আশু মহণ শেখ
আশুমহন শেখ ভূস্বামী,দানবীর,সমাজ সেবক এবং ইসলাম প্রচারচ।
জন্ম
আনুমানিক সপ্তদশ শতাব্দীতে তৎকালিন ব্রিটিশ ভারতের খুলনা জেলার বর্তমান তেরখাদা উপজেলার আটলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
বংশ পরিচয়
যতোদুর লোকমুখে শোনা যায় তার পূর্ব পুরুষগন ব্যবসায়ের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান কুয়েত থেকে এদেশে এসেছিলেন এবং এ অঞ্চলে দেশীয় মেয়ে বিবাহ করে এখানে স্হায়ী হন। তাহারা মূলত মধ্যপ্রাচ্যের শেখ।
বসতি স্থাপন
অতীতে বৃহত্তর খুলনা অঞ্চল সুন্দরবনের অংশ ছিলো। খুলনা জেলার উওর অংশে তুলনামূলক লবণাক্ততা কম থাকায় এবং মাছের প্রপ্যতা বেশি হওয়ায় পাশাপাশি এখানের জমি উচ্চ হওয়ার জন্য আশু মহণ শেখ এর পূর্বপুরুষেরা বন পরিষ্কার করে আটলিয়া গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। উল্লেখ্য আশু মহণ শেখ এর পরিবার এ অঞ্চলের প্রথম মুসলিম পরিবার।
ব্রিটিশ লর্ড এর দরবারে আশু মহণ শেখ
তৎকালিন খুলনা'র উওরাঞ্চল নড়াইল জমিদারির আওতাধীন ছিলো। এবং তৎকালিন সময়ে ব্রিটিশ লর্ড এর কার্যালয়ে প্রদীপের জ্বালানি হিসেবে ঘি ব্যবহার করা হতো। সূর্যাস্ত আইন অনুযায়ী সকল জমিদারগন কলকাতাতে জমিদারির খাজনা নির্দিষ্ট দিনে সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে ব্রিটিশ লর্ড এর কার্যালয়ে জমা দিতেন। একবার ব্রিটিশ লর্ড নড়াইল এর জমিদার এর নিকট খাজনা বাবদ সাতচল্লিশ কলশী ঘি দিতে বলেন। নড়াইল এর জমিদার নিরুপায় হয়ে আশুমহন শেখ এর স্মরনাপন্ন হন। আশু মহণ শেখ নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে সাতচল্লিশ কলশী ঘি নিয়ে নৌকা যোগে নড়াইল জমিদার বাড়ি হাজির হন। অথপর নড়াইল জমিদার ঘি সমেত আশু মহণ শেখ কে সাথে নিয়ে কলকাতা গমন করেন। অথপর লর্ড সাহেব এতো ঘি যোগাড় করার রহস্য জানতে চাইলে জমিদার আশুমহন শেখ এর ব্যপারে লর্ড সাহেব কে বলেন। লর্ড সাহেব কৌতূহলী হয়ে আশুমহন শেখ কে এতো ঘি কি ভাবে যোগাড় করলে জানতে চাইলেন। জবাবে আশু মহণ শেখ বল্লেন মাই লর্ড এ সকল ঘি আমার নিজস্ব গরুর দুধ থেকে প্রস্তুত করা। লর্ড সাহেব আরো কৌতূহলী হয়ে বল্লেন তোমার কতগুলো গরু আছে, জবাবে আশুমহন শেখ বল্লেন মাই লর্ড আমার কতগুলো গরু আছে তা গরুর রশি না গুনে বলা সম্ভব নয়। আর ছোট বাছুর যে কতো আছে তা বলা সম্ভব নয়। শুনে লর্ড সাহেব বল্লেন তোমার গরু রাতের বেলা রাখো কোথায়? জবাবে আশুমহন শেখ বল্লেন জঙ্গলে । একথা শোনার পর ব্রিটিশ লর্ড আশু মহণ শেখ কে গরু রাখার জন্য একশো একর জমি প্রদান করেন, যা আজো আশু মহণ শেখ এর গো-চর নামে রেকর্ড কৃত।
সমাজ সেবা ও দানশীলতা
তৎকালিন সময়ে এ অঞ্চলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা ব্যবস্থা বলতে যা ছিলো তা কেবল মাত্র মক্তব।মক্তবের মাধ্যমে মানুষ ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করতো। এমত অবস্থায় মুসলিম শিক্ষা বিস্তারের জন্য আশুমহন শেখ এর জামির উপরে উওর খুলনার সবচেয়ে বড় আলিয়া মাদ্রাসা "আটলিয়া আলিয়া মাদ্রাসা " প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে আশুমহন শেখ এর জমির উপরে একটা গুচ্ছ গ্রাম, একটা ঈদগাহ ( আটলিয়া ঈদগাহ) , আটলিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, আটলিয়া বাজার, তিনটা পুকুর , তিনটা খেলার মাঠ, অসংখ্য মসজিদ , দুইটা কবরস্থান রয়েছে।
মেজবানি
আশু মহণ শেখ এর একবার মনোবাসনা হলো তিনি এখানকার মানুষকে পেটপুরে তিন বেলা খাবার খেতে দিবেন। তার ইচ্ছা অনুযায়ী বৃহত্তর খুলনা, বৃহত্তর ষশোর এর পূর্বাংশ, বর্তমানে গোপালগঞ্জ জেলার দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল এবং বর্তমানে বাগেরহাট জেলার মোল্লারহাট অঞ্চলের সকল হাট বাজারে ঢোল পিটিয়ে মেজবানির দাওয়াত দেওয়া হলো। সময় নির্ধারণ হল পূর্ণিমার তিথির পূর্ব দিন।স্থান নির্বাচন করা হলো কাটাখালী নদী কুল ঘেষা আটলিয়া গ্রামের খানে-খোদা নামক স্থানে। নির্দিষ্ট দিনে আনুমানিক দুই শত গরু, হাজার টি খাসি, প্রায় দশ হাজার কলশী দই দিয়ে মেজবানি আয়োজন করা হলো। মেজবানি প্রায় তিন মাস তেরদিন স্থায়ী হলো।ধারনা করা হয় মেজবানিতে প্রায় তিন থেকে পাঁচ লক্ষ লোকের সমাগম হয়েছিলো। মেজবানিতে আগোত লোকজন কে মাটির মালশা তে খাবার ও মাটির পাত্রে পানি পরিবেশন করা হয়েছিলো। খানে-খোদা নামক স্থানে খনন করলে এখনো সেই মেজবানির মালশা ও মাটির তৈরী পানি পানের পাত্র পাওয়া যায়।
কুরবানী তে গরু জবেহ করার রেওয়াজ
অত্র এলাকা হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চল হওয়ার কারণে এখানকার এবং তাদের বাধার দরুন সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায় তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান কুরবানী'র ঈদে গরু জবেহ করতে পারতেন না। আশুমহন শেখ নড়াইল এর জমিদার এর নিকট থেকে অনুমতি নিয়ে এ এলাকায় সর্বপ্রথম কুরবানী'র ঈদে গরু জবেহ করার রেওয়াজ চালু করেন।
মসজিদ নির্মাণ
এখানে মুসলিম জনসংখ্যা কম হওয়ায় অত্র এলাকায় মসজিদ ছিলো না। আশুমহন শেখ এখানে সর্ব প্রথম মসজিদ নির্মাণ করেন। যা অষ্টাদশ শতকের শুরুতে নির্মিত এবং উওর খুলনা'র প্রথম মসজিদ।
ধান চাষাবাদে সহায়তা
কৃষি প্রধান এলাকা হওয়ার কারণে এখানকার মানুষ জমি চাষাবাদের জন্য লাঙল ও গরুর সহায়তা নিতো। আশুমহন শেখ এর অসংখ্য গরু থাকায় তিনি গরিব চাষিদের বিনা অর্থে চাষাবাদ ও ধান মাড়াই করার জন্য গরু দিতেন।
মৃত্যু
এ সমাজ সেবক ও দানবীর আনুমানিক অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে মৃত্যু বরন করেন এবং তাকে আটলিয়া তে তার বসতি বাড়ি এবং অষ্টাদশ শতকে প্রতিষ্ঠিত মসজিদের পাশে সমাহিত করা হয়
- নড়াইল জমিদার বাড়ির নথিপত্র