সরকারের আসন
সরকারের আসন হচ্ছে (ব্রিওয়ারের রাজনীতি দ্বারা সংজ্ঞায়িত)" একটি কিংবা কয়েকটি ভবন অথবা একটি শহর যেখান থেকে সরকার তার কর্তৃত্ব প্রয়োগ করে"।[1]
বেশিরভাগ দেশে রাজধানীই হচ্ছে সে দেশের সরকারের আসন। তাই সেই শহরটিকে যথাযথভাবে সরকারের জাতীয় আসন হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। তবে 'রাজধানী' এবং 'সরকারের আসন' সম্পূর্ণ সমার্থক নয়, কারণ কয়েকটি দেশের সরকারের আসন রাজধানী থেকে পৃথক। উদাহরণস্বরূপ, নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হচ্ছে আমস্টারডাম; কিন্তু সে দেশের সরকারের আসন হেগ। একই ভাবে ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলা হলেও জাতীয় রাজধানী অঞ্চল (এনসিআর) হিসাবে মনোনীত পুরো মেট্রো ম্যানিলাকে হচ্ছে ফিলিপাইন সরকারের আসন।
সরকারের স্থানীয় আসন
স্থানীয় এবং আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষের সাধারণত একটি আসন থাকে, যাকে প্রশাসনিক কেন্দ্রও বলা হয়। বিভিন্ন স্তরের এবং বিভিন্ন দেশে স্থানীয় সরকারের আসনের শর্তাদি অন্তর্ভুক্ত:
- কাউন্টি আসন (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)
- কাউন্টি শহর (যুক্তরাজ্য এবং আয়ারল্যান্ড)
- সিটি হল / টাউন হল
- বেরিও-পুয়েব্লো (পুয়ের্তো রিকো)
সরকারের আসন হিসাবে ভবন
সরকারের আসনের ভবনের উদাহরণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- কানাডার অন্টারিওর অটোয়ার পার্লামেন্ট হিলে অবস্থিত কানাডার সংসদ ভবন।
- ইংল্যান্ডের মধ্য লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার শহরে অবস্থিত ওয়েস্টমিনস্টার প্রাসাদ। এখানে ব্রিটিশ সংসদের অধিবেশন বসে।
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির তিনটি স্থান :
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্যাপিটল (আইনসভার আসন)
- হোয়াইট হাউস (নির্বাহী আসন)
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সুপ্রীম কোর্টের বিল্ডিং (বিচার বিভাগীয় আসন)
রাজধানী এবং সরকারের আসন ভিন্ন এমন দেশের তালিকা
বেশ কয়েকটি দেশ রয়েছে যেখানে বিভিন্ন কারণে দেশের রাজধানী এবং সরকারের আসন ভিন্ন:
- বেনিন: রাজধানী পোর্তো-নোভো তবে সরকারের আসন হচ্ছে কটনৌ।
- বলিভিয়া: সুক্রে সাংবিধানিক রাজধানী। আবার এখানে বলিভিয়ার সর্বোচ্চ ট্রাইব্যুনাল অবস্থিত হওয়ায় এটি একই সাথে বলিভিয়ার বিচারিক রাজধানী। অন্যদিকে প্যালাসিও কুইমাদো (রাষ্ট্রপতিরবাসভবন), জাতীয় কংগ্রেস এবং জাতীয় নির্বাচনী আদালত লা পাজে অবস্থিত। তাই এটি সে দেশের সরকারের আসন।
- কোত দিভোয়ার (আইভরি কোস্ট): ১৯৮৩ সালে ইয়ামৌসৌক্রো জাতীয় রাজধানী হিসাবে মনোনীত হয়। তবে বেশিরভাগ সরকারী দফতর এবং দূতাবাস এখনও আবিদজানে অবস্থিত। তাই আবিদজানই হচ্ছে আইভরি কোস্টের সরকারের আসন।
- নেদারল্যান্ডস: আমস্টারডাম নেদারল্যান্ডসের সাংবিধানিক জাতীয় রাজধানী হলেও ডাচ সরকার, সংসদ, সুপ্রীম কোর্ট, রাজ্য কাউন্সিল, এবং রাজপ্রাসাদ (ও কার্যালয়) এবং সব দূতাবাস হেগ শহরে অবস্থিত।
- ইসোয়াতিনি (সোয়াজিল্যান্ড): এমবাবানে ইসওয়াতিনির মূল রাজধানী হলেও লোবাম্বা হচ্ছে সেদেশের ঐতিহ্যবাহী, আধ্যাত্মিক ও বিধানিক রাজধানী এবং সংসদের আসন।[2]
- তানজানিয়া: ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত দারুস সালাম তানজানিয়ার রাজধানী শহর ছিল। তারপর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জুলিয়াস নাইয়েরের আদেশে দোদোমাতে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল।[3] ১৯৯৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজধানী স্থানান্তর সম্পন্ন হয়। যদিও ২০১৮ সালেও দারুস সালাম প্রশাসনিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তবে দেশের সব প্রশাসনিক কেন্দ্র দোদোমাতে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া এখনো চলমান রয়েছে।
- মালয়েশিয়া: মালয়েশিয়ার ফেডারেল প্রশাসনিক কেন্দ্র হচ্ছে পুত্রজায়া। মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর হলেও অতিরিক্ত জনাকীর্ণতার কারণে ১৯৯৯ সালে কুয়ালালামপুর থেকে পুত্রজায়ায় সরকারের আসুন স্থানান্তরিত হয়।
- শ্রীলঙ্কা: শ্রীলঙ্কার সরকারি প্রশাসনিক রাজধানী হলো শ্রী জয়াবর্ধেনেপুরা কোট্টে ( সাধারণত শুধু 'কোট্টে' নামে পরিচিত) হচ্ছে শ্রীলঙ্কার সরকারি প্রশাসনিক রাজধানী।[4] এটি শ্রীলঙ্কার কার্যত (ডি ফ্যাক্টো বা দে ফ্যাক্টো) অর্থনৈতিক এবং বিধানিক রাজধানী কলম্বো শহর অঞ্চলে অবস্থিত একটি উপগ্রহ শহর (স্যাটেলাইট সিটি)।
- মন্টসেরাট (বিওটি): এর সরকারি রাজধানী প্লাইমাউথ। তবে ১৯৯৮ সালে সাউফ্রিয়ার পাহাড়ের আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের দ্বারা এটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেলে শহরটি স্থায়ীভাবে পরিত্যক্ত হয়ে যায়। 1998 সাল থেকে এর কার্যত (ডি ফ্যাক্টো বা দে ফ্যাক্টো) রাজধানী ব্র্যাডেস।[5] প্রথমদিকে ব্র্যাডেসে অস্থায়ীভাবে রাজধানী স্থানান্তর করা হলেও তখন থেকেই এটির দ্বীপটির ডি ফ্যাক্টো রাজধানী হিসেবেই আছে।[6] লিটল বে এলাকায় এখন একটি নতুন সরকারি রাজধানী প্রতিষ্ঠিত জন্য বেশ কয়েকটি নাম প্রস্তাব করা হচ্ছে।
কোন সরকারি রাজধানী নেই এমন দেশের তালিকা
- সুইজারল্যান্ড: ২০২০ সাল পর্যন্ত কোনও সুইজারল্যান্ডের কোন শহরের আনুষ্ঠানিকভাবে রাজধানীর মর্যাদা নেই। ১৮৪৮ সালে ফেডারেল অ্যাসেম্বলি বার্নকে সরকারের আসন করার পক্ষে ভোট দিয়েছিল। তবে এখনও পর্যন্ত এটির কোনও সাংবিধানিক স্বীকৃতি নেই। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে এটি "ফেডারেল শহর" হিসাবে পরিচিত। অর্থাৎ এটি কার্যত (ডি ফ্যাক্টো বা দে ফ্যাক্টো) রাজধানী তথা সরকারের আসন।
- নাউরু: ইয়ারেন জেলা (পূর্ব নাম: মকওয়া / মকোয়া), হচ্ছে নাউরুর কার্যত (ডি-ফ্যাক্টো) রাজধানী তথা সরকারের আসন। তবে নাউরুর কোন সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত রাজধানী নেই।[7][8]
ঐতিহাসিক উদাহরণ
- ফেডারেল রিপাবলিক অফ জার্মানি: ১৯৯০ সালে জার্মানির পুনঃএকত্রীকরণ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত বার্লিন ছিল জার্মানির রাজধানী এবং বন ছিল সরকারের আসন।
- ইংল্যান্ড রাজ্য: ইংল্যান্ড রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী রাজধানী ছিল সিটি অব লন্ডন। তখন ওয়েস্টমিনস্টার সিটি অব লন্ডনের বাইরে ছিল। তুমি বই বর্তমানে বৃহত্তর লন্ডনের নগর কেন্দ্রের অংশ।
- ফ্রান্স রাজ্য: ফ্রান্স রাজ্যের ঐতিহাসিক রাজধানী ছিল প্যারিস। যদিও ১৬৮২ সাল থেকে ১৭৮৯ সাল পর্যন্ত প্যারিসের দক্ষিণ-পশ্চিমে একটি তুলনামূলক গ্রামীণ এলাকায় ভার্সাই প্রাসাদে সরকারের আসন অবস্থিত ছিল।
আরও দেখুন
- রাজধানীর তালিকা
তথ্যসূত্র
- Comfort, N. (1993) Brewer's Politics. A phrase and fable dictionary. London: Cassell.
- "The Parliament of Swaziland" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে. Commonwealth Parliamentary Association. Accessed April 7, 2014.
- "This Tanzanian city may soon be one of the world's most populous. Is it ready?"। Environment (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৪-০৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০২-১১।
- "The Administrative Capital of Sri Lanka since 1982 is Sri Jayewardenepura Kotte."। Official Sri Lanka government website। ২০১৪-১২-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০১-০৭।
- Leonard, T. M. (2005). Encyclopedia of the Developing World. Routledge. pp.1083. আইএসবিএন ৯৭৮-১-৫৭৯৫৮-৩৮৮-০
- Jonnard, M. Jonnard Claude M.; Jonnard, Claude M. (নভেম্বর ২০০৯)। Islands in the Wind: The Political Economy of the English East Caribbean। iUniverse। আইএসবিএন 978-1-4401-9426-9।
- Constituencies of Nauru ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৪ আগস্ট ২০১৯ তারিখে (naurugov.nr)
- "Yaren | district, Nauru"। Encyclopedia Britannica (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-০২।