ইমদাদ হোসেন

ইমদাদ হোসেন (জন্ম: ২১শে নভেম্বর, ১৯২৬-মৃত্যু: ১৩ই নভেম্বর, ২০১১) বাংলাদেশের একজন চিত্রশিল্পী

ইমদাদ হোসেন
ইমদাদ হোসেন
জাতীয়তাবাংলাদেশী
পরিচিতির কারণচারুশিল্পী
পুরস্কারএকুশে পদক

জন্ম ও শৈশব

শিল্পী ইমদাদ হোসেনের জন্ম ১৯২৬ সালের ২১শে নভেম্বর চাঁদপুরে। তার বাবা মাজিদ বক্স ও মা সাবেদুন নেসা। ছয় ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন কনিষ্ঠ। ভাষার অধিকার নিয়ে শুধু সরাসরি লড়াইয়েই নয়, ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিস্মারক শহীদ মিনারের নকশায় মূলস্তম্ভের পেছনে লাল সূর্যটি এসেছিলো শিল্পী ইমদাদ হোসেনের প্রস্তাবেই।

পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়, সে নামটিও চারুকলা অনুষদের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ইমদাদেরই দেওয়া।

শিক্ষা জীবন

১৯৪৮ সালে তিনি সদ্য প্রতিষ্ঠিত ঢাকা আর্ট কলেজের প্রথম ব্যাচে ভর্তি হন।

কর্ম জীবন

১৯৫৩ সালে তিনি ছাত্র অবস্থাতেই কমার্শিয়াল আর্টিস্ট হিসেবে বিভিন্ন বইয়ের প্রচ্ছদ আঁকাসহ নানা ধরনের কাজ করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করেন। ১৯৫৪ সালে তিনি আর্ট ইনস্টিটিউট থেকে পাস করে ‘ভিবজিওর’ নামের একটি বাণিজ্যিক চিত্রকলা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। বিভিন্ন পর্যায়ে শিল্পী হিসেবে এশিয়ান ফাউন্ডেশন, ইস্ট পাকিস্তান ডিজাইন সেন্টার, সুইডিশ-পাক ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার প্রজেক্ট, পাকিস্তান টেলিভিশনের ঢাকা কেন্দ্রের প্রধান ডিজাইনার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআরে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক হিসেবে কাজ করেন। কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে ‘মুক্তধারা’ নামের একটি প্রকাশনা সংস্থাও গড়ে তোলেন।

১৯৭২ সালে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনে যোগ দেন। বিটিভির বর্তমান লোগোটি তারই করা। ১৯৭৬ সালে বিসিকের ডিজাইন সেন্টারে যোগ দেন এবং ১৯৯১ সালে এখান থেকেই অবসর নেন। পরে তিনি কাজ করেছেন কালার স্ক্যান লিমিটেডের উপদেষ্টা হিসেবে।[1]

রাজনৈতিক সক্রিয়তা

১৯৫০ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হলে ইমদাদ হোসেন স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করে কেরানীগঞ্জে দাঙ্গা প্রতিরোধে অনন্য ভূমিকা রাখেন। মহান রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে মিছিলে তিনিও ছিলেন প্রথম সারিতে। তিনি ছিলেন ১৯৫২ সালের সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য।

তিনি ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানের আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। পটুয়া কামরুল হাসানকে সভাপতি ও তাকে সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত হয় ‘চারুশিল্পী সংস্থা’। এই সংগঠন থেকে প্রকাশিত হয় বড় বড় পোস্টার-ব্যানার। মুক্তিযুদ্ধের সময় কেরানীগঞ্জে তার বাড়িটি ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়স্থল।

ইমদাদ হোসেন নিজে সরাসরি বাম রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না হলেও বাম রাজনীতিকদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল ঘনিষ্ঠ। কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ হলে তার বাড়িতেই পার্টির গোপন সভা হতো এবং আত্মগোপনকারী নেতারা তার ঢাকার ভাড়া বাসায় বা গ্রামের বাড়িতে আশ্রয় নিতেন।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবদান

বিসিকের ডিজাইন সেন্টারে কাজ করার সময় প্রধান নকশাবিদ হিসেবে তিনি দেশের ঐতিহ্যবাহী লোক ও কারুশিল্প মেলাকে শহরাঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ঢাকায় বৈশাখী মেলা, বসন্ত মেলা ও যশোরে মধূমেলার আয়োজন করেন। মধ্যস্বত্বভোগীদের থেকে তাঁতিদের বাঁচাতে বিসিকের উদ্যোগে তাঁতবস্ত্রের মেলা ও প্রদর্শনীর আয়োজনের উদ্যোক্তা ছিলেন তিনি।

সম্মাননা ও স্বীকৃতি

ইমদাদ হোসেন চারুশিল্পে বিশেষ অবদান রাখায় ২০১০ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন। এ ছাড়া তিনি বাংলা একাডেমীর ফেলো, দৈনিক জনকণ্ঠ আজীবন সম্মাননা, চারুশিল্পী সংসদের সম্মাননাসহ বিভিন্ন পদক ও সম্মাননা পেয়েছেন।

মৃত্যু

তিনি ২০১১ সালের ১৩ই নভেম্বর পান্থপথের হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি বার্ধক্যজনিত অসুখ, ডায়াবেটিসনিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।

তথ্যসূত্র

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.