ইব্রাহিম (নবী)

ইব্রাহিম বা ইব্রাহীম সম্মানার্থে হযরত ইব্রাহিম আলাইহিসসালাম (আরবি: ابراهيم, হিব্রু ভাষায়: אַבְרָהָם) তোরাহ অনুসারে আব্রাহাম (আনুমানিক জন্ম: অজানা) পশ্চিম ইরাকের বসরা নিকটবর্তী ‘বাবেল’ শহরে জন্মগ্রহণ করেন৷ তিনি ইসলাম ধর্মের একজন গুরুত্বপূর্ণ নবীরাসূল।তিনি পবিত্র কুরআনে উল্লিখিত দৃঢ় প্রত্যয় নবীদের একজন।[1][2] পবিত্র কুরআনে তার নামে একটি সূরাও রয়েছে। পুরো কুরআনে অনেকবার তার নাম উল্লেখিত হয়েছে। ইসলাম ছাড়াও, ইহুদি ও খ্রিস্টধর্মেও ইব্রাহিম শ্রদ্ধাস্পদ ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন। এজন্য ইব্রাহিম একই সাথে বহু ধর্মের জনক।[3]। সৃষ্টিকর্তার প্রতি তার দৃঢ় বিশ্বাসের ছিলো [4] ইসলামে তার কার্যক্রম কে স্মরণ করে ঈদুল আযহা পালিত হয়। ইব্রাহিম ও তার শিশুপুত্র ইসমাইল ইসলামে কুরবানি[5] ও হজ্জের বিধান চালু করেন যা বর্তমানের মুসলিমদের দ্বারাও পালিত হয়।

ইব্রাহিম এর রওজা

ʾইব্রাহিম
إِبْرَاهِيْمُ
অব্রাহাম

ইসলামি চারুলিপিতে লেখা ʾইব্রাহিম আলাইহিস সালাম
জন্ম
কল্‌দীয় দেশের ঊর, ইরাক
মৃত্যু
সমাধিইব্রাহিমী মসজিদ, হিব্রোণ
অন্যান্য নামখলিলুল্লাহ (আরবি: خَلِيْلُ ٱللهِ, “আল্লাহর বন্ধু”)
অব্রাহাম (হিব্রু ভাষায়: אַבְרָהָם‎)
উত্তরসূরীলূত (সম্ভবত)
দাম্পত্য সঙ্গীসারা, হাজেরা (হাগার), কটূরা
সন্তানইসমাইল (ইশ্মায়েল), ইসহাক (ইস্‌হাক) ও অন্যান্য
পিতা-মাতাতেরহ বা আজার
আত্মীয়লূত (ভাতিজা)

ইব্রাহীম একজন অত্যন্ত আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব কারণ তাকে কুরআনে এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে, খুব ছোট থেকেই আল্লাহকে বোঝার চেষ্টা করতে এবং আল্লাহকে আবিষ্কার করার চেষ্টা করতে সমস্যা হয়েছিল; অস্থির হওয়া, এটা জেনে যে, সম্ভবত তিনি যে পৌত্তলিক পরিবেশে ছিলেন তার উত্তর ছিল না। যে, শেষ পর্যন্ত, সৃষ্টি কর্তা নক্ষত্র বা সূর্য বা বাতাস বা চাঁদ ছিলেন না - এই সমস্ত শক্তি যা তিনি দেখেছিলেন - ঈশ্বর অন্য কিছুতে ছিলেন।

জন্ম ও বংশ পরিচয়

তার পিতার নাম আজর। তার স্ত্রীর নাম হাজেরাসারাহ। তার দুই পুত্র ছিলেন: ইসমাইলইসহাক। মতান্তরে, তার তৃতীয় স্ত্রী কান্তুরাহের গর্ভে আরো ৬ জন পুত্র ছিলেন।[6] তবে, পুত্র হিসেবে কেবল ইসমাইল ও ইসহাকের বর্ণনাটিই ইতিহাসে প্রসিদ্ধ। অন্যদের ব্যাপারে ঐতিহাসিক উল্লেখের তেমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না, যার ব্যতিক্রমে রয়েছে মাদিয়ান, কান্তুরাহর গর্বে ইব্রাহিমের পুত্র। মাদিয়ানের নামে তার বংশধরদের দ্বারা যে শহরটি তৈরি হয়েছিল, তার মধ্য হতেই শুয়াইব আসেন এবং তাদের মধ্যে ইসলাম প্রচার করেন বলে জানা যায়।

বংশ তালিকা

ইমাম তাবারীর মতে, তার বংশ তালিকা হল- তিনি ইব্রাহিম, তার পিতা তারেহ (তিনি আযর), তার পিতা নাহুর, তার পিতা সারুগ, তার পিতা আরগু, তার পিতা ফালেগ, তার পিতা আবির, তার পিতা শালেখ, তার পিতা কেনান, তার পিতা আরফাখশাদ, তার পিতা সাম, তার পিতা নূহ। [7]

তবে ইমাম ইবনে কাসীর আহলে কিতাবদের বর্ণনা অবলম্বনে বংশ তালিকাটির বর্ণনা এভাবে দিয়েছেন- ইব্রাহীম, তার পিতা তাসারুখ, তার পিতা নাহুর, তার পিতা সারুগ, তার পিতা রাঊ, তার পিতা ফালিগ, তার পিতা আবির, তার পিতা শালেহ, তার পিতা আরফাখশায, তার পিতা সাম, তার পিতা নূহ।[8]

বাইবেলের পুরাতন নিয়মের[9] বিপরীতে কুরআনে ইব্রাহীমের পিতার নাম আযর বলা হয়েছে।[10] ইব্রাহিমের পিতার দুটি নাম ছিল। একটি আসল নাম, আরেকটি উপনাম। [11] তবে ইবনে আব্বাস সহ অনেক হাদিসবিশারদদের মতে আযর ছিল মুর্তির নাম, আর ইব্রাহিমের পিতা সে মুর্তির পুজারী হিসেবে তাকেই আযর উপনামে ডাকা হতো। [12] আবার কারো মতে, আযর ছিল আসল নাম। অপর নাম ছিল তারেহ।[13] সবাই তাকে তারেহ নামে চিনতো, কুরআন তার আসল নাম প্রকাশ করেছে।

আসমানী কিতাব

ইসলাম ধর্মমতে, ইব্রাহিমের উপর সহীফা অবতীর্ণ হয়েছে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে-

কিন্তু তোমরা পার্থিব জীবনকে পছন্দ করে থাক, অথচ আখিরাতের জীবনই উত্তম ও অবিনশ্বর। নিশ্চয়ই এটা পূর্ববর্তী গ্রন্থসমূহে (বিদ্যমান) আছে। রয়েছে ইবরাহীম ও মূসার সহীফাসমূহে বা গ্রন্থসমূহে।

সূরা আ'লাঃ১৬-১৯

ওয়াছেলা ইবনে আসকা’ থেকে বর্ণিত, মুহাম্মাদ বলেন,

"ইব্রাহিমের সহীফাসমূহ অবতীর্ণ হয়েছিল রমজানের প্রথম রাতে।"

মুসনাদে আহমদ-৪/১০৭

খৎনা করণ

কোন কোন ইসলামি পণ্ডিতে মতে, তিনিই প্রথম মিসওয়াক করেন, প্রস্রাব সেরে পানি দ্বারা পরিষ্কার হন। সর্বপ্রথম তার মাথার চুল পেঁকে সাদা হয়েছিল।[14] তিনিই সর্বপ্রথম খৎনা করেন এবং তার বংশধরদের তা করতে উৎসাহিত করেন।[15]

তথ্যসূত্র

  1. কুরআন ৮৭:১৯
  2. Siddiqui, Mona"Ibrahim – the Muslim view of Abraham"Religions। BBC। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৩
  3. ফক্বীহ আবুল লাইস সমরকন্দী। "নবী রাসুল প্রসঙ্গ"। বুস্তানুল আ'রেফীন (প্রিন্ট)। মাওলানা লিয়াকত আলী কর্তৃক অনূদিত (১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দ সংস্করণ)। চকবাজার, ঢাকা: হামিদিয়া লাইব্রেরী লি:।
  4. কুরআন। পৃষ্ঠা ২:১২৪।
  5. কুরআন। পৃষ্ঠা ২:১২৮।
  6. তারিখে তাবারী-১/২৩৩, প্রকাশনা-দারুল মাআরেফ মিশর
  7. আল-বেদায়া ওয়ান নেহায়া-১/১৩৯, প্রকাশনা-মাকতাবাতুল মাআরেফ, বৈরুত।
  8. বাইবেলঃ বুক অব জেনেসিস-১১:২৬-২৭,৩১
  9. সূরা আনআমঃ৭৪
  10. তাফসীরে ইবনে কাসীর, তাফসীরে তাবারী, তাফসীরে জালালাইন
  11. ইবনে আবী শায়বা, আব্দুল্লাহ বিন হুমাইদ, ইবনে জারীর তাবারী, ইবনে মুনজির ও ইবনে আবী হাতিম উনারা সকলেই হযরত মুজাহিদ থেকে বর্ননা করেছেন। তিনি বলেন, আযর হযরত ইব্রাহিম এর পিতা ছিলো না। বরং আযর ছিলো একটি মূর্তির নাম।" দেখুন- জালালুদ্দীন সূয়ুতি; আদ-দুররুল মানছুর-৩/২৩
  12. মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক, যাহহাক ও কালবীর মতে। -তাফসীরে বগভী, তাফসীরে কুরতুবী (সূরা আনআমের ৭৪নং আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য)
  13. বায়হাক্বী;শুআবুল ঈমান-৬/২৮৯৩,মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা
  14. মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস-২৬৪৬৭

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.