ইউসুফ কারযাভী

ইউসুফ আল কারযাভী [1] (৯ সেপ্টেম্বর ১৯২৬ — ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২) ছিলেন একজন মিশরীয় ইসলামি পণ্ডিত এবং ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ মুসলিম স্কলারস-এর চেয়ারম্যান। [2] ইবনে তাইমিয়া, ইবনে কাইয়িম,[3] সৈয়দ রশিদ রিদা,[4][5] হাসান আল-বান্না, আবুল হাসান আলী হাসানী নদভী,[6] আবুল আলা মওদুদী এবং নাঈম সিদ্দিকী এর মাধ্যমে প্রভাবিত হয়েছেন।[7] আল জাজিরা টেলিভিশনে শরীয়াহ এবং জীবন নামক তার অনুষ্ঠান তাকে বিশ্বব্যাপী পরিচিত করে তোলে, যেটির আনুমানিক দর্শক ছিল ৪০-৬০ মিলিয়ন।[8][9][10] তিনি ইসলামঅনলাইন নামক একটি ওয়েবসাইটের জন্যও পরিচিত, যা তিনি ১৯৯৭ সালে খুঁজে পেতে সহায়তা করেছিলেন এবং তিনি এটির প্রধান ধর্মীয় পণ্ডিত হিসাবে কাজ করেন।

ইসলামি পণ্ডিত
ইউসুফ আল-কারযাভী
উপাধিশাইখ
জন্ম(১৯২৬-০৯-০৯)৯ সেপ্টেম্বর ১৯২৬
সফট তুরাব, মিশর
মৃত্যু২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২(2022-09-26) (বয়স ৯৬)
যুগআধুনিক
অঞ্চলমিশর
লক্ষণীয় কাজফিকহ আল যাকাত, আল হালাল ওয়া আল হারম ফী আল ইসলাম, মাযহাবের আল জিহাদ, মাযহাবের আল আওয়লিয়াক, মাযহাবের আল দৌলার, মাধাকল লি-মা'রিফাহ আল ইসলাম, অন্যান্য
যাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন
যাদেরকে প্রভাবিত করেছেন
  • রশিদ আল-গণ্নুসি, এম.এ.এম. মনসুর

আল কারযাভী ১২০ এরও[9] অধিক বই লিখেছেন, "দ্য ল'ফুল অ্যান্ড প্রহিবিটেড ইন ইসলাম" এবং ইসলাম: দ্য ফিউচার সিভিলাইজেশন এর মধ্যে অন্যতম। তিনি মিশর ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুড এর পরামর্শক ছিলেন। তাকে ব্রাদারহুডের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নেতা মনে করা হতো। তিনি ইসলামি পন্ডিতদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ইত্তেহাদুল আলামীলি উলামাইল মুসলিমীন এর সভাপতি ছিলেন।

জন্ম-পরিচয় ও জীবনী

আল কারযাভী ১৯২৬ সালে নীল নদের ব-দ্বীপ সাফত তুরাব গ্রামে ধর্মপ্রাণ মুসলিম কৃষকের এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন, যা বর্তমানে মিশরের ঘারবিয়া গভর্নরেটের অন্তর্গত। দুই বছর বয়সে তার পিতার মৃত্যুর পর এতিম হয়ে যান। পিতার মৃত্যুর পর, তিনি তার চাচার কাছে পালিত হন ও বেড়ে উঠেন। নয় বছর বয়সে তিনি পুরো কুরআন মুখস্থ করেন।

এরপর তিনি তান্তার ইনস্টিটিউট অফ রিলিজিয়াস স্টাডিজে যোগ দেন এবং সেখানে নয় বছর অধ্যয়নের পর স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তানতায় থাকাকালীন, কারযাভী মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতিষ্ঠাতা হাসান আল বান্নার সাথে প্রথম দেখা করেন, যখন আল বান্না তার স্কুলে একটি বক্তৃতা দিচ্ছিলেন।

ইখওয়ানুল মুসলিমিনের সাথে সম্পৃক্ততার কারণে তাকে বেশ কয়েকবার কারাবরণ করতে হয়। ১৯৬১ সালে তিনি কাতারে প্রথম পাড়ি জমান। ১৯৭৩ সালে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামি স্টাডিজ বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন এবং বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগ দেন।

ব্যক্তিগত জীবন

কারযাভী মিশরে জন্মগ্রহণ করেন, তবে তিনি কাতারে বাস করতেন।[11] তার তিন পুত্র ও চার কন্যা রয়েছে, যাদের[12][13] মধ্যে তিনজন ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তার কন্যা ইলহাম ইউসুফ আল কারযাভী আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একজন পারমাণবিক বিজ্ঞানী। [14][15] তার পুত্র আব্দুল রহমান ইউসুফ আল কারযাভী মিশরের একজন কবি ও রাজনৈতিক কর্মী।[16]

পুরস্কার ও সম্মাননা

  • ১৪১১ হিজরীতে ইসলামি অর্থনীতিতে অবদান রাখায় ব্যাংক ফয়সাল পুরস্কার লাভ করেন।
  • ১৪১৩ হিজেরীতে ইসলামি শিক্ষায় অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক বাদশাহ ফয়সাল পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত করা হয়। মুসলিম বিশ্বের নোবেল খ্যাত পদকটি লাভ করেন
  • ১৯৯৭ সালে ব্রুনাই সরকার তাকে হাসান বাকলি পুরস্কারে সম্মানিত করে।

বাংলায় অনুদিত তার বই সমূহ

  • সুন্নাহর সান্নিধ্যে
  • ইসলামি পুনর্জাগরণ : সমস্যা ও সম্ভাবনা
  • ইসলামে হালাল হারামের বিধান
  • ঈমান ও সুখ
  • বুদ্ধিদীপ্ত জাগরণের প্রত্যাশায়
  • ইসলামের বিজয় অবশ্যম্ভাবী
  • আধুনিক যুগ ইসলাম কৌশল ও কর্মসূচী
  • ইসলাম ও চরমপন্থা
  • ইসলাম ও শিল্পকলা
  • ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থাঃ তত্ত্ব ও প্রয়োগ
  • ইসলামে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা
  • ইসলামে এবাদতের পরিধি
  • ইসলামে দারিদ্র বিমোচন
  • ইসলামের যাকাতের বিধান ১ম ও ২য় খণ্ড
  • জেরুজালেম বিশ্ব মুসলিম সমস্যা
  • ইসলাম ও মানবিক মূল্যবোধ
  • আমাদের দাওয়াত: জীবনবিধান ও ইসলাম
  • মানুষ মর্যাদা ও সৃষ্টির উদ্দেশ্য
  • উমর ইবনে আবদুল আজিজ
  • আলিম ও স্বৈরশাসক
  • ইমাম হাসান আল বান্না
  • ইসলামের ব্যাপকতা
  • তাকফির: কাফির ঘোষণায় বাড়াবাড়ি ও মূলনীতি
  • ইমাম বান্নার পাঠশালা
  • অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে যাকাতের ভূমিকা
  • হালাল হারামের বিধান

মৃত্যু

গত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ কাতারে ৯৬ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।[17]

    তথ্যসূত্র

    1. Polka, Sagi (২০১৯)। Shaykh Yusuf al-Qaradawi: Spiritual Mentor of Wasati Salafism। Syracuse University Press। পৃষ্ঠা 2। আইএসবিএন 9780815654803।
    2. AFP (news agency) (১১ মে ২০১৪)। "Qatar-based cleric calls for Egypt vote boycott"Yahoo News। ১৬ জুন ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
    3. Shaham, Ron (২০১৮)। Rethinking Islamic Legal Modernism: The Teaching of Yusuf al-Qaradawi। Boston: Brill Publishers। পৃষ্ঠা 5, 57। আইএসবিএন 978-90-04-36899-6।
    4. Shaham, Ron (২০১৮)। Rethinking Islamic Legal Modernism: The Teaching of Yusuf al-Qaradawi। Boston: Brill Publishers। পৃষ্ঠা 5। আইএসবিএন 978-90-04-36899-6।
    5. al-Qaradawi, Yusuf (১৯৯২)। Priorities of The Islamic Movement in The Coming Phase। Awakening Publications। পৃষ্ঠা 60। আইএসবিএন 0953758214।
    6. القرضاوي, يوسف। الشيخ أبو الحسن الندوي كما عرفته الدكتور
    7. Al-Qaradawi, Yusuf (2002). Ibn al-Qarya wa-l-Kuttab: Malamih Sira wa-Masira, Vol. 1. Dar al-Shorouq. p. 245
    8. No.9 Sheikh Dr Yusuf al Qaradawi, Head of the International Union of Muslim Scholars – "The 500 most influential Muslims in the world 2009", Prof John Esposito and Prof Ibrahim Kalin – Edmund A. Walsh School of Foreign Service, Georgetown University
    9. Smoltczyk, Alexander (১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১)। "Islam's Spiritual 'Dear Abby': The Voice of Egypt's Muslim Brotherhood"Der Spiegel। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুলাই ২০১৪
    10. No.31 Sheikh Dr Yusuf al Qaradawi, Head of the International Union of Muslim Scholars, সংগ্রহের তারিখ ৪ জুলাই ২০১৭
    11. "Google Translate"। ৫ জুন ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০১০
    12. Ana Belén Soage (মার্চ ২০০৮)। "Shaykh Yusuf Al-qaradawi: Portrait of a Leading Islamic Cleric"Middle East Review of International Affairs12 (1)। ৬ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ অক্টোবর ২০১৫
    13. "Livingstone Demands UK Media Apology for Qaradawi"। Islamonline। ৮ জানুয়ারি ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০১০
    14. "Advisory Committee to the WNU RI School Al-QARADAWI Ilham"। World-nuclear-university। ২৬ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০১০
    15. "Curriculum Vitae Ilham AlQaradawi" (পিডিএফ)। ১৬ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০১০
    16. "Abdurrahman Yusuf al-Qaradawi: new branches of National Association for Change Will open soon in Europe and the United States"। ১৮ এপ্রিল ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
    17. দিগন্ত, Daily Nayadiganta-নয়া। "ড. ইউসুফ আল কারযাভীর জীবনালেখ্য"Daily Nayadiganta (নয়া দিগন্ত) : Most Popular Bangla Newspaper। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-০৬

    বহিঃসংযোগ

    This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.