ইউসেবিও

ইউসেবিও, পুরো নাম ইউসেবিও দা সিলভা ফেরেইরা, (২৫ জানুয়ারি ১৯৪২ - ৫ জানুয়ারি ২০১৪) একজন প্রাক্তন পর্তুগীজ ফুটবলার। ভক্তরা তাকে 'কালো চিতা' (ইংরেজি: Black Panther) বলে থাকে। প্রচন্ড গতি, চমৎকার ড্রিবলিং আর নিঁখুত শুটিং-এর জন্য বিখ্যাত এই ফুটবলারকে ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই স্ট্রাইকার ৪১টি আন্তর্জাতিক গোল করেছিলেন মাত্র ৬৪ ম্যাচে।[3] তিনি তার ফুটবলীয় জীবনে ৭৪৫টি পেশাদার ম্যাচ খেলে ৭৩৩টি গোল করেছিলেন।

ইউসেবিও
২০০১ সালে ইউসেবিও
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম ইউসেবিও দা সিলভা ফেরেইরা
জন্ম (১৯৪২-০১-২৫)২৫ জানুয়ারি ১৯৪২
জন্ম স্থান মাপুতো, মোজাম্বিক [1]
মৃত্যু ৫ জানুয়ারি ২০১৪(2014-01-05) (বয়স ৭১)
মৃত্যুর স্থান লিসবন, পর্তুগাল
উচ্চতা ১.৭৫ মিটার (৫ ফুট ৯ ইঞ্চি)
মাঠে অবস্থান ফরওয়ার্ড
জ্যেষ্ঠ পর্যায়*
বছর দল ম্যাচ (গোল)
১৯৫৭-১৯৬০ Sporting de Lourenço Marques ৪২ (৭৭)
১৯৬০-১৯৭৫ বেনফিকা ৩০১ (৩১৭)
১৯৭৫ Boston Minutemen (২)
১৯৭৫ Monterrey ১০ (১)
১৯৭৫–১৯৭৬ Toronto Metros-Croatia ২৫ (১৮)
১৯৭৬ Beira-Mar ১২ (৩)
১৯৭৬–১৯৭৭ Las Vegas Quicksilvers ১৭ (২)
১৯৭৭–১৯৭৮ União de Tomar ১২ (৩)
১৯৭৮–১৯৭৯ New Jersey Americans (৫)
মোট ৪৩০ (৪২৮)
জাতীয় দল
১৯৬১-১৯৭৩ পর্তুগাল[2] ৬৪ (৪১)
* শুধুমাত্র ঘরোয়া লিগে ক্লাবের হয়ে ম্যাচ ও গোলসংখ্যা গণনা করা হয়েছে

জন্ম ও শৈশব

ইউসেবিও দা সিলভা ফেরেইরার জন্ম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ২৫ জানুয়ারি ১৯৪২ সালে পর্তুগালের তৎকালীন উপনিবেশ মোজাম্বিকের মাপুতো শহরে। বাবা লোরিন্দো অ্যান্টনিও দা সিলভা ফেরেইরার ছিলেন অ্যাঙ্গোলিয়ান রেল শ্রমিক। এবং মা এলিসা বেনি ছিলেন আফ্রিকান কৃষ্ণাঙ্গ। তিনি তার ভাই বোনদের মধ্যে চতুর্থ ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই ইউসেবিওর ছিল ফুটবলের অদম্য নেশা।

ক্লাব ফুটবল

ক্লাব ফুটবলে বিভিন্ন ক্লাবে খেললেও ক্যারিয়ার সেরা সময়ের সম্পূর্ণটাই খেলেছেন পর্তুগালের বেনফিকা ক্লাবে। এই ক্লাবের হয়ে ৩০১টি ম্যাচে তিনি ৩১৭টি গোল করেছেন। বেনফিকার হয়ে তিনি ১৫ বছর খেলেন। এসময় ১০টি লিগ চ্যাম্পিয়নশিপস ও পাঁচটি পর্তুগিজ কাপ এবং ১৯৬২ সালে ইউরোপিয়ান কাপ জেতেন ইউসেবিও।[3] বেনফিকার হয়ে তিনি ১৯৬২ ইউরপীয় বর্ষসেরা ফুটবলারের খেতাব অর্জন করেন।

জাতীয় দল

পর্তুগাল জাতীয় দলের হয়ে ১৯৬১ থেকে ১৯৭৩ সালের মধ্যে মোট ৬৪টি খেলায় তার গোলসংখ্যা ৪১।[3] ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপে পর্তুগালের তৃতীয় স্থান লাভের পেছনে প্রধান ভূমিকা রেখেছেন। এই আসরে তিনি ৬ ম্যচ খেলে ৯টি গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন। এর মাঝে বিশেষভাবে স্মরণীয় উত্তর কোরিয়ার বিপক্ষে পর্তুগালের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলাটি। এতে মাত্র ২৪ মিনিটের মধ্যে উত্তর কোরিয়া ৩-০ গোলে এগিয়ে যায়। এরপরও পর্তুগাল ম্যাচ জেতে ৫-৩ গোলে, যার ৪টি গোল একাই করেছিলেন ইউসেবিও। ইংল্যান্ডের কাছে সেমিফাইনালে ২-১ গোলে হারের পর তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নকে ২-১ গোলে হারিয়ে আসরে তৃতীয় হয় পর্তুগাল।[1]

মৃত্যু

ফুটবল জগৎে অনেক কীর্তি গড়ে অমর হয়ে থাকলেও ইউসেবিও হৃদরোগের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কীর্তি গড়তে পারলেননা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি তিনি ৭১ বছর বয়সেই না ফেরার দেশে চলে যান। তার মৃত্যুতে ফুটবল অঙ্গণে স্তব্ধতা নেমে আসে। তার মৃত্যুতে বর্তমান পর্তুগীজরিয়াল তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, সাবেক পর্তুগীজ ফুটবলার লুইস ফিগো, সাবেক পর্তুগীজ ও বর্তমান চেলসি কোচ হোসে মরিনহো, ফিফা সভাপতি সেপ ব্লাটার, পর্তুগীজ রাষ্ট্রপতি সহ অনেকে শোক জ্ঞাপন করেন। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো টুইটে বলেনঃ

সবসময় চিরন্তন থাকবেন ইউসেবিও, শান্তিতে ঘুমান।

মৃত্যুর পর ভক্তবৃন্দ কর্তৃক শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তার কফিন বেনফিকার পতাকা জড়িয়ে বেনফিকা ক্লাব স্টেডিয়ামে রাখা হয়। [4]

তথ্যসূত্র

  1. "বিদায় 'কালো চিতা'"প্রথম আলো। ৬ জানুয়ারি ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০১৪, ২৩ পৌষ ১৪২০ বঙ্গাব্দ, সোমবার এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  2. Pierrend, José Luis (২৯ অক্টোবর ২০০৫)। "Eusébio Ferreira da Silva – Goals in International Matches" (ইংরেজি ভাষায়)। Rec.Sport.Soccer Statistics Foundation। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০১৪, ২৩ পৌষ ১৪২০ বঙ্গাব্দ, সোমবার এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  3. "ফুটবল কিংবদন্তি ইউসেবিওর জীবনাবসান"দৈনিক কালের কন্ঠ। ৬ জানুয়ারি ২০১৪। ৭ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০১৪, ২৩ পৌষ ১৪২০ বঙ্গাব্দ, সোমবার এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  4. "চলে গেলেন পর্তুগাল ফুটবল কিংবদন্তি ইউসেবিও"সময়। ২০১৪-০১-০৬। ৭ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০১৪, ২৩ পৌষ ১৪২০ বঙ্গাব্দ, সোমবার এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.