ইন্দিরাসাগর বাঁধ
ইন্দিরা সাগর বাঁধটি ভারতের মধ্য প্রদেশের খান্ডোয়া জেলার নর্মদা নগরে নর্মদা নদীর উপর নির্মিত একটি বহুমুখী প্রকল্প। প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয় ২৩শে অক্টোবর ১৯৮৩ সালে ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর হাতে। মূল বাঁধ নির্মাণ ১৯৯২ সালে শুরু হয়। আইএসপি (ইন্দিরা সাগর প্রজেক্ট) এর ডাউনস্ট্রিম প্রজেক্টগুলি হলো ওঙ্কারেশ্বর, মহেশ্বর এবং সর্দার সরোবর প্রকল্প। প্রকল্পটিতে ৯২ মিটার উচ্চ এবং ৬৫৩ মিটার দীর্ঘ কংক্রিট গ্রাভিটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এটি ১২৩০ বর্গ কিলোমিটার জমিতে সেচ প্রদান করে এবং মধ্যপ্রদেশের খান্ডোয়া এবং খরগোনে জেলার ২৭ বিলিয়ন ইউনিট এবং আনুমানিক ১০০০ মেগাওয়াট (৮*১২৫ মেগাওয়াট) বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। ১২,২০০,০০০,০০০ ঘনমিটার (৯, ৮৯০,৭০১ একর) এর ক্ষমতা বিশিষ্ট জলাধার নির্মিত হয়। জল ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী, এটি ভারতের বৃহত্তম জলাধার; দ্বিতীয়টি হল তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্র প্রদেশের নাগার্জুন সাগর। বাঁধটি মধ্য প্রদেশের সেচ দফতর ও জাতীয় জলবিদ্যুত্ পাওয়ার কর্পোরেশনের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত। এটি ২০০৫ সালে চালু করা হয়।
Indira Sagar Dam | |
---|---|
অবস্থান | নর্মদা নগর গ্রাম, মুন্ডি, মধ্য প্রদেশ |
স্থানাঙ্ক | ২২°১৭′০২″ উত্তর ৭৬°২৮′১৭″ পূর্ব |
নির্মাণ শুরু | 1983-10-23 |
উদ্বোধনের তারিখ | ২০০৫-০৩-৩১ |
অপারেটর | NVDA |
বাঁধ এবং অতিরিক্ত জলনির্গমপথ | |
আবদ্ধতা | Narmada River |
উচ্চতা | ৯২ মি (৩০২ ফু) |
দৈর্ঘ্য | ৬৫৩ মি (২,১৪২ ফু) |
জলাধার | |
তৈরি | Indira Sagar Reservoir |
মোট ধারণক্ষমতা | ১২,২০,০০,০০,০০০ মি৩ (৯৮,৯০,৭০১ acre·ft) |
সক্রিয় ধারণক্ষমতা | ৯,৭৫,০০,০০,০০০ মি৩ (৭৯,০৪,৪৫৪ acre·ft)[1] |
পাওয়ার স্টেশন | |
ঘূর্ণযন্ত্র | 8 × 125 MW It has 8 francis turbines, under the head of 92 meters. Each turbine generated 125 MW electricity. Height is 92 meters, so it uses francis turbines. |
স্থাপিত ক্ষমতা | 1,000 MW |
ইন্দিরা সাগর প্রকল্প
ভূমিকা
নর্মদা, ভারতের পঞ্চম বৃহত্তম নদী (১,৩১২ কিলোমিটার দীর্ঘ) , যার উৎস স্থল মধ্য প্রদেশের অনুপপুর জেলার অমরকন্টক। নর্মদা দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয় এবং মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত এবং মহারাষ্ট্রের অল্প একটি অংশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর, এটি কাম্বে উপসাগরের কাছাকাছি আরব সাগরের মধ্যে মিশে যায়। ২০০৫ সালের ৩১শে মার্চ এই প্রকল্পটি চালু হয়। ইন্দিরা সাগর প্রকল্পটি ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের একটি বহুমুখী প্রকল্প, যা পর্যায়ক্রমে পর্যায় ১ এ ২৬৯৮ মিলিয়ন ইউনিট, দ্বিতীয় পর্যায়ে ১,৮৫০ মিলিয়ন ইউনিট এবং তৃতীয় পর্যায়ে ১,৫১৫ মিলিয়ন ইউনিট উতপাদনের ক্ষমতা রাখে। বাঁধটির মোট ক্যাচমেন্ট এলাকা ৬১,৬৪২ বর্গকিমি। এটি নর্মদা অববাহিকায় নির্মিত অন্যান্য প্রকল্পগুলির মাতৃস্বরূপ। ২০০৪ সালের জানুয়ারী থেকে প্রথম ইউনিটের উতপাদন শুরু হয় এবং ২০০৫ সালের মার্চ মাসের মধ্যে আটটি ইউনিটই সম্পূর্ণরূপে চালু হয়। ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম পাওয়ারহাউস এই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলিতে সেচ প্রদানের জন্যে এই প্রকল্প আশীর্বাদ স্বরূপ।
প্রকল্প বৈশিষ্ট্য
প্রকল্পের প্রধান উপাদানগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ:
- ইউনিট সংখ্যা, তাদের রেটিং এবং ক্ষমতা: ১২৫ মেগাওয়াট এর ৮ ইউনিট - ১০০০ মেগাওয়াট
- কংক্রিট গ্র্যাভিটি বাঁধ: ৬৫৩ মি দীর্ঘ এবং ৯২ মি উচ্চ
- ডাইভারশন টানেল: ৬৮৮ মি লম্বা এবং ৮ মিটার উচ্চ
- রেডিয়াল গেট (জলকপাটিকা ): ২০টি , ২০ মিটার লম্বা এবং ১৮ মিটার উচ্চ
- পাওয়ার হাউস: সারফেস - ২০০ মি x ২৩ মি × ৫৩ মি সাইজের ফ্রান্সিস টারবাইন
- ওয়াটার কন্ডাকটর সিস্টেম: ৮ মি ডায়ামিটার বিশিষ্ট ৮ নং পেন্সটক
- হেড রেস চ্যানেল: ৫৩০ মিটার লম্বা এবং ৭৫ মিটার চওড়া।
- টেল রেস চ্যানেল: ৮৫০ মিটার লম্বা এবং ৩০ মিটার প্রশস্ত।
- চার্জ: ৪০০ কেভি, ওপেন টাইপ
পুনর্বাসন [2]
- ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামের সংখ্যা : ২৫০
- পুনর্বাসিত পরিবারের সংখ্যা : ৪৪০৮৩
- প্লাবিত ভূমির পরিমাণ : ৯৩,৬৯৭ হেক্টর
পুনর্বাসন সম্পর্কিত সমস্যা
ইন্দিরাসাগর এবং অন্যান্য ডাউনস্ট্রিম বাঁধ যেমন সর্দার সরোবর বাঁধ নির্মাণ করার জন্যে, যে বিপুল সংখ্যক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে এবং গ্রামবাসীদের উচ্ছেদ করা হয়েছে, তা নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে। ভারতীয় মানবাধিকার কমিশন আদালতে অভি্যোগ দায়ের করে প্লাবিত ভূমিতে বসবাসকারী আদিবাসীদের অধিকার লঙ্ঘন হয়েছে বলে। মেধা পাটকর এবং বাবা আমতে র নেতৃত্বে 'নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন' শুরু হয় (মূলত ওঙ্কারেশ্বর এবং সর্দার সরোবর বাঁধ এবং ইন্দিরাসাগর বাঁধের উচ্চতা বৃদ্ধি র প্রতিবাদে) ।
২০০৪ সালের বর্ষাতে ঘোষিত গ্রামগুলি ছাড়াও প্রায় ২০টি গ্রাম জলের তলায় তলিয়ে যায় যে গ্রামগুলির অধিবাসীদের জন্যে কোন পুনর্বাসনের ব্যবস্থা ছিল না [3]। মানবাধিকার কমিশনের দূত উইলিয়াম নিকোলাস গোমস অভিযোগ দায়ের করেন যে বাঁধের উচ্চতা এতটাই বাড়ানো হয়েছে যে উত্থিত জলতল একটি স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়কে গৃহহারা এবং জীবিকাহারা করে দিয়েছে; এই অভি্যোগ ভারতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কর্তৃক স্বীকৃত হয়েছে[4][5][6]। কৈবল্য দেসাই ও তাঁর সহকর্মীরা একটি নিরীক্ষায় দেখিয়েছেন যে পুনর্বাসনের পরে স্থানীয় অধিবাসীদের জীবনযাত্রার মান খারাপ হয়েছে এবং প্রতিটি পরিবারের আয় আগের তুলনায় অর্ধেক হয়ে গেছে।[7]
ইন্দিরা সাগর প্রকল্পে তদন্তের জন্য পিপলস রাইট টু ইনফরমেশন ফর ন্যাশনাল ক্যাম্পেইন দ্বারা গঠিত একটি স্বাধীন কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী " এক বিশাল মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে এবং ইন্দিরা সাগর পুড়িয়ানো নির্মাণে মধ্য প্রদেশের সরকার নর্মদা উপত্যকায় জনগণের উপর সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবিচার করেছে " [8]।
তথ্যসূত্র
- "India: National Register of Large Dams 2009" (পিডিএফ)। Central Water Commission। ২১ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০১১।
- "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি" (পিডিএফ)। ১৬ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০১৮।
- "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৯ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ এপ্রিল ২০১৮।
- http://www.salem-news.com/articles/december162012/gomes-effectiveness-tk.php
- http://www.salem-news.com/gphotos/1355691746.jpg
- "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি" (পিডিএফ)। ২ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ এপ্রিল ২০১৮।
- Desai, Kaivalya, et al. “Rehabilitation of the Indira Sagar Pariyojana Displaced.” Economic and Political Weekly, vol. 42, no. 51, 2007, pp. 27–36. JSTOR, JSTOR, www.jstor.org/stable/40276875.
- "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ এপ্রিল ২০১৮।