ইসলামে বহুবিবাহ
ইসলামিক বিবাহের আইনমতে, সুন্নি এবং শিয়া পুরুষরা বহুবিবাহ করতে পারে। এর ফলে পুরুষরা একইসাথে সর্বোচ্চ চারজন স্ত্রী রাখতে পারবে। তবে বিপরীত ক্রমে একই নারী একাধিক স্বামী রাখতে পারবেন না।
ফিকহ (ইসলামি আইনশাস্ত্র) |
---|
এর একটি ধারাবাহিক অংশ |
ইসলামিক স্টাডিজ |
মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এই বহুবিবাহের চর্চায় ভিন্নতা আছে। কিছু মুসলিম দেশে এটা খুব সাধারণ আবার কিছু দেশ যেমন: আজারবাইজান, তিউনিশিয়া এবং তুরস্কে বিবাহের ক্ষেত্রে ইসলামিক আইনকে গ্রহণ করা হয় নি। ফলে সেখানে বহুবিবাহ বৈধ নয়।
প্রথম দিককার আলেমদের মতামত
প্রথম দিককার আলেমরা এই বিষয়টি সমর্থন করতেন যে ইসলামিক আইন বহুবিবাহের অনুমতি দেয়। তবে যেখানে পুরুষটি ন্যায্যভাবে দুজনের অধিকার পূরণ করতে অক্ষম হওয়ার ভয় পায় তখন "শুধু একজনকে বিয়ে করো" এই ঐশ্বরিক আদেশকে প্রয়োগ করার উপর জোর দিয়েছেন। প্রাচীন আলেমদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ একাধিক স্ত্রীর মধ্যে সম্পূর্ণ সমতা নিশ্চিত করার বিষয়টি আরও বিস্তৃত করেছেন।[1]
তাদের মতামত ইজতিহাদ (স্বাধীন আইনি যুক্তি) থেকে উদ্ভূত। তাদের মতামত অনুযায়ী একটি বিবাহ করা বহুবিবাহ করা থেকে (এমনকি একাধিক স্ত্রীর পরিবারকে ন্যায়বিচার দিতে সক্ষম পুরুষ ব্যক্তির জন্যও) অগ্রাধিকারযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।[2]
এই মতামতটি হাম্বলী এবং শাফিঈ মাযহাবের আইনশাস্ত্রে সংযোজন করা হয়েছে যে একজন মুসলিম পুরুষের জন্য শুধুমাত্র একটি স্ত্রী রাখা বাঞ্ছনীয়, এমনকি যদি সে একাধিক মহিলার সাথে ন্যায়সঙ্গত আচরণ করতে পারে।
শাফিঈ মাযহাবের আইনশাস্ত্রের আশ-শিরবেনি বলেছেন: "আপাত প্রয়োজন না থাকলে একাধিক স্ত্রীকে বিয়ে না করাই সুন্নত।" [মুগনী আল-মুহতাজ 4/207]।[3]
শাফিঈ মাযহাবের আল-মাওয়ার্দী বলেছেন: "আল্লাহ একজন পুরুষকে চারটি স্ত্রী পর্যন্ত বিয়ে করার অনুমতি দিয়েছেন, বলেছেন: {...দুই বা তিন বা চার...}, কিন্তু আল্লাহ পরামর্শ দিয়েছেন যে এটি মানুষের জন্য কাম্য যে সে শুধুমাত্র একটি স্ত্রীকে বিয়ে করবে, কারণ আল্লাহ বলেছেন: {...কিন্তু যদি আপনি ভয় করেন যে আপনি ন্যায়পরায়ণ হতে পারবেন না, তবে [শুধু একজনকে বিয়ে করুন]" [আল-হাুউই আল-কাবির ১১/৪১৭]।[3]
হাম্বলী মাযহাবের ইবনু কুদামাহ, আশ-শারহ আল-কাবীরে বলেছেন: "একজন স্ত্রীকে বিয়ে করাই অধিকতর উপযুক্ত। আল-মুহারর এর লেখক [অর্থাৎ আবুল বারাকাত আল-মাজদ ইবনে তাইমিয়া] এটি বলেছেন, আল্লাহর এই বাণীর উপর ভিত্তি করে (যার অর্থ) {...কিন্তু যদি তুমি ভয় কর যে তুমি ন্যায়পরায়ণ হতে পারবে না, তবে [শুধুমাত্র একজনকে] বিয়ে কর}। [শামস-উদ-দীন ইবনে কুদামাহ কর্তৃক রচিত আশ-শারহ আল-কাবীর]।[3]
শাফেয়ী মাযহাবের ইমাম আহমেদ ইবনে নকিব আল মাসরি বলেছেন, ‘‘নিজেকে শুধুমাত্র একজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখাই উপযুক্ত’’ [উমদাতু সালিক]।
শাফিই মাযহাব থেকে ইমাম গাজ্জালি বলেছেন: "এটি দুই বিয়ে করতে বলা নয়, [যেহেতু] বহু বিবাহ জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলতে পারে এবং বাড়ির প্রাত্যহিক বিষয়গুলিকে ব্যাহত করতে পারে।" [কিতাব আল নিকাহ, ইহইয়া উলূম উদ্দীন]।
ইমাম শাফিঈ বহুবিবাহের ইসলামি আইন এবং এই প্রাচীন প্রথার উপর আরোপিত ঐশ্বরিক সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনা করে মূল আয়াতের চূড়ান্ত ধারার জন্য একটি অতিরিক্ত ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন।[4] তাঁর মতে সুরা নিসার তৃতীয় আয়াতের শেষ অংশঃ
"এটি আরও উপযুক্ত যে আপনি অন্যায়ের দিকে ঝুঁকবেন না"
এই বাক্যাংশকে "এটি আরও উপযুক্ত যে আপনি অনেক সন্তানের দ্বারা আর্থিকভাবে চাপে না পড়তে পারেন" হিসাবে ব্যাখ্যা করা উচিত।
ইমাম শাফেঈ যুক্তি দেখিয়েছেন যে কোরাআনে ইতিমধ্যেই অন্যায় সংঘঠিত হওয়ার ভয়কে একবারের বেশি বিয়ে না করার কারণ হিসাবে দেখানো হয়েছে, তাই একই আয়াতে একের বেশি বিয়ে করার জন্য বলা অর্থহীন।
তার বিকল্প ব্যাখ্যাটির পক্ষে এই যুক্তিও রয়েছে যে একজন পুরুষের দাম্পত্য জীবনে একাধিক নারীর উপস্থিতি অবাঞ্ছিতভাবে বিপুল সংখ্যক সন্তানের জন্ম দেবে, যা ভবিষ্যতে আর্থিক কষ্ট এবং দারিদ্র্যের একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে।
তিনি এই বিষয়ে জোর দিয়েছেন যে ইসলামিক আইন শিশুদের কল্যাণ এবং বৈধ (হালাল) আয়ের মাধ্যমে শিশুদের লালন-পালনের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। ইমাম শাফি এই অভিমত ব্যক্ত করেছেনঃ একজন পুরুষের জন্য কোরানে একবার বিয়ে করার নিয়ম করা হয়েছে। কারণ একাধিক বিবাহের কারণে একটি পরিবারের জনসংখ্যা বৃদ্ধি হয়। ফলে যে ব্যক্তি একাধিকবার বিয়ে করে সে সম্ভাব্য আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়তে পারে।[1]
আশ-শাফিঈ মনে করেন যে, শুধুমাত্র একজনকে বিয়ে করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা বাঞ্ছনীয়, যদিও একাধিক বিয়ে করা বৈধ। এটি একজনের তুলনায় অন্যজনের প্রতি বেশি ঝোঁকে পড়া বা আর্থিকভাবে তাদের সহায়তা করতে অক্ষম হওয়া এড়ানোর জন্য। [আল-হাউই আল-কবীর ১১/৪১৭]।[3]
বহুবিবাহের জন্য ধর্মীয় গ্রন্থ
বহুবিবাহ প্রসঙ্গে কুরআনের ৪ নং সুরার ৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে
"আর যদি তোমাদের এ আশঙ্কা থাকে, যে তোমরা এতিম (মহিলা)-দের সাথে ন্যায় বিচার করতে পারবে না, তাহলে সাধারণ নারীদের মাঝ থেকে তোমাদের যাঁদের ভাল লাগে, তাঁদের দুইজন, তিনজন কিংবা চারজনকে বিয়ে করে নাও। কিন্তু যদি তোমাদের এই ভয় হয়, যে তোমরা ন্যায় বিচার করতে পারবে না, তাহলে তোমাদের জন্য একজনই যথেষ্ট। কিংবা যে তোমাদের ডান হাতের অধিকারভূক্ত; তাঁকেই যথেষ্ট মনে করে নাও। সীমালঙ্ঘন থেকে বেঁচে থাকার জন্য এটাই হচ্ছে সহজতর পন্থা।"
এখানে ("ডান হাতের অধিকারভুক্ত" মানে দাসী) একে নিজের ইচ্ছানুসারে নানাভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। যাইহোক, এটা জানা প্রয়োজন, কুরআনের এই উক্ত আয়াত কবে উচ্চারিত হয়েছিল। অর্থাৎ, আয়াত নাজিল বা সাধারণ মানুষ যখন জেনেছে, সে ঐতিহাসিক সময়ের দিক থেকে কুরআনের এই আয়াতকে বর্ণনা করা উচিত। এই আয়াত প্রথম প্রকাশিত হয় উহুদের যুদ্ধের পর, সেসময় অনেক পুরুষ মারা যায়। ফলে অনেক নারী বিধবা এবং এতিম হয়ে যান। অনেকে বলেন, এই আয়াত নাজিল হওয়ার অন্যতম কারণ, নবী ও ইসলামের জন্য মৃত্যুবরণ করা স্বামী হারানো বিধবা নারী ও পিতা হারানো অনাথ সন্তানের জন্য আল্লাহ উদ্বিগ্ন হওয়ায় এই আয়াত নাজিল করেছেন। যাতে করে অনাথ সন্তান বা বিধবা নারীরা একটা আশ্রয় পায়। এখানে যৌনতা বা পুরুষ শাসিত সমাজ সংক্রান্ত কিছু নেই।[6]
ইমাম বুখারি রহ. দ্বারা সংকলিত বুখারী শরীফে হাদিসে সুরা নিসা এর ৩ নং আয়াতটিকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
যুহরী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘উরওয়াহ (রহ.) আমাকে অবহিত করেছেন যে, তিনি ‘আয়িশাহ -কে আল্লাহর এ বাণী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেনঃ ‘‘যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, ইয়াতীমদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তবে নারীদের মধ্য হতে নিজেদের পছন্দমত দুই-দুই, তিন-তিন ও চার-চার জনকে বিয়ে কর, কিন্তু যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, তোমরা সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে একজনকে কিংবা তোমাদের অধীনস্থ দাসীকে; এটাই হবে অবিচার না করার কাছাকাছি।’’(সুরা আন-নিসাঃ ৩) হযরত আয়িশাহ বলেন, হে ভাগ্নে! এক ইয়াতীম বালিকা এমন একজন অভিভাবকের তত্ত্বাবধানে ছিল, যে তার সম্পদ ও রূপের প্রতি আকৃষ্ট ছিল। সে তাকে যথোচিতের চেয়ে কম মাহর দিয়ে বিয়েকরার ইচ্ছা করে। তখন লোকদেরকে নিষেধ করা হলো ঐসব ইয়াতীমদের বিয়ে করার ব্যাপারে। তবে যদি তারা সুবিচার করে ও পূর্ণ মাহর আদায় করে (তাহলে বিয়ে করতে পারবে)। (অন্যথায়) তাদের বাদ দিয়ে অন্য নারীদের বিয়ে করার আদেশ করা হলো।
— ইমাম বুখারী কর্তৃক সংগৃহীত, পাবলিশারঃ তাওহীদ পাবলিকেশন/গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (তাওহীদ)/অধ্যায়ঃ ৬৭/বিয়ে (كتاب النكاح), হাদিস নং ৫০৬৪
পবিত্র কুরআনের সুরা নিসা ৪:২নং আয়াত দ্বারা বুঝা যাবে, এখানে বলা হয়েছে "এতীমদেরকে তাদের সম্পদ বুঝিয়ে দাও। খারাপ মালামালের সাথে ভালো মালামালের অদল-বদল করো না। আর তাদের ধন-সম্পদ নিজেদের ধন-সম্পদের সাথে সংমিশ্রিত করে তা গ্রাস করো না। নিশ্চয় এটা বড়ই মন্দ কাজ।"[7] আয়াত ৪:৩ এর প্রথম অংশে পুরুষ অভিভাবকের দায়িত্বে থাকা এতিম নারীদের সাথে ন্যায্য ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।
আয়াত ৪:৩ এর দ্বিতীয় অংশে বলা হয়েছে, যদি তুমি তাদের সাথে ন্যায্য ভাবে ব্যবহার করতে না পারো, তাহলে তোমার ডান হাতের অধিকারভুক্ত একজন অথবা দাসীকে বিবাহ করে, তাকে স্ত্রীর মর্যাদা দাও। এটা তোমাকে তাদের সাথে অন্যায্য আচরণ করতে বাধা দিবে।"[5] যদি একজন পুরুষ একের অধিক স্ত্রীর সাথে ন্যায়ভাবে আচরণ করতে না পারে, তবে তার একজনকেই বিবাহ করা উচিত। এটা সুষ্পষ্টভাবে পরিষ্কার যে, এই আয়াতের প্রবর্তিত হওয়ার মুল কারণ হলো নারীদের যে ক্ষতি হয়, তা পুরন করা এখানে আধুনিক সময়ে যেভাবে ব্যাখ্যা করা হয়, সেরকম পুরুষের কোনো যৌন চাহিদা মিটানোর জন্য এই আয়াত প্রবর্তিত হয় নি।[8]
ইসলামে বিবাহের প্রকৃতি নিয়ে পরীক্ষা নীরিক্ষা করে আরও বৃহত্তর কুরআনীয় আলোচনায় বহুবিবাহ সম্পর্কিত কুরআনের আয়াতগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করলে এদেরকে বুঝতে সহজ হয়। কুরআনে [৪:২১- "তোমরা কিরূপে তা গ্রহণ করতে পার, অথচ তোমাদের একজন অন্য জনের কাছে গমন এবং নারীরা তোমাদের কাছে থেকে সুদৃঢ় অঙ্গীকার গ্রহণ করেছে।"[9]] বিবাহকে মিথাক হিসেবে বলা হয়েছে যাকে স্বামী ও স্ত্রী এর মধ্যে প্রতিষ্ঠিত একটি পবিত্র বন্ধন হিসেবে মনে করা হয়, আর কুরআনের সুরা নিসা এর আয়াত নং ২১ দ্বারা এটি প্রতিষ্ঠিত। আবার এখানে বিবাহ পবিত্র বন্ধনের থেকেও বেশি কিছু। সুরা রুম এর ২১ নং আয়াতে বলা হয়েছে, "আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলি রয়েছে।"[10] কুুুরআন অনুসারে ভালোবাসা ও দয়া বিবাহের অন্যতম অংশ। যদিও কুুুরআনে
নারী ও পুরুষের ভিন্ন লৈঙ্গিক ভূমিকার কথা লেখা আছে (স্বামীকে প্রায়ই দাতা হিসেবে দেখা যায়), সুরা বাকারা এর দুই নং আয়াতে দেখা যায়, "তারা (তোমাদের স্ত্রীগণ) তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ।)"[11] তাই এটা পরিষ্কার হয় যে, ইসলামে বহুবিবাহ সম্পর্কে ধর্মগ্রন্থের ভিত্তিতে সুরা নিসা এর আয়াত নং ৩ ছাড়াও আরও অধিক আলোচনা রয়েছে।
পূর্ব ইসলামিক (জাহেলিয়া) সময়ে
ইসলামের উত্থানের পুর্বে, আরবীয় উপদ্বীপে পুরুষ এবং নারী উভয়ই বহুবিবাহে নিমজ্জিত হয়ে গিয়েছিল। তবে একজন পুরুষ একজন নারীর সাথে সারাজীবন বিবাহ বন্ধনে ছিলেন, এমনটাও বিরল ছিল না। লেইলা আহমেদ তার গবেষণামুলক কাজ ইসলামে নারী এবং লিঙ্গ তে বলেন "মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্মের সমসাময়িক কালে বিবাহ তে মার্তৃপ্রথা নিয়ম কাজ করত। মেয়েরা মায়ের সাথে থাকত, স্বামীই মেয়ের ঘরে থাকত, সহবাস করত এবং সন্তান মার্তৃবংশের নামেই পরিচিত হত। ছেলে এবং মেয়ে যেই বহুগামিতা বা বহুবিবাহ করুক না কেন, উভয়ের ক্ষেত্রে এই নিয়ম বলবৎ থাকত।"[12]
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, সেসময় একজন পুরুষ একাধিক নারীকে কোনো সীমাবদ্ধতা ছাড়া ইচ্ছামত বিবাহ করতে পারতেন। এই প্রথার বিলুপ্তি ঘটে কুরআনের আবির্ভাবের পরে। জাহেলিয়া আরবে একজন পুরুষ কয়টা বিবাহ করবে, তার কোনো বিধিনিষেধ ছিল না।[13][14] তৎকালীন মার্তৃতান্ত্রিক সময়ে পুরুষ রাজনৈতিক ও শক্তিশালী পরিবারগুলোর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য বহুবিবাহ করত।[13] এটা উল্লেখ করা প্রয়োজন, তৎকালীন সময়ে বিবাহ শুধুমাত্র ধর্মীয় বাঁধন ছিল না বরং চুক্তিমুলক ছিল।[15]
জাহেলিয়াত থেকে ইসলামিক যুগে স্থানান্তরের সময়কালে বহুবিবাহ নিয়ে অনেক বিতর্ক প্রচলিত আছে। দুইটি পরস্পরবিরোধী মতামতের একটি দিয়েছেন এওলা আহমেদ এবং অপরটি প্রকৌশলী আসগর আলী। তাদের দৃষ্টিভঙ্গী ইসলামে নারীর অবস্থান প্রশ্নে একে অপরের চেয়ে ভিন্ন।
আলির মত কেও কেও নারীর সামগ্রিক বিষয় নিয়ে বলতে গিয়ে বলেছেন, ইসলামের আবির্ভাবের পরে নারীর জীবনযাত্রায় উন্নয়ন সাধন হয়েছে। এই সমস্ত বিশেষজ্ঞরা কুরআনের আয়াতের পক্ষাবলম্বন করে যে দৃষ্টিভঙ্গি স্থাপন করেন, তা হলো, "মুহাম্মাদ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর লক্ষ্যই ছিল, নারীর উন্নয়ন করা, যা তার আমলেই সম্ভব হয়েছে।"[14] কুরআনের আয়াতগুলো প্রবর্তিত হওয়ার পুর্বে যত্রতত্র মেয়ে শিশু হত্যা হত, কন্যা সন্তান জন্মের দায়ে নারীর সাথে বিবাহ-বিচ্ছেদ হত এবং ইচ্ছামত বিবাহ করা যেত। যা কুরআনে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। মৌলভী চেরাগ আলি বিষয়টা নিয়ে বলতে গিয়ে বলেছেন, "কুরআন জাহেলিয়াতের যুগে নারীদের যে অবস্থা ছিল, তার থেকে মুক্তি দিয়েছে। প্রথমত, পুরুষের একাধিক বিয়ে করার অধিকারকে খর্ব করেছে, দ্বিতীয়ত, কুরআনে বলা হয়েছে যদি প্রত্যেক স্ত্রীর সাথে সমতা তৈরী করা না যায়, তবে এ বহুবিবাহ না করতে, যার মাধ্যমে মুলত বহুবিবাহকে অনেকাংশে হ্রাস করে দেওয়া হয়েছে।"[14] বিপরীতক্রমে লেইলার দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, কুরআনের আনয়নের মাধ্যমে যৌনতায় নারীর স্বায়ত্তশাসন হ্রাস পায়। এই দৃষ্টিকোণ হলো, জাহিলিয়া যুগে নারীরাই ছিলেন নেতার ভূমিকায়। কিন্তু ইসলামের আনয়ন পির্তৃতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে মার্তৃতান্ত্রিক অধিকার স্থানান্তরিত হয় পির্তৃতন্ত্রে।"[16]
আধুনিক ব্যাখ্যা এবং চর্চা
বেশিরভাগ মুসলিমই এই চর্চাকে সমর্থন করলেও, তারা এটাকে বাস্তব জীবনে খুব একটা প্রয়োগ করে না।[17] মুহাম্মাদ -এর সময়ে পুরুষের বহুবিবাহকে সমর্থন করা হত বলে, মুসলিমরা এই বিবাহকে ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোন থেকে সমর্থন করে।[18] অনেক দেশ আইনের মাধ্যমে এই বহুবিবাহকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে।
লিবিয়ার মত কিছু দেশ এই বিবাহের উপর কোনো আইনত বাধা প্রয়োগ করে নি।[19]
বহুবিবাহকে নিষিদ্ধ করা দেশ
প্রথম মুসলিম দেশ তুরস্ক ১৯২৬ সালে পুরুষের বহুবিবাহকে নিষিদ্ধ করে। এই নিষেধাজ্ঞা কোনো ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা ছিল না। ধর্ম নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এই নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়।[17][20] এরপর ১৯৫৬ সালে তিউনিশিয়া বহুবিবাহকে নিষিদ্ধ করে।[20] তুরস্কের মত তিউনিসিয়া ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নয় বরং দুইটি ধর্মীয় কারণে নিষিদ্ধ করেছে। প্রথমত, কুরআন পুরুষের বহুবিবাহের চর্চাকে সীমিত করেছে এবং এই চর্চাকে সমর্থন করে না, যা সময়ের সাথে সাথে বিলোপ করা কুরআনের পরিষ্কার অভিপ্রেত ছিল।[21] দ্বিতীয়ত, কুরআনে বলা হয়েছে, সমস্ত স্ত্রীর সকল চাহিদা সমান ভাবে পুরণ করা, যা অসম্ভব। একারণেই একে নিষিদ্ধ করা হয়।[21] এরপর ১৯৭৮ সালে ইসরায়েল বহুবিবাহকে নিষিদ্ধ করে।[22]
যেসব দেশ বহুবিবাহকে নিষিদ্ধ করেছে
নিম্নোক্ত দেশগুলো বহুবিবাহের চর্চাকে নিষিদ্ধ করে:
- মিশর (১৯২০)[23]
- সুদান (১৯২৯)[23]
- ভারত (১৯৩৯)[23]
- আলজেরিয়া[21]
- জর্ডান (১৯৫১)[23]
- সিরিয়া (১৯৫৩)[23]
- মরক্কো (১৯৫৮)[23]
- বাংলাদেশ[21] [বাংলাদেশে বহুবিবাহ সম্পুর্ণভাবে নিষিদ্ধ নয়। এখানে পুরুষকে বহুবিবাহ করতে হলে কিছু প্রধান শর্ত (বর্তমান স্ত্রীর বন্ধ্যাত্ব, দৈহিক দূর্বলতা, দাম্পত্য সম্পর্কের জন্য দৈহিক অনুপযুক্ততা, দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য প্রদত্ত আদালতের কোন ডিক্রিকে ইচ্ছাকৃতভাবে এড়ানো, বর্তমান স্ত্রীর মানসিক অসুস্থতা এবং এসব সমস্যা সাপেক্ষে স্ত্রীর সজ্ঞানে সম্মতি) পুরন এবং সেগুলো প্রমাণ করে, বহুবিবাহ করতে পারে।[24]]
- ইরাক (১৯৫৯)[23]
- ইরান (১৯৬৭, ১৯৭৫)[23]
- কুয়েত[21]
- লেবানন[21]
ভারত, ইরাক, বাংলাদেশ, আলজেরিয়া, লেবানন, আলজেরিয়া, মরক্কো, জর্ডান, কুয়েতে নারীকে পুরুষের বহুবিবাহ করা থেকে রোধ করতে বাধা দেওয়ার অধিকার রাখে।[21][22] পাকিস্তান, ইরানের মত অন্যান্য দেশে পুরুষ দ্বিতীয় বিবাহ করতে চাইলে, প্রথম স্ত্রী থেকে সম্মতি নিয়ে আদালতকে তার প্রমাণ দেখালে, সে বিবাহ করতে পারবে।[21] মালয়েশিয়াতে নিয়মটা কিছুটা ব্যতিক্রম। এখানে দ্বিতীয় বিবাহ করতে হলে, প্রথম ও ভবিষ্যৎ পত্নী থেকে অনুমতি নিতে হবে পাশাপাশি ধর্মীয় অথোরিটি থেকে অনুমতি নিয়ে বিবাহ করতে পারবে।[21]
যদিও বহুদেশে বহুবিবাহ নিষিদ্ধ, তবুও অবৈধভাবে চর্চা হয়। বহুবিবাহ বিরোধী আইন এবং বাধা গ্রামাঞ্চল গুলোতে প্রয়োগ করা কঠিন হয়ে যায়। স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে নারী পুরুষের উপর নির্ভরশীল থাকে। ফলে পুরুষের কথাই তার কাছে আইন। এজন্য নারী পুরুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার মতামত প্রকাশ করতে পারে না।[21]
ইরানে বহুবিবাহের চর্চা আরেকটি উপায়ে প্রচলিত আছে। এ পদ্ধতিকে বলা হয়, মুতাহ বিবাহ[22] একটি একজন নারী ও পুরুষের মধ্যে স্বল্প সময়ের জন্য চুক্তিমুলক সম্পর্ক। যদিও ধর্মীয় দিক থেকে এই মুতাহ বিবাহ আইনত সঠিক, তবে একে চরম মাত্রায় নিরুৎসাহিত করা হয়[23]
মুসলিম নারীবাদ ও বহুবিবাহ
নারীবাদের উদ্ভব
যদিও অনেক দিন ধরেই এই ধর্মের সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে নারী অধিকার অগ্রভাগেই ছিল, তবুও মুসলিম নারীবাদ একটি সম্পূর্ণ নতুন আন্দোলন। এর সূত্রপাত হয় যখন মুসলিম নারীগণ অনুধাবন করেন, তারা তাদের ধর্মগ্রন্থগুলোকে (যেগুলো মুসলিম সমাজ ও নৈতিকতা নির্ধারণ করে) পুনরায় পাঠ করে (পুনর্ব্যাখ্যা) সমাজে তাদের ভূমিকার পরিবর্তন করতে পারে। এই পুনর্ব্যাখ্যার দিকে যাওয়া ইসলামে নতুন চর্চা নয়। পুরুষ ইসলামিক পণ্ডিতগণ মুহম্মদের মৃত্যুর পর থেকেই এটি করে আসছেন, কিন্তু কখনও কোন নারীকে এমন কিছু করতে দেখা যায় নি। এবারই প্রথম যখন নারীরা কোরান ও হাদিসকে বিশ্লেষণী উপায়ে পড়া যায় তা শেখা শুরু করে। তাদের নতুন ধর্মীয় জ্ঞান তাদেরকে তাদের বিশ্বাস সম্পর্কে শিখতে এবং ধর্মগ্রন্থের শিক্ষিত ব্যাখ্যাকার হবার দিকে ধাবিত করে। এই ইসলামী নারীবাদী পণ্ডিতদের অনেকেই অনুধাবন করা শুরু করে যে ইসলাম এবং ইসলামী সমাজের পিতৃতান্ত্রিক চর্চাসমূহের মধ্যে কোন বন্ধন নেই। যেমন, এই নারীবাদীরা মুহম্মদের জীবন সম্পর্কে বিশ্লেষণ করতে শুরু করে এবং যুক্তি দেখায় যে তিনি নারীদের সাথে সেই সময় অনেক প্রগতিশীল উপায়ে ব্যবহার করতেন। মুহাম্মাদ তার ধর্মীয় চর্চায় তার সকল স্ত্রীকেই অন্তর্ভুক্ত করেন এবং তাদেরকে তিনি এতটাই সম্মান করতেন যে তাদের দুঃখ এবং উপদেশ আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করতেন। এমনকি তারা যুদ্ধেও তার সাথে অংশগ্রহণ করেন।[25] মুসলিম নারীবাদীদের কথা অনুসারে, ইসলামে বহুবিবাহের উদ্দেশ্য ছিল ইসলামপূর্ব যুগে যে বহুবিবাহের প্রথা প্রচলিত ছিল তা হ্রাস করা। সেসময় বিজয়ী শাসকগণের অনেক বড় আকারের হারেম থাকত, আর সেখানে নারীকে কোনরকম সম্মান দেয়া হত না, যেখানে ইসলাম সেই স্ত্রীর সংখ্যা কমিয়ে একটি নির্দিষ্ট মাত্রার মধ্যে নিয়ে আসে যা একজন স্বামীর জন্য প্রয়োজন হতে পারে ও যেখানে স্বামীকে তার প্রত্যেক স্ত্রীর সাথেই সমানভাবে আচরণ করতে হবে।[26] এই নারীবাদীগণ সেই ধারণাতেই জোড় দেন যে, কেবল যেসব পুরুষ তাদের স্ত্রীদেরকে সমান ভালোবাসা এবং সমানভাবে ভরন পোষণের সক্ষমতা অর্জন করতে পারবেন কেবল তাদেরকেই একাধিক স্ত্রীর অনুমোদন দেয়া হবে। তারা এও বলেন যে, ইসলামে বহুবিবাহের চর্চা শুরুর কারণ ছিল পিতৃহীন বা অনাথ শিশুর দেখাশোনা ও যত্ন নেবার উদ্দেশ্যে।[27] তাই সেসময় বহুবিবাহ পরহিতকারী ও সম্মানজনক উদ্দেশ্যে বহুবিবাহের বিধান দেয়া হয়েছিল। ইসলামী নারীবাদীগণ বলেন, "প্রাচীন দুনিয়ায় লিঙ্গ বৈষম্য বলে কিছু ছিল না, এবং খ্রিষ্ঠীয় ও ইহুদি ধর্মগ্রন্থে নারীদেরকে যেভাবে দেখা হয়েছে ইসলামী ধর্মগ্রন্থে নারীরা তার থেকে খুব একটা ভিন্ন অবস্থানে নেই" - এই কথাগুলোর ইসলাম সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞানের অভাব থেকে প্রসূত।[28]
দুজন শীর্ষস্থানীয় মুসলিম পণ্ডিত যারা ধর্মগ্রন্থের পুনর্ব্যাখ্যার মাধ্যমে নারীর অধিকার বৃদ্ধির দিকে মনোনিবেশ করেছেন তারা হলেন আমিনা ওয়াদুদ এবং আসমা বারলাস। এই দুজন নারীর মতেই ইসলাম এমন একটি ধর্ম যা লৈঙ্গিক সমতা প্রচার করে। তাদের মতে লিঙ্গ বৈষম্যের মূল কারণ সামাজিক চর্চাসমূহ, ইসলাম নয়। ওয়াদুদ বলেন, কুর'আন তিনটি ক্ষেত্রে বহুবিবাহের অনুমতি দেয়: যদি স্বামী যৌন-সন্তুষ্ট না হন এবং এরজন্য তিনি অন্য সম্পর্ক বা পতিতার কাছে না গিয়ে আরেকজন স্ত্রীর কাছে যেতে পারেন, যদি প্রথম স্ত্রী সন্তান ধারণে অক্ষম হয় বা অন্য কোন মায়ের তার সন্তান সহ দেখভালের প্রয়োজন হয়, এবং/অথবা স্বামী মুসলিম সমাজের অন্য কোন নারীর ভরন পোষণের জন্য অর্থনৈতিকভাবে যথেষ্ট সক্ষম হন।[29] ওয়াদুদের মতে, কুর'আন যেরকম বহুবিবাহ সমর্থন করে, তা হচ্ছে "ন্যায়, যেখানে ন্যায় এর সাথে আচরণ করা হয়, ন্যায় এর সাথে অর্থ ব্যবহার করা হয়, অনাথদের সাথে ন্যায় বিচার করা হয়, এবং স্ত্রীদের সাথেও ন্যায় বিচার করা হয়।"[30] বারলাস, যিনি এর কয়েক বছর পর তার তাত্ত্বিক গবেষণা প্রকাশ করেন, তিনিও একই যুক্তি দেখান। উভয় নারীবাদী পণ্ডিতই ৪:৩ আয়াতে বহুবিবাহ সম্পর্কিত ইসলামী তত্ত্বের উৎস্য সম্পর্কে বলেন। কুর'আনের এই আয়াতটি নারীকে শোষণ করার জন্য বহুবিবাহের বিধান দেবার জন্য দেয়া হয় নি, বরং নারীর যত্ন নিশ্চিত করতেই এটি দেয়া হয়।
ইসলামী দুনিয়ায় আরেকরকম নারীবাদ আছে যা স্বাধীন বা রাষ্ট্রীয় নারীবাদ। এই আন্দোলনের পেছনের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে "ইসলামী আইনগত এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থায় কোন সংস্কার সম্ভব নয় যেখানে ক্ষমতা কাঠামো চূড়ান্ত মাত্রায় পুরুষ শাসিত এবং এটি সংবিধান দ্বারা সমর্থিত, যে সংবিধানটি কেবল পুরুষ দ্বারা নির্মিত ধর্মীয় ব্যবস্থা যা রাষ্ট্রকে পরিচালিত করে।"[31] তারা এও বলেন যে, ইসলাম নারীদের একটি পরিষ্কার ভূমিকাকে সমর্থন করে এবং বাঁচিয়ে রাখে যা নারীকে একটি প্রান্তিক স্তরে মূল্যায়িত করে।[31] এই মুসলিম নারীবাদীগণ বলেন ধর্মগ্রন্থের পুনর্ব্যাখ্যা দিয়ে নারীর অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন করা যাবে না, আর সম্ভবত নারীর অধিকার বৃদ্ধির একটি মাত্র উপায় হচ্ছে ইসলামের গণ্ডিত বাইরে গিয়ে কাজ করা।[31] তাই তাদের মতে বর্তমানে প্রচলিত বহুবিবাহ প্রথার পরিবর্তন আনতে চাইলে কেবল কুর'আন-হাদিস আসলেই এই চর্চাকে সমর্থন করে কিনা বা করলে কতখানি করে তা নির্ণয় করে এগুলোর পুনর্ব্যাখ্যা দেয়াই যথেষ্ট হবে না, তার পরিবর্তে এর জন্য রাজনৈতিক ও আইনব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন।
নারীর আন্দোলন এবং আফ্রিকায় পরিবার আইন সংস্কার
মুসলিম সমাজে বহুবিবাহের উপর নারীবাদের প্রতিক্রিয়া বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম। এটা বিভিন্ন স্থানের বিভিন্ন সংস্কৃতি ইসলামের সাথে কীভাবে মিথস্ক্রিয়া করে তার উপর নির্ভর করে। যেমন, ইরানে ১৯৭৯ সালের ইসলামী আন্দোলনের পর নারী অধিকার পরিবর্তিত হয়। এই আন্দোলনের পর পরিবার সুরক্ষা আইনকে (Family Protection Law) তুলে দেয়া হয়, যা নারীকে কিছু ক্ষমতা দান করেছিল এবং বহুবিবাহের উপর ন্যুনতম প্রতিবন্ধকতা আরোপ করেছিল। তখন মুসলিম নারীদেরকে তাদের মূলধারার ভূমিকায় ফিরে আসতে উৎসাহিত করা হয়। এই অধিকার হারানোর ব্যাপারটি ইরানের মুসলিম নারীবাদীদেরকে বোধ করায় যে নিজেদের অধিকার রক্ষার জন্য তারা সরকারের উপর নির্ভর করতে পারে না। এর ফলে ব্যক্তিগত মর্যাদার আইনগুলো (personal status laws) তৈরি হয় যার মধ্যে বহুবিবাহ সহ বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদের মত অনেক বিষয় পড়ে।[32] এই আইনটি ১৯৮৬ সালে পাস করা হয়, আর এই আইনটি "১৯৭৫ সালের পরিবার সুরক্ষা আইনকে কার্যকরীভাবে পুনর্বহাল করতে সক্ষম হয়, যেখানে একজন স্ত্রী বিবাহবিচ্ছেদের অধিকার লাভ করে, যদি তার স্বামী তার অনুমতি না নিয়ে আরেকটি বিয়ে করে, অথবা যদি ... তার স্বামী তার সাথে সঠিক ও ন্যায্যভাবে ব্যবহার না করে।"[33] এটি ইরানের মুসলিম নারীদেরকে বহুবিবাহের বিরুদ্ধে কিছু আইনগত সুরক্ষা দান করে, কিন্তু এই আইনের প্রয়োগ এখনও আদালতের ব্যাখ্যার উপর নির্ভরশীল। মুসলিম নারীদের আন্দোলন ইরানে আরও বেশি ক্ষমতা অর্জন করতে শুরু করে যখন অনেক মুসলিম নারী বিশ্লেষণী দৃষ্টিভঙ্গিতে কুর'আন পড়তে শুরু করে। এই নতুন পণ্ডিতগণ ইসলামের ব্যাখ্যা নিয়ে যুক্তিতর্কে যেতে পারতেন যাতে নারীরা নির্যাতনের শিকার না হয়ে ক্ষমতায়িত হয়। এছাড়াও তারা এসোসিয়েশন অফ মুসলিম উইমেন এন্ড জয়নাব নামক প্রতিষ্ঠানেরও পরিচালনা করে। অনেক মুসলিম নারী জালাসেহতে যান যেখানে তারা তাদের ধর্মগ্রন্থ এবং নিরাপদ পরিবেশ নিয়ে মুক্তভাবে আলোচনা করতে পারেন।[34] সুতরাং ইরানের আন্দোলনের ফলে বহুবিবাহের মত অনেক পিতৃতান্ত্রিক মূল্যবোধ ইরানে প্রচলিত হলেও, শেষ পর্যন্ত নারীরা অধিক অধিকার অর্জন করতে উৎসাহিত হয়, এবং ধর্মগ্রন্থসমূহ পড়ে আরও বেশি আস্থা অর্জন করে।
মিশর, জর্ডান এবং মরক্কোতেও ইসলামের বহুবিবাহের চর্চাকে বাঁধাগ্রস্ত করা হয়। মিশরের ব্যক্তিগত মর্যাদা আইনসমূহ (personal status laws) ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৫ সালের মধ্যে অনেক পরিবর্তনের সম্মুখীন হয় কিন্ত পরিশেষে তারা নারীদের প্রতি খুবই নিয়ন্ত্রণমূলক হয় এবং বহুবিবাহের সীমাবদ্ধতাকে সংকুচিত করে।[35] এর ফলে মিশরের নারীবাদীগণ আন্দোলন করে এবং তারা একটি নতুন বিবাহ চুক্তি তৈরি করে (২০০০ সালে অনুমোদিত), যেখানে নারী বিবাহবিচ্ছেদ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে কিছু অধিকার অর্জন করে।[35] জর্ডানে ২০০১ সালে আরও বেশি সফলতা আসে যখন সেখানে নাগরিক মর্যাদা আইন সংশোধিত হয়। এর ফলে স্বামীর পুনরায় বিবাহ করবার পূর্বে তার স্ত্রীর সম্মতির প্রয়োজন পড়ে।[35] এই পরিবর্তন আনয়ন সম্ভব হয়েছিল দেশটিতে নারী অধিকার সংক্রান্ত আরও কিছু প্রগতিশীল সিদ্ধান্ত নেবার সাথে সাথে, যার ফলে দেশটিতে নারীদের মর্যাদা অনেক বৃদ্ধি পায়। মরক্কোতেও মুসলিম নারীবাদী গোষ্ঠী আন্দোলন করে এবং এর ফলে সেখানে বহুবিবাহ কঠিন হয়ে যায়।
এশিয়ায় মুসলিম নারীবাদ
এশিয়ার ইসলামী সম্প্রদায়, যেমন ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়াতেও নারীবাদী আন্দোলন দেখা গেছে যারা বহুবিবাহে সীমাবদ্ধ আরোপনে কাজ করেছে। ইন্দোনেশিয়ার নারীবাদীগণ ধর্মগ্রন্থ পাঠ ও পুনর্ব্যাখ্যার মাধ্যমে পুরুষের এই বহুবিবাহের চর্চাকে চ্যালেঞ্জ করে। ফাতায়াত এনইউ হচ্ছে ইন্দোনেশিয়ায় মুসলিম নারীদের একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান, ১৯৫০ সালে নাহদিয়াতুল উলামা নামে একটি সুন্নি মুসলিম গোষ্ঠীর মধ্যবয়স্কা নারীরা তাদের কথা বলতে চেয়েছিলেন বলে ১৯৫০ সালে এই প্রতিষ্ঠানটি তৈরি হয়। প্রথম দিকে এর সদস্য সংখ্যা অনেক কম ছিল, কারণ বেশিরভাগ নারীই হয় বিবাহিত নয় অশিক্ষিত ছিল। এরপর ইন্দোনেশিয়ার বাইরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান একে অনেক সাহায্য সহযোগিতা করতে শুরু করলে ফাতায়াত এনইউ এর প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।[36] ফাতায়াত এনইউ এর নারীরা তাদের কাজগুলোকে ন্যয্য প্রতিপাদন করতে ও তাদের সিদ্ধান্ত তৈরি করতে ধর্মগ্রন্থের সাহায্য নিতেন, তাই যেসব নারীরা গভীর ভাবে ধর্মগ্রন্থ অধ্যয়ন করেন তারা এই প্রতিষ্ঠানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ফাতায়াত এনইউ অনেক বিতর্কিত সমস্যা নিয়ে লড়াই করেছে, আর এদের মধ্যে বহুবিবাহ খুব সম্প্রতি এদের লড়াই এর বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়। যদিও ইন্দোনেশিয়ায় বহুবিবাহ খুব একটা জনপ্রিয় ছিল না, ধীরে ধীরে এটি সমর্থন পেতে শুরু করলে কোন কোন মুসলিম নারী এতি নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। নাহদিয়াতুল উলামা ছিল এমনই একটি প্রতিষ্ঠান যা ইসলামের বহুবিবাহের চর্চাকে সমর্থন করে অনুমোদন দেয়, কিন্তু ফাতায়াত এনইউ এর বিরোধী অবস্থান নেয়, এর সদস্যরা বিশ্বাস করে যে বহুবিবাহ কেবল তখন সম্ভব হবে যদি পুরুষ ও নারী অসম হয়, যা লৈঙ্গিক ভূমিকা নিয়ে কোরানের ব্যাখ্যার বিরুদ্ধে যায়।[37] ফাতায়াত এনইউ বিভিন্ন হাদিস সম্পর্কে বলেন যেখানে মুহম্মদ তার অনুসারীদের বহুবিবাহের চর্চার বিরোধিতা করেছেন। একটি হাদিস বলে:
আল-মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহা (রাযি.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মাসজিদের মিম্বারের উপর বলতে শুনেছিঃ হিশাম ইবনুল মুগীরাহর বংশের লোকেরা তাদের বংশের এক কন্যাকে আলী ইবনু আবূ তালিবের বিয়ে দিতে অনুমতি চাইছে। কিন্তু আমি অনুমতি দিবো না, তারপরও আমি অনুমতি দিবো না, অনুমতি দিবো না। অবশ্য আবূ তালিবের পুত্র আমার কন্যাকে তালাক দিলে সে তাদের কন্যা বিয়ে করতে পারবে। কারণ আমার কন্যা আমার দেহেরই একটি অংশ। যেটা তার অপছন্দ, সেটা আমার অপছন্দ এবং তাকে যা দুঃখ দেয়, তা আমাকেও দুঃখ দেয়।[38]
ফাতায়াত এনইউ এর নেতৃগণ যুক্তি দেখান যে, ইসলামে বহুবিবাহ যদি একটি অনুমোদিত চর্চা হত, তাহলে মুহম্মদ তাতে অনুমতি দিতেন। যাই হোক, ফাতায়াত এনইউ এখনও এর প্যারেন্ট প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভর করে, তাই তারা তৃণমূল পর্যায়ে গিয়ে যেভাবে কাজ করতে ও ইসলামের পুনর্ব্যাখ্যা দান করতে চান, তা তারা করতে পারেন না।
মালয়েশিয়ায় বহুবিবাহকে এমনভাবে বিবেচনা করা হয় যা জনসাধারণের সামনে আলোচনা করা হয় না, কিন্তু সম্প্রতি এটি জনসাধারণের মধ্যে আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়। নতুন ইসলামী পরিবার আইন (Islamic family law) আসবার পর এটা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়, যে আইনে পুরুষের বহুবিবাহ চর্চার সুবিধা দান করা হয়েছে। এটি ইসলামী চরমপন্থী গোষ্ঠী, যারা দেশটির ইসলামিক এফেয়ারস অধিদপ্তর থেকে শরিয়াহ আইন পরিচালনা করে, তাদের সাথে দেশটির পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত মুসলিম নারীবাদীদের মধ্যে বিতর্কের সৃষ্টি করে, যেখানে এই মুসলিম নারীবাদীরা বলছেন, প্রথমোক্ত দলের দেয়া কোরানের ব্যাখ্যাগুলো পক্ষপাতিত্বমূলক, আর এর কারণেই নারী ও শিশুর প্রতি বৈষম্যমূলক আইন তৈরি করা হয়েছে।[39] আইনটির বিরুদ্ধে প্রচার খুব জনপ্রিয় হয়, কিন্তু আইনটি তবুও পাস করে। মালয়েশিয়ার মুসলিম নারীদের প্রতিষ্ঠানগুলো আইনটি তুলে না নেয়া অবধি এর বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়ে যাবার পরিকল্পনা করেছেন।[39]
তথ্যসূত্র
- "Opinions of classical Islamic scholars on polygyny | Polygamy in Islam"। archive.ph। ২০১৪-১২-২৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-২৯।
- Davary, Bahar। Women and the Qur'an : A Study in Islamic Hermeneutics। The Edwin Mellen Press। পৃষ্ঠা ৬০–৬১।
- "Marrying two, three or four women - Islamweb - Fatwas"। www.islamweb.net। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-২৯।
- "Opinions of classical Islamic scholars on polygyny | Polygamy in Islam"। archive.ph। ২০১৪-১২-২৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-২৯।
- কুরআন ৪:৩
- "Polygamy in Context." Common Grounds News Services. Alia Hogben. 02-Mar-2010. <http://www.commongroundnews.org/article.php?id=27379&lan=en&sp=0 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৩ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে>.
- কুরআন ৪:২
- "Archived copy"। ২০০৮-১২-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৫-০৪।
- কুরআন ৪:২১
- কুরআন ৩০:২১
- কুরআন ২:১৮৭
- Ahmed, Leila (১৯৯২)। Women and Gender in Islam। New Haven: Yale University Press। পৃষ্ঠা 41।
- Engineer, Asghar Ali (১৯৯২)। Rights of Women in Islam। New York: St. Martin's Press। পৃষ্ঠা 21।
- Ali, Moulavi Chiragh (১৮৮৩)। Proposed Political, Legal, and Social Reforms in the Ottoman Empire and Other Muhammadan States। Bombay: Education Society's Press। পৃষ্ঠা 118–29।
- Engineer, Asghar Ali (১৯৯২)। The Rights of Women in Islam। New York: St. Martin's Press। পৃষ্ঠা 22।
- Ahmed, Leila (১৯৯২)। Women and Gender in Islam। New Haven: Yale University Press। পৃষ্ঠা 42।
- Ali-Karamali, Sumbul (২০০৮)। The Muslim Next Door: The Qur'an, the Media, and that Veil Thing। Ashland, Oregon: White Cloud Press। পৃষ্ঠা 142। আইএসবিএন 978-0-9745245-6-6।
- Walther, Wiebke (১৯৯৩)। Women in Islam। New York, New York: Marcus Weiner Publishing। পৃষ্ঠা 57। আইএসবিএন 1-55876-052-0।
- "Libyan men now allowed to remarry without consent of first wife: court rule"। Al Arabiya। ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৩। ১ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ অক্টোবর ২০১৬।
- Walther, Wiebke (১৯৯৩)। Women in Islam। New York, New York: Marcus Weiner Publishing। পৃষ্ঠা 232। আইএসবিএন 1-55876-052-0।
- Ali-Karamali, Sumbul (২০০৮)। The Muslim Next Door: The Qur'an, the Media, and that Veil Thing। Ashland, Oregon: White Cloud Press। পৃষ্ঠা 145। আইএসবিএন 978-0-9745245-6-6।
- Noel Coulson; Doreen Hinchcliffe (১৯৭৮)। Louis Beck and Nikki Keddie, সম্পাদক। Women in the Muslim World। Cambridge, Massachusetts: Harvard University Press। পৃষ্ঠা 40। আইএসবিএন 9780674954816।
- Kusha, Hamid R.। "Polygyny"। The Oxford Encyclopedia of the Modern Islamic World। Oxford Islamic Studies Online। সংগ্রহের তারিখ ২৩ এপ্রিল ২০১৩।
- "ইসলামে দ্বিতীয় বা বহুবিবাহ"। জাতীয় তথ্য কোষ। সংগ্রহের তারিখ ২ জুন ২০১৮।
- Ahmed, Leila (১৯৯২)। Women and Gender in Islam। New Haven: Yale UP। পৃষ্ঠা 64–78।
- Ahmed, Leila (১৯৯২)। Women and Gender in Islam। New Haven: Yale UP। পৃষ্ঠা 11–24।
- Wadud, Amina (১৯৯৯)। Qur'an and Women: Rereading the Sacred Text from a Woman's Perspective। New York: Oxford UP। পৃষ্ঠা 83।
- Mir-Hosseini, Ziba (২০০৬)। "Muslim Women's Quest for Equality: Between Islamic Law and Feminism"। Critical Inquiry। 32 (4): 641। ডিওআই:10.1086/508085।
- Wadud, Amina (১৯৯৯)। Qur'an and Woman: Rereading the Sacred Text from a Woman's Perspective। New York: Oxford UP। পৃষ্ঠা 84।
- Wadud, Amina (১৯৯৯)। Qur'an and Woman: Rereading the Sacred Text from a Woman's Perspective। New York: Oxford UP। পৃষ্ঠা 83।
- Moghadam, Valentine (২০০২)। "Islamic Feminism and Its Discontents: Toward a Resolution of the Debate"। Signs। 27 (4): 1151। ডিওআই:10.1086/339639।
- Ramazani, Nesta (১৯৯৩)। "Women in Iran: The Revolutionary Ebb and Flow"। Middle East Journal। 47 (3): 417।
- Ramazani, Nesta (১৯৯৩)। "Women in Iran: The Revolutionary Ebb and Flow"। Middle East Journal। 47 (3): 418।
- Ramazani, Nesta (১৯৯৩)। "Women in Iran: The Revolutionary Ebb and Flow"। Middle East Journal। 47 (3): 424।
- Hatem, Mervat; Haeri, Shahla; Moghadam, Valentine M.; Davis, Susan Schaefer; Hessini, Leila; Weiss, Anita M.; Siddique, Sharon। "Women and Social Reform"। The Oxford Encyclopedia of the Islamic World।
- Amez, Monika (২০১০)। "Empowering Women through Islam: Fatayat NU between Tradition and Change"। Journal of Islamic Studies। 21 (1): 66। ডিওআই:10.1093/jis/etp025।
- Amez, Monika (২০১০)। "Empowering Women through Islam: Fatayat NU between Tradition and Change"। Journal of Islamic Studies। 21 (1): 82। ডিওআই:10.1093/jis/etp025।
- "পাবলিশারঃ আল্লামা আলবানী একাডেমী / গ্রন্থঃ সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) / অধ্যায়ঃ ৬/ বিবাহ, হাদিস নম্বর: ২০৭১"। www.hadithbd.com। সংগ্রহের তারিখ ০৮/০৬/১৮। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - Kuppusamy, Baradan (৫ জানু ২০০৬)। "Malaysia: Feminists, Others Call for Tempering Islamic Law"। New York Amsterdam News।