আসমানী কিতাব

'আসমানী কিতাব বলতে এমন কতকগুলো গ্রন্থকে বোঝানো হয়, ইসলাম ধর্মমতে মুসলমানগণ যে গ্রন্থগুলোকে আল্লাহ্প্রদত্ত গ্রন্থ বলে বিশ্বাস করেন। ইসলাম ধর্মে যে ৭টি বিষয়ের উপর বিশেষ করে ঈমান আনতে বা বিশ্বাস স্থাপন করতে বলা হয়েছে তার মধ্যে একটি বিষয় হলো এই আসমানী কিতাব, যেগুলো সরাসরি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়। বলা হয়, পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে সর্বমোট আসমানী কিতাব পাঠানো হয়েছে ১০৪টি।[1] তার মধ্যে ৪টি হলো প্রধান আসমানী কিতাব ও বাকি ১০০টি সহীফা। তবে কুরআন ও প্রধান হাদীসগ্রন্থগুলোতে আসমানী কিতাবের সংখ্যা উল্লেখ নেই।


প্রধান কিতাবসমূহ

কুরআন

কুরআন হলো ইসলামের কেন্দ্রীয় ধর্মীয় পাঠ্যপুস্তক এবং সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব, যা স্বয়ং ঈশ্বরের (আরবি: الله, আল্লাহ) নিকট হতে সর্বশেষ[2] এবং নবী মুহাম্মদের উপর অবতীর্ণ হয়েছে বলে মুসলিমরা বিশ্বাস করে।[3] সম্পূর্ণ কুরআন ১১৪টি অধ্যায়ে বিভক্ত ( যার প্রত্যেকটিকে 'সূরা' বলে), অতঃপর আরো সহস্রাধিক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শ্লোকে বিভক্ত (যার প্রত্যেকটিকে 'আয়াত' বলে)। মুসলিমরা বিশ্বাস করে যে কুরআন মৌখিকভাবে নবী মুহাম্মদের নিকট ফেরেশতা জিবরাইলের মাধ্যমে অবতীর্ণ হয়েছিল, যা ধীরে ধীরে সম্পন্ন হতে প্রায় ২৩ বছর সময় লেগেছিলো। কুরআন অবতীর্ণ হয় ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে তখন মুহাম্মদের বয়স ছিলো ৪০ বছর এবং কুরআন সম্পূর্ণ হতে হতে তার বয়স ৬৩ তে এসে পৌছেছিলো। মুসলিমরা কুরআনকে মুহাম্মদেএ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অলৌকিক শক্তি এবং তার নবুওয়ত্বের প্রমাণ হিসেবে দাবি করে এবং একে ধারাবাহিক ঐশী বাণীগুলির পরিসমাপ্তি হিসেবে গণ্য করে যা আদ্মেএ প্রতি অবতীর্ণ বার্তাগুলি দিয়ে শুরু হয়েছিল এবং মুহাম্মদের উক্ত কিতাব দ্বারা শেষ হয়েছিল। এটি ধ্রুপদী আরবি সাহিত্যের সেরা কাজ হিসাবে বিবেচিত।

তাওরাত

বাক্সের ভেতর তাওরাত কিতাব

ইসলামী ধর্মীয় বিশ্বাস এবং কুরআনের মতে, তাওরাত হচ্ছে নবী হযরত মুসার প্রতি অবতীর্ণ সর্বপ্রথম প্রধান আসমানী কিতাব।[4] তবে মুসলিমরা আরো ধারণা করে যে বর্তমানে উপলব্ধ তাওরাত বহু বছর ধরে দুর্নীতি এবং বিকৃতির শিকার হয়েছে তাই এটি আর এখন নির্ভরযোগ্য নয়। নবী মূসা এবং তার ভাই হারুন (হিরান) ইস্রায়েলের লোকদের নিকট ঈশ্বরের বার্তা প্রচার করার জন্য তাওরাত ব্যবহার করেছিলেন (বনি ইসরাইল, আক্ষ. "ইস্রায়েলের সন্তান")।

যাবুর

ইসলামী ধর্মীয় বিশ্বাস এবং আল কুরআনের মতে,যাবুর হচ্ছে ইসলামের দ্বিতীয় আসমানী কিতাব যা হযরত দায়ূদের উপর অবতীর্ন হয়। তবে প্রায়শই একে গীতসংহিতা হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়, যা রাজা দায়ূদের নিকট প্রকাশিত পবিত্র ধর্মগ্রন্থ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল। পণ্ডিতরা প্রায়শই গীতসংহিতা বইটিকে কোনও আইন পরিচালিনার বই নয় বরং প্রার্থনার পবিত্র গানের বই হিসেবে বুঝিয়েছিলেন, যেগুলোকে সামসঙ্গীত বলে ডাকা হয়। বর্তমানের সামসঙ্গীতগুলি এখনও অনেক মুসলিম পণ্ডিতের দ্বারা প্রশংসিত, তবে মুসলমানরা সাধারণত ধরে নেন যে বর্তমানের কয়েকটি গীত পরবর্তীকালে রচিত হয়েছিল এবং সেগুলো ঐশ্বিকভাবে প্রকাশিত হয়নি।

ইনযিল

ইনজিল (আরবি: جينجيل, রোমানাইজড: ইঞ্জিল, ইনজিল বা ইনজিল ) হ'ল ঈসার সুসমাচারের আরবি নাম। এই ইনজিলকে কুরআন দ্বারা চারটি ইসলামি পবিত্র গ্রন্থের একটি হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে, যা আল্লাহর দ্বারা ঈসার উপর অবতীর্ণ হয়েছিল।

সহীফা

এছাড়া অন্যান্য ছোট ১০০টি আসমানী কিতাব অবতীর্ণ হয় অপরাপর বিভিন্ন বাণীবাহকের উপর। যথা:

কুরআনে শুধু ইব্রাহিমের উপর সহীফা অবতীর্ণ হওয়ার উল্লেখ রয়েছে তবে সংখ্যা উল্লেখ নেই।[6]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "আসমানী কিতাব নাজিলের মাস"m.mzamin.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-২২
  2. February 07, শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী; PM, 2020 at 1:37। "সর্বশেষ আসমানি কিতাব আল-কোরআন"www.prothomalo.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-২২
  3. "Tanzil – Quran Navigator | القرآن الكريم"tanzil.net। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-২২
  4. [আসমানী কিতাব "আসমানী কিতাব - উইকিপিডিয়া"] |ইউআরএল= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)bn.wikipedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-২২
  5. ফক্বীহ আবুল লাইস সমরকন্দী। "নবী রাসুল প্রসঙ্গ"। বুস্তানুল আ'রেফীন (প্রিন্ট) (বাংলা ভাষায়) (১৯৯৭ সালে সংস্করণ)। চকবাজার, ঢাকা: হামিদিয়া লাইব্রেরি লি:। প্রকাশিত হয়েছে: ১৪ই মে, ১৯৯৭।
  6. কুরআন ৮৭:১৯

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.