ইনফেরনো (দান্তে)

ইনফেরনো (বাংলা: নরক) দান্তে আলিগিয়েরির লেখা মহাকাব্য কবিতা ডিভাইন কমেডির প্রথম অংশ বা কান্তিকে। এটি পুরগাতোরিও এবং পারাদিসোকে অনুসরণ করে। এখানে দান্তের ভিজিলিওর সাথে দেখা হয় এবং ইনফেরনো অতিক্রম করতে সাহায্য করে। ইনফেরনো বা নরক নয় স্তর বিশিষ্ট্য বৃত্ত দ্বারা গঠিত হয়েছে, যার এক একটি বৃত্ত এক এক ধরনের শাস্তি দেয়। আসলে, ডিভাইন কমেডি ঈশ্বরের প্রতি আত্মার যাত্রা প্রতিনিধিত্ব করে এবং ইনফেরনো গুনাহর স্তর ও তার শাস্তির ধরনের কথা বর্ণনা করে[1]মহাকাব্যটি তিনটি পর্বে বিভক্ত। যথাঃ ইনফেরনো, পুরগাতোরিও এবং পারাদিসো। খ্রিস্টান ধর্মের দৃষ্টিকোণ থেকে দান্তের নরক ভ্রমণ ও স্বর্গ গমনের কাহিনী এ মহাকাব্যের মূল উপজীব্য। প্রকৃতপক্ষে এ কবিতায় স্রষ্টার দিকে আত্মার ভ্রমণের কথাই বলা হয়েছে। দান্তে মধ্যযুগের খ্রিস্টান ধর্মচিন্তা ও দর্শন ফুটিয়ে তুলেছেন। উত্তমপুরুষে লেখা এ কাব্যে দেখা যায় তিনটি ভিন্ন জগতে দান্তের ভ্রমণ। রোমান কবি ভার্জিলকে দেখা যায় তার নরক ও পুরিগাতোরিও ভ্রমণে নির্দেশক হিসেবে থাকতে; বিয়েত্রিচ, দান্তের প্রেমিকা, তাকে স্বর্গে নিয়ে যায়। বিয়েত্রিচ ছিলো ফ্লোরেন্স শহরের এক রমণী, যার সাথে দান্তের শৈশবে দেখা হয়। কাব্যর শুরু হয় ২৪ শে মার্চ (বা ৭ই এপ্রিল), ১৩০০, যে দিনটি গুড ফ্রাইডে ভোরের কিছুক্ষণ আগে (মন্ডি বা মউন্ডি বৃহঃস্পতিবার রাতে। [মাওন্ডি বৃহস্পতিবার বা পবিত্র বৃহঃস্পতিবার হল ইস্টারের আগে বৃহস্পতিবারকে "ম্যান্ডি বৃহঃস্পতিবার" হিসাবেও বোঝায়। যেদিন যীশু খ্রীষ্টের পা ধোওয়া এবং শেষ সন্ধ্যাবেলার স্মরণ করা হয়। এটি পবিত্র সপ্তাহের পঞ্চম দিন, পবিত্র বুধবারের পরে এবং শুভ ফ্রাইডে এর পরে।] বর্ণনাকারী, দান্তে নিজেই পঁয়ত্রিশ বছর বয়সী, এবং এইভাবে "আমাদের জীবনের যাত্রার মাঝামাঝি" (নেল মেজো দেল ক্যামিন ডি নস্ট্রা ভিটা ""Nel mezzo del cammin di nostra vita",") [যা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে দান্তের বয়স তখন ছিল প্রায় ৩৫ বছর। অনুমানের কারণ, যেহেতু বাইবেল অনুসারে গড় আয়ু ধরা হয় প্রায় ৭০ বছর; এবং যেহেতু নেদারওয়ার্ল্ডে তার কাল্পনিক ভ্রমণ ১৩০০ সালের ঘটনা, তাই সম্ভবত তিনি ১২৬৫ সালের দিকে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। প্যারাডিসোর কিছু অংশের সম্ভাব্য সূত্রও জানা যায় যে তিনি মিথুন রাশিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন : "স্থির নক্ষত্রগুলির গোলকটি গির্জার বিজয়ী গোলক। এখান থেকে (প্রকৃতপক্ষে, মিথুন রাশি, যার অধীনে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন) দান্তে তার যে সাতটি ক্ষেত্র পরিদর্শন করেছেন এবং পৃথিবীতে ফিরে তাকান:।-(ক্যান্টো XXII) " ] সত্তর বছরের বাইবেলের জীবনকালের অর্ধেক বয়সকাল ৩৫ বছর। কবি নিজেকে খুঁজে পান একটি অন্ধকার কাঠের (সেলভা অস্কুরা) মধ্যে, পরিত্রাণের "সরল পথ" থেকে বিপথগামী দিকে। অবশেষে তিনি সরাসরি একটি ছোট পাহাড়ে আরোহণের জন্য রওনা হন, কিন্তু তিনটি জন্তুর দ্বারা তার পথ আটকে যায়, যাদের তিনি এড়াতে পারলেন না। তাদের মধ্যে একটি লোঞ্জা (সাধারণত "চিতা" বা "লিওপন" হিসাবে উপস্থাপিত), একটি লিওন (সিংহ), এবং একটি লুপা ( নেকড়ে)। যিরমিয় থেকে নেওয়া তিনটি জন্তুকে তিন ধরনের পাপের প্রতীক বলে মনে করা হয়। যা অনুতপ্ত আত্মাকে নরকের তিনটি প্রধান বিভাগের একটিতে নিয়ে যায়। দান্তের ইনফার্নোতে তার নিজের পাপ স্বীকার করার প্রতীকী রূপক হিসেবে দেখান হয়েছে। সহপাপীদের প্রতি নিষ্ঠুরতায় লিপ্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে, যারা তাকে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে, এবং পাপীদের জন্য, এমনকি তার নিজের আত্মীয়দের জন্য সহানুভূতির কারনে তিরস্কার করার মাধ্যমে। দান্তে মানব প্রকৃতির ত্রুটিগুলি বুঝতে পেরেছিলেন। তিনি বুঝেছেন নরকে বিচারের সাথে সমবেদনা সহাবস্থান করে না, এবং এটি ভার্জিলের সাথে দান্তের সমবেদনা এবং বন্ধন যা তাকে নরক থেকে পালাতে সক্ষম করে এবং তার পাপের মুখোমুখি হওয়ার পরে, স্বর্গের দিকে আরোহণ করেন। জন সিয়ার্ডির মতে, এগুলো হল অসংযমের রূপক হিসাবে নেকড়ে; সহিংসতা এবং পাশবিকতার রূপক সিংহ; এবং প্রতারণা ও বিদ্বেষের রূপক হল চিতা। ডরোথি এল. সেয়ার্স চিতাবাঘকে অসংযম এবং সে-নেকড়েকে জালিয়াতি/বিদ্বেষের জন্য চিহ্নিত করেছেন। এখন মেষ রাশিতে সূর্য উঠার সাথে সাথে ৮ই এপ্রিল, গুড ফ্রাইডে এর ভোর হয়েছে। জন্তুরা তাকে হতাশাগ্রস্ত হয়ে ভুলের অন্ধকারে ফিরিয়ে নিয়ে যায়, একটি "নিম্ন স্থান" যেখানে সূর্য নীরব। যাইহোক, দান্তেকে একজন ব্যক্তি উদ্ধার করেন, তিনি জানালেন করেন যে সাব ইউলিও (অর্থাৎ, জুলিয়াস সিজারের সময়ে) তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং অগাস্টাসের অধীনে বসবাস করেছিলেন। তিনি হলেন "পুবলিয়ুস ভেরগিলিয়ুস মারো" যিনি পরে ভির্গিলিয়ুস এবং আরও পরে ইংরেজিতে ভার্জিল (Virgil বা Vergil) নামে পরিচিত হন। ভার্জিল ছিলেন একজন প্রাচীন রোমান কবি এবং একলোগুয়েস, গেয়র্গিক্স ও এনিড (লাতিন আইনেইস)-এর লেখক। এর মধ্যে এনিড বারটি বই জুড়ে লেখা এক মহাকাব্য, যা পরে রোমান সাম্রাজ্যের জাতীয় মহাকাব্যের মর্যাদা লাভ করে।[- সম্পাদনা :কল্যাণ সেনগুপ্ত ]

Gustave Doré's engravings illustrated the Divine Comedy (1861–1868); here Dante is lost in Canto 1 of the Inferno


গঠন

এটি চৌতিরইশ টি কান্তি দ্বারা গঠিত হয়েছে। মধ্যযুগের সৃষ্টিতত্বের অনুসারে ইনফেরনোর গঠন হল একটি উল্টানো কৌনের (Cone) মতো। এর কিনারা আনুভূমিক সিড়ি রয়েছে এবং এটি নয়টি বৃত্তের দ্বারা গঠিত। এই বৃত্তগুলো যতই ইনফেরনোর দিকে অগ্রসর হয় ততই এর আয়তন কমে বা চিপা হয়। পৃথিবীর এই শেষ ভাগেতে লূসিফার বা শয়তানকে রাখা হয়েছে, যে প্রথমিক জীবনে ঈশ্বরের ফেরেশতা ছিল পরে ঈশ্বরের অবাদ্ধ হওয়ায় তাকে এই শাস্তি দেওয়া হয়। যখন লূসিফারকে ইনফেরনোতে পরে তখন তার যাওয়ার সময় পৃথিবী প্রতিকৃতি অঙ্কন করেঃ ভূকম্পনে পাতালে গহ্বর কৌন উদ্ভূত হয়েছিল, যখন পাহাড় সমান দ্বীপ সৃষ্টি হয় দক্ষিণ ভূ-গোলার্ধে, তখন তা চতুর্দিকে পানি দিয়ে পরিবেষ্টিত থাকে।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. Dorothy L. Sayers, Hell, notes on page 19.

বহিঃসংযোগ

দান্তে আলিগিয়েরি (১২৬৫–১৩২১)
লাতিনেতে কার্যাবলী: দে ভুলগারি এলোকুয়েন্টিয়  দে মোনারকিয়া  এক্লোগুয়েস  চিঠি
ইতালীয়তে কার্যাবলী: লা ভিতা নুওভা  লে রিমে  কোনভিভো
দিভিনা কোম্মেদিয়া: ইনফেরনো  পুরগাতোরিও  পারাদিসো
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.