আলমগীর (অভিনেতা)

আলমগীর (জন্ম: ৩ এপ্রিল, ১৯৫০) বাংলাদেশের জনপ্রিয় চলচ্চিত্রাভিনেতা।[2] আলমগীর আশি ও নব্বইয়ের দশকে দাপটের সঙ্গে কাজ করেছেন। পারিবারিক টানাপোড়েন, সামাজিক অ্যাকশন, রোমান্টিক অ্যাকশন, ফোক ফ্যান্টাসিসহ সব ধরনের চলচ্চিত্রে তিনি ছিলেন সফল। অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজক, গায়ক ও পরিচালক হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন।[3] তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ও শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতা বিভাগে ৯ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন।[4]

আলমগীর
আলমগীর
জন্ম
মহিউদ্দিন আহমেদ আলমগীর

(1950-04-03) ৩ এপ্রিল ১৯৫০
জাতীয়তাবাংলাদেশী
পেশাঅভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক, উপস্থাপক[1]
কর্মজীবন১৯৭৩বর্তমান
উল্লেখযোগ্য কর্ম
পূর্ণ তালিকা
আদি নিবাসনবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
দাম্পত্য সঙ্গীখোশনুর আলমগীর (বি. ১৯৭৩; বিচ্ছেদ. ১৯৯৯)
রুনা লায়লা (বি. ১৯৯৯)
সন্তানআঁখি আলমগীর
পুরস্কারজাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (৯ বার)

আলমগীরের চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় ১৯৭৩ সালে আমার জন্মভূমি দিয়ে। জিঞ্জীর (১৯৭৮) চলচ্চিত্রে রাজ্জাক ও সোহেল রানার সাথে অভিনয় করে তিনি পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৮৫ সালে নিষ্পাপ চলচ্চিত্র দিয়ে তার পরিচালনায় অভিষেক হয়। মা ও ছেলে (১৯৮৫) ছবিতে দীপক চৌধুরী চরিত্রে অভিনয় করে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে তার প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। পরবর্তীতে অপেক্ষা (১৯৮৭), ক্ষতিপূরণ (১৯৮৯), মরণের পরে (১৯৯০), পিতা মাতা সন্তান (১৯৯১), অন্ধ বিশ্বাস (১৯৯২), দেশপ্রেমিক (১৯৯৪) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে আরও ছয়টি জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি নির্মাণ করেন নির্মম

২০১০-এর দশকে তিনি জীবন মরণের সাথী (২০১০) ও কে আপন কে পর (২০১১) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য টানা দুবার শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৮ সালে তার পরিচালিত তৃতীয় চলচ্চিত্র একটি সিনেমার গল্প মুক্তি পায়।

শৈশবকাল

আলমগীর ১৯৫০ সালের ৩ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন।[5] তার পিতা কলিম উদ্দিন আহম্মেদ ওরফে দুদু মিয়া ঢালিউডের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র মুখ ও মুখোশ এর একজন অন্যতম প্রযোজক।গ্রামের বাড়ি নবী-নগর

কর্মজীবন

১৯৭৩-১৯৮৪: চলচ্চিত্রে অভিষেক ও পার্শ্ব চরিত্র

আলমগীর অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র আলমগীর কুমকুম পরিচালিত যুদ্ধভিত্তিক আমার জন্মভূমি ১৯৭৩ সালে মুক্তি পায়। তার অভিনীত দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ছিল দস্যুরাণী (১৯৭৪)। ১৯৭৫ সালে তিনি শাবানার বিপরীতে চাষীর মেয়েকবরীর বিপরীতে লাভ ইন শিমলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।[6] পরের বছর তিনি আলমগীর কুমকুম পরিচালিত গুন্ডা চলচ্চিত্রে রাজ্জাক ও কবরীর সাথে একটি ছোট চরিত্রে এবং তাহের চৌধুরী পরিচালিত মাটির মায়া চলচ্চিত্রে ফারুকরোজিনার সাথে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৭৮ সালে দিলীপ বিশ্বাস পরিচালিত জিঞ্জীর চলচ্চিত্রে রাজ্জাক ও সোহেল রানার সাথে অভিনয় করেন।[7] তিনি আসাদ চরিত্রে কামাল আহমেদ পরিচালিত রজনীগন্ধা (১৯৮২) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এতে তার সহশিল্পী ছিল রাজ্জাক, শাবানা ও অঞ্জনা। ১৯৮৪ সালে তিনি আমজাদ হোসেন পরিচালিত ভাত দেসখিনার যুদ্ধ চলচ্চিত্রে কাজ করেন। দুটি ছবিতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন শাবানা এবং এর মধ্য দিয়ে শাবানার সাথে তার জুটি গড়ে ওঠে, যা পরবর্তী এক দশক বাংলা চলচ্চিত্রে রাজত্ব করে। ভাত দে ছবিতে তিনি একজন দরিদ্র বাউলের শিষ্য গহর চরিত্রে অভিনয় করেন।

১৯৮৫-১৯৯৪: কর্মজীবনের শিখর ও পুরস্কারপ্রাপ্তি

আলমগীর কামাল আহমেদ পরিচালিত মা ও ছেলে (১৯৮৫) চলচ্চিত্রে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। এই ছবিতে দীপক চৌধুরী চরিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে তিনি তার প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র নিষ্পাপ[8] ১৯৮৭ সালে তিনি শাবানার বিপরীতে অভিনয় করেন মায়ের দোয়া, দিলীপ বিশ্বাস পরিচালিত অপেক্ষাসুভাষ দত্ত পরিচালিত স্বামী স্ত্রী চলচ্চিত্রে। অপেক্ষা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি দ্বিতীয়বার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। পরের বছর অভিনয় করেন হাফিজ উদ্দীন পরিচালিত পথে হল দেখা চলচ্চিত্রে। এতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন অঞ্জনা রহমান। পরবর্তীতে ক্ষতিপূরণ (১৯৮৯), মরণের পরে (১৯৯০), পিতা মাতা সন্তান (১৯৯১), ও অন্ধ বিশ্বাস (১৯৯২) চলচ্চিত্রের জন্য টানা চারবার তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এসময়ে তার অভিনীত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হল সত্য মিথ্যা (১৯৮৯), রাঙা ভাবী (১৯৮৯), দোলনা (১৯৯০), অচেনা (১৯৯১), সান্ত্বনা (১৯৯১) ও ক্ষমা (১৯৯২)। ১৯৯৪ সালে অভিনয় করেন কাজী হায়াৎ পরিচালিত নাট্যধর্মী দেশপ্রেমিক, শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত যুদ্ধ-নাট্যধর্মী ঘাতক, ও গাজী মাজহারুল আনোয়ার পরিচালিত পারিবারিক-নাট্যধর্মী স্নেহ চলচ্চিত্রে। দেশপ্রেমিক-এ একজন চলচ্চিত্র পরিচালকের ভূমিকায় অভিনয় করে তিনি সপ্তমবারের মত শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। এই বছর তিনি নির্মাণ করেন নির্মম। এতে তার সাথে অভিনয় করেন শাবানা, শাবনাজবাপ্পারাজ। ছবিটি সমাদৃত হয় এবং শাবনাজ শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৯৫-২০০৯: পার্শ্বচরিত্র ও অন্যান্য

১৯৯৫ সালে তিনি দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত কন্যাদান চলচ্চিত্রে পার্শ্ব ভূমিকায় অভিনয় করেন। এতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন সালমান শাহ ও লিমা। পরের বছর তিনি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন রচিত পোকা মাকড়ের ঘরবসতি উপন্যাস অবলম্বনে আখতারুজ্জামান পরিচালিত পোকা মাকড়ের ঘরবসতি চলচ্চিত্রে খল চরিত্রে অভিনয় করেন। এছাড়া পার্শ্ব চরিত্রে সোহেল রানা অভিনীত অজান্তে, সালমান শাহ অভিনীত মায়ের অধিকারসত্যের মৃত্যু নাই, ইলিয়াস কাঞ্চন অভিনীত দুর্জয় চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।

২০১০-বর্তমান

আলমগীর ২০১০ সালে শাহাদাত হোসেন লিটন পরিচালতি জীবন মরনের সাথী চলচ্চিত্রে আশরাফ চৌধুরী চরিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। পরের বছর অভিনয় করেন কে আপন কে পর, হৃদয় ভাঙ্গা ঢেউ ও তার নিজের প্রযোজিত মাটির ঠিকানা চলচ্চিত্রে। কে আপন কে পর-এ অভিনয়ের জন্য তিনি টানা দ্বিতীয়বারের মত শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।[9] ২০১৩ সালে ৩৫ বছর পর এফ আই মানিক পরিচালিত জজ ব্যারিস্টার পুলিশ কমিশনার চলচ্চিত্রে পুনরায় রাজ্জাকসোহেল রানার একসাথে কাজ করেন। এতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন শাকিব খানপূর্ণিমা। ছবিতে আলমগীরকে একজন পুলিশ কমিশনার চরিত্রে দেখা যায়।[10]

কণ্ঠশিল্পী

তিনি কণ্ঠশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে গান গেয়েছেন। আগুনের আলো চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম কণ্ঠ দেন। এরপর তিনি কার পাপে, ঝুমকানির্দোষ চলচ্চিত্রেও গান গেয়েছেন।[11]

নেতৃত্ব

তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি হিসেবেও দায়ীত্ব পালন করেন।[12]

ব্যক্তিগত জীবন

আলমগীরের প্রথম স্ত্রী ছিলেন গীতিকার খোশনুর আলমগীর। তাকে বিয়ে করেন ১৯৭৩ সালে। গায়িকা আঁখি আলমগীর তাদের কন্যা। খোশনুরের সাথে বিবাহ বিচ্ছেদের পর আলমগীর ১৯৯৯ সালে গায়িকা রুনা লায়লাকে বিয়ে করেন।

চলচ্চিত্রের তালিকা

পুরস্কার ও সম্মাননা

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার
বছর বিভাগ চলচ্চিত্র ফলাফল
১৯৮৫শ্রেষ্ঠ অভিনেতামা ও ছেলেবিজয়ী
১৯৮৭শ্রেষ্ঠ অভিনেতাঅপেক্ষাবিজয়ী
১৯৮৯শ্রেষ্ঠ অভিনেতাক্ষতিপূরণবিজয়ী
১৯৯০শ্রেষ্ঠ অভিনেতামরণের পরেবিজয়ী
১৯৯১শ্রেষ্ঠ অভিনেতাপিতা মাতা সন্তানবিজয়ী
১৯৯২শ্রেষ্ঠ অভিনেতাঅন্ধ বিশ্বাসবিজয়ী
১৯৯৪শ্রেষ্ঠ অভিনেতাদেশপ্রেমিকবিজয়ী
২০১০শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতাজীবন মরণের সাথীবিজয়ী
২০১১শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতাকে আপন কে পরবিজয়ী

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "Grand finale of Housefull tonight"দ্য ডেইলি সান (ইংরেজি ভাষায়)। ১৬ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬
  2. "নায়ক আলমগীর"দৈনিক মানবজমিন
  3. "দর্শক-নন্দিত আলমগীর"দৈনিক আমাদের সময়। ২০ আগস্ট ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬
  4. আলতাফ শাহনেওয়াজ (২১ মার্চ ২০১৩)। "একজন খাঁটি অভিনেতা"দৈনিক প্রথম আলো। ২০১৬-১০-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০১৬
  5. "একজন অনন্য আলমগীর"দৈনিক ইত্তেফাক। ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০১৬
  6. অভি মঈনুদ্দীন (৬ আগস্ট ২০১৫)। "অনবদ্য আলমগীর"দৈনিক যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০১৬
  7. আলাউদ্দীন মজিদ (৯ মে ২০১৩)। "একসঙ্গে রাজ্জাক-সোহেল রানা-আলমগীর"বাংলাদেশ প্রতিদিন। ঢাকা, বাংলাদেশ। সংগ্রহের তারিখ ৭ মার্চ ২০১৬
  8. "Alamgir turns 67 today"দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট। ৩ এপ্রিল ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৯ মে ২০১৮
  9. মাহফুজুর রহমান (১৫ জানুয়ারি ২০১৩)। "জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১১ ঘোষণা : সমালোচনার ঝড়"দৈনিক আমার দেশ। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০১৬
  10. "৩৫ বছর পর একসাথে রাজ্জাক, সোহেল রানা, ও আলমগীর"প্রিয় নিউজ। ঢাকা, বাংলাদেশ। ৬ মে ২০১৩। ২৫ মার্চ ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ মার্চ ২০১৬
  11. "কাজ না পেয়ে পরিচালক হচ্ছে: আলমগীর"বিডিনিউজ। ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০১৬
  12. "সিনেমার খবর নেই, সমিতি নিয়ে মাতামাতি"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১ জুন ২০২০
  13. "ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার পেলেন আলমগীর-দীপেন | banglatribune.com"বাংলা ট্রিবিউন। ২৭ অক্টোবর ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০২০
  14. ভারতে আজীবন সম্মাননা পেলেন আলমগীর-রুনা লায়লা, ইত্তেফাক, ১৫ মে ২০২২

বহি:সংযোগ

বাংলা মুভি ডেটাবেজে আলমগীর

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.