ইনানা
ইনানা[lower-alpha 1] হলেন প্রাচীন মেসোপটেমিয়া অঞ্চলে পূজিত প্রেম, সৌন্দর্য, যৌনতা, যুদ্ধ, ন্যায়বিচার ও রাজনৈতিক ক্ষমতার দেবী। প্রথমে সুমের অঞ্চলে তার পূজার প্রচলন ঘটে। পরবর্তীকালে আক্কাদীয়, ব্যাবিলনীয় ও আসিরীয়রা ইশতার নামে[lower-alpha 2] তার পূজা করত। ইনানা পরিচিত ছিলেন "স্বর্গের রানি" নামে। তিনি ছিলেন উরুক শহরের এয়ান্না মন্দিরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। এই মন্দিরটিই ছিল তার প্রধান কাল্ট কেন্দ্র। প্রাচীন মেসোপটেমীয়দের দৃষ্টিতে ইনানা যুক্ত ছিলেন শুক্র গ্রহের সঙ্গে। তার প্রধান প্রতীকগুলির অন্যতম ছিল সিংহ ও আটটি কোণবিশিষ্ট তারা। তার স্বামী ছিলেন দেবতা দুমজিদ (গ্রিক পুরাণে যিনি অ্যাডোনিসে পরিণত হন) এবং তার সুক্কাল অর্থাৎ নিজস্ব পরিচারিকা ছিলেন দেবী নিনশুবুর (পরবর্তীকালে যিনি পুরুষ দেবতা পাপসুক্কালে পরিণত হয়েছিলেন)।
ইনানা (ইশতার) | |
---|---|
| |
আবাস | স্বর্গ |
গ্রহ | শুক্র |
প্রতীক | আঁকশির আকৃতিবিশিষ্ট শরের গ্রন্থি, আটটি কোণবিশিষ্ট তারা, সিংহ, রোজেট, পায়রা |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
মাতাপিতা | |
সহোদর |
|
সঙ্গী | মেষপালক দুমুজিদ ও অন্য অনেক অনামা বাল |
সন্তান | সচরাচর কেউ না, তবে কোনও কোনও ক্ষেত্রে লুলাল এবং/অথবা শারা |
সমকক্ষ | |
গ্রিক সমকক্ষ | আফ্রোদিতি, অ্যাথিনা[3][4][5] |
রোমান সমকক্ষ | ভেনাস, মিনার্ভা[3][4][5] |
কেনানীয় সমকক্ষ | আস্তোরেথ |
ব্যাবিলনীয় সমকক্ষ | ইশতার |
উরুক যুগের মধ্যেই (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০-৩১০০ অব্দ) সুমের অঞ্চলে ইনানার পূজার প্রচলন ঘটে। তবে আক্কাদের সারগোনের বিজয় অভিযানের আগে তাঁকে ঘিরে গড়ে ওঠা কাল্টটির পরিসর বিশেষ পরিব্যাপ্ত ছিল না। সারগোন-উত্তর যুগে অবশ্য ইনানা সুমেরীয় দেবমণ্ডলীর সর্বাধিক পূজিত দেবদেবীদের অন্যতম এক দেবীতে পরিণত হয়েছিলেন।[8][9] সমগ্র মেসোপটেমিয়ার নানা স্থানে তার মন্দির গড়ে উঠেছিল। ইনানা-ইশতারের কাল্টটিকে যৌনাচারের একটি প্রকারভেদের সঙ্গে যুক্ত করা যেতে পারে। পূর্ব সেমিটিক-ভাষী জাতিগোষ্ঠীগুলির (আক্কাদীয়, আসিরীয় ও ব্যাবিলনীয়) মধ্যেও এই কাল্টের প্রচলন ঘটে। এই জাতিগোষ্ঠীগুলি সুমেরীয়দের ধর্মকে আত্মীভূত করে সেই ধর্মের উত্তরসূরিতে পরিণত হয়েছিল। আসিরীয়দের মধ্যে ইনানা বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তারা তাদের নিজস্ব জাতীয় দেবতা আশুরেরও ঊর্ধ্বে সর্বোচ্চ দেবীর মর্যাদা প্রদান করেছিল ইনানাকে। হিব্রু বাইবেলেও ইনানা-ইশতারের পরোক্ষ উল্লেখ পাওয়া যায়। ফোনিশীয় দেবী আস্তোরেথের উপর ইনানা-পুরাণকথার বিশেষ প্রভাব পড়েছিল। আস্তোরেথের কাহিনিটি আবার পরবর্তীকালে গ্রিক দেবী আফ্রোদিতির ধারণার বিকাশে সহায়তা করে। খ্রিস্টীয় প্রথম থেকে ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যে খ্রিস্টধর্মের উত্থান ঘটলে ইনানা কাল্টেরও ক্রমাবনতি ঘটতে শুরু করে। কিন্তু তার আগে পর্যন্ত এই কাল্ট যথেষ্ট সমৃদ্ধি অর্জন করেছিল। তাই অন্ততপক্ষে খ্রিস্টীয় একাদশ শতাব্দী পর্যন্ত উচ্চ মেসোপটেমিয়ার কয়েকটি অংশে আসিরীয়দের মধ্যে এই কাল্টের অস্তিত্ব বজায় ছিল।
প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার পৌরাণিক সাহিত্যে সুমেরীয় দেবমণ্ডলীর অন্যান্য দেবদেবীদের তুলনায় ইনানার উল্লেখ অনেক বেশি বার করা হয়েছে।[10][11][12] ইনানা কর্তৃক অন্যান্য দেবদেবীদের জন্য নির্দিষ্ট ক্ষেত্র অধিকার করার কাহিনিগুলি বহু-সংখ্যক পৌরাণিক কথার মূল উপজীব্য বিষয় হয়ে ওঠে। কথি আছে, প্রজ্ঞার দেবতা এনকির কাছে সভ্যতার সকল ইতিবাচক ও নেতিবাচক ধ্যানধারণার প্রতীক মে-সমূহ রক্ষিত ছিল; ইনানা সেগুলি হরণ করেন। আরও মনে করা হত যে, আকাশের দেবতা আনের কাছ থেকে ইনানা অধিকার করে নিয়েছিলেন এয়ান্না মন্দিরটিকে। ইনানা ও তার যমজ ভাই উতু (যিনি পরবর্তীকালে শামাশ নামে পরিচিত হন) ছিলেন দৈব আইনের প্রয়োগকর্তা। ইনানার কর্তৃত্বের সম্মুখে "ঔদ্ধত্য প্রকাশের অপরাধে" তিনি এবিহ্ পর্বত ধ্বংস করেন, নিদ্রিত অবস্থায় তাঁকে ধর্ষণের অপরাধে তিনি মালী শুকালেতাদুর উপর নিজ ক্রোধ বর্ষণ করেন এবং স্বামী দুমুজিদকে হত্যা করার অপরাধে দৈব শাস্তি হিসেবে তিনি দস্যুনারী বিলুলুকে খুঁজে বের করে হত্যা করেন। গিলগামেশ মহাকাব্যের প্রামাণ্য আক্কাদীয় পাঠান্তরে জানা যায়, ইশতার গিলগামেশকে বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু গিলগামেশ তাঁকে বিবাহ করতে অসম্মত হন। ক্রুদ্ধ ইশতার তার পিছনে স্বর্গীয় বৃষ লেলিয়ে দেন। ফলে এনকিডুর মৃত্যু ঘটে এবং গিলগামেশও অমরত্বের আকাঙ্ক্ষায় বিভোর হয়ে ওঠেন।
ইনানা-ইশতারের প্রেতলোকে (কুর) অবতরণ ও স্বর্গে প্রত্যাবর্তনের উপাখ্যানটি তার সর্বাধিক পরিচিত পৌরাণিক কাহিনি। এই কাহিনি অনুসারে, ইনানার দিদি এরেশকিগাল ছিলেন প্রেতলোকের রানি। ইনানা তার রাজ্য দখল করার চেষ্টা করলে প্রেতলোকের সাত বিচারক তাঁকে আত্মম্ভরিতার অপরাধে মৃতুদণ্ড প্রদান করেন। তিন দিন বাদে নিনশুবুর সকল দেবতার কাছে ইনানাকে ফিরিয়ে আনার আর্জি জানান। কিন্তু এনকি ছাড়া অন্য কেউই এই কাজে সহযোগিতা করতে রাজি হননি। ইনানাকে উদ্ধার করার জন্য এনকি দুই নির্লিঙ্গ সত্ত্বাকে প্রেতলোকে প্রেরণ করেন। তারা ইনানাকে নিরাপদে প্রেতলোক থেকে ফিরিয়ে আনলেও সেখানকার তত্ত্বাবধায়ক গাল্লা দানবেরা পরিবর্তে তার স্বামী দুমুজিদকে প্রেতলোকে টেনে নিয়ে যায়। ঘটনাচক্রে দুমুজিদ বছরে ছয় মাস স্বর্গে বাস করার অনুমতি লাভ করেন। প্রাচীন মেসোপটেমীয়রা মনে করত, দুমুজিদের ছয় মাস স্বর্গবাস কালে তার বোন জেশতিয়ানা প্রেতলোকে থাকেন এবং সেই কারণেই ঋতুচক্র আবর্তিত হয়।
নাম-ব্যুৎপত্তি
গোড়ার দিকে ইনানা ও ইশতার ছিলেন সম্পূর্ণ ভিন্ন দুই দেবী।[14][15][1][16][17] কিন্তু আক্কাদের সারগোনের রাজত্বকাল থেকে তাঁদের দুই ভিন্ন নামে একই দেবী বলে গণ্য করা হতে থাকে।[14][15][1][16][17] সম্ভবত সুমেরীয় নিন-আন-আক (অর্থাৎ "স্বর্গের নারী") শব্দবন্ধটি থেকে ইনানা নামটির উৎপত্তি।[18][19] কিন্তু ইনানা (𒈹) শব্দের কিউনিফর্ম চিহ্নটি নারী (সুমেরীয়: নিন; কিউনিফর্ম: 𒊩𒌆 SAL.TUG2) ও আকাশ (সুমেরীয়: আন; কিউনিফর্ম: 𒀭 AN) চিহ্নের পটীবন্ধনী নয়।[19][18][20] এই সমস্যার দরুন প্রথম যুগের কয়েকজন আসিরিয়াতত্ত্ববিদ মনে করতেন, ইনানা গোড়ার দিকে ছিলেন হুরীয় মাতৃকাদেবী হানাহানাহ্-এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এক প্রত্ন-ইউফ্রেটীয় দেবী, যিনি পরবর্তীকালে সুমেরীয় দেবমণ্ডলীতে গৃহীত হন। দু’টি বিষয় থেকে এই ধারণার সমর্থন পাওয়া যায়: প্রথমত, ইনান্নার যৌবন এবং দ্বিতীয়ত, পুরাণকথায় অন্যান্য সুমেরীয় দেবদেবীদের উপর নির্দিষ্ট দায়িত্ব অর্পিত হতে দেখা গেলেও আপাতদৃষ্টিতে গোড়ায় ইনানার পৃথক দায়িত্বের কোনও ক্ষেত্র ছিল না।[19] তবে দক্ষিণ ইরাকে সুমেরীয়দের আগে কোনও প্রত্ন-ইউফ্রেটীয় স্তরের ভাষা ছিল, এমন ধারণা আধুনিক আসিরিয়াতত্ত্ববিদদের মধ্যে সার্বিক গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেনি।[21]
ইশতার নামটিকে আক্কাদ, আসিরিয়া ও ব্যাবিলনিয়া প্রাক্-সারগোনীয় ও সারগোন-ইত্তর উভয় যুগেই ব্যক্তিগত নামের একটি উপাদান হিসেবে পাওয়া যায়।[22] এই নামটির উৎস সেমিটিক[23][22] এবং ব্যুৎপত্তিগতভাবে এটি সম্ভবত পশ্চিম সেমিটিক দেবতা আত্তারের (উগারিত ও দক্ষিণ আরবের পরবর্তীকালীন শিলালিপিগুলিতে যাঁর কথা উল্লিখিত হয়েছে) নামের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।[23][22] সম্ভবত শুকতারাকে যুদ্ধকৌশলের পুরুষ দেবতা এবং সন্ধ্যাতারাকে প্রেমকৌশলের দেবী জ্ঞান করা হত।[22] আক্কাদীয়, আসিরীয় ও ব্যাবিলনীয়দের মধ্যে পুরুষ দেবতার নামটি পরিশেষে তার নারী প্রতিমূর্তির নামটিকে অপসারিত করেছিল।[17] কিন্তু ইশতার নামটি পুংলিঙ্গবাচক হলেও ইনানার সঙ্গে তার ব্যাপক সমন্বয়-প্রচেষ্টার ফলে নামধারী দেবতাটি নারীই থেকে যান।[17]
উৎস ও ক্রমবিকাশ
ইনানার ক্ষমতার ক্ষেত্রটিতে অন্যান্য দেবতাদের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে ভিন্ন ভিন্ন ও পরস্পর-বিরোধী বিষয় সন্নিবেশিত হওয়ায় প্রাচীন সুমের বিশেষজ্ঞদের কাছে এই দেবী এক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন।[25] তার উৎস সম্পর্কে দু’টি প্রধান তত্ত্বের অবতারণা করা হয়েছে।[26] প্রথম ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ইনানা হলেন পারস্পরিক সম্পর্কবিহীন সম্পূর্ণ ভিন্ন ক্ষেত্রে একাধিক সুমেরীয় দেবদেবীর এক সমন্বয়-প্রচেষ্টা।[26] আবার দ্বিতীয় ব্যাখ্যা মতে, গোড়ায় ইনানা ছিলেন এক সেমিটিক দেবতা। পরবর্তীকালে সুমেরীয় দেবমণ্ডলী সম্পূর্ণ আকার লাভ করার পর তিনি সেই দেবমণ্ডলীতে গৃহীত হন এবং অন্যান্য দেবতাদের উপর যে সকল ভূমিকা আরোপ করা হয়নি, সেগুলি ইনানার জন্য নির্দিষ্ট হয়।[27]
উরুক পর্যায়ের (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০-৩১০০ অব্দ) মধ্যেই ইনানা যুক্ত হয়েছিলেন উরুক শহরের সঙ্গে।[1] এই যুগেই আংটির আকারবিশিষ্ট চৌকাঠের প্রতীকটির সঙ্গে ইনানার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে।[1] উরুক তিন পর্যায়ের কাল্ট-সংক্রান্ত দ্রব্যসামগ্রীর মধ্যে থেকে পাওয়া বিখ্যাত উরুক পাত্রটির গায়ে বাটি, জলপাত্র ও কৃষিপণ্যের ঝুড়ি বহন করে সারিবদ্ধভাবে চলা নগ্ন পুরুষদের একটি চিত্র দেখা যায়।[28] ছবিটিতে তারা শাসকের দিকে মুখ করে থাকা এক নারীমূর্তির সামনে ভেড়া ও ছাগল এনে দিচ্ছে।[29] নারীমূর্তিটি দাঁড়িয়ে আছে ইনানার প্রতীক পাকানো শর-যুক্ত চৌকাঠের সামনে[29] এবং পুরুষমূর্তিটির হাতে রয়েছে একটি বাক্স ও একগুচ্ছ বাটি। এই পুরুষমূর্তিটিকে কিউনিফর্ম চিহ্ন এন দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে, যার অর্থ মন্দিরের প্রধান পুরোহিত।[30]
জেমদেত নাস্র যুগের (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৩১০০-২৯০০ অব্দ) সিলমোহরের ছাপগুলি থেকে উর, লারসা, জাবালাম, উরুম, আরিনা ও সম্ভবত কেশ সহ বিভিন্ন শহরের প্রতীকচিহ্নগুলির একটি নির্দিষ্ট ক্রম পাওয়া যায়।[31] সিলমোহরের ছাপের এই তালিকা সম্ভবত উরুক শহরের ইনানা-কাল্টে একই কাল্টের অনুসরণকারী অন্যান্য শহরের অবদানগুলিকে প্রতিফলিত করে।[31] উর শহর থেকে আদি রাজবংশীয় যুগের প্রথম পর্যায়ের (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ২৯০০-২৩৫০ অব্দ) একই ধরনের বহু সিলমোহর আবিষ্কৃত হয়েছে। এই সিলমোহরগুলির ক্রমবিন্যাসে সামান্য পরিবর্তন লক্ষিত হয় এবং এগুলির মধ্যে ইনানার রোজেট প্রতীকও পাওয়া যায়।[31] ইনানার কাল্টের উপকরণ পৃথকভাবে সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে নির্মিত ভাণ্ডারগুলি তালাবন্ধ করার কাজে এই সিলমোহরগুলি ব্যবহার করা হত।[31]
ইনানার নামে বিভিন্ন মানতসিদ্ধিমূলক ব্রতপূর্ব সমর্পিত ফলকও আবিষ্কৃত হয়েছে। এই রকমই একটি ফলক আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ২৪০০ অব্দ নাগাদ রাজা লুগাল-কিসালসি উৎসর্গ করেছিলেন:
"সকল ভূখণ্ডের রাজা আন ও তার পত্নী ইনানার জন্য কিশের রাজা লুগাল-কিসালসি অঙ্গনের প্রাচীর নির্মাণ করেছিলেন।"
— লুগাল-কিসালসির শিলালিপি।[32]
আক্কাদীয় যুগে (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ২৩৩৪-২১৫৪ অব্দ) আক্কাদের সারগোনের বিজয় অভিযানের পরেই ইনানা ও ইশতারের সমন্বয়-প্রচেষ্টা সর্বত্র পরিব্যাপ্ত হয়। এর ফলে দুই দেবী কার্যত একই দেবী হিসেবে বিবেচিত হতে থাকেন।[15][17] আক্কাদীয় কবি তথা সারগোনের কন্যা এনহেদুয়ানা ইনানাকে ইশতার হিসেবে চিহ্নিত করে অসংখ্য স্তোত্র রচনা করেছিলেন।[15][33] সারগোন নিজেও ইনানা ও আনকে তার কর্তৃত্বের উৎস বলে ঘোষণা করেন।[34] ফলে[15] ইনানা-ইশতার কাল্টের জনপ্রিয়তা অত্যধিক বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।[15][1][16]
পূজা
প্রাক্-সারগোনীয় যুগে ইনান্নার কাল্ট সীমাবদ্ধই ছিল।[15] কিন্তু সারগোনের শাসনকালের পরে এই দেবী দ্রুত সুমেরীয় দেবমণ্ডলীর অন্যতম সর্বাধিক পূজিত দেবীতে পরিণত হন।[15][12][20][9] নিপ্পুর, লাগাশ, শুরুপ্পাক, জাবালাম ও উর শহরে তার মন্দির ছিল।[15] কিন্তু ইনান্নার প্রধান কাল্ট কেন্দ্রটি ছিল উরুক শহরের এয়ান্না মন্দির।[15][38][19][lower-alpha 3] এয়ান্না নামটির অর্থ "স্বর্গের বাড়ি" (সুমেরীয়: e2-anna; কিউনিফর্ম: 𒂍𒀭 E2.AN),[lower-alpha 4] খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ সহস্রাব্দের এই শহরের আদি পৃষ্ঠপোষক দেবতা সম্ভবত ছিলেন আন।[19] শহরটি ইনান্নার প্রতি উৎসর্গিত হওয়ার পর সম্ভবত তার মন্দিরে নারী পুরোহিতদের বসবাস শুরু হয়।[19] পরবর্তীকালে উরুকে যখন তার কাল্ট বিকাশ লাভ করতে থাকে,[40] সেই সময় উচ্চ মেসোপটেমীর আসিরিয়া রাজ্যে (অধুনা উত্তর ইরাক, উত্তরপূর্ব সিরিয়া ও দক্ষিণপূর্ব তুরস্ক), বিশেষ করে নিনেভেহ্, আশশুর ও আরবেলা (অধুনা এরবিল) শহরে বিশেষভাবে ইশতারের পূজা প্রচলিত হয়।[41] আসিরীয় রাজা আসুরবানিপালের রাজত্বকালে ইশতার আসিরীয় দেবমণ্ডলীর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং বহুল পূজিত দেবীতে পরিণত হন। এই সময় তিনি ছাপিয়ে যান আসিরীয় জাতীয় দেবতা আশুরকেও।[40]
ইশতার অধিকতর প্রাধান্য অর্জন করলে অপ্রধান অথবা আঞ্চলিক দেবীদের সঙ্গে তার সমন্বয়ের চেষ্টা করা হয়।[42] এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দেবীরা হলেন আয়া (উতুর পত্নী), আনাতু (আনতু, আনুর অন্যতমা পত্নী), আনুনিতু (আলোর আক্কাদীয় দেবী), আগাসায়াম (এক যুদ্ধদেবী), ইরনিনি (লেবাননের পার্বত্য অঞ্চলের সিডার বনের দেবী), কিলিলি বা কুলিলি (কাঙ্ক্ষিত স্ত্রীলোকের প্রতীক), সাহিরতু (প্রণয়ীদের দূতী), কির-গু-লু (বৃষ্টি-আনয়নকারিণী) ও সারবান্দা (সার্বভৌমত্বের মূর্তিরূপ)।[42]
মিশ্রিতলিঙ্গ ও উভলিঙ্গ পুরুষেরা ইনান্না-ইশতাদের কাল্টের সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছিল।[43] সুমেরীয় যুগে গালা নামে পরিচিত একদল পুরোহিত ইনান্নার মন্দিরে কাজ করতেন। তারা শোকগাথা ও বিলাপগীতি গাইতেন।[44] গালা পুরোহিতেরা স্ত্রীলিঙ্গবাচক নাম গ্রহণ করতেন, প্রথাগতভাবে স্ত্রীলোকের জন্য সংরক্ষিত এমে-সাল উপভাষায় কথা বলতেন এবং অনুমিত হয় যে সমকামী যৌনাচারের সঙ্গে জড়িত থাকতেন।[45] আক্কাদীয় যুগে ইশতারের কুরগার্রু ও আস্সিন্নু নামের ভৃত্যেরা স্ত্রীলোকের পোশাক পরিধান করত এবং ইশতারের মন্দিরে যুদ্ধ-নৃত্যের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করত।[46] বেশ কয়েকটি আক্কাদীয় প্রবাদ দেখে মনে হয় যে, সমকামিতার দিকেও সেগুলির প্রবণতা ছিল।[46] মেসোপটেমিয়া নিয়ে গ্রন্থরচনার জন্য পরিচিত নৃতত্ত্ববিদ গোয়েন্ডোলিন লেইক ইনান্না-ইশতারের পূর্বোক্ত পুরোহিত ও ভৃত্যদের সঙ্গে আধুনিক ভারতীয় হিজড়াদের তুলনা করেছেন।[47] একটি আক্কাদীয় স্তোত্রেও বলা হয়েছে যে, ইশতার পুরুষদের নারীতে রূপান্তরিত করতে সক্ষম।[48]
প্রথম যুগের বিশেষজ্ঞ স্যামুয়েল নোয়া ক্রেমারের মতে, খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দের শেষের দিকে উরুকের রাজারা সম্ভবত তাঁদের বৈধতা প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন ইনান্নার স্বামী রাখাল দুমুজিদের ভূমিকাটি গ্রহণের মাধ্যমে।[49] প্রতি বছর মহাবিষুবের সময় আয়োজিত[49] সুমেরীয় নববর্ষ উৎসব[50] আকিতুর দশম দিনে সারা রাত ধরে এই আচারটি পালন করা হত।[49][50] রাজা অংশ নিতেন এক "পবিত্র বিবাহ" অনুষ্ঠানে।[49] এই অনুষ্ঠানে ইনান্নার প্রধানা পুরোহিত দেবীর ভূমিকা গ্রহণ করতেন এবং রাজা তার সঙ্গে আচারগত যৌনসংগমে লিপ্ত হতেন।[49][50] বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে পবিত্র বিবাহ অনুষ্ঠানটিকে গবেষকেরা মোটামুটিভাবে ঐতিহাসিকভাবে প্রতিষ্ঠিত একটি বিষয় ধরে নিয়েছিলেন।[51] কিন্তু প্রধানত পিরজো লাপিনকিভির লেখালিখির সূত্রে অনেকে পবিত্র বিবাহ অনুষ্ঠানটিকে একটি প্রকৃত আচারের পরিবর্তে সাহিত্য-সংক্রান্ত আবিষ্কার হিসেবে গণ্য করতে শুরু করেন।[51] অনুমিত হয়, ইশতারের কাল্টের সঙ্গে পবিত্র পতিতাবৃত্তিও যুক্ত ছিল।[52][53][41][54] তবে অনেক গবেষক এই ধারণাটি প্রত্যাখ্যান করেছেন।[55][56][57][58] জানা যায়, ইশতারিতুম নামে পরিচিত এক শ্রেণির হায়ারোডিউল ইশতারের মন্দিরে বাস করত।[53] তবে সেই ধরনের নারী পুরোহিতেরা কোনও রকম যৌনাচারের সঙ্গে লিপ্ত থাকতেন কিনা তা স্পষ্ট নয়।[56] অনেক আধুনিক গবেষকের মতে, তারা ওই জাতীয় কাজে লিপ্ত থাকতেন না।[57][55] সমগ্র প্রাচীন নিকট প্রাচ্য জুড়েই মহিলারা ছাইতে কেক সেঁকে (যা কমান তুমরি নামে পরিচিত ছিল) ইশতারকে তা উৎসর্গ করে পূজা নিবেদন করত।[59] একটি আক্কাদীয় স্তোত্রে এমন ধরনের উৎসর্গীকরণের উল্লেখ পাওয়া যায়।[60] মারিতে কেক তৈরির অনেকগুলি মাটির ছাঁচ আবিষ্কৃত হয়েছে। এগুলির আকৃতি দৃঢ় মুষ্টিতে স্তন আঁকড়ে থাকা বিরাট নিতম্ব সহ নগ্ন নারীর মতো।[60] কোনও কোনও গবেষকের মতে এই ছাঁচগুলি থেকে কেক তৈরি করা হত স্বয়ং ইনান্নার প্রতিকৃতি তৈরি করার জন্য।[61]
মূর্তিতত্ত্ব
প্রতীকসমূহ
ইনান্না-ইশতারের সর্বাধিক পরিচিত প্রতীকটি ছিল অষ্টকোণ-বিশিষ্ট তারা।[62] তবে কোণের সঠিক সংখ্যাটি ক্ষেত্রবিশেষে ভিন্নও দেখা গিয়েছে।[63] অনেক ক্ষেত্রেই ছয়কোণ-বিশিষ্ট তারাও দেখা যায়। কিন্তু সেগুলির প্রতীকী অর্থ অজ্ঞাত।[67] মনে করা হয়, অষ্টকোণ-বিশিষ্ট তারাটি আদিতে স্বর্গের সঙ্গে একটি সাধারণ সম্পর্কের দ্যোতক ছিল।[68] কিন্তু পুরনো ব্যাবিলনীয় যুগে (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৮৩০ - ১৫৩১ অব্দ) এটি নির্দিষ্টভাবে যুক্ত হয় যে শুক্র গ্রহের সঙ্গে ইনান্না নিজে যুক্ত তার সঙ্গে।[68] সেই সময় থেকেই ইশতারের তারা একটি বৃত্তাকার চাকতির মধ্যে খোদাই করা হত।[67] পরবর্তী ব্যাবিলনীয় যুগে ইশতারের মন্দিরে কর্মরত ক্রীতদাসদের কখনও কখনও আটকোণ-বিশিষ্ট তারা দিয়ে দাগিয়ে দেওয়া হত।[67][69] সীমানা প্রস্তর ও সিলিন্ডার সিলমোহরে আটকোণ-বিশিষ্ট তারা মাঝে মাঝে সিনের (সুমেরীয় নান্না) প্রতীক অর্ধচন্দ্র এবং শামাশের (সুমেরীয় উতু) প্রতীক রশ্মিযুক্ত সৌর চাকতির পাশাপাশি খোদিত হত।[70][63]
ইনান্নার কিউনিফর্ম আইডিওগ্রাম ছিল আঁকশির আকৃতিবিশিষ্ট শরের বাঁকানো গিঁট, যা ছিল ভাণ্ডারঘরের দরজার চৌকাঠের প্রতিনিধিত্বকারী এবং উর্বরতা ও প্রাচুর্যের সাধারণ প্রতীক।[71] রোজেট ছিল ইনান্নার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক, যা ইশতারের সঙ্গে তার সমন্বয় সাধিত হওয়ার পরেও ব্যবহৃত হত।[72] নব্য-আসিরীয় যুগে (খ্রিস্টপূর্ব ৯১১ – ৬০৯ অব্দ) রোজেট সম্ভবত প্রকৃত অর্থেই অষ্টকোণ-বিশিষ্ট তারাকে আচ্ছাদিত করে ইশতারের প্রধান প্রতীক হয়ে ওঠে।[73] আশুর শহরের ইশতার মন্দিরটি অসংখ্য রোজেট দ্বারা শোভিত ছিল।[72]
ইনান্না-ইশতার যুক্ত ছিলেন সিংহের সঙ্গেও।[64][65] প্রাচীন মেসোপটেমীয়দের কাছে সিংহ ছিল ক্ষমতার প্রতীক।[64] সুমেরীয় যুগেই তার সঙ্গে সিংহকে যুক্ত করা শুরু হয়েছিল।[65] নিপ্পুরের ইনান্না মন্দির থেকে প্রাপ্ত একটি ক্লোরাইট বাটিতে বড়োসড়ো একটি বিড়াল-সদৃশ প্রাণীর সঙ্গে এক দৈত্যাকার সাপের যুদ্ধের দৃশ্য অঙ্কিত রয়েছে এবং সেই বাটির কিউনিফর্ম লিপিটিতে লেখা রয়েছে "ইনান্না ও সর্প"। এই ছবিটিই ইঙ্গিত করে যে সেই বিড়ালটি আসলে দেবীর প্রতীক।[65] আক্কাদীয় যুগে, ইনান্নাকে প্রায়শই বহুশস্ত্রধারিণী এক যোদ্ধাদেবী হিসেবে চিত্রিত করা হত। সেই সব চিত্রে তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল একটি সিংহ।[74]
ইনান্না-ইশতারের আরেকটি প্রধান প্রাণী প্রতীক ছিল পায়রা।[75][76] খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দের গোড়া থেকেই কাল্ট-সংক্রান্ত বস্তুগুলির সঙ্গে পায়রা যুক্ত হয়েছিল।[76] আশুরে খ্রিস্টপূর্ব ত্রয়োদশ শতাব্দীতে নির্মিত ইশতার মন্দিরে শিসার পায়রা মূর্তি আবিষ্কৃত হয়েছে।[76] সিরিয়ার মারিতে প্রাপ্ত একটি চিত্রিত ফ্রেস্কোতে দেখা যায়, ইশতারের মন্দিরে একটি তালগাছ থেকে একটি দৈত্যাকার পায়রা বেরিয়ে আসছে।[75] দেবী নিজেও যে পায়রার রূপ ধারণ করতে পারেন, এই ছবিটি সেই ধারণাই ইঙ্গিতবাহী।[75]
শুক্র গ্রহের সঙ্গে সম্পর্ক
ইনান্নাকে যুক্ত করা হত শুক্র গ্রহের সঙ্গে। উল্লেখ্য, তার রোমান প্রতিরূপ ভিনাসও সেই গ্রহের সঙ্গেই যুক্ত।[38][77][38] অনেক স্তোত্রে ইনান্নাকে শুক্র গ্রহের দেবী বা মূর্ত রূপ হিসাবে তার ভূমিকার প্রশংসা করা হয়েছে।[78] ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপক জেফ্রি কুলি মনে করেন, অনেক পুরাণকথায় ইনান্নার চলাচল আকাশে শুক্র গ্রহের সঞ্চরণের অনুরূপ।[78] ইনান্নার প্রেতলোকে অবতরণ উপাখ্যানে দেখা যায়, তিনি প্রেতলোকে অবতরণ করেন এবং পরে স্বর্গে ফিরে যান, যে কাজ অন্য দেবতারা পারেন না। আপাতদৃষ্টিতে শুক্র গ্রহও অনুরূপভাবে অবতরণ করে, তা পশ্চিম দিকে অস্ত যায় আবার পূর্ব দিকে উদিত হয়।[78] একটি প্রারম্ভক স্তোত্রে বর্ণিত হয়েছে, ইনান্না স্বর্গ ত্যাগ করে কুর-এর উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। মনে করা হত, কুরের প্রবেশদ্বার একটি পর্বতমালায়, যা ইনান্নার উদয় ও পশ্চিম দিকে অস্ত যাওয়ার প্রতীক।[78] ইনান্না ও শুকালেতুদা উপাখ্যানে বর্ণিত হয়েছে, শুকালেতুদা স্বর্গ অভিবীক্ষণ করেন ইনান্নার সন্ধানে, সম্ভবত পূর্ব ও পশ্চিম দিগন্তে।[79] একই পুরাণকথায় দেখা যায়, আক্রমণকারীর অনুসন্ধানে বেরিয়ে ইনান্না নিজেই এমনভাবে চলাফেরা করেন যা আকাশে শুক্র গ্রহের সঞ্চরণের অনুরূপ।[78]
আপাতদৃষ্টিতে শুক্রের সঞ্চরণ একটানা না হওয়ায় (সূর্যের নিকটতর হওয়ায় এটি নির্দিষ্ট সময়ে অনেক দিনের জন্য অদৃশ্য হয়ে যায়, এবং পরে অন্য দিকে পুনরায় উদিত হয়) কোনও কোনও সংস্কৃতিতে শুক্রকে একক বস্তু মনে করা হত না।[78] বরং মনে করা হত, এটি দুই দিগন্তের দুই পৃথক তারা: শুকতারা ও সন্ধ্যাতারা।[78] যদিও জেমদেত নাস্র যুগের একটি সিলিন্ডার সিলমোহর এই ইঙ্গিত বহন করে যে, প্রাচীন সুমেরীয়রা জানত শুকতারা ও সন্ধ্যাতারা আসলে একই মহাজাগতিক বস্তু।[78] শুক্রের সবিরাম সঞ্চরণকে পুরাণ এবং ইনান্নার দ্বৈত প্রকৃতি উভয় ক্ষেত্রের সঙ্গেই যুক্ত করা যায়।[78]
আনুনিতু রূপে ইনান্নাকে শেষ রাশিগত তারামণ্ডল মীনের পূর্বদিকের মাছটির সঙ্গে যুক্ত করা হয়।[80][81] তার স্বামী দুমুজিদকে যুক্ত করা হয় পার্শ্ববর্তী প্রথম তারামণ্ডল মেষের সঙ্গে।[80]
- ইশতারের ব্যাবিলনীয় টেরাকোটা খোদাইচিত্র, এশনুন্না (খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দের প্রথম ভাগ)
- পাত্রধারী এক দেবীর প্রমাণ আকারের মূর্তি, সম্ভবত ইশতার, মারি, সিরিয়া (খ্রিস্টপূর্ব অষ্টাদশ শতাব্দী)
- ডানাযুক্ত ইশতারের টেরাকোটা খোদাইচিত্র, লারসা (খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দ)
- স্তন আঁকড়ে থাকা নারীর ক্ষুদ্রাকার মূর্তি, সম্ভবত ইশতারের প্রতীক, সুসা (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৩০০ – ১১০০ অব্দ)[82]
- প্রস্তরফলকে বাটি হাতে ইশতার, এন্নিগালদি-নান্না’র জাদুঘর (খ্রিস্টপূর্ব অষ্টাদশ শতাব্দী)
- ইশতারের হেলেনায়িত বাস-রিলিফ ভাস্কর্য, দেবী এখানে ভৃত্যের সঙ্গে দণ্ডায়মান, পালমাইরা (খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতাব্দী)
চরিত্র
সুমেরীয়রা ইনান্নাকে পূজা করত যুদ্ধ ও যৌনতার দেবী হিসেবে।[1] অন্যান্য দেবতার ভূমিকা ছিল নির্দিষ্ট এবং তাঁদের ক্ষেত্রও ছিল সীমাবদ্ধ। কিন্তু ইনান্না-সংক্রান্ত উপাখ্যানগুলিতে এই দেবীকে একের অপর এক বিজয় অভিযানে রত অবস্থায় দেখা যায়।[25][84] তাঁকে বর্ণনা করা হয়েছে যুবতী ও হঠকারী বলে। কথিত হয়েছে, তিনি তার প্রতি বণ্টিত ক্ষমতার তুলনায় অধিক ক্ষমতার জন্য সর্বদা লালায়িত থাকেন।[25][84]
ইনান্নাকে প্রেমের দেবী হিসেবে পূজা করা হলেও তিনি বিবাহের দেবী ছিলেন না, এমনকি তাঁকে মাতৃকাদেবীও গণ্য করা হত না।[85][86] একটি স্তোত্রে তার বর্ণনায় বলা হয়েছে, "ভৃত্যেরা যখন পশুর দলকে ছেড়ে দেয়, যখন গবাদিপশু ও ভেড়া ফিরে আসে খোঁয়াড়ে, তখন, হে দেবী, নামহীন দরিদ্রের ন্যায় তুমি শুধু একটি মাত্র বস্ত্র পরিধান করো। তোমার কণ্ঠে পরানো হয় পতিতার মুক্তাহার, এবং তুমি সম্ভবত সরাইখানা থেকে একটি লোককে কেড়ে নিতে যাও।"[87] ইনান্নার প্রেতলোকে অবতরণ উপাখ্যানে প্রেমিক দুমুজিদের প্রতি ইনান্নার আচরণে তার অস্থিরমতিত্বের পরিচয় পাওয়া যায়।[85] ইনান্নার এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যটির প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে গিলগামেশ মহাকাব্যের পরবর্তীকালীন প্রামাণ্য আক্কাদীয় পাঠে। এই গ্রন্থে গিলগামেশ ইশতারের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন যে, দেবী তার প্রেমিকদের প্রতি নির্দয় ব্যবহারের জন্য কুখ্যাত।[88][89]
ইনান্নাকে পূজা করা হত অন্যতম সুমেরীয় যুদ্ধ দেবী হিসেবেও।[38][90] তার একটি স্তোত্রে বলা হয়েছে: "তার প্রতি অবাধ্যদের মধ্যে তিনি বিভ্রান্তি উৎপাদন করেন এবং বিশৃঙ্খলার জন্ম দেন, হত্যাযজ্ঞ ত্বরান্বিত করেন এবং প্রলংকর বন্যা আয়নন করেন, পরিধান করেন ভয়াল দ্যূতি। সংঘাত ও যুদ্ধ বৃদ্ধি পাওয়া তারই অক্লান্ত খেলা, তার জুতোর চর্মবন্ধনী আটকানোর মতো।"[91] ক্ষেত্রবিশেষে যুদ্ধকেও বর্ণনা করা হয়েছে "ইনান্নার নৃত্য" বলে।[92]
পরিবার
ইনান্নার যমজ ভাই ছিলেন সূর্য ও ন্যায়বিচারের দেবতা উতু (পরবর্তীকালে পূর্ব সেমিটিক ভাষাসমূহে শামাশ নামে পরিচিত)।[94][95][96] সুমেরীয় গ্রন্থগুলিতে উল্লিখিত হয়েছে, ইনান্না ও উতু একে অপরের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।[97] বাস্তবিকপক্ষে, তাঁদের সম্পর্ক প্রায়শই অজাচারের সদৃশ হয়ে পড়েছে।[97][98] ইনান্নার সুক্কাল হলেন দেবী নিনশুবুর।[99] তার সঙ্গে ইনান্নার সম্পর্কটি পারস্পরিক ভক্তির।[99] তার প্রেতলোকে অবতরণ-সংক্রান্ত কাহিনিতে উল্লিখিত হয়েছে যে, প্রেতলোকের রানি দেবী এরেশকিগাল হলেন তার "জ্যেষ্ঠা ভগিনী"।[100][101] যদিও সুমেরীয় সাহিত্যকে প্রায় কখনও দুই দেবীকে একসঙ্গে দেখা যায়নি।[101] উরুকে সচরাচর তাঁকে আকাশ দেবতা আনের কন্যা মনে করা হত।[1][2] কিন্তু আইসিন মতে, তিনি সাধারণত চন্দ্রদেবতা নান্নার (পরবর্তীকালে যিনি সিন নামে পরিচিত হন) কন্যা রূপে বর্ণিত হয়েছেন।[102][2][1] সাহিত্যকর্মে কখনও কখনও তাঁকে এনলিলের কন্যা[1][2] কখনও বা এনকির কন্যা রূপে বর্ণনা করা হয়েছে।[1][2] পরবর্তীকালের কোনও কোনও উপাখ্যানে দেখা যায়, ইনান্না-ইশতার হলেন ঝড়ের দেবতা ইশকুরের (হাদাদ) বোন।[103] হিট্টীয় পুরাণেও ইশতার হলেন হিট্টীয় ঝড়দেবতা তেশুবের বোন।[104]
রাখালদের দেবতা দুমুজিদকে (পরবর্তীকালে তাম্মুজ নামে পরিচিত) সাধারণত ইনান্নার স্বামী মনে করা হয়।[95] তবে ইনান্নার প্রতি তার বিশ্বস্ততা প্রশ্নাতীত নয়।[1] প্রেতলোকে অবতরণ-সংক্রান্ত কাহিনিতে দেখা যায়, ইনান্না দুমুজিদকে পরিত্যাগ করছেন এবং গাল্লা দানবেরা যখন তার পরিবর্তে দুমুজিদকে প্রেতলোকে টেনে নিয়ে যায়, তখন ইনান্না বাধা দেননি।[105][106] কিন্তু পরবর্তীকালের দুমুজিদের প্রত্যাবর্তন উপাখ্যানে দেখা যায়, আপাত স্ববিরোধী ভঙ্গিতে ইনান্না দুমুজিদের মৃত্যুতে বিলাপ করছেন এবং শেষ পর্যন্ত এই মর্মে অধ্যাদেশ জারি করছেন যে, বছরের অর্ধভাগের জন্য দুমুজিদ স্বর্গে ফিরে এসে তার সঙ্গে মিলিত হবেন।[107][106] সাধারণত ইনান্নাকে নিঃসন্তান বলেই বর্ণনা করা হয়।[1] কিন্তু লুগালবান্দার পুরাণকথায় এবং উরের তৃতীয় রাজবংশের সমসাময়িককালের (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ২১১২ – ২০০৪ অব্দ) একটি মাত্র ভবন শিলালিপিতে যোদ্ধা দেবতা শারাকে তার পুত্র বলে বর্ণনা করা হয়েছে।[108] কোনও কোনও ক্ষেত্রে তাঁকে লুলালেরও মা মনে করা হয়।[109] উল্লেখ্য, অন্যান্য গ্রন্থে লুলালকে নিনসুনের পুত্র বলে উল্লেখ করা হয়েছে।[109]
সুমেরীয় পুরাণ
সৃষ্টি অতিকথা
এনকি ও বিশ্ব শৃঙ্খলা কবিতার সূচনায় (ইটিসিএসএল ১.১.৩) দেবতা এনকি কর্তৃক মহাজাগতিক বিন্যাস রচনার কথা বর্ণিত হয়েছে।[110] এই কবিতার শেষ দিকে দেখা যায়, ইনান্না এনকির কাছে এসে অভিযোগ জানাচ্ছেন যে, সকল দেবতাকে নির্দিষ্ট ক্ষেত্র ও বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা হলেও এনকি ইনান্নাকে তেমন কিছুই দেননি।[111] ইনান্না বলেন, তার প্রতি অনায্য আচরণ করা হয়েছে।[112] প্রত্যুত্তরে এনকি বলেন যে, ইনান্নার ইতিমধ্যেই একটি ক্ষেত্র রয়েছে এবং সেই কারণেই তিনি তাঁকে কোনও ক্ষেত্র প্রদান করার প্রয়োজন বোধ করেননি।[113]
গিলগামেশ, এনকিডু ও প্রেতলোক মহাকাব্যের প্রস্তাবনায় প্রাপ্ত "ইনান্না ও হুলুপ্পু গাছ" উপাখ্যানটি (ইটিসিএসএল ১.৮.১.৪)[114] যুবতী ইনান্নাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। সেই সময়ও তিনি তার ক্ষমতায় সুস্থিত হননি।[115][116] কাহিনিটি শুরু হয়েছে ইউফ্রেটিস নদীর তীরে জাত[117][118][119] একটি হুলুপ্পু গাছকে নিয়ে। ক্রেমার মনে করেন, এটি সম্ভবত উইলো গাছ।[117] ইনান্না গাছটিকে উরুকে তার বাগানে নিয়ে আসেন। তিনি চেয়েছিলেন গাছটি পুরোপুরি বেড়ে উঠলে সেটি কেটে একটি সিংহাসন বানাবেন।[117][118][119] গাছটি বেড়ে ওঠে। কিন্তু সেই গাছে বসবাসকারী "প্রিয়গুণবর্জিত" সাপ, আঞ্জু-পাখি ও লিলিতু (ইহুদি লোককথার লিলিথের সুমেরীয় পূর্বরূপ) ইনান্নাকে দুঃখে কাঁদিয়ে তোলে।[117][118][119] নায়ক গিলগামেশকে এই কাহিনিতে ইনান্নার ভাই বলা হয়েছে। তিনি এসে সাপটিকে হত্যা করেন। তাতে আঞ্জু-পাখি ও লিলিতু পালিয়ে যায়।[120][118][119] গিলগামেশের সঙ্গীরা গাছটি কেটে ফেলেন এবং সেই গাছের কাঠ দিয়ে একটি বিছানা ও একটি সিংহাসন প্রস্তুত করে ইনান্নাকে দেন।[121][118][119] ইনান্নাও একটি পিক্কু ও একটি মিক্কু (সম্ভবত এক ধরনের ঢাক ও ঢাকের কাঠি, তবে বস্তু দু’টির সঠিক পরিচয় অনিশ্চিত) প্রস্তুত করেন।[122] গিলগামেশের সাহসের পুরস্কারস্বরূপ তিনি সে দু’টি গিলগামেশকে পুরস্কার হিসেবে প্রদান করেন।[123][118][119]
ইনান্না ও উতু শীর্ষক এক সুমেরীয় স্তোত্রে এক কারণতত্ত্ব-সংক্রান্ত অতিকথায় বর্ণিত হয়েছে কীভাবে ইনান্না যৌনতার দেবী হলেন।[124] স্তোত্রের শুরুতে বলা হয়েছে, ইনান্না যৌনতার বিষয়ে কিছুই জানতেন না।[124] তাই তিনি তার ভাই উতুকে বলেন তাঁকে কুরে (সুমেরীয় প্রেতলোক) নিয়ে যেতে,[124] যাতে ইনান্না সেখানে জাত একটি গাছের ফল আস্বাদন করতে পারেন[124] এবং তার ফলে যৌনতার সকল গোপন কথা তার সামনে প্রকাশিত হয়।[124] সেই মতো উতু ইনান্নাকে প্রেতলোকে নিয়ে যান এবং সেখানে ইনান্না সেই ফল খেয়ে যৌনতা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেন।[124] এই স্তোত্রের মূল ভাবটি এনকি ও নিনহুরসাগ উপাখ্যানে এবং পরবর্তীকালে বাইবেলের আদম ও ইভ কাহিনিতেও পাওয়া যায়।[124] ইনান্না কৃষককে চান কবিতার (ইটিসিএসএল ৪.০.৮.৩.৩) শুরুতে দেখা যায়, ইনান্না ও উতু খেলাচ্ছলে বাক্যালাপ করছেন। উতু তাঁকে বলছেন যে, ইনান্নার বিবাহের সময় উপস্থিত হয়েছে।[12][125] ইনান্না এনকিমদু নামে এক কৃষক ও দুমুজিদ নামে এক মেষপালকের সঙ্গে প্রেমালাপ করেন।[12] প্রথমে ইনান্না কৃষককে বেছে নিয়েছিলেন।[12] কিন্তু উতু ও দুমুজিদ তাঁকে বোঝান যে, দুমুজিদকে স্বামী হিসেবে নির্বাচিত করলেই সঠিকতর কাজ হবে। কারণ, তাঁদের মতে, কৃষক ইনান্নাকে যা উপহার দিতে পারবে, তার থেকেই ভালো উপহার একজন মেষপালক তাঁকে দিতে পারবে।[126] শেষে ইনান্না দুমুজিদকেই বিবাহ করেন।[126] মেষপালক ও কৃষক একে অপরকে উপহার দিয়ে বিরোধের অবসান ঘটান।[127] স্যামুয়েল নোয়া ক্রেমার এই অতিকথাটিকে বাইবেলে বর্ণিত কইন ও আবেলের কাহিনির সঙ্গে তুলনা করেছেন। কারণ উভয় কাহিনির মূল উপজীব্য দৈব আনুকূল্য অর্জনে এক কৃষক ও এক মেষপালকের প্রতিযোগিতা এবং উভয় কাহিনিতেই উদ্দিষ্ট দৈব সত্ত্বা শেষ পর্যন্ত মেষপালককেই নির্বাচিত করেছেন।[12]
বিজয় অভিযান ও পৃষ্ঠপোষকতা
ইনান্না ও এনকি (ইটিসিএসএল টি.১.৩.১) হল সম্ভবত উরের তৃতীয় রাজবংশের সমসাময়িককালে (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ২১১২ – ২০০৪ অব্দ) সুমেরীয় ভাষায় রচিত একটি দীর্ঘ কবিতা।[128] এই কবিতায় বর্ণিত হয়েছে কীভাবে ইনান্না জল ও মানব সংস্কৃতির দেবতা এনকির থেকে মে চুরি করেছিলেন।[129] প্রাচীন সুমেরীয় পুরাণে মে বলতে দেবতাদের সেই সব পবিত্র ক্ষমতা বা গুণাবলিকে বোঝাতো যেগুলি মানব সভ্যতার অস্তিত্ব রক্ষা করত।[130] প্রতিটি মে ছিল মানব সংস্কৃতির একটি করে নির্দিষ্ট ধারণার প্রতীক।[130] এই ধারণাগুলি বৈচিত্র্যপূর্ণ। সত্য, বিজয় ও মন্ত্রণার মতো বিমূর্ত ধারণা, লিখন পদ্ধতি ও বয়ন পদ্ধতির মতো প্রযুক্তিসমূহ এবং আইন, পুরোহিতের কার্যালয়, রাজপথ ও পতিতাবৃত্তির মতো সামাজিক বিষয়ও এই কবিতায় মে-র তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। মনে করা হত যে, এই মে-গুলি সভ্যতার সকল ধারণার উপর ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় ক্ষমতাই প্রদান করত।[129]
এই পুরাণকথায় দেখা যায়, ইনান্না তার নিজের শহর উরুক থেকে এনকির শহর এরিডুতে যাত্রা করেন। সেখানে তিনি এনকির মন্দির এ-আব্জুতে উপস্থিত হন।[131] এনকির সুক্কাল ইসিমুদ ইনান্নাকে অভিবাদন জানান এবং তাঁকে খাদ্য ও পানীয় নিবেদন করেন।[132][133] ইনান্না এনকির সঙ্গে এক মদ্যপান প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হন।[129][134] এনকি সম্পূর্ণ মাতাল হয়ে উঠলে ইনান্না তার থেকে মে-গুলি চেয়ে নেন।[129][135] তারপর ইনান্না স্বর্গের নৌকায় চড়ে এরিদু পরিত্যাগ করেন এবং মে-গুলিকে নিয়ে রওনা হন উরুকের পথে।[136][137] নেশা কেটে গেলে এনকি দেখেন মে-গুলি নিয়ে। তিনি ইসিমুদকে জিজ্ঞাসা করেন, সেগুলির কী হল।[136][138] ইসিমুদ বলেন, এনকি সবগুলিই ইনান্নাকে দিয়ে দিয়েছেন।[139][140] ক্রুদ্ধ হয়ে এনকি বেশ কিছু ভয়ংকর দানব প্রেরণ করেন যাতে ইনান্না উরুক শহরে পৌঁছানোর আগেই তারা মে-গুলি ফিরিয়ে আনতে পারে।[141][142] ইনান্নার সুক্কাল নিনশুবুর এনকির পাঠানো সকল দানবকে পরাভূত করেন।[143][144][99] নিনশুবুরের সাহায্যে ইনান্না মে-গুলিকে উরুক শহরে নিয়ে আসতে সফল হন।[143][145] ইনান্নার পলায়নের পর এনকি তার সঙ্গে বিরোধের নিষ্পত্তি ঘটান এবং তাঁকে একটি ইতিবাচক বিদায় সম্ভাষণা জানান।[146] এই কিংবদন্তিটি সম্ভবত এরিদু শহর থেকে উরুক শহরে এক ঐতিহাসিক ক্ষমতা হস্তান্তরের রূপক।[19][147] আবার এও সম্ভব যে এই কিংবদন্তিটি হয়তো ইনান্নার পরিপক্কতা ও তার স্বর্গের রানি হওয়ার জন্য প্রস্তুত অবস্থায় থাকার এক প্রতীকী উপস্থাপনা।[148]
ইনান্নার স্বর্গের শাসনভার গ্রহণ কবিতাটি অত্যন্ত খণ্ডিত আকারে আবিষ্কৃত হলেও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এই কবিতায় উরুক শহরে এয়ান্না মন্দিরে ইনান্নার বিজয় অভিযান বর্ণিত হয়েছে।[19] কবিতাটির শুরুতে ইনান্নার সঙ্গে তার ভাই উতুর একটি কথোপকথন উল্লিখিত হয়েছে। তাতে ইনান্না এই মর্মে বিলাপ করছেন যে, এয়ান্না মন্দিরটি তার ক্ষেত্রের অন্তর্ভুক্ত নয়। এই বাক্যালাপেই ইনান্না মন্দিরটি অধিকার করার সংকল্প ব্যক্ত করেছেন।[19] কাহিনির এই অংশে কবিতার পাঠ ক্রমেই খণ্ডিত হয়ে এসেছে।[19] কিন্তু বোঝাই যায় যে, কবিতাটিতে বর্ণিত হয়েছে ইনান্না কীভাবে একটি জলাভূমির মধ্যে দিয়ে দুর্গম পথে মন্দিরটিতে পৌঁছালেন এবং পথে এক জেলে তাঁকে নির্দেশ দিলেন যে কোন পথটি ধরলে তার পক্ষে সেখানে পৌঁছানো সহজতর হবে।[19] শেষ পর্যন্ত ইনান্না তার বাবা আনের কাছে উপস্থিত হন। ইনান্নার ঔদ্ধত্য দেখে আন মর্মাহত হলেও তার সাফল্য এবং মন্দিরে ইনান্নার অধিকার স্বীকার করে নেন।[19] কবিতাটির শেষে ইনান্নার শ্রেষ্ঠত্বসূচক একটি স্তোত্র বিধৃত হয়েছে।[19] এই পুরাণকথাটি সম্ভবত উরুকে আনের পুরোহিতদের কর্তৃত্বের অবসান এবং সেই ক্ষমতা ইনান্নার পুরোহিতদের হাতে হস্তান্তরিত হওয়ার রূপক।[19]
এনমেরকার ও আরাত্তার শাসনকর্তা (ইটিসিএসএল ১.৮.২.৩) শীর্ষক মহাকাব্যিক কবিতার প্রারম্ভে ও সমাপ্তি অংশে ইনান্নার সংক্ষিপ্ত উপস্থিতি লক্ষিত হয়। এই কবিতার উপজীব্য বিষয় হল উরুক ও আরাত্তা শহরের মধ্যে বিরোধ। উরুকের রাজা এনমেরকার তার শহরকে রত্ন ও মূল্যবান ধাতু দ্বারা সজ্জিত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তা করতে পারছিলেন না, কারণ সেই সব খনিজ শুধুমাত্র আরাত্তায় পাওয়া যায় এবং তখনও বাণিজ্যের প্রচলন না ঘটায় সেই সম্পদ তার কাছে অধরা ছিল।[149] ইনান্না ছিলেন দুই শহরেরই পৃষ্ঠপোষকতাকারিনী দেবী।[150] কবিতার শুরুতে তিনি এনমেরকারের কাছে আসেন[151] এবং তাঁকে বলেন আরাত্তার তুলনায় উরুক শহরটিকে তার বেশি ভালো লাগে।[152] ইনান্না এনমেরকারকে বলেন আরাত্তার শাসনকর্তার কাছে এক দূত প্রেরণ করে উরুকের প্রয়োজনীয় সম্পদ চেয়ে নিতে।[150] মহাকাব্যের অধিকাংশ জুড়ে রয়েছে ইনান্নার আনুকূল্য অর্জনের উদ্দেশ্যে দুই রাজার এক মহাযুদ্ধের কাহিনী।[153] কবিতার শেষে দেখা যায়, ইনান্না পুনরায় আবির্ভূত হয়ে এনমেরকারকে তার শহর ও আরাত্তার মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করার পরামর্শ দিয়ে সংঘাত অবসান ঘটিয়ে দেন।[154]
ন্যায়বিচার-সংক্রান্ত পুরাণকথা
ইনান্না ও তার ভাই উতুকে ন্যায়বিচার বণ্টনকারী মনে করা হত।[97] ইনান্না-সংক্রান্ত বিভিন্ন পুরাণকথায় তার এই ভূমিকাটির উদাহরণ পাওয়া যায়।[155] ইনান্না ও এবিহ্ (ইটিসিএসএল ১.৩.৪), নামান্তরে ভয়ংকর দিব্য ক্ষমতার দেবী, হল আক্কাদীয় কবি এনহেদুয়ান্না রচিত একটি ১৮৪-পংক্তির কবিতা। এই কবিতায় জাগরোস পর্বতমালার একটি পর্বত এবিহ্-এর সঙ্গে ইনান্নার সংঘাতের বর্ণনা পাওয়া যায়।[156] কবিতার শুরুতে ইনান্নার প্রশস্তিস্বরূপ একটি প্রারম্ভক স্তোত্র সংযোজিত হয়েছে।[157] দেবী সমগ্র জগৎ পরিভ্রমণ করে এবিহ্ পর্বতে এসে উপস্থিত হন। সেই পর্বতের গৌরবময় ক্ষমতা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে তিনি কুপিত হন।[158] তার মনে হয় সেই পর্বতের অস্তিত্ব তার নিজের কর্তৃত্বের প্রতি এক প্রত্যক্ষ অবমাননা।[159][156] তিনি চিৎকার করে এবিহ্ পর্বতকে নিন্দা করেন:
পর্বত, তোমার সমুন্নতির জন্য, তোমার উচ্চতার জন্য,
তোমার সদ্গুণের জন্য, তোমার সৌন্দর্যের জন্য,
তুমি এক পবিত্র পোশাক পরিধান করেছ বলে,
তুমি একটি সংগঠিত (?) বলে,
তুমি (তোমার) নাসিকা ভূমিতলে আনয়ন করোনি বলে,
তুমি (তোমার) ওষ্ঠাধর ধূলিতে রাখনি বলে।[160]
ইনান্না সুমেরীয় স্বর্গদেবতা আনের কাছে এবিহ্ পর্বতকে ধ্বংস করার অনুমতি প্রার্থনা করেন।[158] আন তাঁকে সতর্ক করেন পর্বতটিকে আক্রমণ না করার জন্য।[158] কিন্তু সেই সতর্কবার্তা উপেক্ষা করে ইনান্না আক্রমণ করতে এগিয়ে যান এবং কোনওরকম বিবেচনা না করেই পর্বতটিকে ধ্বংস করে দেন।[158] পুরাণকথাটির শেষভাগে দেখা যায়, ইনান্না এবিহ্ পর্বতের কাছে সেই আক্রমণের কারণ ব্যাখ্যা করছেন।[160] সুমেরীয় কাব্যে প্রায়শই ইনান্নার গুণবাচক বিশেষণ হিসেবে "কুর-ধ্বংসকারিণী" শব্দবন্ধটি ব্যবহৃত হয়েছে।[161]
ইনান্না ও শুকালেতুদা (ইটিসিএসএল ১.৩.৩) কবিতার সূচনায় ইনান্নার যে স্তোত্রটি রয়েছে তাতে দেবীকে শুক্র গ্রহ বলে বন্দনা করা হয়েছে।[162] তারপর এই কবিতায় শুকালেতুদার পরিচয় দেওয়া হয়েছে। তিনি একজন মালী এবং আংশিকভাবে অন্ধ। বাগান পরিচর্যার কাজে শুকালেতুদা দক্ষতা কিছুমাত্র নেই। শুধু একটি পপলার গাছ ছাড়া তার সব গাছ মরে যায়।[162] নিজের কাজে সহায়তা চেয়ে শুকালেতাদু দেবতাদের কাজে প্রার্থনা করেন। অবাক হয়ে তিনি দেখেন, দেবী ইনান্না তার পপলার গাছটি দেখতে পেয়ে সেই গাছের শাখার ছায়ায় বিশ্রাম করার সিদ্ধান্ত নিলেন।[162] শুকালেতুদা ইনান্নার বস্ত্র উন্মোচিত করে নিদ্রিত দেবীকে ধর্ষণ করেন।[162] ঘুম থেকে উঠে যখন ইনান্না বুঝতে পারেন যে তার সতীত্ব হরণ করা হয়েছে, তখন তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন এবং অপরাধীকে শাস্তি দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন।[162] ক্রোধোন্মত্তা ইনান্না পৃথিবীর বুকে ভয়ংকর মহামারী ছড়িয়ে দেন। জল রক্তে পরিণত হয়।[162] প্রাণভয়ে ভীত শুকালেতুদা নিজের বাবার কাছে ইনান্নার ক্রোধের হাত থেকে বাঁচার জন্য পরামর্শ চান।[162] তার বাবা তাঁকে শহরে গিয়ে লুকাতে বলেন, যাতে তিনি লোকের ভিড়ে মিশে যেতে পারেন।[162] ইনান্না পূর্বের পর্বতমালায় তার ধর্ষণকারীর অনুসন্ধান করতে থাকেন।[162] কিন্তু খুঁজে পান না তাঁকে।[162] তখন তিনি পরপর ঝড় পাঠিয়ে শহরের সকল পথ বন্ধ করে দেন। তাও শুকালেতুদার সন্ধান তার অধরাই থেকে যায়।[162] তখন তিনি অনুসন্ধানকার্যে এনকির সাহায্য প্রার্থনা করেন এবং ভয় দেখান যে এনকি তাঁকে সাহায্য না করলে তিনি উরুক শহরে তার মন্দির ছেড়ে চলে যাবেন।[162] এনকি রাজি হন এবং ইনান্নাকে "আকাশে রামধনুর মতো প্রসারিত হতে" অনুমতি দেন।[162] শেষ পর্যন্ত শুকালেতুদাকে দেখতে পান ইনান্না। শুকালেতুদা নিজের অপরাধের জন্য একটি অজুহাত খাড়া করতে যান। কিন্তু ইনান্না তা প্রত্যাখ্যান করে তাঁকে হত্যা করেন।[163] ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপক জেফ্রি কুলি শুকালেতুদার গল্পটিকে সুমেরীয় নাক্ষত্রিক পুরাণকথা বলে উল্লেখ করেন। তার মতে এই কাহিনিতে ইনান্নার চলাচল শুক্র গ্রহের সঞ্চরণের অনুরূপ।[78] তিনি আরও বলেছেন, শুকালেতুদা যখন দেবীর উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করছিলেন, তখন সম্ভবত তিনি দিগন্তে শুক্র গ্রহের দিকে তাকিয়ে ছিলেন।[163]
নিপ্পুরে আবিষ্কৃত ইনান্না ও বিলুলু (ইটিসিএসএল ১.৪.৪) কবিতাটির পাঠ বিশ্রীভাবে ক্ষতিগ্রস্থ।[164] গবেষকেরা কবিতাটি একাধিক ভিন্ন ধারায় ব্যাখ্যা করেছেন।[164] কবিতার প্রারম্ভিক অংশটির বেশিটাই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।[164] তবে দেখে মনে হয়, এটি একটি বিলাপগাথা।[164] কবিতার বোধগম্য অংশটিতে দেখা যায়, ইনান্নার স্বামী দুমুজিদ নিজের মেষের দলের উপর নজর রাখছেন এবং তার জন্য ইনান্না ব্যাকুল হয়ে পড়ছেন।[164][165] ইনান্না তাঁকে খুঁজতে বের হন।[164] এরপর কবিতাটির একটি বড়ো অংশ পাওয়া যায় না।[164] যেখানে গল্পটি আবার শুরু হয়েছে সেখানে দেখা যায়, ইনান্নাকে বলা হচ্ছে যে দুমুজিদ খুন হয়েছেন।[164] ইনান্না আবিষ্কার করেন যে, বিলুলু নামে এক বুড়ি ডাকাত এবং তার ছেলে গিরগিরে এই খুনের জন্য দায়ী।[166][165] ইনান্না এদেনলিলার পথ ধরেন এবং একটি সরাইখানায় থামেন। সেখানেই তিনি দুই খুনিকে খুঁজে পান।[164] ইনান্না একটি চৌকির উপর উঠে দাঁড়ান[164] এবং বিলুলুকে পরিণত করেন "মরুভূমিতে লোকেরা যে চামড়ার জলপাত্র বহন করে" তাইতে।[164][167][166][165] এইভাবে তিনি বিলুলুকে বাধ্য করেন দুমুজিদের অন্ত্যেষ্টি তর্পণের জল ঢালতে।[164][165]
প্রেতলোকে অবতরণ
ইনান্না-ইশতারের প্রেতলোকে অবতরণ-সংক্রান্ত কাহিনির দু’টি ভিন্ন পাঠ পাওয়া যায়:[168][169] একটি সুমেরীয় পাঠ, যেটির রচনাকাল উরের তৃতীয় রাজবংশের সমসাময়িক যুগ (ইটিসিএসএল ১.৪.১)[168][169] এবং অপরটি স্পষ্টতই অমৌলিক আক্কাদীয় পাঠ, যেটির রচনাকাল খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দের প্রথম ভাগ।[168][169] সুমেরীয় পাঠটি পরবর্তীকালে রচিত আক্কাদীয় পাঠটির তুলনায় প্রায় তিন গুণ বড়ো এবং অনেক বেশি বিস্তারিত বর্ণনা দ্বারা সমৃদ্ধ।[170]
সুমেরীয় পাঠ
সুমেরীয় ধর্মে কুর বা প্রেতলোককে মনে করা হত মাটির অনেক গভীরে অবস্থিত একটি অন্ধকার ও নিরানন্দময় গুহা।[171] সেখানে জীবন ছিল "মর্ত্যজীবনের একটি ছায়াময় সংস্করণ"।[171] প্রেতলোক শাসন করতে ইনান্নার দিদি দেবী এরেশকিগাল।[100][171] প্রেতলোকে যাত্রার আগে ইনান্না তার মন্ত্রী তথা ভৃত্য নিনশুবুরকে নির্দেশ দিয়ে যান, তিন দিনের মধ্যে তিনি না ফিরলে নিনশুবুর যেন দেবতা এনলিল, নান্না, আনু ও এনকির কাছে তাঁকে উদ্ধার করার জন্য প্রার্থনা জানান।[172][173] প্রেতলোকের বিধান অনুযায়ী নিযুক্ত দূত ছাড়া কেউ একবার সেখানে ঢুকলে কখনও বের হতে পারে না।[172] প্রেতলোকে প্রবেশের আগে ইনান্না বিস্তারিতভাবে সাজসজ্জা করেন। তিনি পাগড়ি, পরচুলা, লাপিস লাজুলি কণ্ঠহার, স্তনের উপর গুটিকার মালা পরেন, 'পালা বস্ত্র' (সম্ভ্রান্ত স্ত্রীলোকের পোশাক) পরিধান করেন, মাসকারা, বক্ষবর্ম ও সোনার আংটি পরেন এবং হাতে লাপিস লাজুলির একটি মানদণ্ড ধারণ করেন।[174][175] প্রতিটি পোশাকই ছিল ইনান্নার অধিকারে থাকে একটি করে শক্তিশালী মে-র প্রতীক।[176]
ইনান্না প্রেতলোকের দরজায় করাঘাত করেন এবং সেখানে প্রবেশ করতে দেওয়ার দাবি জানান।[177][178][173] দ্বাররক্ষক নেতি তার আগমনের কারণ জানতে চান।[177][179] ইনান্না বলেন যে তিনি তার "জ্যেষ্ঠা ভগিনী এরেশকিগালের স্বামী" গুগালান্নার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিয়ে ইচ্ছা করেন।[100][177][179] নেতি সেই কথা এরেশকিগালকে জানান।[180][181] এরেশকিগাল তাঁকে বলেন: "প্রেতলোকের সাত দরজায় হুড়কা লাগিয়ে দাও। তারপর একের পর এক একটিমাত্র আঘাতে প্রতিটি দরজা খুলে দাও। ইনান্নাকে প্রবেশ করতে দাও। সে ভিতরে প্রবেশ করলে তার রাজকীয় পোশাক খুলে নাও।"[182] সম্ভবত ইনান্নার পরনে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুপযুক্ত পোশাক ও তার উদ্ধত আচরণ দেখে এরেশকিগালের সন্দেহ হয়েছিল।[183] এরেশকিগালের নির্দেশ অনুযায়ী, নেতি ইনান্নাকে বলেন যে প্রেতলোকের প্রথম দরজাটি পার হতে হলে তাঁকে তার লাপিস লাজুলি দণ্ডটি হস্তান্তরিত করতে হবে। ইনান্না কারণ জানতে চাইলে নেতি বলেন, "এটিই প্রেতলোকে প্রবেশের বিধি।" ইনান্না নির্দেশ মান্য করেন এবং প্রথম দরজা পার হয়ে যান। এইভাবে সাতটি দরজা পার হতে গিয়ে ইনান্নাকে নিজের পোশাক বা অলংকারের একটি করে অংশ খুলে দিতে হয়।[184] এইভাবে তার সকল ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়।[185][173] তিনি যখন তার ভগিনীর সম্মুখে উপস্থিত হন, তখন তিনি নগ্ন:[185][173]
"তিনি অবনত হলেন এবং তার বস্ত্র উন্মোচিত করা হল। তারপর সেগুলিকে নিয়ে চলে গেল। তারপর তিনি তার ভগিনী এরেশ-কি-গালাকে তার সিংহাসন থেকে উঠিয়ে দিয়ে নিজে সেই সিংহাসনে বসলেন। সাত বিচারক আন্না তার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন। তারা তার দিকে তাকালেন – সে ছিল মৃত্যুর দৃষ্টি। তারা কথা বললেন তার উদ্দেশ্যে – সে ছিল ক্রোধের বাক্য। তারা চিৎকার করলেন তার প্রতি – সে ছিল ভারী অপরাধের চিৎকার। অভিযুক্ত নারী মৃতদেহে পরিণত হলেন। এবং মৃতদেহটি একটি আঁকশিতে ঝুলিয়ে দেওয়া হল।"[186]
তিন দিন ও তিন রাত কেটে গেলে নিনশুবুর ইনান্নার নির্দেশ অনুসারে এনলিল, নান্না, আন ও এনকির মন্দিরে যান এবং ইনান্নাকে উদ্ধার করার জন্য তাঁদের প্রত্যেকের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন।[187][188][189] প্রথম তিন দেবতা সাহায্য করতে অস্বীকার করেন। তারা বলেন, ইনান্না নিজেই নিজের দুর্ভাগ্যকে ডেকে এনেছেন।[187][190][191] কিন্তু এনকি গভীরভাবে চিন্তান্বিত হয়ে পড়েন এবং সাহায্য করতে রাজি হন।[192][193][191] তিনি তার দুই আঙুলের নখের তলাকার ধুলো থেকে গালা-তুরা ও কুর-জারা নামে দুই লিঙ্গ-বিহীন জীব সৃষ্টি করেন।[192][194][191] তিনি তাঁদের বলে দেন এরেশকিগালকে তুষ্ট করতে[192][194] এবং এরেশকিগাল যখন জানতে চাইবেন যে তারা কী চায়, তখন যেন তারা ইনান্নার মৃতদেহটি চেয়ে নিয়ে তাতে জীবনের খাদ্য ও জল ছিটিয়ে দেয়।[192][194] তারা যখন এরেশকিগালের কাছে আসে, তখন এরেশকিগাল প্রসূতি নারীর মতো বেদনায় ছটফট করছিলেন।[195] তিনি বলেন, তারা যদি তাঁকে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে পারে, তাহলে তিনি জলের জীবনদায়ী নদী ও শস্যক্ষেত্র সহ তারা যা চায় সব দিতে রাজি।[196] কিন্তু তারা সেই সব প্রত্যাখ্যান করে শুধু ইনান্নার মৃতদেহটি চায়।[195] তারপর গালা-তুরা ও কুর-জারা ইনান্নার মৃতদেহে জীবনের খাদ্য ও জল ছিটিয়ে তাতে প্রাণ ফিরিয়ে আনে।[197][198][191] এরেশকিগাল গাল্লা দানবদের পাঠান প্রেতলোকের বাইরে ইনান্নাকে ধাওয়া করার জন্য। তাদের বলা হয়েছিল, ইনান্নার বিকল্প হিসেবে একজনকে প্রেতলোকে নিয়ে আসতেই হবে।[199][200][191] তারা প্রথমে নিনশুবুরের কাছে আসে এবং তাঁকেই ধরতে যায়।[199][200][191] কিন্তু ইনান্না তাদের বাধা দিয়ে বলেন যে, নিনশুবুর তার বিশ্বস্ত পরিচারিকা এবং তিনি যখন প্রেতলোকে ছিলেন তখন নিনশুবুর ন্যায়সঙ্গতভাবে তার জন্য বিলাপ করেছিলেন।[199][200][191] তারপর তারা ইনান্নার প্রসাধনে সহকারী শারাকে ধরতে যায়। তিনি তখনও বিলাপ করছিলেন।[201][202][191] দৈত্যরা তাঁকে ধরতে গেলে ইনান্না বাধা দিয়ে বলেন যে, তিনিও ইনান্নার জন্য বিলাপ করেছিলেন।[203][204][191] তারপর তারা যে তৃতীয় ব্যক্তিকে ধরতে আসে, তিনি হলেন লুলাল। তিনিও তখন বিলাপ করছিলেন।[203][205][191] দানবেরা তাঁকে নিয়ে যেতে চাইলে ইনান্না আবারও বাধা দেন।[203][205][191]
শেষ পর্যন্ত তারা এল ইনান্নার স্বামী দুমুজিদের কাছে।[206][191] ইনান্নার ওই রকম দুরবস্থা দেখে অন্যরা যখন বিলাপ করছিলেন তখন দুমুদিজ জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক পরে ক্রীতদাসী-পরিবৃত হয়ে গাছের তলায় অথবা ইনান্নার সিংহাসনের উপর বিশ্রাম করছিলেন। অসন্তুষ্ট ইনান্না আদেশ দেন যে, গাল্লা দানবেরা যেন তাকেই ধরে নিয়ে যায়।[206][191][207] তাই তারা দুমুজিদকেই প্রেতলোকে টেনে নিয়ে যায়।[206][191] দুমুজিদের স্বপ্ন (ইটিসিএসএল ১.৪.৩) নামে পরিচিত আরেকটি গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে, দুমুজিদ বারবার গাল্লা দানবদের প্রয়াসকে প্রতিহত করছিলেন এবং সেই কাজে তাঁকে সাহায্য করছিলেন সূর্যদেবতা উতু।[208][209][lower-alpha 5]
দুমুজিদের স্বপ্ন যেখানে শেষ হচ্ছে, সেখানেই শুরু হচ্ছে সুমেরীয় কবিতা দুমুজিদের প্রত্যাবর্তন। দুমুজিদের মৃত্যুর পর তার বোন গেশতিনান্না বহু দিন রাত ধরে বিলাপ করতে থাকেন। ইনান্নাও আপাতদৃষ্টিতে হৃদয় পরিবর্তন করে বিলাপে যোগ দেন। দুমুজিদের মা সিরতুরও বিলাপ করতে থাকেন।[210] যতক্ষণ না একটি মাছি ইনান্নার কাছে তার স্বামীর অবস্থান প্রকাশ করে, ততক্ষণ তিন দেবী অবিরাম বিলাপ করে চলেন।[211] মাছিটি যেখানে দুমুজিদকে পাওয়া যাবে বলেছিল সেখানে ইনান্না ও গেশতিনান্না একসঙ্গে উপস্থিত হন।[212] তাঁকে খুঁজে পাওয়ার পর ইনান্না আদেশ জারি করেন যে, এরপর থেকে দুমুজিদ বছরের অর্ধাংশ প্রেতলোকে তার বোন এরেশকিগালের সঙ্গে এবং অপর অর্ধাংশ তার সঙ্গে কাটাবেন এবং যে সময় তিনি ইনান্নার সঙ্গে থাকবেন সেই সময়টুকু তার স্থলে গেশতিনান্না থাকবেন প্রেতলোকে।[213][191][214]
আক্কাদীয় পাঠ
আক্কাদীয় পাঠটি শুরু হয়েছে প্রেতলোকের দরজার দিকে ইশতারের অগ্রসর হওয়ার দৃশ্য থেকে। তিনি দ্বাররক্ষককে বলেন তাঁকে ভিতরে যেতে দিতে:
যদি দরজা খুলে আমাকে ভিতরে যেতে না দাও,
আমি দরজা ভেঙে ফেলব এবং হুড়কা চুরমার করে দেবো,
আমি চৌকাঠ গুঁড়িয়ে দেবো এবং দরজা উপড়ে ফেলব,
আমি মৃতদের জাগিয়ে তুলব এবং তারা জীবিতদের ভক্ষণ করবে:
এবং জীবিতের তুলনায় মৃতের সংখ্যাই বেশি হবে![215]
দ্বাররক্ষক (তার নামটি আক্কাদীয় পাঠে দেওয়া হয়নি[215]) দ্রুত গিয়ে এরেশকিগালকে ইশতারের আগমন-সংবাদ দেন। এরেশকিগাল তাঁকে আদেশ দেন ইশতারকে প্রবেশ করতে দেওয়ার জন্য। কিন্তু সেই সঙ্গে তাঁকে বলে দেন "প্রাচীন প্রথা অনুসারে তার সঙ্গে আচরণ করতে"।[216] দ্বাররক্ষক একটি একটি করে দ্বার উন্মোচিত করে ইশতারকে প্রেতলোকে প্রবেশ করতে দেন।[216] প্রত্যেক দরজায় ইশতারকে বলপূর্বক তার পোশাকের একটি করে অংশ খুলে ফেলতে বাধ্য করা হয়। সপ্তম দরজাটি যখন তিনি পার হন, তখন তিনি নগ্ন।[217] ক্রুদ্ধ ইশতার এরেশকিগালের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। কিন্তু এরেশকিগাল তার ভৃত্য নামতারকে আদেশ করেন ইশতারকে বন্দী করতে এবং তার উপর ষাটটি রোগ লেলিয়ে দিতে।[218]
ইশতার প্রেতলোকে অবতরণ করার পর পৃথিবীতে সকল প্রকার যৌন ক্রিয়াকর্ম বন্ধ হয়ে যায়।[219] দেবতা পাপসুক্কাল (নিনশুবুরের আক্কাদীয় প্রতিরূপ)[220] পরিস্থিতির কথা জ্ঞাপন করেন প্রজ্ঞা ও সংস্কৃতির দেবতা এয়ার কাছে।[219] এয়া আসু-শু-নামির নামে এক অন্তঃলিঙ্গ জীব সৃষ্টি করে তাদের পাঠান এরেশকিগালের কাছে। তাদের বলে দেন এরেশকিগালের সামনে "মহান দেবতাদের নাম" আবাহন করে জীবনের জলের থলিটি চেয়ে নিতে। আসু-শু-নামিরের দাবি শুনে এরেশকিগাল ক্রুদ্ধ হন। কিন্তু তিনি তাদের জীবনের জল দিতে বাধ্যও হন। আসু-শু-নামির সেই জল ইশতারের উপর ছিটিয়ে দিয়ে তাঁকে পুনরুজ্জীবিত করে। তারপর ইশতার সাতটি দরজা পার হয়ে ফিরে আসেন। প্রতি দরজায় তিনি তার পোশাকের অংশগুলিও ফেরত পান। শেষে পূর্ণ পোশাক-পরিহিত অবস্থায় তিনি শেষ দরজাটি দিয়ে নিষ্ক্রান্ত হন।[219]
ব্যাখ্যা
লোককথাবিদ ডায়ানি ওকস্টেইন পুরাণকথাটিকে ব্যাখ্যা করেছেন ইনান্না ও তার নিজের "অন্ধকার দিক" অর্থাৎ তার যমজ ভগিনী-সত্ত্বা এরেশকিগালের একটি একীকরণ হিসেবে। ইনান্না প্রেতলোকে অবতরণ করেন এরেশকিগালের ক্ষমতায়। কিন্তু ইনান্না যখন প্রেতলোকে তখন আপাতদৃষ্টিতে এরেশকিগালই উর্বরতাশক্তির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কবিতাটি শেষ হয়েছে এক লাইনের একটি প্রশস্তির মাধ্যমে। এই প্রশস্তিটি ইনান্নার নয়, এরেশকিগালের। ওকস্টেইনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এই উপাখ্যানটি ইনান্নার ক্ষেত্রের অধিকতর নেতিবাচক দিকগুলির প্রতি উৎসর্গিত একটি প্রশস্তি-কাব্য। এই নেতিবাচক দিকগুলি জীবনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য মৃত্যুর প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে নেওয়ার প্রতীক।[221] জোসেফ ক্যাম্পবেলের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এই পুরাণকথাটির উপজীব্য বিষয় হল অবচেতনে অবতরণের মনস্তাত্ত্বিক ক্ষমতা, প্রতীয়মান শক্তিহীনতার একটি পর্বের মধ্য দিয়ে আত্মশক্তির উপলব্ধি এবং নিজের নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলি স্বীকার।[222]
এর বিপরীতে জোশুয়া মার্ক মনে করেন যে, ইনান্নার অবতরণ উপাখ্যানের মূল লেখক যে সর্বাপেক্ষা সম্ভাব্য নীতিকথাটি বলতে চেয়েছেন সেটি হল এই যে সব সময়েই ব্যক্তিকে তার কৃতকর্মে ফল ভোগ করতে হয়: "তারপর ইনান্নার অবতরণের বিষয়বস্তু হল একজন দেবতার মন্দ আচরণ এবং সেই আচরণের জন্য অন্যান্য দেবতা ও নশ্বরদের ভোগান্তি। প্রাচীন শ্রোতার কাছে আজকের শ্রোতাদের মতোই এটি এক জনের অসতর্কতা বা সুবিবেচনার অভাবের ফলে ঘটিত এক বিয়োগান্ত দুর্ঘটনার কাহিনির মৌলিক উপলব্ধি: এই যে জীবন ঠিক আনন্দদায়ক নয়।"[14]
ক্লাইড হোস্টেটারের একটি সাম্প্রতিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এই পুরাণকথাটি শুক্র, বুধ ও বৃহস্পতি গ্রহের সঞ্চরণ-সংক্রান্ত একটি রূপকাশ্রয়ী প্রতিবেদন।[223] সেই সঙ্গে এই প্রতিবেদনে দ্বিতীয় সহস্রাব্দে মহাবিষুবে শুরু হওয়া এবং শুক্র গ্রহের একটি যুতি-বিযুতি কালের সমাপ্তিতে উল্কাবৃষ্টির সময়ে শেষ হওয়া শুক্ল পক্ষের অর্ধচন্দ্রের বৃদ্ধিরও রূপক।[223] ইনান্নার তিন দিনের অন্তর্ধান শুকতারা ও সন্ধ্যাতারা রূপে শুক্র গ্রহের দৃষ্টিগোচরতার মধ্যবর্তী পর্যায়ে গ্রহটির তিন দিনের জন্য অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার প্রতীক।[223] গুগালানার হত্যাকাণ্ড সূর্যোদয়ের সময় আকাশের সেই অংশ থেকে বৃষ তারামণ্ডলের অদৃশ্য হওয়ার ইঙ্গিতবাহী। ব্রোঞ্জ যুগে এই মহাজাগতিক ঘটনাটি মহাবিষুবের সংঘটন নির্দেশ করত।[223]
পরবর্তীকালের পুরাণকথা
গিলগামেশ মহাকাব্য
আক্কাদীয় গিলগামেশ মহাকাব্য-এ গিলগামেশ নরখাদক রাক্ষস হুমবাবাকে পরাজিত করে সঙ্গী এনকিডুর সঙ্গে উরুকে প্রত্যাবর্তনের পর ইশতার তার কাছে আসেন এবং গিলগামেশকে নিজের দাম্পত্যসঙ্গী করতে চান।[225] গিলগামেশ তাঁকে প্রত্যাখ্যান করে বলেন যে, ইনান্নার পূর্বতন প্রেমিকদের সকলকেই কষ্ট পেতে হয়েছে:[225]
শোনো, তোমার প্রেমিকদের কথা বলি। তোমার যৌবনের প্রেমিক ছিল তাম্মুজ। তার জন্য তুমি বছরের পর বছর বিলাপের অধ্যাদেশ জারি করেছিলে। তুমি ভালোবাসতে বহুবর্ণ হালকা-বেগুনি বক্ষের নীলকণ্ঠ পাখি। কিন্তু তাও তুমি আঘাত হেনে ভেঙে দিয়েছিলে তার ডানা […] তুমি ভালোবাসতে প্রবল শক্তিধর সিংহ: সাতটি গর্ত খুঁড়েছিলে তার জন্য, আরও সাতটি। তুমি ভালোবাসতে যুদ্ধে দুর্ধর্ষ [ও] প্রজননার্থে রক্ষিত ঘোড়া। তার জন্য তুমি চাবুক, নাল ও চামড়ার দড়ির আদেশ দিয়েছিলে […] তুমি ভালোবাসতে মেষের রাখালকে; সে তোমার জন্য খাবার কেক বানিয়ে দিত দিনের পর দিন, তোমার স্বার্থে সে হত্যা করেছিল নিজের সন্তানদের। তুমি আঘাত হেনে তাকে পরিণত করেছিলে নেকড়েতে। এখন তার নিজের রাখাল বালকেরা তাকে খেদিয়ে দেয়, তার নিজের শিকারী কুকুরগুলি তার কুক্ষির জন্য দুশ্চিন্তায় থাকে।"[88]
গিলগামেশের থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে[225] ইশতার স্বর্গে গিয়ে তার বাবা আনুর কাছে নালিশ জানান যে, গিলগামেশ তাঁকে অপমান করেছেন।[225] আনু জিজ্ঞাসা করলেন, কেন ইশতার স্বয়ং গিলগামেশের মুখোমুখি না হয়ে তার কাছে অভিযোগ জানাতে এসেছেন।[225] ইশতার দাবি জানালেন, আনু তাঁকে স্বর্গীয় বৃষটি দিন[225] এবং সেই সঙ্গে শপথ করে বললেন যে, যদি সেটি না দেওয়া হয় তাহলে "নরকের দরজা ভেঙে দেব ও হুড়কাগুলি দেব গুঁড়িয়ে; সাধারণের মধ্যে বিভ্রান্তি [অর্থাৎ, মিশ্রণ] সৃষ্টি হবে, যাঁরা উপরে আছেন তাঁদের সঙ্গে মিশে যাবে যারা গভীর নিম্নে অবস্থান করে। আমি মৃতদের তুলে আনব যাতে তারা জীবিতদের মতো করে খাদ্য গ্রহণ করতে পারে; এবং মৃতের দল সংখ্যায় জীবিতদের ছাপিয়ে যাবে।"[226]
আনু ইশতারকে স্বর্গীয় বৃষটি প্রদান করেন। ইশতার সেটিকে পাঠান গিলগামেশ ও তার বন্ধু এনকিডুকে আক্রমণ করার জন্য।[224][227] গিলগামেশ ও এনকিডু বৃষটিকে হত্যা করে সেটির হৃৎপিণ্ড সূর্যদেবতা শামাশের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন।[228][227] গিলগামেশ ও এনকিডু যখন বিশ্রাম করছিলেন, ইশতার উরুক শহরের প্রাচীরের উপর দাঁড়িয়ে গিলগামেশকে অভিশাপ দেন।[228][229] এনকিডু বৃষের ডান উরুটি ছিঁড়ে নিয়ে ইশতারের মুখে ছুঁড়ে মারেন[228][229] এবং বলেন, "তোমার গায়ে যদি হাত দিতে পারতাম, তাহলে এই কাজ তোমার উপরেই করতাম আর তোমার অন্ত্রে করতাম কষাঘাত।"[230] (এই অধর্মাচারের জন্য এনকিডু পরে মারা যান।)[229] ইশতার "কোঁকড়ানো-চুল রাজগণিকা, গণিকা ও বেশ্যাদের" একত্রিত করলেন[228] এবং আদেশ করলেন স্বর্গীয় বৃষের জন্য বিলাপ করতে।[228][229] এদিকে গিলগামেশ স্বর্গীয় বৃষের পরাজয় উপলক্ষ্যে উৎসবের আয়োজন করলেন।[231][229]
এই মহাকাব্যেই পরে দেখা যায়, উৎনাপিশতিম গিলগামেশকে মহাপ্লাবনের গল্প বলছেন।[232] পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা অত্যধিক বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা অতিরিক্ত শব্দ করছিল এবং তাতে দেবতা এনলিলের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছিল। তাই পৃথিবী থেকে সকল জীবন ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে এনলিল সেই প্লাবনকে প্রেরণ করেছিলেন।[233] উৎনাপিশতিম বলেন বন্যা এলে কীভাবে ইশতার আনুন্নাকি দেবমণ্ডলীকে সঙ্গে নিয়ে মানবজাতির ধ্বংসপ্রাপ্তির জন্য ক্রন্দন ও বিলাপ করেছিলেন।[234] পরে বন্যার জল সরে গেলে উৎনাপিশতিম দেবতাদের উদ্দেশ্যে বলিদান করেন।[235] ইশতার মাছির আকৃতিবিশিষ্ট গুটিকা দিয়ে নির্মিত একটি লাপিস লাজুলি কণ্ঠহার পরিধান করে উৎনাপিশতিমের কাছে আসেন এবং তাঁকে বলেন যে, এনলিল মহাপ্লাবনের বিষয়টি নিয়ে কখনই অন্য দেবতাদের সঙ্গে আলোচনা করেননি।[236] উৎনাপিশতিমের কাছে ইশতার শপথ করেন যে, আর কখনও এনলিলকে তিনি আরেকটি বন্যা আনয়ন করতে দেবেন না[237] এবং ঘোষণা করেন যে, লাপিস লাজুলির সেই কণ্ঠহারটি তার শপথবাক্যের একটি চিহ্ন।[236] বলিদান উপলক্ষ্যে ইশতার এনলিল ভিন্ন সকল দেবতাদের আমন্ত্রণ জানান এবং আনন্দ উপভোগ করেন।[238]
অন্যান্য উপাখ্যান
হিট্টীয় সৃষ্টিপুরাণে দেখা যায়, দেবতা কুমারবি তার বাবা আনুকে ক্ষমতাচ্যূত করার পর ইশতারের জন্ম হয়।[104] কুমারবি আনুর যৌনাঙ্গ কামড়ে ছিঁড়ে নিলে[104] তার গর্ভে আনুর সন্তান আসে।[104] এই সন্তানদের মধ্যে ছিলেন ইশতার ও তার ভাই হিট্টীয় ঝড়দেবতা তেশুব।[104] এই উপাখ্যানটি পরে পরে একটি গ্রিক পুরাণকথার মূলভিত্তিতে পরিণত হয়েছিল। হেসিওদের থিওগোনি গ্রন্থে বর্ণিত এই কাহিনি অনুযায়ী, ইউরেনাসের লিঙ্গচ্ছেদ করেন তারই পুত্র ক্রোনাস এবং তার ফলে আফ্রোদিতির জন্ম হয়।[239] হিট্টীয় পুরাণে পরে দেখা যায়, ইশতার উল্লিকুম্মি নামে এক দৈত্যকে যৌনমিলনে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করছেন।[104] কিন্তু দৈত্যটি অন্ধ ও বধির হওয়ায় ইশতারকে দেখতে বা তার কথা শুনতে অক্ষম হয়। ফলে ইশতারের প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়।[104] হুরীয় ও হিট্টীয়দের পুরাণকথা দৃষ্টে মনে হয়, তারা তাদের নিজস্ব দেবী ইশারার সঙ্গে ইশতারের সমন্বয়সাধন করেছিল।[240][241] খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীতে লিখিত একটি ছদ্ম-সূত্রলিপিমূলক নব্য-আসিরীয় গ্রন্থে (যেটিকে আক্কাদের সারগোনের আত্মজীবনী বলে দাবি করা হয়)[242] দাবি করা হয়েছে যে, সারগোন যখন জল-আকর্ষণকারী আক্কির মালী হিসেবে কাজ করছিলেন তখন ইশতার "পায়রার মেঘ দ্বারা পরিবৃত" হয়ে সারগোনের সামনে আবির্ভূত হন।[242] তারপর ইশতার সারগোনকে নিজের প্রেমিক বলে ঘোষণা করে তাঁকে সুমের ও আক্কাদের শাসক হওয়ার অনুমতি প্রদান করেন[242]
পরবর্তীকালে ইনান্নার প্রভাব
প্রাচীন কালে
ইনান্না-ইশতারের কাল্ট সম্ভবত রাজা মানাসেহ্-র সময়কালে জুদা রাজ্যে প্রচলন লাভ করেছিল।[248] বাইবেলে ইনান্নার নাম সরাসরি উল্লেখ না করা হলেও[249] পুরাতন নিয়মে তার কাল্টের একাধিক পরোক্ষ উল্লেখ পাওয়া যায়।[250] যিরমিয় ৭:১৮ ও যিরমিয় ৪৪:১৫-১৯ অংশে "স্বর্গের রানি"র যে উল্লেখ পাওয়া যায়, তা সম্ভবত ইনান্না-ইশতার ও পশ্চিম সেমিটিক দেবী আস্তার্তের একটি সমন্বয়-প্রচেষ্টা।[248][251][252][59] নবী যিরমিয়ের পুস্তকে কথিত হয়েছে যে, নারীরা স্বর্গের রানির পূজা করত এবং তার জন্য কেক প্রস্তুত করত।[61]
পরমগীতের সঙ্গে ইনান্না ও দুমুজিদের প্রণয়োপাখ্যান-মূলক সুমেরীয় প্রেমের কবিতার বহু মিল লক্ষিত হয়।[253] এক্ষেত্রে প্রেমিকপ্রেমিকাদের শারীরিক বিবরণের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক প্রতীকবাদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই সাদৃশ্য বিশেষভাবে প্রকট।[253] পরমগীত ৬:১০ ("কান্তদেহা কে ঐ রূপসী কন্যা, ঊষার আলোকবিভা দুনয়নে ঝরে, যেন ললিত লাবণ্যে ঘেরা চাঁদের সুষমা, যেন অরুণদীপ্ত সুচারু অঙ্গে ঝলসে, তেজদৃপ্ত মহিমাময়ী উন্নতশির ললনা?[254]) প্রায় নিশ্চিতভাবেই ইনান্না-ইশতারের উল্লেখ।[247] যিহিষ্কেল ৮:১৪ অংশে ইনান্নার স্বামী দুমুজিদকে তার পরবর্তীকালীন পূর্ব সেমিটিক তাম্মুজ নামে উল্লেখ করা হয়েছে[255][256][257] এবং বলা হয়েছে যে এক দল নারী জেরুসালেমের মন্দিরের উত্তর দ্বারের কাছে বসে তাম্মুজের মৃত্যুতে বিলাপ করছিলেন।[256][257]
ইনান্না-ইশতারের কাল্টটি ফোনিশীয় দেবী আস্তোরেথের কাল্টটিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল।[258] ফোনিশীয়রা সাইপ্রাস ও সিথেরার গ্রিক দ্বীপগুলিতে আস্তার্তেকে সুপরিচিত করে তোলে।[251][259] সেখানে হয় তা গ্রিক দেবী আফ্রোদিতির পূজার উত্থান ঘটায় অথবা সেই পূজাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।[260][259][239][258] যৌনতা ও প্রজননের দেবী হিসেবে ইনান্না-ইশতারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন আফ্রোদিতি।[261][262] অধিকন্তু তিনি ওউরানিয়া (Οὐρανία) নামে পরিচিত ছিলেন, যে কথাটির অর্থ "স্বর্গীয়"।[263][262] এই উপাধিটিও ইনান্নার স্বর্গের রানি অভিধার অনুরূপ।[263][262]
আফ্রোদিতির আদি শৈল্পিক ও সাহিত্য-সংক্রান্ত চিত্রণগুলি ইনান্না-ইশতারের অত্যন্ত অনুরূপ।[261][262] আফ্রোদিতিও এক যোদ্ধা দেবী।[261][259][264] খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীর গ্রিক ভূগোলবিদ পউসানিয়াস লিখেছেন যে, স্পার্টায় আফ্রোদিতি পূজিত হতেন আফ্রোদিতি আরিয়া রূপে, যার অর্থ "যুদ্ধবাজ"।[265][266] তিনি আরও লিখেছেন যে, স্পার্টায় ও সাইথেরায় আফ্রোদিতির প্রাচীনতম কাল্ট-মূর্তিগুলিতে দেবীকে অস্ত্রধারিণী অবস্থায় দেখা যেত।[265][266][267][261] আধুনিক গবেষকদের মতে আফ্রোদিতির যুদ্ধদেবী সত্ত্বাটি তার পূজার আদিতম স্তরের মধ্যেই নিহিত ছিল।[268] তাঁদের মতে, এই সত্ত্বাটি তার নিকট প্রাচ্যদেশীয় উৎসের ইঙ্গিতবাহী।[268][264] আফ্রোদিতির ধারণার সঙ্গে পায়রার সঙ্গে ইশতারের যোগের বিষয়টিও আত্মীভূত হয়ে যায়।[75][264] কেবল মাত্র তার সামনেই পায়রা বলি দেওয়া হত।[264] গ্রিক ভাষায় "পায়রা" শব্দের প্রতিশব্দ পেরিস্তেরা (peristerá)[75][76] সম্ভবত সেমিটিক পেরাহ্ ইশতার (peraḥ Ištar) থেকে উৎসারিত, যার অর্থ "ইশতারের পাখি"।[76] আফ্রোদিতি ও আদোনিসের পুরাণকথাটির উৎস ইনান্না ও দুমুজিদের কাহিনি।[243][244]
ক্ল্যাসিকাল সংস্কৃতিবিদ চার্লস পেংলেস লিখেছেন যে, প্রজ্ঞা ও প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধবিদ্যার গ্রিক দেবী এথিনার সঙ্গে "ভয়ংকরী যোদ্ধাদেবী" রূপে ইনান্নার মিল পাওয়া যায়।[3] অন্যান্য গবেষকদের মতে, এথিনার বাবা জিউসের মাথা থেকে তার জন্মের কাহিনির সম্ভাব্য উৎস ইনান্নার প্রেতলোকে অবতরণ ও সেখান থেকে প্রত্যাবর্তন।[4][5]
ইনান্নার কাল্ট সম্ভবত মধ্যযুগীয় গ্রেগরিয়ান ক্রনিকলস কর্তৃক উল্লিখিত ককেসীয় আইবেরীয়দের আইনিনা ও ডানিনা দেবীদ্বয়কে প্রভাবিত করেছিল।[269] নৃতত্ত্ববিদ কেভিন টুইট মনে করেন যে, জর্জিয়ান দেবী ডালিও ইনান্না কর্তৃক প্রভাবিত।[270] তিনি বলেছেন, ডালি ও ইনান্না উভয় দেবীই শুকতারার সঙ্গে সম্পৃক্ত,[271] দু’জনেই বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে নগ্ন হিসেবে বর্ণিত,[272] উভয়ের সঙ্গে স্বর্ণালংকারের একটি সম্পর্ক রয়েছে, [272] দু’জনেই নশ্বর পুরুষদের নিজেদের যৌনসম্পর্কের শিকারে পরিণত করেছেন,[273] উভয়েই মানব ও পশু প্রজননের সঙ্গে যুক্ত, [274] এবং দু’জনেই যৌন-আবেদনপূর্ণ অথচ বিপজ্জনক নারীর দ্ব্যর্থক প্রকৃতির।[275] হিন্দু দেবী দুর্গার মধ্যেও সম্ভবত ইনান্নার কিছু প্রভাব রয়েছে।[245][246] ইনান্নার মতো দুর্গাকেও অসুরনিধনকারিণী এক কোপনস্বভাব যোদ্ধা দেবী মনে করা হয়।[276][247] দুই দেবীকেই সিংহবাহিনী রূপে চিত্রিত করা হয়[247] এবং দু’জনেই দুষ্টের দমনের সঙ্গে যুক্ত।[247] ইনান্নার মতো দুর্গার সঙ্গে কয়েকটি যৌন প্রতীক সংযুক্ত।[277]
খ্রিস্টীয় তৃতীয় ও চতুর্থ শতাব্দীতে আসিরীয় জাতিগোষ্ঠী খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হতে শুরু করলে ঐতিহ্যগত মেসোপটেমীয় ধর্মের ক্রমশ পতন শুরু হয়।[278] তা সত্ত্বেও ইশতার ও তাম্মুজের কাল্ট উচ্চ মেসোপটেমিয়ার কোনও কোনও অঞ্চলে টিকে থাকে।[257] খ্রিস্টীয় দশম শতাব্দীতে এক আরব পর্যটক লিখেছিলেন যে, "আমাদের যুগের সকল সাবিয়ানগণ, যারা ব্যাবিলনিয়ায় থাকে এবং যারা হারানে থাকে সকলেই, একটি উৎসবে তাম্মুজের জন্য বিলাপ ও ক্রন্দন করে। তাম্মুজের নামে নামাঙ্কিত মাসটিতে আয়োজিত এই উৎসবে বিশেষভাবে অংশগ্রহণ করে নারীজাতি।"[257] অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত মারদিনে ইশতারের কাল্টটির অস্তিত্ব ছিল।[278] মধ্যপ্রাচ্যের আদি খ্রিস্টানরা ইশতারের উপাদানগুলি তাদের নিজস্ব কুমারী মেরির কাল্টের সঙ্গে যুক্ত করেছিল।[279][247] সিরীয় লেখক সেরাঘের জেকব ও সুরস্রষ্টা রোমানোস উভয়েই যে বিলাপগাথাগুলি রচনা করেছিলেন, তাতে দেখা যায় কুমারী মেরি ক্রুশের পাদমূলে গভীর ব্যক্তিগত আবেগপূর্ণ ভাষায় তার পুত্রের জন্য সমবেদনা ব্যক্ত করছেন। এই বিলাপগাথাগুলির সঙ্গে তাম্মুজের মৃত্যুতে ইশতারের বিলাপগুলির ঘনিষ্ঠ সাদৃশ্য লক্ষিত হয়।[280]
আধুনিক প্রাসঙ্গিকতা
১৮৫৩ সালে ফ্রি চার্চ অফ স্কটল্যান্ডের জনৈক প্রোটেস্টান্ট মিনিস্টার আলেকজান্ডার হিসলপ রচিত দ্য টু ব্যাবিলনস নামক একটি প্রচারপুস্তিকা প্রকাশিত হয়েছিল। হিলসপ মনে করতেন, রোমান ক্যাথলিক মতবাদটি প্রকৃতপক্ষে ছদ্মবেশে ব্যাবিলনীয় পৌত্তলিকতাবাদ। উক্ত পুস্তিকাটি ছিল তার সেই মত প্রচারেরই একটি অঙ্গ। এই পুস্তিকায় হিলসপ এই ভ্রান্ত মত প্রচার করেন যে, আধুনিক ইংরেজি ইস্টার (ইংরেজি: Easter) শব্দটি ইশতার শব্দ থেকে উৎসারিত। এই মতের সপক্ষে তিনি দু’টি শব্দের ধ্বনিগত সাদৃশ্যের কথা উল্লেখ করেন।[282] আধুনিক গবেষকেরা হিলসবের বক্তব্যকে ভ্রান্ত বলে সম্পূর্ণত প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং এই মতটিকে ব্যাবিলনীয় ধর্ম সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণার ফলশ্রুতি বলে উল্লেখ করেছেন।[283][284][285][286] যদিও ইভানজেলিক প্রোটেস্টান্টদের কয়েকটি গোষ্ঠীর মধ্যে হিসলপের বইটি এখনও জনপ্রিয়[283][284] এবং তার ধারণাগুলিও বহু-সংখ্যক জনপ্রিয় ইন্টারনেট মিমের দৌলতে প্রধানত ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়ে থাকে।[286]
আধুনিক সাহিত্যে ইশতারের প্রথম প্রধান উপস্থিতিটি ছিল ইশতার অ্যান্ড ইজদুবার নামে একটি গ্রন্থদৈর্ঘ্যের কবিতা।[287] ১৮৮৪ সালে মার্কিন আইনজীবী ও ব্যবসায়ী লিওনিডাস লে সেন্সি হ্যামিলটন গিলগামেশ মহাকাব্য-এর একটি সদ্য-কৃত অনুবাদের ছায়া অবলম্বনে কবিতাটির রচনা করেছিলেন।[287] গিলগামেশ মহাকাব্য-এর মূলের মোটামুটি ৩,০০০ পংক্তিকে ইশতার ও ইজদুবার কবিতায় প্রায় ৬,০০০ ছন্দোবদ্ধ দ্বিপদীর আকারে সম্প্রসারিত করে আটচল্লিশটি সর্গে বিন্যস্ত করা হয়েছে।[281] হ্যামিলটন উল্লেখযোগ্যভাবে অধিকাংশ চরিত্র বদলে দিয়েছিলেন এবং একাধিক সম্পূর্ণ নতুন পর্ব যুক্ত করেছিলেন, যা মূল মহাকাব্যে পাওয়া যায় না।[281] এডওয়ার্ড ফিৎজগেরাল্ডের রুবাইয়াৎ অফ ওমর খৈয়াম ও এডউইন আর্নল্ডের দ্য লাইট অফ এশিয়া পড়ে বিশেষভাবে প্রভাবিত[281] হ্যামিলটন সৃষ্ট চরিত্রগুলির পোশাক প্রাচীন ব্যাবিলনীয় পোশাকের পরিবর্তে ঊনবিংশ শতাব্দীর তুর্কি পোশাকের অনুরূপ হয়ে দাঁড়ায়।[288] এই কবিতায় দেখা যায়, ইজদুবার ("গিলগামেশ" নামটির পূর্ববর্তী ভুল পাঠ) ইশতারের প্রেমে পড়েন;[289] কিন্তু তারপর ইশতার "তপ্ত সুগন্ধি নিঃশ্বাস ও উজ্জ্বল কম্পমান রূপে" ইজদুবারকে যৌনসংগমে প্রলুব্ধ করতে গেলে ইজদুবার তার এগিয়ে আসাকে প্রত্যাখ্যান করেন।[289] বইটির বেশ কয়েকটি "স্তম্ভ"-এর উপজীব্য বিষয় হল ইশতারের প্রেতলোকে অবতরণের কাহিনি।[288] বইটির শেষে দেখা যায়, ইজদুবার একজন দেবতায় পরিণত হয়েছেন এবং তিনি স্বর্গে ইশতারের সঙ্গে মিলিত হয়েছেন।[290] ১৮৮৭ সালে সংগীতস্রষ্টা ভিনসেন্ট ডি’ইন্ডি ব্রিটিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আসিরীয় স্মারকগুলি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সিম্ফনি ইশতার, ভ্যারিয়েশনস সিম্ফনিক, ওপি. ৪২ (Symphony Ishtar, variations symphonique, Op. 42) নামে একটি সিম্ফনি রচনা করেন।[291]
আধুনিক নারীবাদী তত্ত্বে ইনান্না এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে পরিণত হয়েছেন। কারণ, পুরুষ-প্রধান সুমেরীয় দেবমণ্ডলীর অন্তর্ভুক্ত হলেও[292] তার ক্ষমতা উক্ত দেবমণ্ডলীর অন্যান্য পুরুষ দেবতাদের তুলনায় কম তো নয়ই বরং সমান।[292] সিমন দ্য বোভোয়ার তার বই দ্য সেকেন্ড সেক্স-এ (১৯৪৯) বলেন যে, ইনান্না সহ প্রাচীন যুগের অন্যান্য শক্তিশালী দেবীদের আধুনিক সংস্কৃতিতে পুরুষ দেবতাদের স্বার্থে শুধুমাত্র পার্শ্বচরিত্র বলে প্রতিপন্ন করা হয়েছে।[291] টিকভা ফ্রাইমের-কেনস্কি মনে করতেন যে, ইনান্না ছিলেন সুমেরীয় ধর্মের একজন "প্রান্তিক চরিত্র", যিনি ছিলেন "অসাংসারিক, অসংযুক্ত নারী"র "সামাজিকভাবে অগ্রহণীয়" মৌল আদর্শ।[291] জোহানা স্টাকি এই ধারণার বিরোধিতা করে বলেন যে, সুমেরীয় ধর্মে ইনান্নার প্রাধান্য ও তার বৈচিত্র্যময় ক্ষমতাগুলির কোনওটি দেখেই মনে হয় না যে তাঁকে কোনও ক্ষেত্রেই "প্রান্তিক" মনে করা হত।[291]
অ্যাপোলো ও আফ্রোদিতির মতো ক্ল্যাসিক্যাল দেবদেবীদের আধুনিক জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে প্রায়শই উপস্থাপিত হতে দেখা যায়।[291] কিন্তু মেসোপটেমীয় দেবদেবীরা প্রায় সম্পূর্ণতই অজ্ঞাত রয়ে গিয়েছেন।[291] ইনান্না-ইশতার এই প্রবণতাটিকে কিছুটা প্রতিহত করলেও এই জাতীয় অজ্ঞতার প্রভাবমুক্ত হতে পারেনি।[291] সাধারণত শক্তিশালী পৌরাণিক বিষয়বস্তু-সংবলিত সৃষ্টিকর্মেই তাঁকে উপস্থাপিত করা হয়[291] এবং ইনান্না-ইশতারের অধিকাংশ আধুনিক চিত্রণের সঙ্গে শুধু তার নাম ছাড়া প্রাচীন দেবীটির কোনও সাদৃশ্য লক্ষিত হয় না।[291] ১৯৬৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত স্প্ল্যাটার চলচ্চিত্র ব্লাড ফিস্ট-এ এক ধারাবাহিক খুনিকে দেখা যায় তার শিকারদের ইশতারের প্রতি বলি দিতে। কিন্তু এই ছবিতে ভুলক্রমে তাঁকে এক "মিশরীয় দেবী" হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।[293] ইশতারের নাম অবলম্বনেই ১৯৮৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বক্স অফিস বোমা ইশতার ছবিটি নির্মিত হয়েছে। এই ছবির শির্রা চরিত্রটি ইশতারেরই ছায়া অবলম্বনে সৃষ্ট।[292] লুইস প্রাইকের মতে বাফি দ্য ভ্যাম্পায়ার স্লেয়ার-এর বাফি সামারস চরিত্রটির সঙ্গে ইশতারের ঘনিষ্ঠ সাদৃশ্য লক্ষিত হয়;[294] তবে এই সাদৃশ্য সম্ভবত কাকতালীয়।[295] ব্লাড ফিস্ট ছবিতে ইশতারের চিত্রণের ধারা অনুসরণ করে হারকিউলিস: দ্য লেজেন্ডারি জার্নিস-এ তাঁকে এক আত্মা-ভক্ষণকারিণী মিশরীয় মমি হিসেবে উপস্থাপিত করা হয়।[293] শুক্র গ্রহের দু’টি উচ্চভূমির একটির নামকরণ করা হয়েছে "ইশতার টেরা"।[293] জন ক্রেটন ইশতারকে নিয়ে একটি পূর্ণ-দৈর্ঘ্যের অপেরা রচনা করেন।[291] অসংখ্য রক ও ডেথ মেটাল গানেও ইনান্না-ইশতারের উল্লেখ পাওয়া যায়।[296]
আর্জেন্টিনায় জাত ইহুদি নারীবাদী শিল্পী লিলিয়ানা ক্লেইনার ইনান্নার পুরাণকথাগুলির স্বকৃত ব্যাখ্যামূলক কয়েকটি ছবি আঁকেন।[297] ২০০৮ সালে মেক্সিকোতে সেই ছবিগুলির প্রথম প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।[297] পরে ২০১১ সালে জেরুসালেমে ও ২০১৫ সালে বার্লিনেও এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।[297] মার্কিন নারীবাদী শিল্পী জুডি শিকাগোর দ্য ডিনার পার্টি-র অন্যতম হেরিটেজ ফ্লোরের নাম ইনান্না। ইশতারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এবং টেবিলে উপবিষ্ট এক নারীর সঙ্গে এটি সংযুক্ত।[298] আধুনিক নব্যপ্যাগান ধর্ম ও উইকায় এক দেবী রূপে ইনান্না পূজিত হন।[299] "বার্নিং টাইমস চ্যান্ট"-এর ধ্রুবপদে তার নাম পাওয়া যায়।[300] এই গানটি উইকান উপাসনাবিধিতে বহুল ব্যবহৃত গানগুলির অন্যতম।[301] ইনান্নার প্রেতলোকে অবতরণ কাহিনিটি গার্ডনেরীয় উইকার অন্যতম সর্বাধিক জনপ্রিয় ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ পুরাণকথা[302][303] দেবীর অবতরণ-এর অনুপ্রেরণার কাজ করেছে।[302][303]
ইনান্না আধুনিক বিডিএসএম সংস্কৃতিতে একজন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র।[304] লেখক ও ইতিহাসবিদ অ্যানি ও. নোমিস ইনান্না ও এবিহ্ পুরাণকথায় ইনান্নার চিত্রণটিকে ডোমিনেট্রিক্সের একটি আদি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।[305] তার মতে এই চিত্রণের মূল বক্তব্যটি ছিল, এক ক্ষমতাশালী নারী হয়ে ইনান্না দেবতা ও মানুষদের তার কাছে আত্মসমর্পণে বাধ্য করছেন।[305] গবেষক পল টমাস ইনান্নার আধুনিক চিত্রণগুলির সমালোচনা করে সেগুলির বিরুদ্ধে প্রাচীন সুমেরীয় কাহিনিতে সময়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে আধুনিক লিঙ্গ ধারণার আরোপের অভিযোগ আনয়ন করেন। তার মধ্যে আধুনিক কালে ইনান্নাকে স্ত্রী বা মা হিসেবে চিত্রিত করা হলেও[306] প্রাচীন সুমেরীয়রা এই দুই ধারণার কোনওটিই তার উপর আরোপ করেনি।[306][1] বরং আধুনিক কালে ইনান্নার কাল্টের অধিকতর পৌরুষব্যঞ্জক উপাদানগুলিকে, বিশেষত যুদ্ধ ও হিংসার সঙ্গে ইনান্নার যোগসূত্রের বিষয়টিকে উপেক্ষা করা হয়।[306] ডগলাস ই. কোয়ানও আধুনিক নব্যপ্যাগান ধর্মে ইনান্নার চিত্রণের সমালোচনা করে বলেন যে, এই মতবাদ তাঁকে "পার্কিং লট ও ক্রল স্পেসের পৃষ্ঠপোষক দেবীর থেকে সামান্য উপরে পর্যবসিত করেছে"।[307]
তারিখ (যথাযথপ্রায়)
ঐতিহাসিক সূত্র | ||
সময় | যুগ | উৎস সূত্র |
আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৫৩০০-৪১০০ অব্দ | উবাইদ যুগ | |
আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৪১০০-২৯০০ অব্দ | উরুক যুগ | উরুক পাত্র[28] |
আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ২৯০০-২৩৩৪ অব্দ | আদি রাজবংশীয় যুগ | |
আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ২৩৩৪-২২১৮ অব্দ | আক্কাদীয় সাম্রাজ্য | এনহেদুয়ান্নার সাহিত্যকর্ম:[15][33] নিন-মে-শারা, "ইনান্নার প্রশস্তি" |
আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ২২১৮-২০৪৭ অব্দ | গুতিয়ান যুগ | |
আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ২০৪৭-১৯৪০ অব্দ | উর ৩ যুগ | এনমেরকার ও আরাত্তার শাসনকর্তা গিলগামেশ, এনকিডু ও প্রেতলোক |
আরও দেখুন
- আনাত
- আশেরাহ্
- পবিত্র আত্মা
- আইসিস
- মেরি, যিশুর মা
- ননা (কুষাণ দেবী)
- ননয়া
- সেলর ভেনাস, আংশিকভাবে ইনান্নার ভিত্তিতে সৃষ্ট সেলর মুন চরিত্র
- সোফিয়া (নস্টিকবাদ)
- ইশতারের তারা
- ভিনাস
পাদটীকা
- /ɪˈnɑːnə/; টেমপ্লেট:Lang-sux Dinanna, also 𒀭𒊩𒌆𒀭𒈾 Dnin-an-na[6][7]
- /ˈɪʃtɑːr/; Dištar[6]
- অধুনা ওয়ার্কা, বাইবেলীয় নাম এরেশ
- এ-আন-না শব্দের অর্থ "পুণ্যস্থান" ("বাড়ি" + "স্বর্গ" ["আন"] + সম্বন্ধপদসূচক কারক)[39]
- দুমুজিদের স্বপ্ন পঁচাত্তরটি জ্ঞাত সূত্রে প্রত্যয়িত। এগুলির মধ্যে পঞ্চান্নটি নিপ্পুরে, নয়টি উরে, তিনটি সম্ভবত সিপ্পারের পার্শ্ববর্তী এলাকায় এবং উরুক, কিশ, শাদুপ্পুম ও সুসা থেকে একটি করে পাওয়া গিয়েছে।[207]
তথ্যসূত্র
- Black ও Green 1992, পৃ. 108।
- Leick 1998, পৃ. 88।
- Penglase 1994, পৃ. 235।
- Deacy 2008, পৃ. 20–21, 41।
- Penglase 1994, পৃ. 233–325।
- Heffron 2016।
- "Sumerian dictionary"। oracc.iaas.upenn.edu।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. xviii।
- Nemet-Nejat 1998, পৃ. 182।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. xv।
- Penglase 1994, পৃ. 42–43।
- Kramer 1961, পৃ. 101।
- Collins 1994, পৃ. 114–115।
- Mark 2011।
- Leick 1998, পৃ. 87।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. xviii, xv।
- Collins 1994, পৃ. 110–111।
- Leick 1998, পৃ. 86।
- Harris 1991, পৃ. 261–278।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. xiii–xix।
- Rubio 1999, পৃ. 1–16।
- Collins 1994, পৃ. 110।
- Leick 1998, পৃ. 96।
- Suter 2014, পৃ. 51।
- Vanstiphout 1984, পৃ. 225–228।
- Vanstiphout 1984, পৃ. 228।
- Vanstiphout 1984, পৃ. 228–229।
- Suter 2014, পৃ. 551।
- Suter 2014, পৃ. 550–552।
- Suter 2014, পৃ. 552–554।
- Van der Mierop 2007, পৃ. 55।
- MAEDA, TOHRU (১৯৮১)। "KING OF KISH" IN PRE-SARGONIC SUMER। Orient: The Reports of the Society for Near Eastern Studies in Japan, Volume 17। পৃষ্ঠা 8।
- Collins 1994, পৃ. 111।
- Mark 2017।
- "Site officiel du musée du Louvre"। cartelfr.louvre.fr।
- Meador, Betty De Shong (২০০০)। Inanna, Lady of Largest Heart: Poems of the Sumerian High Priestess Enheduanna (ইংরেজি ভাষায়)। University of Texas Press। পৃষ্ঠা 14–15। আইএসবিএন 978-0-292-75242-9।
- Leick, Dr Gwendolyn (২০০২)। A Dictionary of Ancient Near Eastern Mythology (ইংরেজি ভাষায়)। Routledge। পৃষ্ঠা 86। আইএসবিএন 978-1-134-64103-1।
- Black ও Green 1992, পৃ. 108–109।
- Halloran 2009।
- Black ও Green 1992, পৃ. 99।
- Guirand 1968, পৃ. 58।
- Monaghan 2014, পৃ. 39।
- Leick 1994, পৃ. 157–158।
- Leick 1994, পৃ. 285।
- Roscoe ও Murray 1997, পৃ. 65।
- Roscoe ও Murray 1997, পৃ. 65–66।
- Leick 1994, পৃ. 158–163।
- Roscoe ও Murray 1997, পৃ. 66।
- Kramer 1970।
- Nemet-Nejat 1998, পৃ. 196।
- Pryke 2017, পৃ. 128।
- Day 2004, পৃ. 15–17।
- Marcovich 1996, পৃ. 49।
- Nemet-Nejat 1998, পৃ. 193।
- Assante 2003, পৃ. 14–47।
- Day 2004, পৃ. 2–21।
- Sweet 1994, পৃ. 85–104।
- Pryke 2017, পৃ. 61।
- Ackerman 2006, পৃ. 116–117।
- Ackerman 2006, পৃ. 115।
- Ackerman 2006, পৃ. 115–116।
- Black ও Green 1992, পৃ. 156, 169–170।
- Liungman 2004, পৃ. 228।
- Black ও Green 1992, পৃ. 118।
- Collins 1994, পৃ. 113–114।
- Kleiner 2005, পৃ. 49।
- Black ও Green 1992, পৃ. 170।
- Black ও Green 1992, পৃ. 169–170।
- Nemet-Nejat 1998, পৃ. 193–194।
- Gressman ও Obermann 1928, পৃ. 81।
- Jacobsen 1976।
- Black ও Green 1992, পৃ. 156।
- Black ও Green 1992, পৃ. 156–157।
- Black ও Green 1992, পৃ. 119।
- Lewis ও Llewellyn-Jones 2018, পৃ. 335।
- Botterweck ও Ringgren 1990, পৃ. 35।
- Nemet-Nejat 1998, পৃ. 203।
- Cooley 2008, পৃ. 161–172।
- Cooley 2008, পৃ. 163–164।
- Foxvog 1993, পৃ. 106।
- Black ও Green 1992, পৃ. 34–35।
- Pumpelly, Raphael (১৯০৮), "Ancient Anau and the Oasis-World and General Discussion of Results", Explorations in Turkestan: Expedition of 1904: Prehistoric Civilizations of Anau: Origins, Growth and Influence of Environment, 73 (1): 48, সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুন ২০১৮
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. 92, 193।
- Penglase 1994, পৃ. 15–17।
- Black ও Green 1992, পৃ. 108–9।
- Leick 1994, পৃ. 65–66।
- Fiore 1965।
- Gilgamesh, p. 86
- Pryke 2017, পৃ. 146।
- Vanstiphout 1984, পৃ. 226–227।
- Enheduanna pre 2250 BCE "A hymn to Inana (Inana C)"। The Electronic Text Corpus of Sumerian Literature। ২০০৩। lines 18–28। 4.07.3।
- Vanstiphout 1984, পৃ. 227।
- Lung 2014।
- Black ও Green 1992, পৃ. 108, 182।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. x–xi।
- Pryke 2017, পৃ. 36।
- Pryke 2017, পৃ. 36–37।
- Black ও Green 1992, পৃ. 183।
- Pryke 2017, পৃ. 94।
- Black ও Green 1992, পৃ. 77।
- Pryke 2017, পৃ. 108।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. ix-xi।
- Jordan 2002, পৃ. 137।
- Puhvel 1987, পৃ. 25।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. 71–84।
- Leick 1998, পৃ. 93।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. 89।
- Black ও Green 1992, পৃ. 173।
- Hallo 2010, পৃ. 233।
- Kramer 1963, পৃ. 172–174।
- Kramer 1963, পৃ. 174।
- Kramer 1963, পৃ. 182।
- Kramer 1963, পৃ. 183।
- Kramer 1961, পৃ. 30।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. 141।
- Pryke 2017, পৃ. 153–154।
- Kramer 1961, পৃ. 33।
- Mark 2018।
- Fontenrose 1980, পৃ. 172।
- Kramer 1961, পৃ. 33–34।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. 140।
- Kramer 1961, পৃ. 34।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. 9।
- Leick 1998, পৃ. 91।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. 30–49।
- Kramer 1961, পৃ. 102–103।
- Kramer 1961, পৃ. 101–103।
- Leick 1998, পৃ. 90।
- Kramer 1961, পৃ. 66।
- Black ও Green 1992, পৃ. 130।
- Kramer 1961, পৃ. 65।
- Kramer 1961, পৃ. 65–66।
- Wolkstein Kramer, পৃ. 13–14।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. 14।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. 14–20।
- Kramer 1961, পৃ. 66–67।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. 20।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. 20–21।
- Kramer 1961, পৃ. 67।
- Wolkstein Kramer1983, পৃ. 21।
- Kramer 1961, পৃ. 67–68।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. 20–24।
- Kramer 1961, পৃ. 68।
- Wolkstein ও Kramer 1961, পৃ. 20–24।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. 24–25।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. 26–27।
- Green 2003, পৃ. 74।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. 146-150।
- Vanstiphout 2003, পৃ. 57–61।
- Vanstiphout 2003, পৃ. 49।
- Vanstiphout 2003, পৃ. 57–63।
- Vanstiphout 2003, পৃ. 61–63।
- Vanstiphout 2003, পৃ. 63–87।
- Vanstiphout 2003, পৃ. 50।
- Pryke 2017, পৃ. 162–173।
- Pryke 2017, পৃ. 165।
- Attinger 1988, পৃ. 164–195।
- Karahashi 2004, পৃ. 111।
- Kramer 1961, পৃ. 82–83।
- Karahashi 2004, পৃ. 111–118।
- Kramer 1961, পৃ. 82।
- Cooley 2008, পৃ. 162।
- Cooley 2008, পৃ. 163।
- Leick 1998, পৃ. 89।
- Fontenrose 1980, পৃ. 165।
- Pryke 2017, পৃ. 166।
- Black ও Green 1992, পৃ. 109।
- Kramer 1961, পৃ. 83–86।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. 127–135।
- Dalley 1989, পৃ. 154।
- Choksi 2014।
- Kramer 1961, পৃ. 86–87।
- Penglase 1994, পৃ. 17।
- Kramer 1961, পৃ. 88।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. 56।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. 157।
- Kramer 1961, পৃ. 90।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. 54–55।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. 55।
- Kramer 1961, পৃ. 91।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. 56–57।
- Wolkstein 1983, পৃ. 57।
- Kilmer 1971, পৃ. 299–309।
- Kramer 1961, পৃ. 87।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. 157–159।
- Black, Jeremy; Cunningham, Graham; Flückiger-Hawker, Esther; Robson, Eleanor; Taylor, John; Zólyomi, Gábor। "Inana's descent to the netherworld"। Electronic Text Corpus of Sumerian Literature। Oxford University। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুন ২০১৭।
- Kramer 1961, পৃ. 93–94।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. 61–64।
- Penglase 1994, পৃ. 17–18।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. 61–62।
- Penglase 1994, পৃ. 18।
- Kramer 1961, পৃ. 94।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. 62–63।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. 64।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. 65–66।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. 65।
- Kramer 1961, পৃ. 94–95।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. 67–68।
- Kramer 1961, পৃ. 95।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. 68–69।
- Kramer 1961, পৃ. 95–96।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. 69–70।
- Kramer 1961, পৃ. 96।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. 70।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. 70–71।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. 71–73।
- Tinney 2018, পৃ. 86।
- Tinney 2018, পৃ. 85–86।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. 74–84।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. 85–87।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. 87–89।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. 88–89।
- Kramer 1966, পৃ. 31।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. 85–89।
- Dalley 1989, পৃ. 155।
- Dalley 1989, পৃ. 156।
- Dalley 1989, পৃ. 156–157।
- Dalley 1989, পৃ. 157-158।
- Dalley 1989, পৃ. 158–160।
- Bertman 2003, পৃ. 124।
- Wolkstein ও Kramer 1983, পৃ. 158–162।
- Campbell 2008, পৃ. 88–90।
- Hostetter 1991, পৃ. 53।
- Dalley 1989, পৃ. 81–82।
- Dalley 1989, পৃ. 80।
- গিলগামেশ, পৃ. ৮৭
- Fontenrose 1980, পৃ. 168–169।
- Dalley 1989, পৃ. 82।
- Fontenrose 1980, পৃ. 169।
- গিলগামেশ, পৃ. ৮৮
- Dalley 1989, পৃ. 82-83।
- Dalley 1989, পৃ. 109–116।
- Dalley 1989, পৃ. 109–111।
- Dalley 1989, পৃ. 113।
- Dalley 1989, পৃ. 114।
- Dalley 1989, পৃ. 114–115।
- Dalley, পৃ. 114–115।
- Dalley 1989, পৃ. 115।
- Puhvel 1987, পৃ. 27।
- Güterbock এবং অন্যান্য 2002, পৃ. 29।
- Black ও Green 1992, পৃ. 110।
- Westenholz 1997, পৃ. 33–49।
- West 1997, পৃ. 57।
- Burkert 1985, পৃ. 177।
- Parpola 1998, পৃ. 224–225, 260।
- Parpola 2015।
- Baring ও Cashford 1991।
- Pryke 2017, পৃ. 193।
- Pryke 2017, পৃ. 193, 195।
- Pryke 2017, পৃ. 193–195।
- Breitenberger 2007, পৃ. 10।
- Smith 2002, পৃ. 182।
- Pryke 2017, পৃ. 194।
- অনুবাদটি গৃহীত হয়েছে ভারতের বাইবেল সোসাইটি প্রকাশিত পবিত্র বাইবেল গ্রন্থের ৮৬৯ পৃষ্ঠা থেকে
- Black ও Green 1992, পৃ. 73।
- Pryke 2017, পৃ. 195।
- Warner 2016, পৃ. 211।
- Marcovich 1996, পৃ. 43–59।
- Cyrino 2010, পৃ. 49–52।
- Breitenberger 2007, পৃ. 8–12।
- Breitenberger 2007, পৃ. 8।
- Penglase 1994, পৃ. 162।
- Breitenberger 2007, পৃ. 10–11।
- Penglase 1994, পৃ. 163।
- Cyrino 2010, পৃ. 51–52।
- Budin 2010, পৃ. 85–86, 96, 100, 102–103, 112, 123, 125।
- Graz 1984, পৃ. 250।
- Iossif ও Lorber 2007, পৃ. 77।
- Tseretheli 1935, পৃ. 55–56।
- Tuite 2004, পৃ. 16–18।
- Tuite 2004, পৃ. 16।
- Tuite 2004, পৃ. 16–17।
- Tuite 2004, পৃ. 17।
- Tuite 2004, পৃ. 17–18।
- Tuite 2004, পৃ. 18।
- Parpola 1998, পৃ. 225।
- Parpola 1998, পৃ. 260।
- Parpola 2004, পৃ. 17।
- Warner 2016, পৃ. 210–212।
- Warner 2016, পৃ. 212।
- Ziolkowski 2012, পৃ. 21।
- Hislop 1903, পৃ. 103।
- Grabbe 1997, পৃ. 28।
- Mcllhenny 2011, পৃ. 60।
- Brown 1976, পৃ. 268।
- D'Costa 2013।
- Ziolkowski 2012, পৃ. 20–21।
- Ziolkowski 2012, পৃ. 22–23।
- Ziolkowski 2012, পৃ. 22।
- Ziolkowski 2012, পৃ. 23।
- Pryke 2017, পৃ. 196।
- Pryke 2017, পৃ. 196–197।
- Pryke 2017, পৃ. 203।
- Pryke 2017, পৃ. 202–203।
- Pryke 2017, পৃ. 202।
- Pryke 2017, পৃ. 197।
- Kleiner 2016।
- Chicago 2007।
- Rountree 2017, পৃ. 167।
- Weston ও Bennett 2013, পৃ. 165।
- Weston Bennett, পৃ. 165।
- Buckland 2001, পৃ. 74–75।
- Gallagher 2005, পৃ. 358।
- Nomis 2013, পৃ. 59–60।
- Nomis 2013, পৃ. 53।
- Thomas 2007, পৃ. 1।
- Cowan 2005, পৃ. 49।
গ্রন্থপঞ্জি
- Ackerman, Susan (২০০৬) [1989], Day, Peggy Lynne, সম্পাদক, Gender and Difference in Ancient Israel, Minneapolis, Minnesota: Fortress Press, আইএসবিএন 978-0-8006-2393-7
- Assante, Julia (২০০৩), "From Whores to Hierodules: The Historiographic Invention of Mesopotamian Female Sex Professionals", Donahue, A. A.; Fullerton, Mark D., Ancient Art and Its Historiography, Cambridge, England: Cambridge University Press, পৃষ্ঠা 13–47
- Attinger, Pascal (১৯৮৮), "Inana et Ebih", Zeitschrift für Assyriologie, 3, পৃষ্ঠা 164–195
- Baring, Anne; Cashford, Jules (১৯৯১), The Myth of the Goddess: Evolution of an Image, London, England: Penguin Books, আইএসবিএন 978-0140192926
- Bertman, Stephen (২০০৩), Handbook to Life in Ancient Mesopotamia, Oxford, England: Oxford University Press, আইএসবিএন 978-019-518364-1
- Black, Jeremy; Green, Anthony (১৯৯২), Gods, Demons and Symbols of Ancient Mesopotamia: An Illustrated Dictionary, The British Museum Press, আইএসবিএন 978-0-7141-1705-8
- Botterweck, G. Johannes; Ringgren, Helmer (১৯৯০), Theological Dictionary of the Old Testament, VI, Grand Rapids, Michigan: Wm. B. Eerdmans Publishing Co., আইএসবিএন 978-0-8028-2330-4
- Breitenberger, Barbara (২০০৭), Aphrodite and Eros: The Development of Greek Erotic Mythology, New York City, New York and London, England, আইএসবিএন 978-0-415-96823-2
- Brown, Peter Lancaster (১৯৭৬), Megaliths, Myths and Men: An Introduction to Astro-Archaeology, New York City, New York: Dover Publications, আইএসবিএন 9780800851873
- Buckland, Raymond (২০০১), Wicca for Life: The Way of the Craft -- From Birth to Summerland, New York City, New York: Kensington Publishing Corporation, আইএসবিএন 978-0-8065-2455-9
- Budin, Stephanie L. (২০১০), "Aphrodite Enoplion", Smith, Amy C.; Pickup, Sadie, Brill's Companion to Aphrodite, Brill's Companions in Classical Studies (English ভাষায়), Leiden, The Netherlands: Brill Publishers, পৃষ্ঠা 85–86, 96, 100, 102–103, 112, 123, 125, আইএসবিএন 9789047444503
- Burkert, Walter (১৯৮৫), Greek Religion, Cambridge, Massachusetts: Harvard University Press, আইএসবিএন 978-0-674-36281-9
- Campbell, Joseph (২০০৮), The Hero with a Thousand Faces, Novato, California: New World Library, পৃষ্ঠা 88–90
- Chicago, Judy (২০০৭), The Dinner Party: From Creation to Preservation, London, England: Merrell, আইএসবিএন 978-1-85894-370-1
- Choksi, M. (২০১৪), "Ancient Mesopotamian Beliefs in the Afterlife", Ancient History Encyclopedia, ancient.eu
- Collins, Paul (১৯৯৪), "The Sumerian Goddess Inanna (3400-2200 BC)", Papers of from the Institute of Archaeology, 5, UCL
- Cooley, Jeffrey L. (২০০৮), "Inana and Šukaletuda: A Sumerian Astral Myth", KASKAL, 5: 161–172, আইএসএসএন 1971-8608
- Cowan, Douglas E. (২০০৫), Cyberhenge: Modern Pagans on the Internet, New York: Routledge, আইএসবিএন 978-0-415-96910-9
- Cyrino, Monica S. (২০১০), Aphrodite, Gods and Heroes of the Ancient World, New York City, New York and London, England: Routledge, আইএসবিএন 978-0-415-77523-6
- Dalley, Stephanie (১৯৮৯), Myths from Mesopotamia: Creation, the Flood, Gilgamesh, and Others, Oxford, England: Oxford University Press, আইএসবিএন 978-0-19-283589-5
- Day, John (২০০৪), "Does the Old Testament Refer to Sacred Prostitution and Did It Actual Exist in Ancient Israel?", McCarthy, Carmel; Healey, John F., Biblical and Near Eastern Essays: Studies in Honour of Kevin J. Cathcart, Cromwell Press, পৃষ্ঠা 2–21, আইএসবিএন 978-0-8264-6690-7
- D'Costa, Krystal (৩১ মার্চ ২০১৩), "Beyond Ishtar: The Tradition of Eggs at Easter: Don't believe every meme you encounter.", Scientific American, Nature America, Inc.
- Enheduanna. "The Exaltation of Inanna (Inanna B): Translation"। The Electronic Text Corpus of Sumerian Literature। ২০০১। ১২ মার্চ ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- Fiore, Simon (১৯৬৫), Voices From the Clay: The Development of Assyro-Babylonian Literature, Norman, University of Oklahoma Press
- Fontenrose, Joseph Eddy (১৯৮০) [1959], Python: A Study of Delphic Myth and Its Origins, Berkeley, California, Los Angeles, California, and London, England: The University of California Press, আইএসবিএন 978-0-520-04106-6
- Foxvog, D. (১৯৯৩), "Astral Dumuzi", Hallo, William W.; Cohen, Mark E.; Snell, Daniel C.; ও অন্যান্য, The Tablet and the scroll: Near Eastern studies in honor of William W. Hallo (2nd সংস্করণ), CDL Press, পৃষ্ঠা 106, আইএসবিএন 978-0962001390
- George, Andrew, ed. (1999), The Epic of Gilgamesh: The Babylonian Epic Poem and Other Texts in Akkadian and Sumerian, Penguin, আইএসবিএন ০-১৪-০৪৪৯১৯-১
- Gallagher, Ann-Marie (২০০৫), The Wicca Bible: The Definitive Guide to Magic and the Craft, New York City, New York: Sterling Publishing Co., Inc., আইএসবিএন 978-1-4027-3008-5
- Grabbe, Lester L. (১৯৯৭), Can a "History of Israel" Be Written?, The Library of Hebrew Bible/Old Testament Studies, 245, Sheffield, England: Sheffield Academic Press, আইএসবিএন 978-0567043207
- Graz, F. (১৯৮৪), Eck, W., সম্পাদক, "Women, War, and Warlike Divinities", Zeitschrift für Papyrologie und Epigraphik, Bonn, Germany: Dr. Rudolf Habelt GmbH, 55 (55): 245–254, জেস্টোর 20184039
- Green, Alberto R. W. (২০০৩)। The Storm-God in the Ancient Near East। Winona Lake, Indiana: Eisenbrauns। আইএসবিএন 9781575060699।
- Guirand, Felix (১৯৬৮), "Assyro-Babylonian Mythology", New Larousse Encyclopedia of Mythology, Aldington; Ames কর্তৃক অনূদিত, London, England: Hamlyn, পৃষ্ঠা 49–72
- Hallo, William W. (২০১০), The World's Oldest Literature: Studies in Sumerian Belles-Lettres, Leiden, The Netherlands: Brill, আইএসবিএন 978-90-04-17-381-1
- Harris, Rivkah (ফেব্রুয়ারি ১৯৯১), "Inanna-Ishtar as Paradox and a Coincidence of Opposites", History of Religions, 30 (3): 261–278, জেস্টোর 1062957, ডিওআই:10.1086/463228
- Heffron, Yağmur (২০১৬), "Inana/Ištar (goddess)", Ancient Mesopotamian Gods and Goddesses, University of Pennsylvania Museum
- Hislop, Alexander (১৯০৩) [1853], The Two Babylons: The Papal Worship Proved to Be the Worship of Nimrod and His Wife (Third সংস্করণ), S.W. Partridge
- Hostetter, Clyde (১৯৯১), Star Trek to Hawa-i'i, San Luis Obispo, California: Diamond Press, পৃষ্ঠা 53
- Jacobsen, Thorkild (১৯৭৬), The Treasures of Darkness: A History of Mesopotamian Religion, Yale University Press, আইএসবিএন 978-0-300-02291-9
- Jordan, Michael (২০০২), Encyclopedia of Gods, London, England: Kyle Cathie Limited, আইএসবিএন 978-1856261319
- Iossif, Panagiotis; Lorber, Catharine (২০০৭), "Laodikai and the Goddess Nikephoros", L'Antiquité Classique, L'Antiquité Classique, 76: 63–88, আইএসএসএন 0770-2817, জেস্টোর 41665635
- Karahashi, Fumi (এপ্রিল ২০০৪), "Fighting the Mountain: Some Observations on the Sumerian Myths of Inanna and Ninurta", Journal of Near Eastern Studies, 63 (2): 111–8, জেস্টোর 422302
- Kilmer, Anne Draffkorn (১৯৭১), "How Was Queen Ereshkigal Tricked? A New Interpretation of the Descent of Ishtar", Ugarit-Forschungen, 3: 299–309
- Kleiner, Fred (২০০৫), Gardner's Art Through the Ages, Belmont, California: Thompson Learning, Inc., পৃষ্ঠা 49, আইএসবিএন 978-0-15-505090-7
- Kleiner, Liliana (২০১৬), "About", lilianakleiner.org, Liliana Kleiner
- Kramer, Samuel Noah (১৯৬১), Sumerian Mythology: A Study of Spiritual and Literary Achievement in the Third Millennium B.C.: Revised Edition, Philadelphia, Pennsylvania: University of Pennsylvania Press, আইএসবিএন 978-0-8122-1047-7
- Kramer, Samuel Noah (১৯৬৩), The Sumerians: Their History, Culture, and Character, Chicago, Illinois: University of Chicago Press, আইএসবিএন 978-0-226-45238-8
- Kramer, Samuel Noah (অক্টোবর ১৯৬৬), "Dumuzi's Annual Resurrection: An Important Correction to 'Inanna's Descent'", Bulletin of the American Schools of Oriental Research, 183 (183): 31, জেস্টোর 1356459, ডিওআই:10.2307/1356459
- Kramer, Samuel Noah (২৮ এপ্রিল ১৯৭০), The Sacred Marriage Rite, Bloomington, Indiana: Indiana University Press, আইএসবিএন 978-0253350350
- Kramer, Samuel Noah (১৯৮৮), History Begins at Sumer: Thirty-Nine Firsts in Recorded History (3rd সংস্করণ), University of Pennsylvania Press, আইএসবিএন 978-0-8122-1276-1
- Leick, Gwendolyn (১৯৯৮) [1991], A Dictionary of Ancient Near Eastern Mythology, New York City, New York: Routledge, আইএসবিএন 978-0-415-19811-0
- Leick, Gwendolyn (২০১৩) [1994], Sex and Eroticism in Mesopotamian Literature, New York City, New York: Routledge, আইএসবিএন 978-1-134-92074-7
- Lewis, Sian; Llewellyn-Jones, Lloyd (২০১৮), The Culture of Animals in Antiquity: A Sourcebook with Commentaries, New York City, New York and London, England: Routledge, আইএসবিএন 978-1-315-20160-3
- Lung, Tang (২০১৪), "Marriage of Inanna and Dumuzi", Ancient History Encyclopedia, Ancient History Encyclopedia
- Liungman, Carl G. (২০০৪), Symbols: Encyclopedia of Western Signs and Ideograms, Lidingö, Sweden: HME Publishing, আইএসবিএন 978-9197270502
- Marcovich, Miroslav (১৯৯৬), "From Ishtar to Aphrodite", Journal of Aesthetic Education, 39 (2): 43–59, জেস্টোর 3333191, ডিওআই:10.2307/3333191
- Mark, Joshua (২০১১), "Inanna's Descent: A Sumerian Tale of Injustice", Ancient History Encyclopedia, ancient.eu
- Mark, Joshua (২০ জানুয়ারি ২০১৭), "Anu", Ancient History Encyclopedia, Ancient History Encyclopedia
- Mark, Joshua J. (২৯ মার্চ ২০১৮), "Gilgamesh", ancient.eu, Ancient History Encyclopedia
- Mcllhenny, Albert M. (২০১১), This Is the Sun?: Zeitgeist and Religion (Volume I: Comparative Religion), পৃষ্ঠা 60, আইএসবিএন 978-1-105-33967-7
- Monaghan, Patricia (২০১৪), Encyclopedia of Goddesses and Heroines, New World Library, পৃষ্ঠা 39, আইএসবিএন 9781608682171
- Nemet-Nejat, Karen Rhea (১৯৯৮), Daily Life in Ancient Mesopotamia, Daily Life, Greenwood, আইএসবিএন 978-0313294976
- Nomis, Anne O. (২০১৩), "The Warrior Goddess and her Dance of Domination", The History & Arts of the Dominatrix, Mary Egan Publishing, আইএসবিএন 9780992701000
- Parpola, Asko (১৯৯৮), Studia Orientalia, 84, Finnish Oriental Society, আইএসবিএন 9789519380384
- Parpola, Asko (২০১৫), The Roots of Hinduism: The Early Aryans and the Indus Civilization, Oxford, England: Oxford University Press, আইএসবিএন 978-0-19-022693-0
- Parpola, Simo (২০০৪), Assyrian Identity in Ancient Times and Today (পিডিএফ), Helsinki, Finland
- Penglase, Charles (১৯৯৪), Greek Myths and Mesopotamia: Parallels and Influence in the Homeric Hymns and Hesiod, New York City, New York: Routledge, আইএসবিএন 978-0-415-15706-3
- Piveteau, Jean (১৯৮১) [1964], "Man Before History", Dunan, Marcel; Bowle, John, The Larousse Encyclopedia of Ancient and Medieval History, New York City, New York: Excaliber Books, আইএসবিএন 978-0-89673-083-0
- Pryke, Louise M. (২০১৭), Ishtar, New York and London: Routledge, আইএসবিএন 978-1-138--86073-5
- Puhvel, Jaan (১৯৮৭), Comparative Mythology, Baltimore, Maryland: Johns Hopkins University Press, আইএসবিএন 978-0-8018-3938-2
- Roscoe, Will; Murray, Stephen O. (১৯৯৭), Islamic Homosexualities: Culture, History, and Literature, New York City, New York: New York University Press, আইএসবিএন 978-0-8147-7467-0
- Rountree, Kathryn (২০১৭), Cosmopolitanism, Nationalism, and Modern Paganism, Palgrave Studies in New and Alternative Spiritualities, আইএসবিএন 978-1-137-57040-6, ডিওআই:10.1057/978-1-137-56200-5
- Rubio, Gonzalo (১৯৯৯), "On the Alleged "Pre-Sumerian Substratum"", Journal of Cuneiform Studies, 51: 1–16, জেস্টোর 1359726
- "Inana's descent to the nether world: translation", The Electronic Text Corpus of Sumerian Literature, Faculty of Oriental Studies, University of Oxford, ২০০১
- Smith, Mark S. (২০০২), The Early History of God: Yahweh and the Other Deities in Ancient Israel (2nd সংস্করণ), Wm. B. Eerdmans Publishing Company, আইএসবিএন 9780802839725
- Suter, Claudia E. (২০১৪), "Human, Divine, or Both?: The Uruk Vase and the Problem of Ambiguity in Early Mesopotamian Visual Arts", Feldman, Marian; Brown, Brian, Approaches to Ancient Near Eastern Art, Berlin, Germany: Walter de Gruyter, পৃষ্ঠা 545–568, আইএসবিএন 9781614510352
- Sweet, R. (১৯৯৪), "A New Look at the 'Sacred Marriage' in Ancient Mesopotamia", Robbins, E.; Sandahl, E., Corolla Torontonensis: Studies in Honour of Ronald Morton Smith, Toronto, পৃষ্ঠা 85–104
- Thomas, Paul (২০০৭), "Re-Imagining Inanna: The Gendered Reappropriation of the Ancient Goddess in Modern Goddess Worship", The Pomegranate: The International Journal of Pagan Studies, 6, ডিওআই:10.1558/pome.v6i1.53
- Tinney, Steve (এপ্রিল ২০১৮), Woods, Christopher; Richardson, Seth; Osborne, James; El Shamsy, Ahmed, সম্পাদকগণ, ""Dumuzi's Dream" Revisited", Journal of Near Eastern Studies, Chicago, Illinois: The University of Chicago Press, 77 (1): 85–89, আইএসএসএন 0022-2968
- Tseretheli, Michael (১৯৩৫), "The Asianic (Asia Minor) elements in national Georgian paganism", Georgica, 1 (1): 55–56
- Tuite, Kevin (২০ ফেব্রুয়ারি ২০০৪), "The meaning of Dæl. Symbolic and spatial associations of the south Caucasian goddess of game animals.", Linguaculture: Studies in the interpenetration of language and culture. Essays to Honor Paul Friedrich (পিডিএফ), Montreal, Quebec: University of Montreal
- Van der Mierop, Marc (২০০৭), A History of the Ancient Near East: 3,000–323 BC, Blackwell, আইএসবিএন 978-1-4051-4911-2
- Vanstiphout, H. L. (১৯৮৪), "Inanna/Ishtar as a Figure of Controversy", Struggles of Gods: Papers of the Groningen Work Group for the Study of the History of Religions, Berlin: Mouton Publishers, 31, আইএসবিএন 978-90-279-3460-4
- Vanstiphout, Herman (২০০৩), Epics of Sumerian Kings (পিডিএফ), Atlanta, Georgia: Society of Biblical Literature, পৃষ্ঠা 49–96, আইএসবিএন 978-1589830837
- Warner, Marina (২০১৬) [1976], Alone of All Her Sex: The Myth and Cult of the Virgin Mary, Oxford, England: Oxford University Press, আইএসবিএন 978-0-19-963994-6
- West, M. L. (১৯৯৭), The East Face of Helicon: West Asiatic Elements in Greek Poetry and Myth, Oxford, England: Clarendon Press, পৃষ্ঠা 57, আইএসবিএন 978-0-19-815221-7
- Westenholz, Joan Goodnick (১৯৯৭), Legends of the Kings of Akkade: The Texts, পৃষ্ঠা 33, 49, আইএসবিএন 9780931464850
- Weston, Donna; Bennett, Andy (২০১৩), Pop Pagans: Paganism and Popular Music, New York and London: Routledge, আইএসবিএন 978-1-84465-647-9
- Wolkstein, Diane; Kramer, Samuel Noah (১৯৮৩), Inanna: Queen of Heaven and Earth: Her Stories and Hymns from Sumer, New York City, New York: Harper&Row Publishers, আইএসবিএন 978-0-06-090854-6
- Ziolkowski, Theodore (২০১২), Gilgamesh among Us: Modern Encounters with the Ancient Epic, Ithaca, New York and London, England: Cornell University Press, আইএসবিএন 978-0-8014-5035-8
আরও পড়ুন
- Black, Jeremy (২০০৪)। The Literature of Ancient Sumer। Oxford University Press। আইএসবিএন 978-0-19-926311-0।
- "The Electronic Text Corpus of Sumerian Literature"। Faculty of Oriental Studies, University of Oxford। ২০০৩।
- Frymer-Kensky, Tikva Simone (১৯৯২), In the Wake of the Goddesses: Women, Culture, and the Biblical Transformation of Pagan Myth, Free Press, আইএসবিএন 978-0029108000
- Fulco, William J., S.J. "Inanna." In Eliade, Mircea, ed., The Encyclopedia of Religion. New York: Macmillan Group, 1987. Vol. 7, 145–146.
- Halloran, John A. (২০০৯)। "Sumerian Lexicon Version 3.0"।
- Maier, John R. (২০১৮)। "Gilgamesh and the Great Goddess of Uruk"। Suny Brockport Ebooks। ৩০ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন ২০২০।
- Stuckey, Johanna (২০০১), "Inanna and the Huluppu Tree, An Ancient Mesopotamian Narrative of Goddess Demotion", Devlin-Glass, Frances; McCredden, Lyn, Feminist Poetics of the Sacred, American Academy of Religion, আইএসবিএন 978-0-19-514468-0