তৃত স্ট্রেট-অন পদ্ধতির অথবা কাঁচি কৌশল ব্যবহার করেছিল। পরবর্তী বছরগুলিতে, তারপরে খুব শীঘ্রই, তির্যকভাবে বারের দিকে দৌড় শুরু করা হত, এবং প্রতিযোগী প্রথমে ভিতরের পা এবং তারপরে অন্য পা কে একটি কাঁচি চলার মত করে বারের উপরে ফেলে দিত। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে, কৌশলগুলি পরিবর্তিত হতে শুরু হয়। আইরিশ-আমেরিকান মাইকেল সুইনির ইস্টার্ন কাট অফ দিয়ে এই পরিবর্তন শুরু হয়। কাঁচির চলার মতো শুরু করে এবং তার মেরুদণ্ড প্রসারিত করে এবং বারের উপরে চ্যাপ্টা করে, সুইনি ১৯৮৫ সালে ১.৯৭ মিটার লাফিয়ে বিশ্ব রেকর্ড করেন।

আরেক আমেরিকান, জর্জ হোরিন আরও কার্যকর একটি প্রযুক্তি শুরু করেছিলেন, যার নাম ছিল ওয়েস্টার্ন রোল । এই পদ্ধতিতে, আবার তির্যকভাবে বারের কাছে পৌঁছোনো হত, তবে লাফ দেবার জন্য ভিতরের পা ব্যবহৃত হত, যখন বাইরের পায়ের কাজ ছিল বারের উপর দিয়ে দেহকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। ১৯১২ সালে হোরিন বিশ্বমানকে ২.০১ মিটারে নিয়ে যান। ১৯৩৬ সালের বার্লিন অলিম্পিকে তাঁর কৌশলটি প্রাধান্য পেয়েছিল, সেবারে জিতেছিলেন কর্নেলিয়াস জনসন, ২.০৩ মিটার লাফিয়ে।

আমেরিকান এবং সোভিয়েত উচ্চ লম্ফনকারীরা পরবর্তী চার দশক ধরে সবচেয়ে সফল ছিল, এবং তারা স্ট্র্যাডেল কৌশলে বিবর্তনের সূচনা করেছিল। স্ট্র্যাডল লম্ফনকারীরা ওয়েস্টার্ন রোলের মতোই শুরু করত, তবে তাদের (পেট নিচের দিকে) শরীরটি বারের চারদিকে ঘোরাত। এই কৌশলে সেই সময়ে সর্বোচ্চ দক্ষতা এবং সর্বাধিক উচ্চতা (বারের) পাওয়া গিয়েছিল। ১৯৫৬ সালে স্ট্র্যাডেল লম্ফনকারী, চার্লস ডুমাস প্রথম ৭ ফুট (২.১৩ মি) লাফিয়েছিলেন, এরপর আমেরিকান জন থমাস ১৯৬০ সালে এই মানকে তোলেন ২.২৩ মিটারে। পরবর্তী চার বছর ভ্যালারি ব্রুমেল এই প্রতিযোগিতায় প্রথম ছিলেন। এই সুন্দর সোভিয়েত উচ্চ লম্ফনকারী তাঁর দৌড়কে ধীরে ধীরে বাড়িয়ে দন্ড পর্যন্ত পৌঁছোতেন। তিনি লাফিয়েছিলেন ২.২৮ মিটার উচ্চতা, এবং ১৯৬৪ সালে অলিম্পিক স্বর্ণপদক জিতেছিলেন। এরপর মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় তাঁর খেলোয়াড় জীবন শেষ হয়ে যায়।

আরো দেখুন

  • List of high jump national champions (men)
  • List of high jump national champions (women)
  • Standing high jump

টীকা এবং তথ্যসূত্র

  • The Complete Book of Track and Field, by Tom McNab
  • The World Almanac and Book of Facts, 2000
  1. "Archived copy" (পিডিএফ)। অক্টোবর ১১, ২০১১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ১০, ২০১১ iaaf rules

বহিঃসংযোগ

টেমপ্লেট:High jump techniques

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.